আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ #মাইশাতুল_মিহির [পর্ব-৩৬]

0
1500

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৩৬]

হঠাৎ রিমি কাধে মাথায় রাখায় হকচকিয়ে গেলো অভ্র। চটজলদি রিমির মাথা কাধ থেকে সরিয়ে দিয়ে চমক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালো। না! কেউ দেখে নি। অভ্র কণ্ঠস্বর নিচু করে ফিশফিশ করে বলে উঠলো, ‘সমস্যা কি রিমি? কাধে মাথা রাখলে কেন?’

চরম লেভেলের বিরক্ত হলো রিমি। শব্দ করে তপ্ত শ্বাস ফেলে হতাশ হয়ে বললো, ‘তো কি হয়েছে? তুমি তো আমার বয়ফ্রেন্ড-ই।’

এমন একটা মুহূর্তে রিমির কথাটা স্বাভাবিক ভাবে নিলো না অভ্র। সময়টা একান্তে হলে সমস্যা ছিলো না। যেহেতু এখানে সকলে উপস্থিত সেহেতু এভাবে কাধে মাথা রাখা কিংবা এমন কথাবার্তা দৃষ্টিকটু। তার মতে পারসোনাল কথাবার্তা, কাজকর্ম পারসোনালি-ই করা ভালো। ব্যাপার টা রিমির বুঝা উচিত ছিলো। তাই রিমির অতিরিক্ত ইমম্যাচিউরিটি অভ্র নিতে পারলো না। কণ্ঠস্বর নিচু করে ফিশফিশ করে বললেও রাগান্বিত চোখমুখ কাটকাট গলায় বললো, ‘ছেলেমানুষির একটা লিমিট থাকে। দিন দিন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছো তুমি। কেউ যদি দেখতে পায় তাহলে কেমন সিচুয়েশন ক্রিয়েট হতো? বোকা তুমি? এইসব কি হাতে কলমে শিখিয়ে দিতে হবে তোমাকে?’

রিমি প্রথমের মতো ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো, ‘কেউ তো দেখেনি।’

অভ্র কোনো রকম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে উঠলো, ‘জাস্ট শাট আপ রিমি। তুমি কোনো বাচ্চা না যে হাতে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে। এখানে সবাই উপস্থিত থাকার পরেও কিভাবে কাধে মাথা রাখো তুমি? কমনসেন্স বলতে কিছু মাথায় নেই? তুমি আমি এখানে একা না যে যা ইচ্ছে করবে। আর বয়ফ্রেন্ড হোক কিংবা জামাই ; ফ্যামেলি মেম্বারদের সামনে কাধে মাথা রাখতে হবে কেন?’

একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো রিমি। অভ্রের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো তাৎক্ষনাৎ। ভীষণ ভাবে লজ্জিত হলো অভ্রের কথায়। অপমানে শরিরে রিরি করে উঠলো। আরেকটু ভালো ভাবে বুঝাতে পারতো না অভ্র? সে তো অভ্রকে রাগাতেই কাধে মাথা রেখেছে। ভেবেছিলো অভ্র বোধহয় ভ্যাবাচ্যাকা খাবে। আর সে ঝগড়া করবে। কিন্তু হলো তো উলটো। রাগ হলো অভ্রের উপর। সরাসরি এভাবে না বলে ভালো ভাবেই বলতে পারতো। অপমানে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো রিমির। চলন্ত গাড়িতেই পিছনের সিট ছেড়ে সামনের সিটে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো। হতবাক হয়ে গেলো অভ্র। রিমি একটা সিট ধরে সামনে পা বাড়াতেই গাড়ি রাস্তার বাম পাশে ঘুরলো। পরে যেতে নিলেই আরেকটা সিট ধরে নিজেকে স্বাভাবিক করলো সে। ভয়ার্ত হলো অভ্র। পিছু ডেকে বাধা দিতে চাইলো, ‘রিমি বসে পরো। ব্যাথা পাবে।’

