সেই তুমি?
পর্ব -৪৫
Samira Afrin Samia (nipa)
ইশিতা ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলে বসে আছে। ইয়াশ ইশিতার পেছন দাঁড়িয়ে থেকে আয়নায় ইশিতা কে দেখছে। ইশিতা হলুদ শাড়ি পড়েছে। ইশিতা কে আজ ইয়াশ নিজের হাতে সাজিয়ে দিবে। শাড়ি টা ও ইয়াশ ই পড়িয়ে দিয়েছে।
অনেক কষ্ট করে দুই জন মিলে চেষ্টা করে প্রায় এক ঘন্টার মত লাগিয়ে শাড়ি পড়া শেষ করেছে।
হলুদ শাড়িতে আজ যেন ইশিতা কে আরো দ্বিগুণ বেশি সুন্দর লাগছে।
ইয়াশ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হলুদের সেট টা হাতে নিলো।
সম্পূর্ন আসল ফুলের সেট। ফুল গুলো এখনও তাজা অবস্থায় আছে। ইয়াশ সবার প্রথম কানের দোল হাতে নিলো। সাদা ছোট ছোট ফুলের মাঝে একটু বড় হলুদ রঙের একটা ফুল দিয়ে কানের দোল বানানো হয়েছে। ইয়াশ খুব যত্ন করে ইশিতার কানে দোল পড়িয়ে দেয়। ইশিতা চুল গুলো খোঁপা করা হয়েছে। সামনে দিয়ে মাঝামাঝি সিঁথি করে দুই সাইটে হালকা ফুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবার ইয়াশ টিকলি টা নিয়ে ইশিতার সিঁথির মাঝে পড়িয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খায়। এভাবে এক এক করে সব গুলো গহনা পড়িয়ে দিয়ে ইশিতা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ইশিতা চোখ বুঁজে আছে। ইয়াশ ইশিতা কে মন ভরে দেখে নিচ্ছে।
— ইশিতা?
ইশিতা চোখ বুঁজে থেকেই উত্তর দেয়
— হুম।
— চোখ খোলে আয়নায় নিজেকে একটু দেখো। আমি কেমন করে আমার মায়াবতী টা কে সাজিয়েছি।
ইশিতা কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর ইশিতা চোখ খোলে পিছন ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখে।
মুখে হালকা মেকআপ,চোখে গাঢ় করে কাজল, ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক,মাথায় টিকলি,কানে দোল,নাকে টানা নোলক কানের পিছনে গুঁজে দেওয়া। গলায় ফুলের ছোট বড় মিলিয়ে তিনটা মালা। দুই হাত ভর্তি হলুদ রঙের কাচের চুড়ির সাথে ফুলের মালা দিয়ে ব্যসলেট। দুই হাতের আঙুলে বড় বড় ফুল দিয়ে তিনটা আংটি পড়ানো। কোমরে ফুলের বিছা। খোঁপায় রজনীগন্ধা ফুলের মালা। সাথে হলুদ রঙের বড় একটু ফুল গুঁজে দেওয়া। সব মিলিয়ে ইশিতা নিজেই নিজেকে চিনে উঠতে পারছে না।
ইয়াশ ইশিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে
— সব কিছু পারফেক্ট ভাবে হয়েছে তো?
ইশিতা কিছু না বলে চুপ করে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়াশ ইশিতার দিকে ভালো করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে টিপের পাতা হাতে নিয়ে হলুদ রঙের ছোট একটা টিপ নিয়ে ইশিতার কপালে পড়িয়ে দেয়।
— এই বার হয়েছে একদম পারফেক্ট। হলুদের জন্য আমার মায়াবতী একদম রেডি।
ইশিতা কে চুপ থাকতে দেখে ইয়াশ ইশিতা কে জিঙ্গেস করলো
— কি হয়েছে এমন চুপ করে আছো কেন?
সাজ ভালো লাগে নি?
