#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_৮
শব্দসংখ্যা: ১০১৭
নিশি বলল, “কী দেখছো?”
নিশির কথায় আকিব যেন বাস্তবে ফিরে এলো। সে এতক্ষণ নিশির দিকে তাকিয়ে ছিল তা ভাবতেই আকিবের লজ্জা লাগছে। আকিব লজ্জা পেয়ে নিশির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো৷ তারপর লজ্জা মাখা কণ্ঠে বলল, “না, কিছু না।
নিশি মুচকি হেসে বলল, “লজ্জা পাচ্ছ না-কি?
এ কথায় আকিব যেন আরো বেশি লজ্জা পেলো। তারপর বলল, “তুমি খুব সুন্দর।”
নিশি মুচকি হেসে বলল, “তাই?”
আকিব বলল, “হুম।”
“তাহলে চোখ ফিরিয়ে নিলে কেন?”
“না, এমনি।”
“এত লজ্জা পাচ্ছ কেন?”
“আরে না।”
নিশি বলল, “তুমি মুখে না বললেও বুঝা যাচ্ছে তুমি খুব লজ্জা পাচ্ছ। তুমি ছেলে মানুষ, তুমি লজ্জা পাবে কেন?”
আকিব কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আকিব মাথানিচু করে বসে রইলো। নিশি আলতো করে আকিবের হাতে হাত রাখলো। নিশির এমন কাণ্ডে আকিব যেন হতবম্ব হয়ে গেল। সে এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছিলো এখন আরো বেশি লজ্জা পেল। আকিব দ্রুত তার হাত সরিয়ে নিলো।
নিশি মুচকি হেসে বলল, “শুনো, তুমি আমার কাছে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের দুজনের সেই ছোটবেলা থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ কিন্তু একটা দুর্ঘ’টনায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। না হয় এতদিনে হয়তো আমাদের বিয়ে হয়ে যেত। তবে সমস্যা নেই, আর কয়েকমাসের-ই তো ব্যাপার। তারপর তুমি সব জানতে লারবে। তখন না হয় আমাদের বিয়ে হবে।”
নিশির কথায় আকিব চমকে ওঠলো। তার ঐশীর কথা মনে পড়ে গেল। ঐশী থাকে ভালোবাসে কি-না সে জানে না। কিন্তু সে তো ঐশীকে ভালোবাসে। যদিও মুখ ফুটে কখনো ভালোবাসি বলেনি। তারপরেও ভালোবাসা তো মুখের ব্যাপার না, মনের ব্যাপার। ঐশীর চেয়ে নিশি কয়েকগুণ বেশি সুন্দর, কিন্তু তারপরেও সে যে ঐশীকেই ভালোবাসে।
আকিবকে গভীরভাবে কিছু একটা ভাবতে দেখে নিশি বলল, “কী ভাবছ এতো? এ কথা শুনে তোমার তো খুশি হওয়ার কথা তাই না? আমি জানি তোমার একটু হলেও আমাকে ভালো লাগে। আর তোমার ভালো লাগা না লাগায়-ই বা কী যায় আসে? আমাদের তো এমনিতেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ তোমাকে একদিন পরীস্থানে নিয়ে যাবো।”
আকিব বলল, “কিন্তু নিশি, আমি তো অন্য একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি। কী করবো বলো?”
আকিবের কথাটি যেন নিশির হৃদয়ে তীরের মতো আঘাত করলো৷ তার চোখ জোড়া ছলছল করতে লাগলো৷ আসলে ছোটবেলা থেকেই সে জানে তার বিয়ে ঠিক হিয়ে আছে, এজন্য সে ছোটবেলা থেকেই মনে প্রাণে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই হঠাৎ যে আকিবের কাছে এমন কথা শুনবে এটা সে কল্পনাও করেনি।
ছলছল চোখে সে বলল, “কী বলো? কাকে? তুমি তো সাধারণ কোনো মানুষ না, তুমি কেন সাধারণ মানুষকে ভালোবাসলে?”
নিশির চোখ ছলছল করছে দেখে আকিবেরও খুব খা’রাপ লাগলো। তার জন্য কেউ কষ্ট পাক এটা সে চায় না। আকিব বলল, “কী করবো বলো? ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার। কখন কাকে ভালো লেগে যায় তা কেউ বলতে পারে না। মেয়েটিকে আমার হঠাৎ করেই ভালো লেগে গেছে৷ তবে এখনো ভালোবাসি বলতে পারিনি।”
নিশি বলল, “মেয়েটি কি তোমালে ভালোবাসে?”
“জানি না। হয়তো বাসে নয়তো না।”
“তাহলে তুমি একা-একা কেন থাকে ভালোবাসবে? শুনো, তুমি যেহেতু এখনো বলোনি যে তুমি তাকে ভালোবাসো, তাহলে আর বলার দরকার নেই।”
আকিব বলল, “কিন্তু আম তো তাকে সত্যিই ভালোবাসি।”
“সত্যি ভালোবাসলেও তোমার ভালোবাসা এখনো ওতোটা গভীর হয়নি। আমি জানি তুমি একটু হলেও আমাকেও ভালোবাসো৷ তুমি কি আমার চোখে চোখ রেখে বলতে পারবে যে আমাকে ভালোবাসো না?”
