মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা |৫|

0
529

মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

|৫|

দিনের তৃতীয় আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটলো ঠিক ঠিক এক ঘন্টা পর। চারু টেলিফোন করে হন্তদন্ত হয়ে বললো,

‘ তুই নাকি রাতের বেলায় কী সব ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছিস তরু? স্বপ্নে নাকি একটা পুরুষ জ্বিন তোর কাপড় খুলে ফেলার চেষ্টা করেছে? কী সাংঘাতিক!’

চারুর মুখে নিজের সম্পর্কে এমন খবরে হতবাক হয়ে গেলো তরু। এসব অদ্ভুত কথা চারুকে কে বলেছে? এই বৃহৎ পৃথিবীতে পুরুষ জ্বিনের কী করার মতো কোনো কাজ নেই? সে অযথা তরুর কাপড় খুলে ফেলতে চাইবে কেন, আশ্চর্য! তরুকে চুপ থাকতে দেখে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে অভিযোগ করলো চারু,

‘ তুই এই ভয়াবহ ব্যাপারটা সবার আগে আমাকে কেন বললি না, বল তো? আমি কী তোকে মায়ের মতো আদর-যত্ন করিনি? আজ বিয়ে হয়েছে বলে শ্বশুরবাড়িই সব? দুইদিন হয়নি বিয়ে হয়েছে এখনই শাশুড়ীকে মা বানিয়ে ফেলেছিস? হাঁচি মারলেও শাশুড়ীকে বলতে হয়? মহিলা তো তোর চিন্তায় চিন্তায় হার্ট ফেল করে ফেলছে!’

তরু হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। উদাস কণ্ঠে বললো,

‘ হার্ট ফেল করে ফেলছে বলেই তো শাশুড়ি মাকে বলেছি। তুমি যদি হার্ট ফেল করতে তাহলে তোমাকেও বলতাম। তুমি হার্ট ফেল করার প্রস্তুতি নাও আপা। পরেরবার কেউ কাপড় খুলতে এলে আমি অবশ্যই কাপড় খোলা স্থগিত রেখে তোমাকে টেলিফোন করবো। জানাবো, প্রক্রিয়া চলছে।’

তরুর উত্তরে হতভম্ব হয়ে গেলো চারু। তার থেকেও হতভম্ব হয়ে গেলো যখন দেখলো, তরুকে আর টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তরু তার ফোন কেটে দিয়েছে। চারুর ফোন কাটার মিনিটখানেক পরই সাদিকুল সাহেবের টেলিফোন পেলো তরু। সাদিকুল সাহেব লাইন পেয়েই গম্ভীর কণ্ঠে শুধালেন,

‘ তুমি নাকি আজকাল পুরুষ ভূত দেখছো? দুনিয়াতে এতোকিছু থাকতে হঠাৎ তোমার পুরুষ ভূতই দেখতে হবে কেন? ভূত দেখে নাকি আবার চিল্লাচিল্লিও করছো? চিল্লাচিল্লি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছো?’

তরু বললো,

‘ শুধু পুরুষ ভূত দেখছি ব্যাপারটা এমন নয় বাবা। আমি পুরুষের সাথে সাথে নারী ভূতও দেখছি। নারী ভূত সাদা শাড়ি পরে হাউমাউ করে কাঁদছে।’

‘ পুরুষ ভূত কী করছে? নারী ভূতকে সান্ত্বনা দিচ্ছে?’