ইশিতা কিছু না বলে ইয়াশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ইয়াশ ইশিতার মাথায় হাত রাখে।
— কি হয়েছে পাগলী টার?
— কিছু না।
— তাহলে?
ইশিতা ইয়াশ কে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো।
— তুমি রেডি হবে না?
— আমি তো রেডি ই আছি।
ইশিতা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলো। হলুদ পাঞ্জাবির সাথে সাদা প্যান্ট। বাঁ হাতে বড় একটা কালো ঘড়ি। চুল গুলো স্পাইক করা।
ইয়াশ কে ও ইশিতার থেকে কম লাগছে না।
— চলো নিচে যাই।
ইশিতা রুম থেকে বের হতে নিলে ইয়াশ ইশিতার হাত ধরে নেয়।
— আবার কি হলো?
— একটা জিনিস এখনও বাকি আছে।
— আর কি বাকি আছে?
— দাঁড়াও।
ইয়াশ ইশিতার চোখের কোণা থেকে আঙুলে একটু কাজল নিয়ে ইয়িতার কানের পেছনে লাগিয়ে দেয়।
— এই বার হয়েছে। এখন আর আমার মায়াবতীর উপর আর কারোর নজর লাগবে না।
ইশিতা ইয়াশের পাগলামি দেখে হেসে উঠে।
— তুমি ও এসব কিছুতে বিশ্বাস করো?
— আগে করতাম না। কিন্তু এখন করি যদি সত্যি সত্যিই তোমার উপর কারো নজর লাগে তখন?
— হয়েছে চলো এবার।
ইয়াশ ইশিতা নিচে এসে দেখে ইফান আর রিহা আগে থেকেই স্টেজে বসে আছে। ইয়াশ আর ইশিতা কে দেখে কাজল নাজমা চৌধুরী কে বলে উঠলো
— কাকী ওই দেখো তোমার বড় ছেলে তার বউ কে নিয়ে নিচে আসছে তাহলে। আমরা তো ভেবেছিলাম আজ ওরা নিচে আসতে পারবে না। তাদের রুমে গিয়েই হলুদ দিয়ে আসতে হবে।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ ইশিতার দিকে তাকালো। কাজল উঠে গিয়ে ইশিতা কে ধরে এনে স্টেজে বসিয়ে দিলো।
— এতক্ষণ ওয়েট করিয়েছো। কি করছিলে গো তোমরা উপরে?
ইফান ভাইয়া আর রিহা ভাবীর মত কি তোমরা ও রোমান্স করছিলে?
ইশিতা লজ্জা পেয়ে হেসে দিয়ে
— আমার ননদিনী টা তো দেখি সত্যি ই অনেক পাকনা হয়ে গেছে। আমি তো ভাবছিলাম ননদিনী এখনও ছোট।
দাঁড়াও দেখছি তোমার জন্য ও কাউকে খুঁজতে হবে।
— ভাবী!
