সেই_তুমি? পর্ব -৪৪

0
3555

সেই_তুমি?
পর্ব -৪৪
Samira Afrin Samia (nipa)

আজ সন্ধ্যায় ইফান-রিহা আর ইয়াশ-ইশিতার এক সাথে হলুদ হবে। পুরো বাড়ি, বিয়ে বাড়ির সাজে সাজানো হলো। ইশিতার মামা মামী মামাতো দুই বোন সবাই এসেছে। রিহার বাড়ি থেকে কেউ আসে নি। রিহার পরিবারে তার বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু এখন রিহার বাবা জেলে আছে। আর যদিও বাসায় থাকতো তাহলেও আসতো না। তাই বলা যায় রিহার হলুদ সন্ধ্যায় রিহার আপন বলতে কেউ আসেনি। ইয়াশ দের কাছের দূরের যত আত্মীয় ছিল সবাই আসছে।
রিহা আর ইফান নিচে নামার সাথে সাথেই নাজমা চৌধুরী ইফানের কাছে এসে
— ইফান তোর আক্কেল জ্ঞান কিছু নেই তাই না?
জানিস আজ ইয়াশ ইশিতার সাথে সাথে তোদের ও হলুদ হবে। তারপর ও এতো লেট করে নিচে আসলি। যাও নিচে আসলি কিন্তু এসব কি পড়ে এসেছিস?
কখনও কি দেখছিস এসব ড্রেস পড়ে কারো হলুদ হয়েছে?
কয়েক জন মহিলা এসে নাজমা চৌধুরী কে কিসের কাজের কথা বলে নিয়ে গেল।
নাজমা চৌধুরী চলে গেলে রিহা কোমরে হাত দিয়ে চোখ দু’টো ছোট ছোট করে কপাল কুঁচকিয়ে ইফানের দিকে তাকায়।
ইফান রিহার দিকে তাকিয়ে
— কি হলো আমাকে এভাবে দেখছ কেন?
— এভাবে দেখবো না তো কোন ভাবে দেখবো আমাকে একটু বলে দিবেন মিস্টার?
ইফান চুল ঠিক করার ভাব নিয়ে। অন্য দিকে তাকিয়ে এটা সেটা দেখছে। রিহা ইফানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে
— এই যে মিস্টার আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর তুমি অন্য দিকে তাকিয়ে কি দেখে যাচ্ছো?
— কই কি দেখছি?
— কিছু দেখছো না তাহলে আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন?
— আমি তো আমার বউ টা কে ই দেখছি।
হঠাৎ করে ইফান রিহা কে এভাবে বউ বলে উঠলে রিহা একটু অপ্রস্তুত পরিস্থিতি তে পড়ে যায়। রিহা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ইফান রিহা কে এই অবস্থায় দেখে একটু হাসে।
আশেপাশে অনেক লোক আছে কিন্তু কেউ কারো দিকে নজর দিচ্ছে না। যে যার মত ব্যস্ত আছে।ইফান একটু চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রিহার কোমরে ধরে এক টান দিয়ে রিহা কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইফান কে হঠাৎ এমন করতে দেখে রিহা অবাক হচ্ছে সাথে লজ্জা ও পাচ্ছে।
— কি করছো কি ইফান?
আশেপাশে কত লোক খেয়াল করেছো?
কেউ দেখলে কি ভাববে?
— আমি আমার বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো এতে লোকের কি?
দেখুক লোক। আমি অন্য কারো বউয়ের কোমরে হাত রাখিনি। নিজের বউয়ের কোমরে ই ত হাত রেখেছি। লোকের যা ভাবার ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না।রিহা আর কিছু বললো না।
— আচ্ছা তুমি আগে থেকেই জানতে আজ ওদের সাথে আমাদেরও হলুদ হবে?
— হুম। আমি ই মা’কে বলেছিলাম ভাই ভাবীর সাথে যেন আমাদের বিয়ে টা ও হয়ে যায়। এমনিতে ও আমাদের তেমন ভাবে বিয়ে হয়নি যেমনটা সবার হয়ে থাকে।
— তাহলে আমাকে জানাও নি কেন?
— আগে থেকে জানিয়ে দিলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতাম কিভাবে?
আর তোমার এই খুশি ভরা মুখ টা নিজের চোখে দেখতাম কিভাবে?
রিহা ইফানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ঝলঝল করছে। ইফান এতটা বদলে গেছে। রিহার কপালে কি সত্যি ই ইফানের এতটা ভালোবাসা পাওয়া লিখা ছিল?
ইফান রিহার কপালে হালকা করে একটা চুমু খেলো।

