আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ #মাইশাতুল_মিহির [পর্ব-৫৭] দ্বিতীয়াংশ

3
2928

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৫৭] দ্বিতীয়াংশ

পশ্চিমাকাশে সূর্য ডুবি ডুবি অবস্থা। চারপাশে তার হলুদ লালচে আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। ঘোলাটে আকাশের সঙ্গে মৃদু শীতল বাতাস জানান দিচ্ছে রাতে ভারি বর্ষণ আসবে। পুরো রাস্তা দীবা আকাশটা দেখে কাটিয়েছে। শান্তি নিবাসের সামনে গাড়ি থামালো আবরার। গাড়ি থেমতেই দীবা দরজা খুললো বের হতে। তখুনি আবরার পিছু ফিরে রিমি নুরার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘তোরা যা। দীবার সাথে আমার কথা আছে।’

দীবা নামতে গিয়েও থেমে গেলো। রোমান্টিক ভেবে রিমি নুরা ঠোঁট টিপে হাসলো। আবরারের কথায় সম্মতি দিয়ে চুপচাপ শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে নেমে গেলো গাড়ি থেকে। ব্যাপারটা দীবা স্বাভাবিক ভাবে নিলো। কারণ এর আগেও আবরার তাকে নিয়ে এভাবে একা সময় কাটিয়েছে। এখনও বোধহয় তেমনই হবে। গত কয়েকদিন যাবত আবরারের সঙ্গে তার ঝামেলা চলছে। একা সময় কাটানোর মতো পরিস্থিতি কিংবা মন কোনোটাই ছিল না। এখন হয়তো সব স্বাভাবিক হবে। ভেবেই বুক ভরে নিশ্বাস নিলো দীবা। চোখ ঘুরিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। দেখলো আবরার চোয়াল শক্ত করে গাড়ির স্টোরিয়ারিং ধরে বসে আছে। তার এরূপ চেহারা দেখে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো দীবা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। আবরারের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজেই বললো, ‘কিছু বলবেন আপনি? চুপচাপ বসে আছেন যে।’

ফিরে তাকালো না আবরার। সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো, ‘আজকের সব কিছু তাহলে রাজের জন্য ছিলো?’

পিলে চমকে উঠলো দীবা। প্রকাণ্ড রকমের বিস্মিত হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো আবরারের দিকে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো একটা। এতো সতর্ক থাকার পরেও জেনে গেলো লোকটা? ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না। লম্বা একটা দম নিয়ে মনে সাহস জুগিয়ে জবাব দিলো, ‘হুম!’

চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো আবরারের। দাঁতে দাঁত পিষলো নিরবে। নুরাকে তার চোখের আড়াল করতে কাপল ড্রেসের বাহানা ছিল। পুরোটা সময় দীবার নাটক ছিলো ভাবতেই রাগে মাথা নাড়া দিয়ে উঠছে তার। সে কিছু বলার আগেই দীবার বিড়বিড় করে বলা তাচ্ছিল্য কণ্ঠস্বর কানে আসলো, ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।’

কথাটা বলেই দীবা আবরারের দিকে ফিরলো। বিরক্তিকরভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে উঠলো, ‘আপনি কি এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। নুরা যাকে ভালোবাসে তার সাথেই থাকুক। সেখানে আপনি বাধা দেবার কে? আপনি কাউকে ভালোবাসেন না? আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে যদি আপনার থেকে আলাদা করতে চায় কেউ কেমন লাগবে আপনার? কি করবেন তখন?’

এমনিতেই দীবার প্রতি রাগ ছিলো আবরার। তার উপর আবার তার ভালোবাসা নিয়ে কথা বলায় রাগে শরির কেঁপে উঠলো। গাড়ির স্টোরিয়ারিংয়ে ডান হাত দিয়ে জোরে একটা ঘু-ষি দিয়ে দ্বিগুণ চেঁচিয়ে উঠলো, ‘মে-রে ফেলবো। মে-রে একদম মাটিতে পুঁতে ফেলবো। কারোর সাহস নেই আমার থেকে আমার ভালোবাসা আলাদা করার।’

আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে কেঁপে উঠলো দীবা। ভয়ার্ত চোখে তাকালো আবরারের। হাতে ব্যাথা পেয়েছে কিনা দেখার জন্য দ্রুত আবরারের হাত ধরলো। ডান হাতের উলটো পিঠে আঙ্গুল লাল হয়েছে। আঘাত পাওয়ায় দীবার রাগ বাড়লো! রাগি চেহারায় শাসনের ভঙ্গিতে ধমক দিলো দীবা, ‘এতো রাগ কেন আপনার? পেলেন তো ব্যাথা হাতে। একটু রাগ কমান। আপনার রাগের কারণে বাড়ির সবাই কষ্ট পেয়েছে।’

আবরার দীবার দিকে না তাকিয়েই ক্ষুব্ধ গলায় বললো, ‘আমি কাউকে কষ্ট দেইনি।’

‘অবশ্যই দিয়েছেন। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর এতো বছর একবারো ভেবেছেন বাড়ির সবাই আপনাকে ছাড়া কেমন আছে? মানলাম রোশান আঙ্কেল ভুল করেছে। তাই বলে তার জন্য আপনি অন্যদের কষ্ট দিবেন? আপনার মা, কাকি, ভাইবোন সবাই আপনাকে কত মিস করেছে জেনেন? আর রোশান আঙ্কেল? আপনি চলে যাওয়ার পর তিনি কতোটা কষ্ট পেয়েছে একবার চিন্তা করেছেন? আপনি এখনো উনাকে বাবা বলে ডাক দেননি। উনি বাবা হিসেবে এইটুকু অধিকার রাখে না আপনার উপর?’

দীর্ঘসময় ধরে এতো গুলো কথা বলে থামলো দীবা। আড় চোখে আবরারের দিকে তাকালো। কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবারো খোঁচা দিতে চাইলো, ‘একজন মানুষের উপর জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সেই মানুষটা কেমন ফিল করে সেটা আপনি ভালো জানেন। তবুও কেন সেই একই কাজ আপনি নুরার সঙ্গে করছেন? কেন নুরা আর রাজ…!’

এইটুকু বলে জিব কাটলো দীবা। বারবার কেন আবরারের সামনেই রাজের নাম টা নিতে হয়? বারবার কেন ভুলে সে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো। অতিরিক্ত বুঝাতে গেলে পরে হিতে বিপরীত হবে। বিব্রতভাব নিয়ে আবরারের দিকে তাকাতেই দেখলো আবরার রক্তিম চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো ঢোক গিললো একবার। ইতস্তত ভাবে বললো, ‘সরি ভুলে নাম নিয়েছি।’

প্রত্যুত্তরে কিছু বলার বদলে দীবার দিকে এগিয়ে এলো আবরার। দীবার একপাশে হাত রেখে একদম কাছাকাছি আসলো। চোখে চোখ রেখে কাটকাট গলায় বললো, ‘যতো যাই হোক, রাজকে আমি কিছুতেই মেনে নিবো না।’

দীবা আর ধৈর্যধারণ কর‍তে পারলো না। চোখে চোখ রেখেই বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘এমন কেন আপনি? নিজের জেদের কারণে নুরাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছেন। আর আপনি কি মনে করেন? আপনার মেনে নেওয়া না নেওয়ার জন্য নুরা অপেক্ষা করবে? কখনোই না! ওরা ঠিকই একদিন বিয়ে করবে। তখন আর আপনি কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু এখন নুরার সঙ্গে যেই ব্যবহার টা করছেন সেটা আজীবন নুরার মনে থাকবে।’

রাগি মুখখানা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো। দীবার থেকে সরে এসে সিটে হেলান দিয়ে বসলো আবরার। চোখ বন্ধ লম্বা একটা দম নিলো। শুকিয়ে যাওয়া উষ্ঠধয় ভিজিয়ে কণ্ঠস্বর নরম করে বললো, ‘এটা নুরার সব থেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত হবে। রাজ নুরাকে ভালোবাসে না।’

এইটুকু বলে থামলো আবরার। মহা বিরক্ত হয়ে দীবা ‘উফফ’ বলে উঠলো। গাড়ির দরজা বাহিরে বের হয়ে বললো, ‘আপনার এই এক কথায় বিরক্ত হয়ে গেছি আমি।’