— কি হয়েছে ঠিকই তো বললাম।
— হুম কচু ঠিক বলেছো।
রিহা-ইশিতা এর স্টেজে আর ইয়াশ-ইফান এর স্টেজে। স্টেজ দুটো সামনাসামনি।
ইশিতা কে যেমন সুন্দর লাগছে তেমনই রিহা কে ও অনেক সুন্দর লাগছে। রিহা কে ও ঠিক ইশিতার মত করেই সাজিয়েছে।
ইয়াশ ইফান দুজনেই হলুদ পাঞ্জাবি। দুই ভাই পাশাপাশি বসে আছে। ইফান ইয়াশের দিকে তাকিয়ে
— ভাই তোকে যা লাগছে না! বলার বাহিরে। অবশ্য ভাবী কে ও কম সুন্দর লাগছে না। বলতে গেলে তোর থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে ভাবী কে।
— তোকে কোন দিক দিয়ে কম লাগছে? তুই তো সব সময়ই হ্যান্ডসাম ছিলি। আজ একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে।
ইফান হেসে দিলো। দুই ভাই ই দু’জনের বউয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ ইশিতা চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। ঐ দিকে ইফান রিহা ও চোখাচোখি তাকিয়ে আছে। রিহা আর ইশিতা এক সাথেই চোখ টিপে উঠলো তা দেখে ইয়াশ ইফান এক সাথে শব্দ করে হেঁসে দিলো।
নাজমা চৌধুরী পাশ থেকে দাঁড়িয়ে নিজের দুই ছেলে কে দেখছে। ইয়াশ ইফান কে এতটা খুশি দেখে নাজমা চৌধুরীর ও অনেক ভালো লাগছে। নাজমা চৌধুরী তো সব সময় এটাই চেয়েছিল। উনার দুই ছেলেই যেন সুখে শান্তিতে হাসি খুশি থাকে। ছেলেদের সুখ ছাড়া আর কিছুই চায়নি নাজমা চৌধুরী।
একটা মা তো এটাই চায় তার সন্তান যেন পৃথিবীর সব সুখ পায়। তারা যেন ভালো থাকে।
সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। ইয়াশ-ইশিতা ইফান-রিহার গায়ে হলুদ দেওয়া হবে। সবার প্রথম বাবা মা ই হলুদ লাগায়। ইশিতার বাবা মা নেই। মামা মামী ই এখন তার বাবা মা। মামা মামী ইশিতার কপালে হলুদ ছুয়িয়ে দিল। সামনের স্টেজে এসে ইয়াশের কপালে ও হলুদ লাগিয়ে দিলো। রিহার পরিবার থেকে কেউ আসেনি। রিহা কাঁদো কাঁদো হয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। সবার মাঝেও রিহার নিজেকে কেমন একা লাগছে। ইশিতার মামী রিহার দিকে লক্ষ্য করলো। রিহার মন খারাপ।
— আমরা কি শুধু এক মেয়েকেই হলুদ লাগাবো। ঐ দিকে যে আরেক মেয়ে ও বসে আছে তা কি দেখবে না। তাকে কি হলুদ লাগাবে না?
ইশিতার মামা সালেহা বেগমের কথা শুনে
— সত্যি ই তো। আমরা তো শুধু ইশিতা কে ই হলুদ লাগালাম। রিহা কে হলুদ লাগায় নি।
সালেহা চলো আমাদের আরেক মেয়ে কে ও হলুদ লাগিয়ে আসি।
ইশিতা জানতো তার মামা মামী কখন তাকে একা হলুদ লাগাবে না। রিহা এবার কেঁদেই উঠলো।
সালেহা বেগম রিহার কাছে গিয়ে
— পাগলী মেয়ে কাঁদে কেন?
আমরা কি তোর বাবা মা’র মত না। আমাদের কি তোর বাবা মা ভাবতে পারবি না?
রিহা সালেহা বেগম কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
একে একে ইয়াশ ইফান ইশিতা রিহা সবাইকে হলুদ লাগানো হলো। ইয়াশের কাজিন রা তো সবাইকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানিয়ে ফেলছে। হলুদের কারণে কাউকে দেখে ঠিকঠাক মত চেনা ই যাচ্ছে না।কাজল সবচেয়ে বেশি হলুদ মাখিয়েছে ইফান কে। ইফান ও কাজল কে পুরো বাড়ি দৌঁড় করিয়ে হলুদ মাখিয়ে দিয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করেছে।
হৈহোল্লরের মাঝ দিয়ে শেষ হলো হলুদ মাখানোর পর্ব।
সবাই ক্লান্ত হয়ে হলুদ লাগিয়ে ভূত সেজে যার যার মত করে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। সবার মাঝ থেকে কাজল উঠে গিয়ে ডান্স করার জন্য যে স্টেজ করা হয়েছে তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এক জন কে ইশারা করে মাইক আনতে বললে। সে মাইক নিয়ে কাজলের হাতে দেয়। কাজল হাতে মাইক নিয়ে ডান্স ফ্লোরে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে লাগলো।
চলবে…..