‘ হ্যাঁ।’

‘ তাহলে এখানে তোমার চিল্লাচিল্লির ঘটনা কী? এটা ওদের ভূত সমাজের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তোমার কেন তাদের দেখে চিল্লাচিল্লি করে অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে? অন্যের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায় তোমার তো আরও লজ্জিত হওয়া উচিত।’

তরু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কণ্ঠে একরাশ মন খারাপ ঢেলে বললো,

‘ নারী ভূতটা স্বয়ং মা ছিলেন বাবা। মাকে অন্য পুরুষ ভূতের সাথে দেখে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি। পুরুষ ভূতটা অত্যন্ত উগ্র। সে বোধহয় আমার প্রতি কিঞ্চিৎ বিরক্ত। ভূতেরা আবার বিরক্তিকর জিনিস পৃথিবীতে রাখে না। পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পছন্দ করে। একটা উগ্র ভূত বিরক্ত চোখে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আর আমার মা ভূত হয়ে তারপাশে দাঁড়িয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে ব্যাপারটা ভয়ংকর না?’

সাদিকুল সাহেব নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। স্ত্রীর প্রসঙ্গে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত বোধ করছেন। তরুর ধারণা ঠিক হলে, সাদিকুল সাহেবের এই ব্যথিত বোধটা আগামী এক সপ্তাহ চলবে। এই এক সপ্তাহ তিনি কারো সাথে কোনো রকম কথাবার্তা বলবেন না। জায়নামাজে বসে কান্নাকাটি করবেন। সেই কান্নাকাটি হবে উচ্চস্বরে। তাকে দেখে মনে হবে, তিনি যেকোনো সময় দেহত্যাগ করে ফেলতে পারেন। এক ফাঁকে কাফনের কাপড়, গোলাপ জল, আগরবাতির ব্যবস্থাও করে ফেলবেন। এই এক সপ্তাহ তার আশেপাশের সকলকে দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে, আমিষ খাওয়া পরিত্যাগ করতে হবে। এই এতো এতো আয়োজনের পরও শেষ পর্যন্ত তিনি দেহত্যাগ করবেন না। ঠিক এক সপ্তাহ পর সুস্থ তবিয়ত অবস্থায় তরুকে টেলিফোন করে গম্ভীর কণ্ঠে ধমক দিবেন,

‘ তোমার জন্মদাতা পিতার এহেন দুঃসময়ে তুমি খিলখিল করে হেসেছো, ব্যাপার কী? দিনদিন মায়ের মতো ফাজিল হচ্ছো। তোমার মা ছিলেন….’

তরুর তখন বসে বসে মায়ের সমুদয় কাণ্ডজ্ঞানহীনতার গল্প শুনতে হবে। শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে যাওয়া গল্পগুলো শুনেও তরুকে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে যাওয়ার নাটক করতে হবে। তরু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সাদিকুল সাহেব বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন,

‘ তোমার শাশুড়ী মা সকাল থেকে টেলিফোন করতে করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। তোমার শাশুড়ী মাও তোমার মায়ের মতো অস্থির স্বভাব। এসব অস্থির স্বভাব মহিলা আমার একদম পছন্দ নয়। ভদ্রমহিলা তোমাকে টেলিফোন করবেন। তুমি তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। আমি তোমাদের দুই বোনকে তোমার মায়ের মতো ভালোবাসতে পারিনি। মেয়েদের বোধহয় বড় হওয়ার জন্য একজন মায়ের দরকার হয়। তোমার একটা মা দরকার ছিলো। মা নেই বলেই তুমি চূড়ান্ত বেয়াদব হয়েছো। আমি তোমার জন্য মায়ের সন্ধান করেছি। ভদ্রমহিলা তোমায় মায়ের মতো ভালোবাসবেন। আমার দায়িত্ব শেষ, তুমি ভালো থাকবে।’

সাদিকুল সাহেবের শেষ কথাগুলো খুব ক্লান্ত শুনালো। তরুর চোখের কোণে জল জমলো। তরু কখনো কাঁদে না। মায়ের মৃত্যুর দিনও সে কাঁদেনি। কিন্তু আজ তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,

‘ আমি তোমার জন্য ভয় পাচ্ছি বাবা। তুমি প্লিজ সবসময়ের মতো গম্ভীর হয়ে কথা বলো, ক্লান্ত হয়ে যেও না। ক্লান্তি মানে সন্ধ্যা। আমি সন্ধ্যা চাই না৷’