গাড়ির দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো দীবা। তপ্ত শ্বাস ফেলে আবরার সিটে হেলান দিলো। এক হাত থুতনি তে রেখে আকাশের দিকে তাকালো। আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসছে ধরনি। অন্ধকার হয়ে আসছে সামনে দিন গুলো। কিছুতেই মনকে মানাতে পারছে না। আর না পারছে পরিবারের কাউকে মানাতে। রাজ নুরাকে ভালোবাসে না। এটা আবরার শতভাগ নিশ্চিত। রাজ নুরাকে ইউজ করছে শুধুমাত্র দীবার কাছে আসার জন্য। ফটিকছড়িতে থাকাকালীন রাজের সেই কথাটা মনে পরলো আবরারের।

‘আমার ভালোবাসা কিভাবে আমার করতে হয় সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। মাঝখান থেকে কাঁটা হয়ে আসবেন না।’

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় মাথা ব্যাথা শুরু হলো আবরারের। বারবার রাজের বলা কথাটা মাথায় ঘুরছে তার। রাজ জানে দীবা তার স্ত্রী। তবুও কেন দীবাকে পাওয়ার জন্য নুরাকে ব্যবহার করছে? এতো নিচে কিভাবে নামতে পারলো সে? দুই হাতে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে গাড়ি ঘুরালো আবরার। মুহূর্তেই শান্তি নিবাস ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলো। মনে মনে কিছু পরিকল্পনা সাজিয়ে নিলো। রাজের সাথে আগে কথা বলতে হবে। ব্যাপার এখানেই মেটাতে হবে। নাহলে যতো দিন যাবে নুরা ততো কষ্ট পাবে।
___________________

ঘড়ির কাটা রাত নয়টার ঘরে। চারপাশ নিঝুম নিস্তব্ধ। কিন্তু কৃতিম লাইটের কারণে বাড়ি আলোকিত। ছাদের সিঁড়িতে গালে দুই হাত দিয়ে বসে আছে রিমি। তার সামনেই অভ্র বুকে দুই হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অভ্রের এমন চাহনীতে ইতস্তত করছে রিমি। অনেক চুপচাপ থেকে অবশেষে বিব্রতভাব নিয়ে বলেই ফেললো, ‘এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আশ্চর্য খেয়ে ফেলবে নাকি?’

সাথে সাথেই ধমকে উঠলো অভ্র, ‘সমস্যা কি তোমার? ইগনোর করছো কেন আমাকে?’

রিমি অসহায় হয়ে কাঁদু কাঁদু গলায় বললো, ‘এমন করতেছো কেন? এখানে বসিয়ে রেখে আমাকে ধমকাচ্ছো খালি।’

অভ্র আবারো তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো, ‘আগে আমার কথার উত্তর দাও। ব্লক দিয়েছো কেন?’

রিমি দাঁত বের করে বোকা বোকা টাইপ হাসি দিয়ে বললো, ‘দেখো নুরাকে নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে বাড়িতে। পরে যদি আমার রিলেশনের কথা জানতে পারে তাহলে আবার ঝামেলা তৈরি হবে। আবরার ভাই মনে হয় না মেনে নিবে। আর আমি চাই না এই কারণে তোমার আর ভাইয়ের মাঝে কোনো ঝামেলা হোক।’

‘আমার আর নুরার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা রিমি। রাজের সঙ্গে স্যারের ঝামেলা আছে বলেই মেনে নিচ্ছে না। রাজ যদি না দীবাকে ভালোবাসতো তাহলে তো মেনে নিতো তাই না? আমার সাথে তোমার ভাইয়ের সম্পর্ক খুব ভালো। এখানে মেনে না নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’

হতাশার নিশ্বাস ফেললো রিমি। ঠোঁট উল্টে চিন্তিত চেহারায় গালে আবারো দুই হাত রাখলো। আড়ষ্টতার সঙ্গে শুধাল, ‘জানি। কিন্তু আমার ভয় লাগছে। ভাই জানলে যদি আমাকে বকা দেয়?’

চোখ বন্ধ রাগ নিয়ন্ত্রণ কোড়লো অভ্র। লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক গলায় বললো, ‘পরে কি হবে না হবে সেই ভেবে এখন আমাকে ব্লক দিয়ে রাখবে?’

রিমি অভ্রের দিকে তাকালো একবার। মিনমিন করে বললো, ‘আচ্ছা সরি!’