পাশ থেকে ইফানের কাজিন রা হেসে উঠলো। রিহা ওদের দিকে তাকিয়ে ইফান কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে ইফান রিহা কে আরো শক্ত করে ধরে রাখে।
রিহা ইফানের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে
— ছাড়ো।
ইফান মাথা নাড়িয়ে
— না।
— না মানে? দেখছো তো ও’রা কিভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
— ওদের কাজ ই সারাক্ষণ আনতাজি হাসাহাসি করা। ওদের কথা তুমি বাদ দাও তো।
রিহা কিছু বলার আগেই ইফানের এক চাচাতো বোন এগিয়ে এসে
— ভাইয়া মানছি তুমি ভাবী কে অনেক ভালোবাসো। তোমাদের রোমান্স কখনও শেষ হবে না। তাই বলে কোথাই রোমান্স করবে তা ও তো একটু দেখে নিবে। এটা পাবলিক প্লেস এখানে কিন্তু এসব চলবে না।
— কে বললো এখানে এসব চলবে না?
— কে বললো মানে তোমরা কি এখন এই সব গুলো মানুষ কে দেখিয়ে দেখিয়ে রোমান্স করবে?
— হুম করলে সমস্যা কি?
ইফান এখনও রিহা কে ঠিক আগের মতই ধরে রেখেছে। রিহা লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হয়ে চোখ বুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
— ছিঃ ভাইয়া তোমাদের লজ্জা না থাকতে পারে তাই বলে কি পাবলিকের ও লজ্জা নেই। আমরা সাধারণ পাবলিক দিনে দুপুরে নিজের চোখের সামনে এসব দেখতে পারবো না।
— তোর দেখতে ইচ্ছে না হলে চোখ বন্ধ করে নে।
— ভাইয়া!
ইফান এবার রিহা কে ছেড়ে দিয়ে কাজলের (কাজল ইফানের কাজিনের নাম) চুল ধরে টান দিয়ে
— খুব পাকনা হয়ে গেছিস তাই না?
দাঁড়া আজ তোর চুল ছিঁড়ব। এখন তো ভাই ও এখানে নেই। তোকে আজ আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
কাজল রিহার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে
— ভাবী দেখো না তোমার হাজবেন্ড নাকি আমার চুল ছিড়ে ফেলবে। আমি এতো বড় হয়ে গেছি এখনও তোমার হাজবেন্ড কথায় কথায় আমাকে মারার ধমক দেয়। ওর নামে আমি একদিন সত্যি সত্যি ই থানায় মামলা করবো। তখন কিন্তু তোমার কথা ও শুনবো না।
ইফান কাজল কে তাড়া করতে এসে
— তবে রে। দাঁড়া আজ তোর তেরোটা বাজাবো আমি।
— ভাবী!
ইফান কাজলের পেছনে দৌড়াচ্ছে আর কাজল ও রিহা কে ঘিরে গোল করে দৌড়াচ্ছে।
— ভাবী তুমি ভাইকে কে কিছু বলো। নাহলে এই ভাল্লুক টা সত্যি ই আমাকে মেরে ফেলবে।
রিহা ইফান আর কাজলের এসব কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে।
— কি শুরু করলে তোমরা দু’জন?
এবার থামো।
ইফান ও আজ অনেক দিন পর মন খোলে হাসছে। আজ অনেক দিন হয়ে গিয়েছিল ইফান এভাবে হাসে নি।কাজল কে দৌড়তে দৌড়াতে এক সময় ইফান হাঁপিয়ে গেল।
ইফান হাঁটুয় ভর দিয়ে নিচু হয়ে
— থাম থাম হয়েছে। আর পারবো না তোর সাথে দৌড়াতে।
কাজল ও রিহা কে ধরে হাঁপাতে লাগলো।
— তোমার সব মারের প্রতিশোধ তোমার বউয়ের উপর দিয়ে নিবো দেখে নিও।
— আচ্ছা!
“হুম” বলে কাজল উঠে দৌড় দিলো।
ইফান এখনও হাঁপাচ্ছে আর হাসছে। রিহা এক দৃষ্টিতে ইফান কে দেখে যাচ্ছে। ইফান কে অনেক দিন পর এভাবে হাসতে দেখছে রিহা।