সাদিকুল সাহেব টেলিফোন রেখে দিলেন। তরু মোবাইল ফোন কানে ঠাঁই বসে রইলো। কান থেকে মোবাইল ফোন না নামাতেই তৃতীয়বারের মতো বেজে উঠলো।তরু প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফোন উঠালো। উদাস কণ্ঠে বললো,

‘ আপা আর আপনি একই বাসায় থেকে আলাদা আলাদা সময়ে টেলিফোন করছেন কেন দুলাভাই? আপনারা না দুই দেহ এক প্রাণ? আপনাদের তো উচিত সব কাজ এক সাথে করা।’

সজল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘ তোমার আপা অত্যন্ত সন্দেহপ্রবন মহিলা। তার ধারণা, আমি তার থেকে তোমাকে বেশি আদর করি। আমাদের বিয়ের পর তুমি তোমার আপার থেকে দূরে সরে গিয়েছো, জাস্ট বিকজ অব মি।’

তরু হাই তুলে বললো,

‘ ব্যাপারটা তো মিথ্যে নয়।’

সজল চমকে উঠে বললো,

‘ বলছো কি! এসব শুনলে তোমার আপা আমাকে খুন করে ফেলবে তরু।’

‘ তাই বলে সত্য বলবো না? আপনি তো সত্যি সত্যিই আপার থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসেন সজল ভাই।’

সজলের গলা শুকিয়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,

‘ আমাকে সজল ভাই ডাকবে না তরু। কল মি, দুলাভাই। আমি তোমার খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য টেলিফোন করেছি। আর তুমি আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছো! এসব কিন্তু ঠিক না।’

তরু গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ আপনি আমায় এভাবে বলতে পারলেন সজল ভাই? আপনিই বলুন, আপা বেশি সুন্দর নাকি আমি? আপনি সত্য কথা বলা মানুষ। অবশ্যই সত্য কথা বলবেন।’

সজল হেসে ফেললো,

‘ তুমি অত্যন্ত বিপদজনক মহিলা তরু। এমন বিপদজনক মহিলাদেরও পুরুষ ভূত ভয় দেখায়? আশ্চর্য!’

তরু গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ ভূত ফূত কিছু না। আমার তো আসলে আপনার কথা মনে পড়ছিলো। আমি চাইছিলাম খবরটা শুনে আপনি আমাকে টেলিফোন করেন। বুঝতে পারছেন? এটাকে বলে ভালোবাসা। আমি বোধহয় আপনার প্রেমে টেমে পড়ে যাচ্ছি।’

সজলের কণ্ঠ আবারও কাঁদো কাঁদো অবস্থায় নেমে গেলো। বিষণ্ণ কণ্ঠে বললো,

‘ তুমি জানো, আমি তোমাকে ছোটবোনের মতো ভালোবাসি। তুমি ছাড়া আমার কোনো বোন আছে? তারপরও এমন ফাজলামোর কোনো মানে হয়? তোমার আপা হলো আরেক বোকা মহিলা। শুনলে তো মজা ফজা বুঝবেই না উল্টো ভয়ানক কোনো কাণ্ড ঘটিয়ে বসে থাকবে। তুমি এমন অদ্ভুত কেন?’

তরু উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। তার মেজাজ কিঞ্চিৎ খারাপ। মাহবুব যে রাতের ঘটনাটাকে জগৎ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একেবারে আন্তর্জাতিক সংবাদ বানিয়ে ফেলেছে, ভাবতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এমন গরু মগজ নিয়ে কী করে পুলিশ অফিসার হলো এই ভদ্রলোক? আশ্চর্য! তরু ফোনটা বিছানায় ফেলে ঝুঁটি মুক্ত করলো দীর্ঘ চুলের রাশি। কৃষ্ণ কালো চুলের ভারে আঁধার হয়ে এলো বিছানার চাদর। তরু বিছানায় পা ঝুলিয়ে দুই হাতের উপর গায়ের ভার ছেড়ে বসলো। রৌদ্র পোহানো ঘুঘুর দিকে চেয়ে মিহি শিষ দিয়ে উঠলো। কংক্রিটের জানালা ভেদ করে যে এক টুকরো আকাশ দেখা যায় সে আকাশের দিকে চেয়ে গুনগুন করলো,