কিছুটা শান্ত হলো অভ্র। এই মেয়ে তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে একদিন। কেন যে এর প্রেমে পড়তে গেলো আল্লাহ ভালো জানে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো অভ্র। রিমি প্রথমের মতো গালে হাত রেখে চিন্তিত গলায় বললো, ‘রাজ স্যার দীবাকেই কেন ভালোবাসলো? আগে পরে আর কেউ ছিলো না? আর ভালোই যখন বেসেছে তখন ব্যাপারটা আবরার ভাইয়েরও জানার কি দরকার ছিলো? যদি না রাজের বাচ্চা দীবাকে ভালোবাসতো। আর না আমার মহান বিরক্তিকর ভাইজান জানতে পারতো। মানে সব মিলিয়ে যাতা একটা অবস্থা ক্রিয়েট হইছে।’

এইটুকু বলে থামলো রিমি। প্রথমে কথা গুলো চিন্তিত স্বরে বললেও এখন কিছু রাগ মিশ্রিত কন্ঠে আবরারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে উঠলো, ‘আরে ভাই রাজ স্যার দীবাকে ভালোবাসতো! এখন তো আর বাসে না। তাহলে সমস্যা কোথায়?’

আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো রিমি। চোখ দুটো বড়বড় করে সামনে তাকিয়ে অস্ফুটভাবে বলে উঠলো, ‘তুই এখানে?’

ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো অভ্র। রিমির চোখের দৃষ্টি অনুসরণ পিছু ফিরে তাকালে দীবাকে দেখতে পেলো। দুজনকে আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে অভ্র চুপচাপ চলে গেলো। দীবা চোখ ছোট ছোট করে দুজনের দিকে এগিয়ে এসে সন্দেহ প্রবন দৃষ্টিতে বললো, ‘রাজ স্যার আমাকে পছন্দ করে? কবে থেকে? আর এটা তোর ভাই জানলো কিভাবে?’

রিমি ভয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। আমতাআমতা করে কোনো মতে বললো, ‘দীবা শোন…!’

রিমির চেহারার এই রিয়েকশন দেখে মহা বিরক্ত হয়ে গেল দীবা। সাথে সাথেই কপাল কুঁচকে রাগ ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠলো, ‘আশ্চর্য এমন ভাব ধরতেছিস যেন আমি জানালে তোর ভাইকে ফেলে রাজের কাছে চলে যাবো। ফালতু!’

রিমি বড় করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললে বললো, ‘আমি ভাবছিলাম তুই রেগে যাবি।’

দীবার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই অতি আগ্রহ নিয়ে রিমিকে সিঁড়িতে বসিয়ে সব জানতে চাইলো। রিমি আস্তে ধীরে এক এক করে তার জানা সব কিছুই জানালো। এতোদিন তার অগোচরে এতো কিছু হয়েছে অথচ সে কিছুই জানে না? ভাবতেই অবাক চূড়ান্ত পর্যাতে দীবা। মাথায় হাত দিয়ে নিজেও রিমির পাশে ধপাস করে বসলো। আফসোস নিয়ে বলে উঠলো, ‘হায় আল্লাহ কেন যে ওই দিন মেলাতে শাড়ি পরে গেছিলাম।’

রিমিও ঠোঁট উল্টে মলিন কন্ঠে বললো, ‘আরব ভাই ভাবতে রাজ স্যার তোর কাছে আসার জন্য নুরাকে ব্যবহার করছে। এছাড়া তোকে পছন্দ করে জানার পর থেকে এমনিতেও রাজকে সহ্য করতে পারে না। কিভাবে মানানো যাবে বল?’