অভ্রের কথার বিন্দুমাত্র পাত্তা দিলো দিলো না রিমি। নিজের জেদ বজায় রেখে সামনের ফাঁকা সিটে গিয়ে বসে পরলো। মন খারাপ করে জানালার বাহিরে তাকালো। মন খারাপের শহরে কালো মেঘ হানা দিলো। অভ্রের উপর অভিমান হলো। এই অভিমান সহজে ভাঙ্গার নয়।

নিরবে দাঁতে দাঁত পিষলো অভ্র। সাংঘাতিক রাগ হলো রিমির উপর। চলন্ত গাড়িতে এভাবে সিট পরিবর্তন করার কোনো মানে আছে? ভালো কিছু বুঝানো যায় না এই মেয়েকে। এখানে রাগ করার মতো কিছু বলেছিল সে? মেয়েটা দিন দিন বড় হওয়ার বদলে ছোট হচ্ছে। রিমির এই অহেতুক রাগের উপর গুরুত্ব দিলো না। নিরবে তপ্ত শ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিলো।
.
মনোযোগ রাস্তার দিকে থাকলেও নজর বারংবার লুকিং গ্লাসের দিকে আবরারের। হাস্যউজ্জ্বল দীবার মায়াবী মুখশ্রী যতোবার দেখে আবরার ; ঠিক ততবারই মুগ্ধ হয় সে। চোখে কালো সানগ্লাস পরে থাকায় গাড়ি চালানোর পাশাপাশি দীবাকে প্রখর করতে সুবিধে হলো। গোলগাল চেহারা, মিষ্টি হাসি, মসৃণ চুল, লাল লিপস্টিক সব মিলিয়ে আবরার আবারো নতুন করে দীবার প্রেমে পরতে বাধ্য হলো। ভাগ্যিস চট্টগ্রামে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে। নাহলে মায়াবিনীর সঙ্গে দেখা মিলতো আরো দেরিতে। আনমনে মুচকি হাসলো আবরার।

রাজিবের দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী আগ্রাবাদ হালিশহর থানার সামনে গাড়ি থামালো আবরার। সাবিত আরিয়ান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। নামলো না অভ্র। চুপচাপ নিজের জায়গায় বুকে দুই হাত গুঁজে বসে রইলো। এক মনে তাকিয়ে রইলো সামনের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা রিমির নিষ্পাপ মুখখানির দিকে। জানালা খোলা থাকায় শ্রাবণের হাওয়া রিমির উন্মুক্ত চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। চোখেমুখে আনাগোনা চলছে ছোট ছোট চুল গুলোর। নিষ্পাপ মায়াবী মুখের উপর পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো অভ্রের মন। ইচ্ছে আপাতত মনেই দমিয়ে রাখলো। তবে মন ভরে রিমি দেখার ইচ্ছে দমালো না অভ্র। এক মনে, এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো তার পাগলী টাকে।
.

রাজকে এমনিতেই সহ্য করতে পারে না আবরার। তাই তো আন্তরিকতা দেখাতে গাড়ি থেকে নামলো না। “আধিখ্যেতা” নামক শব্দটা তার কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না। তাই এবারো পাত্তা দিলো না। সাবিত নেমে যাবার পরে পিছু ফিরে তাকালো আবরার। দেখলো রাইমা চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। দীবা আর নুরা বসে কথা বলছে। রিমিকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো দুজনকে, ‘রিমি কোথায়?’

নুরা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, ‘ঘুমাচ্ছে।’

কপালে আপনাআপনি সূক্ষ্ম ভাজ পরলো আবরারের। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো একবার। মাত্র বিশ মিনিট সময় লেগেছে এখানে আসতে। এরই মাঝে ঘুমিয়ে গেলো মেয়েটা? কিছুটা উদগ্রীব হয়ে বলে উঠলো, ‘এখন ঘুমাচ্ছে মানে? শরির ঠিক আছে রিমির? দেখতো একবার।’

নুরা সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘রিমি একদম ঠিক আছে। টেনশন নিও না। এমনিতেই ঘুমাচ্ছে।’

