টক_মিষ্টি_ঝাল
পর্ব_৫+৬
ধীরে ধীরে আবির আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি আবির ভাইকে বললাম,
–: ভাই , আপনি আমার কাছে আসবেন না। যেতে দিন আমাকে।
–: কিছুক্ষণ গল্প করি। এতো অস্থির হচ্ছো কেন?
–: ভাই, অনেক কাজ আমার। চাচীকে ডাকতে আসছি আমি। যেতে দিন আমাকে।
–: এখন তো যেতে দিব না আমি। তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলে, মনে আছে। তার প্রতিশোধতো আমাকে নিতে হবে।
–: প্লিজ, আমাকে যেতে দিন।
–: আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য কতো মেয়ে ব্যাকুল ।আর তুমি আমাকে ইগনোর করছো। আমাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলছো। এতোটা সাহস আর কারো হয়নি, এভাবে কথা বলার। দেখো, এখন কি করি তোমার।
–: ভাই , আমি কিন্তু চিৎকার করবো। তাতে আপনার আরো খারাপ হবে।
–: বাড়িতে যা শব্দ। তুমি, চিৎকার করলে কেউ শুনবে না। আমি তোমার সাথে তো খারাপ কিছু করবোই। পরে কেউ জানলে , তোমার উপরই দোষ চাপিয়ে দেব।
আনিলা বলছিল, আদনান এখনও তোমাকে মেনে নেয়নি। আমি বলবো, সেই বিরহে তুমিই আমাকে ডেকে এনেছ এই রুমে।
আমি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি। আল্লাহ, এ বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করো। ওর হিংস্র চেহারা, লোলুপ দৃষ্টি দেখে আমার খুব ভয় লাগছে। এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। এমনিতেই মেয়েদের নিয়ে নেতিবাচক ধারনা আদনানের। আবির ভাই যদি সত্যিই খারাপ কিছু করে ফেলে, আদনান হয়তো আমাকে বিশ্বাস করবে না।
আবির এসে আমার হাত ধরল। ভয়ে আমি কেঁপে উঠলাম।
আর হয়তো আদনানের কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে পারব না। ওকে আর নিজের করে কখনো হয়তো পাবো না।
দরজা ধাক্কানোর শব্দে, আবির আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
” আজ হয়তো আমার থেকে রক্ষা পেলে। পরের বার হয়তো সেই সুযোগ পাবে না।”
দরজা খুলে দেখি আদনান দাড়িয়ে আছে। আমাকে আবিরের সাথে একসাথে দেখে , আদনান চমকে উঠলো।
ইস! “যেখানে বাঘের ভয়, সেখান সন্ধ্যা হয়।”
আল্লাহ আমাকে আবির ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করলেও, আরেক বিপদ এসে উপস্থিত।
আদনান আবির ভাইয়ের সাথে দেখে খুব রেগে গেল। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,
” তুনি না চাচীকে ডাকতে এসেছ। তো দরজা বন্ধ করে এখানে আবিরের সাথে কি করছো?”
আমি কিছু বলতে যাবো, তখনি আবির ভাই বলে উঠলো,
” আহা! আদনান, এতো রেগে যাচ্ছ কেন? ভাবি তো আমার সাথে ছিল। অামি তো আর দূরের কেউ নেই। আপন মানুষের সাথে একসাথে সময় কাটাতেই পারে।
আর তাছাড়া বিয়ে হয়েছে কতোদিন তোমার। এখনও বউকে একান্তে সময় দিচ্ছ না। সেই বিরহ দূর করার জন্য , আমার সাথে কিছুক্ষন সময় কাটাচ্ছে।
আদনান রেগে গিয়ে আবির ভাইকে বললো,
” তুমি চুপ করো। জুঁই তোমার কাছে আমি জানতে চেয়েছি, আবিরের কাছে নয়।”
আমি আদনানকে এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া সবটা বললাম। মনে হল, আদনান পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে নি।
আবির ভাই আবার বললো,
” আদনান, মেয়েটার মনে অনেক কষ্ট । তা দূর করতে আমার কাছে আসছে। আমি না থাকলে হয়তো অন্য কারো কাছে যেত। তুমি যদি ওর কষ্ট দূর করতে না পারো, মেনে নিতে না পারো, তাহলে বিয়ে করছো কেন?