‘ বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধু পান করে অবশেষে ভাঙে মনকে
একটা হৃদয় বারবার নয়, একবারই প্রেমে পড়ে
সেই হৃদয়ের সুখ লুট হয় নিঠুর মৌনঝড়ে।

হও হুশিয়ার, মনের দুয়ারে নজর রাখো খুব
চোখের ফাঁকিতে, ঠোঁটের হাসিতে হয়ো না উৎসুক
বালিকা, পুড়ে যাবে সব সুখ….’

দুঃখের বিষয় তরু হুশিয়ার হতে পারেনি। মনের দুয়ারে নজর রাখার আগেই সকল হুশিয়ারী ভেঙেচুড়ে দিয়েছে মাহবুব। পুড়িয়ে ফেলেছে তরুর সকল সুখ। মাহবুব নিজেও বুঝতে পারছে, তরু তার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছে। তারপরও তরুর সাথে জঘন্য এক খেলা খেলছে। এই খেলার শেষ কোথায় তরু জানে না। শুধু জানে, মাহবুব নামক অদেখা, অপরিচিত ছেলেটির জন্য বুকের ভেতর যে দলা বাঁধা কান্না জমে উঠেছে। এই কান্না কখনো শেষ হবে না। এই দুঃখ দুঃখ সুখটা তার আজীবন। ইশ! কী অসহ্য যন্ত্রণা!

‘ছুঁইয়োনা ছুঁইয়োনা বন্ধু গো
ও,ও বন্ধু ছুঁইয়োনা মোর গায়।
কাঞ্চা মনে আমার আগুন লাইগা যায়…’

তরু রহস্য করে হাসলো। এবার গরু মাহবুবের আগুন লাগার পালা। এই যে তরু না দেখেই এমন পাগল হলো? অসহ্য প্রেমের যন্ত্রণা পেলো। এর শাস্তি না দিয়ে তরুর স্বস্তি নেই। মাহবুবকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার না করে স্বস্তি নেই। তরু সুর করে গাইলো,

‘ নেই, নেই, নেই…’

তরুর ভাবনার মাঝেই টেলিফোন বাজলো। চৈত্রের রোদ এবার অসহ্য হয়ে উঠেছে তরুর গায়ে। সে বিছানা থেকে উঠে গেলো। জানালাটা বন্ধ করে চট করেই ভীষণ ভদ্র মেয়ে বনে গেলো। ফোন তুলে অত্যন্ত নরম কণ্ঠে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে শাশুড়ী মা অস্থির কণ্ঠে বললেন,

‘ তুমি নাকি রাতে কী সব ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছো মা? দেখো দেখি, কী অবস্থা? তোমার আম্মা বেঁচে নাই। আমার উচিত ছিলো না ব্যাপারটা খেয়াল রাখা? নতুন বউ কী ওমন একা থাকতে আছে? খারাপ জিনিসের নজর তো পড়বেই! মাহবুব যখন আমাকে বললো, তরু হলে একা। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে খুব ভয় পেয়েছে। আমার তো কলিজায় পানি নাই। আমি সরবকে পাঠাচ্ছি। তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে। তুমি কিছুদিনের জন্য আমাদের বাসায় এসে থাকো। আমি মসজিদের হুজুরের থেকে একটা তাবিজ আনার ব্যবস্থা করেছি। তাবিজটা থাকলে দেখবে আর বদ নজর লাগবে না।’

তরু দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বললো,

‘ কিন্তু মা… এখনই আপনাদের বাসায় কীভাবে?’