আবরার কিছু না বলে সামনে ফিরে তাকালো। অপেক্ষা করতে লাগলো সাবিত আসার। দীবার সাথে কথার ফাঁকেই নুরা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই রাজের দিকে নজর গেলো। মুহূর্তই কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো তার। বুকের বাম পাশের হৃদযন্ত্রটা ঢিপঢিপ শব্দ তুলে দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো। নতুন করে ক্রাশ খেলো রাজের স্টাইলের উপর। পরনে কালো রঙের শার্ট। সিল্কি চুল গুলোতে এক হাত বুলাতে বুলাতে আরিয়ানের সাথে কথা বলে এগিয়ে আসছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙের সঙ্গে আজকের ডেস’আপ টা দারুণ মানিয়েছে। নতুন করে প্রেমে পরলো নুরা। মুগ্ধকর চোখে তাকিয়ে রইলো রাজের দিকে। ওরা কাছাকাছি এগিয়ে আসতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো নুরা। লম্বা দম নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। রাজিব গাড়ির কাছে আসতেই নুরা হেসে বলে উঠলো, ‘আসসালামু আলাইকুম জিজু মশাই। কেমন আছেন?’

হাসলো রাজিব। সুন্দর করে সালামের উত্তর দিয়ে বললো, ‘এইতো ভালো। তোমরা কেমন আছো?’

দীবা আর নুরা মিষ্টি হেসে শুধাল, ‘আমরাও ভালো।’

রাইমা কথা বললো না। লজ্জায় নত হয়ে নিশ্চুপ বসে রইলো। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া রাইমার মুখ দেখে মৃদু হাসলো রাজিব। ফোনকলে তো সারাক্ষণ ননস্টপ কথা বলে মেয়েটা। আর সামনাসামনি দেখো? লজ্জায় একদম মাকালফল। ডাকলো না রাজিব। এড়িয়ে গেলো রাইমাকে। আপাতত রাস্তায় কথা বলার চেয়ে নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবার পর বলা যাবে। আবরার আর অভ্রের সাথে সংক্ষিপ্ত আলাপ শেষে গাড়িতে উঠে বসলো দুজন। রিমি এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাই তাকে কেউ জ্বালাতন করেনি।

আবরার এতোক্ষণ চুপচাপ তীক্ষ্ণ চোখে সামনে থাকা লুকিং গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মনে মনে দীবাকে দেওয়ার জন্য ভয়ংকর একটা শাস্তির কথা ভেবে রেখেছিলো। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে দীবা তার কথা-ই রেখেছে। রাজের সাথে কথা বলা তো দূর চোখ তুলেও তাকায় নি। তাই এই যাত্রায় মহা বিপদ থেকে নিজের অজান্তেই বেঁচে গেলো দীবা। খুশি হলো আবরার। ফুরফুরে মনে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ঘন কালো পিচ ঢালা রাস্তার উপর দিয়ে জিপ গাড়িটি সু-সু শব্দ তুলে চলতে লাগলো।
_______________________

ফটিকছড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত একটি শহর। আয়াতনের দিক দিয়ে বিশাল হওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলা অল্পসময়ে ঘুরে শেষ করা একজন পর্যটকের জন্য কখনোই সম্ভব হবে না। দুই পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত ফটিকছড়ি ভূ-প্রাকৃতিক দিক দিয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ। সিলেটের পাশাপাশি এই উপজেলার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্যের কারণ হলো চা বাগান। দেশের মোট চায়ের ১০ শতাংশ চা উৎপাতন হয় ফটিকছড়ি চা বাগানে। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে ফটিকছড়ির রাস্তাঘাট, গাছগাছালি ও পাহাড় অন্যতম।

পিচ ঢালা রাস্তা। গত কাল রাতের ভারি বর্ষণের কারণে রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে ভেজার পর এখনো চকচকে। চারপাশে সবুজের সমারোহ, নীল আকাশের নিচে সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি সঙ্গে উঁচু-নিচু টিলা এবং টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। এই সবুজ গালিচাই হলো চা বাগান। এই অপরূপ সৌন্দর্য সচক্ষে উপভোগ্য। মন ছুঁয়ে যাবার মতো পরিবেশ। মুগ্ধ চোখে বাহিরে তাকিয়ে চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই। গাড়ির স্টেরিংয়ের পাশেই আইপড টা রাখা আছে। আইপডের লোকেশন অনুযায়ী সামনে আগাচ্ছে আবরার। ড্রাইভিং করার ফাঁকে ফাঁকে দীবাকে প্রখর করতে ভুলে নি সে। আজ কেন যেন দীবাকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে তার কাছে। তাই বারংবার দীবার দিকেই দৃষ্টি যাচ্ছে তার। ভাবতেই মৃদু হাসি ঠোঁটে ফুটে এলো ঠোঁটে।