আদনান বললো,
” আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। আমি জুঁইয়ের সাথে কি করব না করব সেটা আমার ব্যাপার। তুমি কিছু না বললেও চলবে।”
আবির ভাই হাসছে আর বলছে,
” না, ব্যাপারটা এখন সবাই যেনে গেছে। এখন সবাই কথা শোনাবে তোমাকে”
আদনান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
” তোমাদের নাটক দেখতে এখানে আসিনি। বাড়িতে অনেক কাজ , সেখানে চলো।
আমি কিছু বলার আগেই ও চলে গেলো।
কাজে মন বসছে না। এক কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজ করে ফেলছি। বার বার আদনানের রাগী চেহারার কথা মনে পড়ছে। ও কি আমাকে ভুল বুঝলো। ও তো আমাকে মেনে না নিলেও, অনেকটা ভালবাসতো। এখন তো আমাকে ঘৃণা করবে। কখনো মেনে নিবে না।
সবকিছুর মূলে ওই আবির। ওকে আমি ভাইয়ের মতো ভাবছি। আর ও আমার এতো বড় ক্ষতি করলো। ওকে আমি ছাড়বো না। ও হয়তো জানে না, আমি এতো সহজে হার মানতে শিখিনি।
কাজ গুলিয়ে ফেলছি। কারো সাথে ঠিকভাবে কথা বলছি না। শ্বাশুড়ি মা ভাবলো, আমার শরীর খারাপ করছে। তাই রুমে পাঠিয়ে দিলো।
আনিসা আপুর শ্বাশুরি অসুস্থ। তাই ভাইয়া এসে আপুকে নিয়ে গেছে। আদনানও আজ বাসায় ফিরেনি। কল দিচ্ছি ফোন বন্ধ। আদনান আমাকে ভুল বুঝল। ও তো জানে ওর ভাই, চাচী কিরকম।
আনিলা সকালে বলছিল, ওরা যে কোনো সমস্যা করতে পারে। আমাকে সতর্ক থাকতে।
আমার অনেকটা সতর্ক থাকা উচিত ছিল। এখন কি করে আদনানকে বুঝাবো, আবির ভাই যা বলছে , সবটা মিথ্যা।
আমার অস্থির লাগছে। আদনান বাসায় ফিরল না। কি করা উচিত বুঝতে পারছি না।
আনিলা আসছে খাবার খেতে যাওয়ার জন্য।
আনিলাকে আমি সবটা বললাম। তারপর অভিমান করে বললাম,
–: তোকে আমি সবটা শেয়ার করি। তুই তো জানিস, আবির ভাই কেমন লোক। তাও কেন তুই ওই বদমায়েশ লোককে এসব বলতে গেলি।
আনিলা আমার হাত ধরে বললো,
–: বিশ্বাস কর জুঁই। আমি এসব কিছুই বলিনি। সেদিন যখন তুই বললি, ” এমনিতেই আদনান আমাকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি, এখন চাচী আসছে। উনি আবার কি সমস্যা করে আল্লাহ জানে।”
তখন আবির ভাই শুনছিল। উনিই আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করছিল। আমি কিছুই বলিনি।
আমি আনিলাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। ” এমনটা কেন হল , আনিলা। আদনান আমাকে ভুল বুঝল। ও কি এ কয়দিনে একটুও বুঝতে পারেনি আমাকে। ও আজ বাসায়ও ফিরেনি। কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।”
আনিলা আমাকে বললো,
” এই মেয়ে, এতো সহজে ভেঙ্গে পড়ছিস কেন। তুই তো এত সহজে হার মানিস না। আর তুই তো ভুল কিছু করিস নি। আল্লাহ তোকে নিরাশ করবে না। আমার রুমে চল। একা থাকলে শধু কান্নাকাটি করবি। ভাইয়া আসলে তুই রুমে চলে আসিস। ”