শাশুড়ী মা ধমক দিয়ে বললেন,

‘ বিয়েশাদি তো হয়েই গিয়েছে। এখন আবার এখন-তখন কী? অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে। তুমি আসো তো!’

তরু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শাশুড়ীর থেকে নম্র কণ্ঠে বিদায় নিতেই দিনের পঞ্চম ফোনটা এলো। সরব ফোন দিয়েছে। তরু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন তুললো। এতো বছরের নিয়ম ভেঙেচুরে তার আবারও মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এইযে পুরো গোষ্ঠীর মানুষ তাকে ফোন দিতে দিতে বিরক্ত করে ফেলছে। কই? মাহবুব তো একবারও টেলিফোন করলো না? সে যদি একটিবার ফোন দিয়ে বলতো,

‘ তোমার চিন্তায় চিন্তায় তো আমি অলমোস্ট মারা যাচ্ছিলাম তরু। তোমার এখন কেমন লাগছে?’

তরুর নিশ্চয় তখন সুখ হতো। কতটা সুখ? হয়তো আকাশ পেরিয়ে শূন্যতা সমান সুখ। তরু নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললো,

‘ কী অবস্থা ছোটে সুলতান? জীবন সুন্দর?’

সরব ফিসফিস করে বললো,

‘ ভাবী! তুমি নাকি কীসব ভূত টূতের পাল্লায় পড়েছো? এই ভূত কী তোমার প্রেমে টেমে পড়েছে নাকি?’

তরু বললো,

‘ বুঝতে পারছি না।’

‘ আমার তোমাকে নিয়ে দূর্দান্ত একটা পরিকল্পনা আছে ভাবী। ভূতটা তোমার প্রেমে পড়ে থাকলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুবিধা হয়।’

তরু শুধালো,

‘ কী রকম পরিকল্পনা?’

সরব উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললো,

‘ তোমাকে ভূতে ধরার কথা শুনে আমি চিন্তা করেছি, একটা ভূত শিকার করবো। আমি একটা বই পড়ে ভূত হাজির করাও শিখে ফেলেছি। ভূত হাজির করতে কিছু জিনিস লাগবে। তুমি ঘটনা সত্য কি-না বললে আমি মায়ের ব্যাগ থেকে শ’খানেক টাকা হাওয়া করে দিবো। তোমাকে নিয়ে ফেরার সময় কয়েক ধরনের মোমবাতি কিনতে হবে আর একটা লোহার আংটি। ভূত শিকার করা হবে রাত বারোটা থেকে দুইটার মাঝে। তুমি হবে টোপ। মাছ মারতে যেমন টোপ লাগে, সেরকম। আমি খুবই এক্সাইটেড ভাবী।’

‘ ভূত হাজির করে লাভ কী হবে?’

‘ অনেক লাভ হবে। ভূতটাকে আমরা আংটিতে বন্দী করে রাখবো। আর যখন যখন ইচ্ছে হবে আমাদের ইচ্ছে পূরণ করতে বলবো। জ্বিনেদের ইচ্ছে-পূরণের ক্ষমতা আছে, জানো না?’

তরু গম্ভীর হয়ে বললো,

‘ মায়ের ব্যাগ থেকে টাকা হাওয়া করতে হবে না। তোমার যা লাগবে আমি কিনে দেবো। কিন্তু তার আগে একটা শর্ত আছে।’

সরব বললো,

‘ কী রকম শর্ত?’

‘ ভূতকে বশ করে তুমি যে ইচ্ছে পূরণ করতে চাও। তার মাঝে একটা এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইচ্ছে হবে, মাহবুবুর হাসান নীরবকে এক আছাড় দিয়ে পাগল ছাগল বানিয়ে ফেলা। এই লোককে পাগল বানিয়ে আমার সামনে বসিয়ে রাখায় আমার প্রধান উদ্দেশ্য।’

#চলবে….

[ পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here