দূর থেকে ওদের দু’জনকেই দাঁড়িয়ে দেখছে ইশিতা। ইশিতা ই কাজল কে ইফানের কাছে পাঠিয়েছে। আর আগে থেকেই সব কিছু বলে দিয়েছিল কিভাবে কি করতে হবে। ইশিতা ও চাইছিল ইফান মন থেকে খুশি হোক। আগের মত চঞ্চল হয়ে উঠুক। দুষ্টুমি করে হেসে খেলে সবাই কে নিয়ে আগের মত খুশি থাকুক। ইফান তো কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে আরও অনেক সময় লাগতো। তাই ইশিতা কাজলের সাথে প্লেন করে এসব কিছু করেছে যাতে ইফান আজই আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর নিজের হলুদ সন্ধ্যা এনজয় করতে পারে।

কাজল ইশিতার কাছে এসে ভাবী কাজ হয়ে গেছে। ইফান ভাইয়া আগে যেমন ছিল এখন আবার ঠিক তেমন হয়ে গেছে। দেখো ভাইয়া আবার আগের মতই আমার পিছু লেগেছে।
ইশিতা কাজলের দিকে তাকিয়ে
— থেংক্স ননদিনী।
তোমার জন্য ই এই প্লেন টা কাজ করেছে। তুমি না থাকলে হয়ত আমি একা সব কিছু করতে পারতাম না।
— ধুর ভাবী। নিজের ভাইয়া কে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে একটু সাহায্য করেছি এর জন্য বদলে তোমার থেংক্স নিব নাকি?
আমি ইয়াশ আর ইফান ভাইয়ার নিজের বোন না। তারপরও ওরা দুজনেই আমাকে নিজের বোনের মত ভালোবাসে। ওদের জন্য আমি সব করতে পারবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে থেংক্স নিতে হবে না। এখন গিয়ে তোমার আরেক ভাবী কে হলুদের জন্য রেডি করে নিয়ে এসো।
— হুম ভাবী।
কাজল রিহা কে রেডি করানোর জন্য চলে গেল।
ইশিতা দাঁড়িয়ে আছে ইয়াশ পেছন থেকে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরে
— সব প্লেন ঠিকঠাক মত কাজ করেছে তো?
ইশিতা চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালো
— তুমি?
— হুম।
— তুমি এখানে কি করছো?
এখনও তো রেডি হও নি। আজ কি তোমার হলুদ হবে না?
— ভেবেছিলাম তো হবে কিন্তু আমার বউ ই যদি আমার কাছাকাছি না থাকলে তাহলে হলুদ করে লাভ কি?
— হয়েছে এখন যাও। রুমে গিয়ে তুমি রেডি হতে থাকো আমি আসছি?
— কত পারো তুমি?
— কি পারি?
— এই যে ইফান রিহার জন্য কত কিছু করছো। কত প্লেন কত আয়োজন। রিহা ইফান কে খুশি রাখার জন্য এতো খাটাখাটুনি আর…
এই বলে ইয়াশ থেমে গেল।
— আর কি?
— আর নিজের হাজবেন্ডের জন্য কিছু ই না।
— আমি কি শুধু ওদের দুজনের জন্য এসব করছি। আমি সবার জন্যই করছি। ওরা ভালো না থাকলে কি আমার একা একা ভালো থাকতে পারবো?
— হুম বুঝলাম।
বউ আমার সবার কথাই ভাবে শুধু আমার কথাই মনে থাকে না। আমার জন্য কোন কিছু করার সময় পায় না। সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
— থাক মিস্টার হাজবেন্ড আপনার আর কষ্ট প্রকাশ করতে হবে না।
চলুন আমার ও নিজেরা গিয়ে রেডি হয়ে আসি৷ এমনিতেই মা একটু আগে আমার সাথে চেচাঁমেচি করে গেছে। এখন যদি এসে দেখে আমি আগের মতই এখনও এখানে আছি রেডি হয়নি তাহলে আমাকে মেরে ই ফেলবে।
— হুম চলো।
এটা বলেই ইয়াশ ইশিতা কে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলো।

চলবে…..
( জানি এই পর্ব টা দিতে অনেক লেট হয়েছে। তার জন্য আমি সবার কাছে হ্মমা চাইছি। আপনাদেরকে এভাবে অপেক্ষা করিয়ে রেখে আমার ও ভালো লাগেনি। তবে কি করবো?
সামনে আমার টেস্ট এক্সাম। মেঘু কে বলেছিলাম গল্প টা শেষ করতে কিন্তু সে ও ব্যস্ততার কারণে লিখতে পারেনি। যাই হোক নেক্সট পার্ট আজ বিকেলেই দিয়ে দিব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here