রাত থেকে যতোবার কলিংবেল বাজছে, ততোবারই আমি দৌড়ে গেছি। এই বুঝি আদনান বাসায় ফিরলো। কিন্তু ফিরেনি।
আজ আনিলার বিয়ে। সবাই সাজছে। শরীর দূর্বল। কাল রাত থেকে কিছু খাইনি। সাজগোজ করতে মন চাচ্ছে না।
আনিলা সকাল থেকে কাঁদছে। অথচ আমি যখন বিয়ের সময় কান্না করছিলাম, আনিলা বলছিলো,
“কয়েকদিন পর তো আবার চলে আসবি। এতো কান্নার কি হয়েছে। আর কান্না করলে সাজ নষ্ট হয়ে পেত্নীর মতো লাগবে। তখন ভাইয়া তোকে পেত্নী ভেবে ভয় পাবে।”
আর আজ আনিলা সকাল থেকে কাঁদতেছে। কোনোভাবেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। আনিলাকে বিদায় দেওয়ার সময়, আদনান আসলো। আনিসা আপুও আসছে। আদনান আনিলাকে ধরে খুব কান্না করলো। একদম ঠিক বাচ্চাদের মতো। ওর কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। শ্বাশুড়ি মা, আনিসা আপু ও কান্না করছে খুব।
আমার তো চোখ ফুলে গেছে। আনিলা যাওয়ার মুহূর্তে আমাকে ধরে কান্না করলো অনেকটা। মেয়েটা আমাকে অনেক ভালবাসে। এই বিদায় মুহূর্তেও কালকের কথা ভুলেনি। আদনানকে বললো,
” ভাইয়া আজ বাসায় থাকবা। কোথাও যাবা না। জুঁইয়ের কোনো দোষ নেই। ওকে ভুল বুঝো না। বলো ভাইয়া, আমার কথা রাখবা।”
আদনান বললো,
” তুই চিন্তা করিস না। ও বাড়িতে ভালো ভাবে থাকিস। “তারপর মারুফ ভাইকে বললো, আনিলার খেয়াল রাখতে। ওর যেন কোনো কষ্ট না হয়।”
আদনান আনিলার কথা রাখছে। বাসায় আছে।
শ্বাশুড়ি মা, আনিসা আপু অনেকটা অসুস্থ হয়ে গেছে। বাড়ির সব কাজ আমারই সামলাতে হচ্ছে। সবাইকে খাইয়ে, সবটা গুছাতে গুছাতে অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল রাত থেকে কিছু খাইনি। সকাল থেকে এ পর্যন্ত একটু বিশ্রাম নেওয়ার ও সময় পাইনি। বিয়ে হলেই মেয়েরা হঠাৎ করে অনেকটা বড় হয়ে যায়। আমিতো বিয়ের আগে একটু পিয়াজও কাটতাম না। যদি হাতে দাগ পরে যায়। আর এখন জামাইর মন ভালো রাখা, এ বাড়ির সবার মন রক্ষা করে চলা, বাড়ির কাজ সামলানো, সবটাই করতে হচ্ছে। তারপরও দিন শেষে অনেকটা ভালো লাগা কাজ করতো। কারণ এ বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালবাসে।
কিন্তু আজ আর ভালো লাগছে না। যার জন্য এ বাড়িতা আসা, সেই তো আমাকে ভুল বুঝছে।
রুমে ডুকে দেখি, আদনান এখনো জেগে আছে। আমি ওর কাছে যেতেই , ও আমার গলা চেপে ধরে বললো,
” এই মেয়ে, তোমাকে তো আমি সবসময় হাসি-খুশিঁ রাখার চেষ্টা করছি।
শারীরিক মিলনই কি সব। মাত্র এ কয়দিন। তাই সইতে পারলা না। চলে গেলা আবিরের কাছে। আমার নামে বিচার দিলা। আসলে তোমারা মেয়ে মানুষ অনেক খারাপ। বিশ্বাসঘাতকতা করো তোমরা। আমি ভাবছি তুমি অন্য সবার চেয়ে আলাদা হবা। না, আমার ধারনা ভুল।”
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ও আমাকে ভুল বুঝলো।
আমি কি ওর ভুল ভাঙ্গাতে পারবো? আগের আদনানকে কি আর ফিরে পাব?