আকিব জানে সে একটু আগেই নিশির সেই রূপবতী মুখ দেখে তার প্রেমে পড়েছে। এত সুন্দর মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ‘ভালোবাসি না’ কথাটি কোনো মহাপুরুষও বলতে পারবে না। তাই আকিব চুপ করে রইলো৷ তার মনে এখন অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। সে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ আকিবকে চুপ থাকতে দেখে নিশি বলল, “তোমার নীরবতাই বলে দেয় তুমি তা করতে পারবে না। তুমি আমাকেও ভালোবাসো। হয়তো তুমি দুজনকেই সমান ভালোবাসো।”
কথাটি শুনে আকিবের একটু খা’রাপ লাগলো। সে একসাথে দুজনকেই ভালোবাসে? কথাটা কি আসলেই সত্য? কথাটি যে মিথ্যা তা বলারও তো সুযোগ নেই। তবে কি সত্যি সে একসাথে দুজনকেই ভালোবাসে? তার ভাবতেই লজ্জা লাগছে সে কীভাবে একসাথে দুজনযে ভালোবাসলো। কোনো ভালো প্রেমিক তো একসাথে দুজনকে ভালোবাসতে পারে না। বরং ভালো প্রেমিকের বৈশিষ্ট্য হলো একজনকেই হাজার উপায়ে ভালোবাসা। সে নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। এ তাহলে একজন ভালো প্রেমিকও হতে পারলো না।”
নিশি বলল, “কী ভাবছো? আমার কথাগুলো কি মিথ্যা? মিথ্যা হলে জবাব দাও।”
আকিব চুপ করে রইলো। নিশি আবারও বলল, “তোমার নীরবতাই বলে দিচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি না। শুনো, তুমি একই সাথে তো দুজনকে ভালোবাসতে পারো না। তোমার তো একজনকে ভালোবাসা উচিত তাই না?”
আকিব এখনো চুপ করে আছে। সে ঠিক কী বলবে বুঝতে পারছে না৷ নিশি বলল, “ওই মেয়ে কে? নাম কী ওর?”
আকিব বলল, “নাম ঐশী। আমরা একই ক্লাসে পড়ি।”
নিশি বলল, “তাহলে তো শুধু ফ্রেন্ড হয়েই থাকতে পারো।”
“হুম, আমরা ফ্রেন্ড-ই। কিন্তু ওর কথাবার্তা, চলাফেরা সবকিছু আমার খুব ভালো লাগে।”
“ভালো লাগতে পারে স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি ওইভাবে দেখবে না। তুমি ভালো লাগার চোখে দেখো বলেই ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এটা সবসময় মাথায় রাখবে।”
আকিব বলল, “কিন্তু আমি এখনো তা বিশ্বাস করতে পারছি না।”
নিশি বলল, তোমাকে এখনই বিশ্বাস করতে হবে না। আর তো মাত্র কয়েকমাস, বিশ্বাস করো তখন সব জানতে পারবে। তোমার আসল বাবা-মা’কে দেখবে। আমার পরিচয় জানবে। সবকিছুই জানতে পারবে।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”
নিশি বলল, “তা ঐশীর ভূত কি তোমার মাথা থেকে গেল?”
“জানি না। এত সহজে যাবে না।”
“আচ্ছা, সমস্যা নেই। তুমি যখন সব জানতে পারবে তখন গেলেই হবে।”
“আচ্ছা।”
আকিব ও নিশি দুজন-ই চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ নিশি বলল, “এক জায়গায় যাবে?”
আকিব বলল, “কোথায়?”
নিশি বলল, “তোমাদের এখান থেকে প্রায় ৭০কি.মি. দূরে একটি জলপ্রপাত আছে৷ ওখানে আমি এবং আমার সখীরা প্রায় সময় ঘুরে বেড়াতাম। তুমি চাইলে নিয়ে যাবো৷ ভালো লাগবে ওখানে গেলে।”
আকিব বলল, “এই রাতে এত দূরে? না বাবা, আমি যাব না।”
নিশি হেসে বলল, “আরে উড়ে উড়ে যাব৷ বেশি সময় লাগবে না৷”
আকিব বলল, “তা-ও না। আজকে এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্যদিন যাওয়া যাবে।”
“আচ্ছা, আজ তাহলে তুমি চলে যাবে?”
“হুন, আজ তো অনেকক্ষণ ছিলাম।”
“হুম, কিন্তু তাও মনে হচ্ছে মাত্র কিছুক্ষণ।”
“আচ্ছা আসি।”
“আচ্ছা যাও তাহলে।”
আকিব আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো। অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ সকালে কলেজে যেতে হবে। দেরি করে ঘুমালে এমনিতেই সকাল-সকাল উঠতে পারে না সে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে ঘুমাতে হবে।
আকিব ঘরে গিয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তারপর মুহূর্তেই যেন তার চোখে রাজ্যের ঘুম চলে এলো।
সারারাত অস্পষ্ট কী যেন স্বপ্নে দেখলো কিছুই মনে নেই। সকালবেলা সায়রার ডাকে ঘুম ভাঙলো। আজ ঘুম থেকে উঠে মনটা খুব ফ্রেশ লাগলো। রাতে প্রশান্তির ঘুম হয়েছে। আর রাতে প্রশান্তির ঘুম হলে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সকালটাকে যেন আরো সুন্দরতম মনে হয়।
চলবে…