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিল দীবা। অতঃপর রিমিকে আশ্বাস দিয়ে বললো, ‘আমি মানিয়ে নিবো। এবার খেতে আয়। নুরাকে কত খুশি দেখ।’

‘হ্যাঁ, রাজ স্যারের সঙ্গে দেখা করে আসার পর থেকেই তার মন ভালো হয়ে গেছে।।স্যার মনে হয় জাদু করেছে।’

‘চুপ স্যার স্যার করিস না। কেউ শুনতে পাবে।’

দুই বান্ধুবি ফিশফিশ করতে করতে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো। এসেই যেন চোখ তাদের চড়কগাছে উঠে গেছে। রসগোল্লা সাইজের চোখ দিয়ে নুরার দিকে তাকিয়ে রইছে দুজন। অপরদিকে নুরা হাসিখুশি চেহারায় আয়েশা, নিশিতা ও রোহানার সঙ্গে টেবিলে খারার সার্ভ করছে। রিমি দীবা অবাক হয়ে চুপচাপ টেবিলে গিয়ে বসলো। আরিয়ান গালে হাত দিয়ে নুরার দিকে তাকিয়ে আছে। সাবিত বুকে হাত গুঁজে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা আবরারের নজর এড়ায়নি। সেও অবাক। তবে সেটা বাহিরে প্রকাশ করেনি। রাজের সাথে দেখা করার পরে নুরার আকস্মিক পরিবর্তন তাকে ভাবালো। নতুন এক চিন্তা মাথায় চাপালো। তবুও নিরব। প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলো।

দীবা ও রিমি আয়েশার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতে কি হয়েছে জানতে চাইলো। নুরাকে এমন খুশি দেখে সবাই খুশি। তাই কেউ কিছু বলছে না। নুরা যেভাবে চাইছে করুক। কিন্তু তাদের দুইজনের অতিরিক্ত আগ্রহ দেখে আয়েশা চোখ পাকিয়ে তাকালো। চুপ হয়ে গেলো দুজন। খাওয়ায় মনোযোগ দিলো তারাও।’
______________________

রাত্রী প্রায় সাড়ে দশটা। রিমি নুরার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে দীবা নিজের রুমে গেলো না। ইচ্ছে করেই আবরারের রুমে আসলো। পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো রুম ফাঁকা। ওয়াশরুমের দরজাও খোলা। তাহলে বারান্দায় আছে লোকটা। নিঃশব্দে পায়ের কদম ফেলে বারান্দায় আসলো দীবা। সন্দেহ তার ঠিক হলো। আবরার বারান্দার লাইট অফ করে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের ভিতরের লাইট ও ছাদের লাইট থেকে আসা আলোতেই আবরারের বলিষ্ঠ দেহ একদম স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। একা একা দাড়িতে এতো কি ভাবছে লোকটা? কপাল কুঁচকালো দীবা। চুপচাপ আবরারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আকাশটা সুন্দর না?’

আবরার প্রত্যুত্তর করে নি। দীবা মুচকি হাসলো। ঠোঁটে হাসি নিয়েই বললো, ‘নুরাকে দেখেছেন কত খুশি আজ? আজকের বিকেলের প্ল্যানটা একটা ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে।’

আবরার এবারো নিশ্চুপ। তবুও দীবা নিজের মতো করে কথা বলছে, ‘ভালোবাসতে সময়ের দরকার পরে না। কারোর হুট করেই ভালোবাসা হয়ে যায়। যেমন আপনি। আমাকে আপনি বাগানে দেখেছিলেন তাই না? তার বেহায়াদের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন।’

মৃদু শব্দ তুলে হেসে ফেললো আবরার। দীবাও স্মিতি হেসে বললো, ‘কিন্তু আমার মনে আপনার জন্য ভালোবাসা হুট করে তৈরি হয়নি। আস্তে ধীরে আপনাকে ভালোবাসি। স্যার হয়তো আগে আমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু যখন জানতে পেরেছে আমি বিবাহিত তখন দূরে চলে গেছে। এমনকি দেশও ছাড়তে চেয়েছিলেন শুধুমাত্র তার জন্য যেন আমাদের মাঝে ঝামেলা না হয়।’

আবরার শব্দ করে একটা নিশ্বাস ফেললো। দীবা না থেমে প্রথমের মতোই বলতে লাগলো, ‘স্যার সব কিছু ভুলে গিয়ে নুরাকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইছে। নুরাও স্যারকে ভালোবাসে। তাহলে কেন তাদের ভালোবাসা মেনে নিবেন না?’

চলমান…

নোট : মাত্রই লিখে শেষ করলাম। রিচেক দেই নি। ভুল গুলো উপেক্ষা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ। হ্যাপি রিডিং।💜

3 COMMENTS

  1. Please 🙏 আমার এই গল্পটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে please 🥺 next part গুলো post করে দিন তাড়াতাড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here