চলবে..
#টক_মিষ্টি_ঝাল
#শেষ_পর্ব
” আদনান, আপনি তো জানেন, চাচী আর আবির কিরকম। সেদিন এই রুমে এসে কেমন করছে তা পুরোটাই তো আপনি জানেন। তারপর ও এমন করছেন কেন?”
–: হ্যা, আমি জানি। আর যা জানি সবটাই ভুল। তুমি সেদিন জানতে , ওয়াশরুমে আমি। আর তা জেনেই তুমি আবিরকে এসব কথা বলছিলে।
–: আপনাত হঠাৎ এরকমটা কেন মনে হলো?
–: মনে হওয়ার অনেক কারণ আছে। সবাই জানে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি। তাহলে আবির কি করে জানলো, আমি তোমাকে মেনে নেইনি।
–: বিশ্বাস করুন আমি বলিনি ওকে। সেদিন আনিলাকে বলার সময় ও শুনছিল।
–:দয়া করে নাটক বন্ধ করো।
সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। শেষ রাতে আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে বললাম,
” আল্লাহ দয়াময়, এই বিপদ থেকে রক্ষা করো।”
সকালে আনিসা আপু রুমে আসলো। আমাকে আর আদনানকে বললো,
” তোমরা মায়ের রুমে আসো। কথা আছে।”
মায়ের রুমে যাওয়ার পর দেখি, মোটামুটি সবাই আছে মায়ের রুমে।
আনিসা আপু বললো,
“তোমাদের সবাইকে এখানে আনছি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে। একটা শয়তানের মুখোশ খুলতে।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আনিসা আপুর দিকে। কি বলতে চাচ্ছে আপু।
আনিসা আপু বললো,
” কাল দুপুরে আপনাদের জামাই কল দিয়েছিল। কথা বোঝা যাচ্ছিল না, লোকজনের শব্দে। তাই আমি চাচীর রুমের বারান্দায় গিয়েছিলাম, কথা বলার জন্য। কথা শেষ না হতেই কল কেটে যায়। তাই আমি ওখানেই বসে ছিলাম। হঠাৎ জুঁই আর আবিরের কথায় আমি চমকে উঠি। জুঁইকে নিয়ে নেতিবাচক ধারনা জন্মে আমার। তাই বারান্দাতেই চুপ করে বসে থাকি। কিন্তু পরক্ষণেই আমার ধারনা পাল্টে যায়। বদমায়েশ আবির ওর সাথে খারাপ কিছু করার কথা বলে। জুঁই ওকে অনুরোধ করে এমনটা না করার জন্য। কিন্তু ও জুঁইয়ের কথা শুনেনি। ও যখন জুঁইয়ের হাত ধরে, তখনই আমি রুমে যেতে নেই। যাতে আবির জুঁইয়ের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আর তখনি আদনান দরজা নক করে। ঠিক সে মুহূর্তেই আপনাদের জামাই কল দিয়ে কান্না করে, ওর মা খুব অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করছে। কথা শেষ করে দেখি, ওরা রুমে নেই। সেই সময়ই আমি চলে যাই হাসপাতালে, মাকে দেখতে। আদনানকে আর সত্যিটা বলা হয়নি। তাই হাসপাতালে গিয়ে আদনানকে সত্যিটা বলার জন্য অনেকবার কল দেই । কিন্তু ওর ফোন বন্ধ ছিলো। কতোটা বদমায়েশ এই আবির বুঝতে পারছেন। ”
সবটা শুনে আদনান আমার কাছে এসে বললো,
” শুধু শুধুই আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। ক্ষমা করে দাও , প্লিজ। ”
আমি কিছুই বললাম না। খুুব অভিমান কাজ করছে। পুরোটা ভালো করে না জেনেই, কিরকম আচরণ করলো আমার সাথে।
আদনান বললো,
” জানো, আনিসা আপু । আমি পুরোটা না বুঝেই জুঁইয়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি। সব এই আবিরের জন্য।
