নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১

0
1101

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১
শব্দসংখ্যা: ১১২৮

সাদা ইউনিফর্ম পরে কলেজে যাচ্ছে আকিব। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কাঁধে কলেজ ব্যাগ। দূর থেকে দেখলে যে-কেউ ভাববে খুব মেধাবী ছাত্র। কিন্তু সে একদম মেধাবী না। লেখাপড়ায় ভালো না বললেই চলে। তবে ভালো না বলতে সে যে লেখাপড়া করে না, তা কিন্তু না। সে খুব বেশি লেখাপড়া করলেও সেগুলো মনে থাকে না। ক্লাসে স্যার যখন কোনো সহজ প্রশ্ন ধরেন তখনও সে ভুল করে বসে৷ একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন৷ এই তো গতকাল স্যার তাকে প্রশ্ন করলেন, “বলো তো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?”
আকিব জানে প্রশ্নটি খুবই সহজ। তাই সে একটুও বিলম্ব না করে বলল, “স্যার ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে।” সে এটি বলতেই ক্লাসের সবাই হাহা করে হাসতে লাগল। সে এই প্রশ্নটির উত্তর জানে কিন্তু দ্রুত উত্তর দিতে গিয়ে ভুল করে বসছে। তাকে কতবার যে তার শিক্ষকরা বলেছেন তুমি একটু ভেবে চিনতে উত্তর দিয়ো তাহলেই পারবে৷ কিন্তু তারপরেও সে তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিতে গিয়ে ভুল করে।

কলেজে তার কোনো ভালো বন্ধু নেই। সে সবসময়ই চুপচাপ থাকে। অনেকটা অন্তর্মুখী স্বভাবের৷ সে তার নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে।

আজ কলেজে যেতে একটু দেরিই হয়ে গেল। সে কলেজে গিয়ে দেখলো স্যার ইতোমধ্যে ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন। সে স্যারের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে এসে দেখলো ক্লাসের সর্বশেষ বেঞ্চ ছাড়া আর কোনো বেঞ্চে জায়গা নেই। পিছনে বসতে তার একদম ভালো লাগে না। কিন্তু কী আর করার! সে যেহেতু দেরি করে এসেছে তাহলে তাকে তো পিছনে বসতেই হবে৷ তাই সে চুপচাপ পিছনে গিয়ে বসলো।

আকিবকে প্রশ্ন ধরাতে স্যার যেন খুব মজা পান। তাই প্রতিদিনই স্যার আকিবকে প্রশ্ন ধরেন। স্যারের নাম জব্বার মিয়া। চোখে সবসময়ই চশমা পরা থাকে। মুখে গোফ থাকলেও দাড়ি নেই৷ দেখতে অনেকটা রাগী মনে হলেও স্যার খুব-ই রসিক। রসিকতা করতে খুব পছন্দ করেন। বাংলার স্যারদের হয়তো একটু রসিক হতেই হয়।

আকিব বেঞ্চে গিয়ে বসতেই স্যার মজা করে বললেন, “কী আকিব সাহেব, আজ এত দেরি করে এলে যে?”
আকিব গম্ভীর মুখে বলল, “এই তো স্যার, একটু দেরি হয়ে গেল।”
স্যার একগাল হেসে বললেন, “কোনো ব্যাপার নয়, দেরি হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আচ্ছা, তোমাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি।”

জব্বার স্যারকে আকিবের খুব-ই ভালো লাগে। কিন্তু স্যারের এই একটা জিনিস একদম ভালো লাগে না। আকিবকে দেখলেই স্যার প্রশ্ন ধরাতে শুরু করেন৷ কিন্তু কী আর করার! মুখের ওপর তো আর স্যারকে বলা যায় না যে, আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন না। তাই বাধ্য হতেই সে বলল, “আচ্ছা স্যার।”

স্যার হাসিহাসি মুখে বললেন, “প্রশ্নটি খুব-ই সহজ। বলো তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান?”
আকিব এতক্ষণ ধরে ঠিক করে রেখেছে, যত সহজ প্রশ্নই হোক সে দ্রুত উত্তর দিবে না। এই দ্রুত উত্তর দিতে গিয়েই যত ভুল। তাই সে নিজের দুইহাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরেও স্যারের প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে আর একমুহূর্ত দেরি না করে বলে দিলো, “স্যার, গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য।”

স্যার খুশি মনে বললেন, “বাহ! খুব ভালো তো। আজ তো তোমার ভুল হলো না। আচ্ছা, আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি।”

আকিব যেন নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত হলো। প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেও সে তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দ্রুতই উত্তর দিয়ে দিয়েছে। আর দ্রুত উত্তর দিলেই তো যেকোনো সময় ভুল হয়ে যেতে পারে। এখন আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন শোনে আবারও নিজেকে দ্রুত উত্তর না দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে রাখলো।

স্যার বললেন, “বলো তো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার পান?”