অতঃপর, দীর্ঘ আড়াই ঘন্টার পথ অতিক্রম করে নিদিষ্ট গন্তব্যে এসে পৌঁছালো সবাই। বাড়ির কাছে গাড়ি থামাতেই বিশাল বড় লোহার গেইট খুলে দিলো দারোয়ান। ধীরে ধীরে বাড়ির ভিতরে গাড়ি ঢুকালো আবরার। কয়েকজন অর্ধবয়স্ক লোক এসে স্বাগতম জানালো তাদের। ফটিকছড়ি উপজেলার রাস্তাঘাট ও পরিবেশ দেখে যতোটা না মুগ্ধ হয়েছে সবাই ; তার থেকেও দ্বিগুণ মুগ্ধ ও অবাক হয়েছে গাড়ি থেকে নেমে। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ি। বাহির থেকে দেখতে তিনতলা। বাড়ির চারপাশের রঙ গুলো অযত্নের কারণে কিছুটা কালচে বর্ণ ধারন করেছে। বাড়ির সামনে রয়েছে হাজার রকমের ফুল গাছ। এতো সুন্দর পরিবেশ দেখে বিমুখিত সবাই। আবরার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো, ‘শুধুমাত্র বাড়ির রঙটা বদলেছে। বাকি সব ঠিক আছে।’

আরিয়ান পকেটে দুই হাত রেখে আশেপাশে দেখতে দেখতে বললো, ‘ লেঙ্গটা কালে এই বাড়িতে আসছিলাম ভাই। কিচ্ছু মনে নাই।’

উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নুরা ও দীবা। দুজনের হাসির শব্দে বাকিরাও হেসে উঠলো। নুরা হাসতে হাসতে শুধাল, ‘নিজের প্রেস্টিজ নিজেই মা’র’ছো ভাই।’

রিমি নিশ্চুপ থেকে চারপাশ দেখছে। কারোর কথায় ধ্যান নেই তার। আপাতত পুরো বাড়িটা দেখতে ব্যস্ত। রাইমা বাড়ির সামনের বাগানে লাগানো ফুল গুলো দেখছে। জেসমিন ফুলে হাত বুলিয়ে একটা অপরাজিতা ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজতে গুঁজতে বললো, ‘আমি এসেছি কিনা জানি না।’

বাড়ির দুইজন অর্ধবয়স্ক লোক গাড়ি থেকে সবার ব্যাগ নামাচ্ছে। সাবিত তাদের সাহায্য করতে করতে রাইমার কথার প্রত্যুত্তর করলো, ‘তুই তখন একদম ছোট ছিলি।’

আবরার শৈশবের কথা মনে করলো। তখন সাবিত আরিয়ানের পাশাপাশি একটা বোনের শখ ছিলো তার। রাইমা যখন আয়েশার গর্ভে ছিলো তখনই আবরার পুরো বাড়ি মাথায় করে ফেলতো তার ছোট একটা আদুরে বোন হবে বলে। হলোও তাই। শান্তি নিবাসে সর্বপ্রথম কন্যাসন্তান হিসেবে রাইমা আসে। আদরে আহ্লাদে বড় করে সবাই। রাইমা যখন গুটিগুটি পায়ের কদম ফেলে হাঁটার প্রচেষ্টা করে তখন শেষবারের জন্য এই বাড়িতে এসেছিলো সবাই। কারণ সাবিতের খালামনিরা সবাই ইউকে তে চলে যাবে একেবারের জন্য। পিচ্চি রাইমা এই বাড়িতে আসার পরেই সর্বপ্রথম আবরার ও সাবিতকে “ভাইয়া” বলে ডেকেছিলো। সেই স্মৃতি আজও আবরারের চোখে ভেসে উঠলো। রাইমার শৈশবের কথা মনে করে মৃদু হেসে বললো, ‘এই বাড়িতে এসে ফাস্ট ভাইয়া বলে ডেকেছিলি তুই। কি যে ভালো লেগেছিলো।’