আনিসা আপু শ্বাশুড়ি মাকে বললো,
” মা, তুমি কিছু বলবানা। আমি সেদিনই বলছিলাম, চাচী বা আবির কেউই সুবিধার নয়। ওদেরকে বাড়িতে থাকতে দিতে না। এরা যেখানে যায়, সেখানেই অশান্তি সৃষ্টি করে।
চাচী বললো,
” অনেক হয়েছে। খুব অপমান করছো তোমরা। আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই মেয়েটার। ওদের মতো মেয়েকে খুব ভালো করেই চিনি আমি। ভাবছিলাম কিছুদিন থাকবো। কিন্তু তা আর হলো না। এই মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনাইছো। দেখবা এই মেয়েও ওর শ্বাশুড়ির মতো অন্য ছেলের সাথে পালাবে।
এ কথা বলাতে আদনান প্রচুর রেগে যায়। আবিরকে বলে,
–: এই মুহুর্তে তোর মাকে নিয়ে বের হয়ে যা। উনি খুবই বাজে মহিলা।
চাচা চাচীকে বললো,
” তুমি আমার জীবনটাতো ধ্বংস করছোই। এখন যেখানে যাও, সেখানেই অশান্তি সৃষ্টি করো। তোমাকে নিয়ে কোনো শান্তি নেই।”
বের হও এই বাসা থেকেে।”
চাচী আর আবিরকে নিয়ে চাচা চলে গেল। আনিসা আপু বললো,
” অবশেষে আপদ দূর হলো। যেখানে যায় , সেখানেই ঝামেলা করে।
আর আদনান ,
যা কিছুই ঘটুক না কেন, পুরোটা যাচাই না করে কাউকে কথা শুনাবি না। মাত্র তো কয়দিন। জীবন চলার পথে অনেক বাধা আসবে। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। আনিলা আমাকে সবটা বলছে। তুই ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস।
আর তুই জুঁইকে এখনো মেনে নিস নি কেন?
আদনান বললো,
” আমার আপন মা , আমাকে কতো ছোটো রেখে অন্য লোকের সাথে চলে গেলো। তার শোকেই আমার বাবা মারা গেল। তাই আমি চেয়েছি ওকে কিছুদিন সময় দিতে, যাতে ওর আমাকে ভালো না লাগলে সহজেই চলে যেতে পারে। তাহলে , আমার মতো আর কোনো সন্তানকে কষ্ট পেতে হবে না।
আনিসা আপু বললো,
” ভাই , সব মেয়ে লোক এক না। আমার মাকে দেখ। উনি এই সংসারে যখন তোর বাবার দ্বিতীয় বউ হয়ে আসে, তখন আমি অনেক ছোটো। তুই তো আরো ছোটো। বিয়ের এক বছর পরই আনিলার জন্ম হয়। তার পরের বছর বাবা মারা যায়। তারপর তো মা একাই সবটা সামলিয়েছে। উনি তো অন্য কারো হাত ধরে চলে যায়নি। সংসার নিয়েই নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে। আমাদের তিনজনকে সমানভাবে দেখছে। জুঁইকেও মা কতোটা আদর করে। কেউতো কখনো বুঝতেই পারেনি, আমরা সৎ ভাই-বোন।
জুঁইকে আর কষ্ট দিস না । ওকে এবার মেনে নে। ওর সাথে তুই অন্যায় করছিস।
আদনান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–: ওর সাথে আমি অনেক খারাপ আচরণ করছি। ও কি আমাকে মাফ করবে?
–: মাফ না করার কি আছে। সংসার জীবনে রাগ-অভিমান হতেই পারে।
আর শোন, আনিলাকে নিয়ে মারুফ সিলেট যাবে। তুই গিয়ে ওদেরকে আমাদের বাসায় নিয়ে আয়।
আনিলা আর মারুফ আমাদের সাথে দেখা করেই চলে যাবে।
” এই আনিলা, আমাকে নিবি না, হানিমুনে।” আমি গিয়ে আনিলাকে বললাম।
ও বললো,
–: আমার হানিমুনে তোকে নিব কেন?