প্রশ্নটা খুবই সহজ। কিন্তু আকিব পারছে না৷ তার মাথায় এখন দুটি উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি হলো ১৯১০ আর অপরটি হচ্ছে ১৯১৩। এখন সে কোনটি বলবে তা ভাবার জন্য সময় নিতে চাচ্ছে৷ কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে দ্রুত উত্তর দেওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে। সেই অদৃশ্য শক্তির হুকুম যেন সে ফেলতে পারছে না৷ তাই সে এতকিছু না ভেবে ১৯১০ বলার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো।

এই যে সে এতকিছু ভাবলো তা কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। সে উত্তরটি বলতে যাবে ঠিক তখনই দরজার ওপাশ থেকে একটি মেয়ে মিষ্টি কণ্ঠে বললো, “মে আই কাম ইন স্যার?”
স্যার মেয়েটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে বললেন, “হ্যাঁ, আসো৷ কিন্তু তুমি কি এই ক্লাসের ছাত্রী?”
মেয়েটি ক্লাসে প্রবেশ করে বলল, “জি স্যার, আমি এই ক্লাসেরই।”

মেয়েটি ক্লাসে প্রবেশ করতেই সবাই যেন একটু নড়েচড়ে বসলো। এত সুন্দর মেয়ে এর আগে কেউ-ই দেখেনি। দেখতে ওতোটা ফরসা না, কিন্তু লাবণ্যময়ী। চেহারায় যেন এক অদ্ভুত মায়া রয়েছে৷ চোখগুলো টানাটানা, মাথার চুল কোমর অবধি লম্বা। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে, হাতে পরেছে ব্রেসলেট।

সুন্দরী মেয়েগুলো সাজুগুজুতেও কিন্তু খুব পারদর্শী হয়। তারা জানে ঠিক কোন সাজে তাদেরকে সুন্দর লাগবে। তারা ঠিক সেভাবেই সাজে।

কিন্তু কিছু মেয়ে রয়েছে যারা ভালো করে সাজতে জানে না। নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে গিয়ে এত বেশি সাজে যে মুখটাকে আর মুখ মনে হয় না, মনে হয় যেন পুতুল। এই পুতুলের চেহারার চেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায়ই তাদের বেশি সুন্দর দেখায়। কিছু মেয়ে হয়তো জানে না, এত বেশি সাজার প্রয়োজন নেই, শুধু কাজল পরলেই তাদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

স্যার বললেন, “কিন্তু তোমাকে তো এর আগে কলেজে দেখিনি।”
মেয়েটি মুচকি হেসে বলল, “আসলে স্যার আমি ট্রান্সফার হয়ে এ কলেজে এসেছি। আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় এ শহরে বদলি হয়েছে। তাই এ কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে।”
স্যার বললেন, “আচ্ছা মা, গিয়ে বসো।”

মেয়েটি চারপাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো বেঞ্চই খালি নেই। শুধু পিছনে একড়ি বেঞ্চ খালি যেটায় আকিব বসে আছে। মেয়েটি গিয়ে আকিবের কাছেই বসলো। এতে করে ক্লাসের সব ছাত্র আফসোস করতে লাগল। কেন যে তারা দেরি করে এলো না, দেরি করে এলে নিশ্চয়ই মেয়েটি তাদের কাছে বসতো।

আগেই বলেছি আকিব অন্তর্মুখী স্বভাবের। মেয়েটি তার কাছে এসে বসায় তার বরং একটু অস্বস্তি লাগল। মেয়েটি আকিবের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। আকিবও হাসির জবাবে বোকাবোকা একটা হাসি দিলো।
মেয়েটি বসতেই স্যার বললেন, “তা আকিব বলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার পান?”
আকিব ১৯১০ বলতে যাবে তখন মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, “১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে।” মেয়েটির কথা শোনে আকিবও তা বলে দিলো।
স্যার বললেন, “বাহ! আজ তো দেখি আকিব সব প্রশ্নের উত্তর পারছে। আচ্ছা, এখন আমরা পড়ায় ফিরে যাই।”

বাংলা ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্যার চলে গেলে মেয়েটি আকিবকে বলল, “হাই! আমরা পরিচিত হতে পারি?”
আকিব বলল, “জি, আমি আকিব৷ আর আপনি?”
মেয়েটি মুচকি হেসে বলল, “আমি ঐশী। আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি। তুমি করে বলবে।”
আলতো হেসে আকিব বলল, “আচ্ছা।”
ঐশী বলল, “আমি তো কলেজে নতুন এসেছি। আমার তেমন কোনো বন্ধু নেই৷ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমারও তেমন বন্ধু নেই। চলো, আমরা ফ্রেন্ডশিপ করি।”
“আকিব লাজুক হাসি হেসে বলল, “আচ্ছা।”
ঐশী বলল, “তোমার নাম্বারটা দাও।”

আকিব তার নাম্বার দিলো। তারপর আরো দুইটা ক্লাস করে বাড়িতে চলে এলো।

অনেক ছেলেই ঐশীর সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু ঐশী তেমন পাত্তা দেয়নি৷ আকিব এই জিনিসটা বুঝেনি, ঐশী নিজে আকিবের সাথে কথা বলছে অথচ অন্য ছেলেদের পাত্তা দিচ্ছে না।

কলেজ থেকে গিয়ে অনেকটা ক্লান্ত লাগল আকিবের। সে বাড়িতে গিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।

আকিব পরিবারে সে ছাড়া তার বাবা-মা এবং ছোটবোন সায়রা থাকে। তার বাবা একজন মুদি দোকানদার। মা গৃহিণী। ছোটবোন সায়রা এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসারই বলা যায় তাদের। কিন্তু তারপরেও তাদের সংসার কোনো মতে চলেই যায়।

রাতে টেবিলে বসে বসে লেখাপড়া করছিল আকিব ও সায়রা। দুই ভাই-বোন প্রতিদিন একসাথেই পড়তে বসে। হঠাৎ আকিবের মোবাইলে একটা কল এলো। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো একটা অপরিচিত নাম্বার।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here