সাবিত ব্যাগ গুলো মানিয়ে দিয়ে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে রাইমার কাছে এসে বললো, ‘এতোটাই খুশি হয়েছিলাম যে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি চুরি করে এই এলাকার ছোট ছোট বাচ্চাদের বিলিয়েছিলাম। যদিও তখন তারা আমাদের সমবয়সী ছিলো।’

প্রাণবন্ত হাসি দিলো আবরার। উল্লাসকর কন্ঠে সাবিতের কথার বাকি অংশ বলে উঠলো, ‘শুধু কি তাই? চুরি করার অপরাধে শাস্তিও পেয়েছিলাম দুজন।’

চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো নুরা। দীবা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো, ‘কি শাস্তি পেয়েছিলেন দুইজন? নিশ্চয় উঠবস করিয়েছিলো?’

আবরার কিছুটা গড়িমসি করে এক হাতে মাথা চুলকে বললো, ‘ওইতো অল্প করেছিলাম।’

শব্দ করে হেসে উঠলো দীবা। গোলগাল চেহারায় এই হাসির স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হলো আবরার। নিজেও স্মিতি হেসে উঠলো। সঙ্গে হাসলো অন্যরাও। সবার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এক মনে দীবার প্রাণোচ্ছল হাসি দেখছে রাজ। এই হাসির মায়াতেই পরেছিলো সে। এক হাসিই তাকে ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়েছিলো। আজও মুক্তি মিললো না তার। মুক্তি চায় তার।
____________________

বাড়ির বাহিরের দেয়ালের রঙ বিবর্ণ ধারণ করলেও ভিতরের পরিবেশ টা সম্পূর্ণ আলাদা। পুরো বাড়িটা সৌখিনতায় ভরপুর। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ি। তাই সাজসজ্জায় রয়েছে রাজকীয় আমেজ। বাহিরের আঙ্গিনা দেখে যতোটা অবাক হয়েছে, তার থেকেও দ্বিগুণ অবাক হয়েছে ভিতরটা দেখে। আগ্রাবাদ থেকে রওনা দিয়েছিলো বিকেলে তাই ফটিকছড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাবার পর কোমল পানীয় দিয়ে প্রথমে আপ্যায়ন করলো সবাইকে। তারপর তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে নিয়ে গেলো। যেহেতু বাড়িটা বিশাল বড় সেহেতু থাকার জন্য রুম রয়েছে পর্যাপ্ত। প্রত্যেকটা রুমই থাকার উপযোগী। বাড়ির মালিকরা না থাকলেও কর্মচারীর মাধ্যমে সুন্দর পরিপাটি করে রেখেছে সব। বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের মাঝে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো কে কার সঙ্গে রুম শেয়ার করবে কিংবা একা রুমে থাকবে। আবরার কখনো রুম শেয়ারে কমফোর্টেবল ফিল করে না। তাই সে একা থাকবে। আরিয়ানের সঙ্গে অভ্রের বন্ধুত্ব জমেছে বেশ। তাই তারা দুজন এক সঙ্গে মাস্তি করবে ভাবলো। সাবিত কিছুই বললো না। তাই রাজিব নিজে থেকে সাবিতের সঙ্গে থাকবে জানালো। রইলো একা রাজ! সে একাই রুমে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। বাকি রইলো মেয়েরা। রিমি, নুরা ও দীবা তো কখনোই আলাদা থাকবে না। তিন জন একইসঙ্গে থেকে জমিয়ে আড্ডা দিবে প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছে। রাইমা একা থাকার কথা প্রথমেই জানিয়েছিলো। আলোচনা শেষে সবাই নিজেদের পছন্দ মোতাবেক রুম সিলেক্ট করলো। জার্নি করায় সবাই টায়ার্ড। তাই সন্ধ্যার পর খাবার খেয়ে যে যার রুমে বিশ্রামের জন্য শুয়ে পরলো।

চলমান..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here