–: আমার বিয়ের আগে বাজি ধরেছিলি মনে নেই।
–: অতো আগের কথা মনে থাকে বুঝি।
আমি বললাম,
” থাক , আর মনে থাকতে হবে না। একাই যাও। আর ভালোভাবে এনজয় করো।
–: তোমাকে তো ভাইয়া মেনে নিয়েছে। এবার তোমাকেও হানিমুনে পাঠানোর ব্যাবস্থা করবো।
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
“থাক আর পাঁকামো করতে হবে না।
সারাদিনের কাজ শেষে রুমে আসলাম মাত্র। রুমে আসতেই আদনান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–: বউ, সরি। ওর সাথে তোমাকে দেখে আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। সঠিকটা বিচার-বিবেচনা না করেই , তোমার সাথে খারাপ আচরণ করছি। বউ, আমাকে মাফ করে দাও।
আমার খুব অভিমান কাজ করছে। তাই বললাম,
–: আপনি যা করছেন, তা আমার প্রাপ্য ছিলো। মাফ চাওয়ার মতো কিছুই হয়নি।
–: উহু, তা বললে হবে না। মাফ করতেই হবে। এই দেখো বউ, আমি কান ধরেছি।
ওর কান ধরা দেখে আমার হাসিঁ পেলো খুব । কিন্তু কিছুই বললাম না। ও আমার কানের কাছে এসে বললো,
” কান ধরেছি, মাফ চেয়েছি,
ক্ষমা করো আমায়-
সব অভিমান ভুলে,
নাও না কাছে টেনে আমায়।”
ওর পাগলামো দেখে সত্যিই সকল অভিমান চলে গেলো।
আদনানকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
–: আপনি তাহলে আমাকে মেনে নিয়েছেন।
–: এমন পুতুল বউকে না মেনে নেওয়ার উপায় আছে। যে আমার পরিবারের জন্য এতো কিছু করছে, যে আমার শত অপমান মুখ বুঝে মেনে নিয়েছে, তাকে তো মানতেই হবে।
আর জানো, ভালবাসায় একটু রাগ-অভিমান থাকলে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়।
–: হ্যা, তবে এমন রাগ করা যাবে না, যাতে সম্পর্কই নষ্ট হয়ে যায়।
–:জানো, প্রথম দিনই তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তোমার বোকা বোকা ঝগড়াগুলো শুনে আমার খুব হাঁসি পাচ্ছিল। তুমি এখনো বাচ্চাদের মতো আচরণ করো। এখনো বড় হতে পারোনি।
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–: আমি বাচ্চা, তাই না। তো বাচ্চাকে এখন ঘুমোতে দিন। ঘুম আসছে খুব।
–: এখনতো ঘুমাতে দিব না। বাচ্চাটাকে একটু আদর করে নেই।
আমি লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে রাখছি। ও আমার মাথাটা উচু করে, চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
” তোমার ওই মায়াবী চোখ, কাঁপা কাঁপা ঠোট,
করেছে ব্যাকুল আমায়-
পরম আবেশে, হারাতে চাই তোমাতে,
দাওনা একটু ভালবাসতে আমায়।”
আমি বললাম,
” একটু বাসলে হবে না। অনেকটা ভালবাসতে হবে। কালকের ব্যাবহারে আমার ভিতরটা জ্বলে গিয়েছে। এখন তা দূর করতে হবে।
আদনান কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
” হ্যা, এ কয়দিন যে কষ্টগুলো দিয়েছি, আজ রাতে না হয় ভালবাসার মিষ্টতায় সব দূর করে দিব। ”
–: শুধু আজ রাতে কেন, আপনার কাছ থেকে সবসময় মিষ্টি আচরণ পেতে চাই।
আদনান হঠাৎ করে ওর ঠোট দিয়ে , আমার ঠোট ছুয়ে দিলো। আমি লজ্জ্বায় মুখ ডেকে ফেললাম।
ও আমার আরো অনেকটা কাছে এসে বললো,
” আজ রাত শুধু তোমার- আমার,
আজ রাতটা হবে, শুধুই ভালবাসার।
ওর তপ্ত নিঃশ্বাস, ওর এতোটা কাছে আসা, ওর এতোটা ভালবাসা, আমাকে ব্যাকুল করে ফেলেছে। পৃথিবীর সব সুখ যেন ওর বুকেই লুকিয়ে আছে।
সমাপ্ত।