নীল_আকাশের_পরী #এম_আর_এ_আকিব #পর্ব_১৫

0
189

#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১৫
শব্দসংখ্যা: ১১৮৮

আকিব লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠলো। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। কী ভ’য়ংকর দুঃস্বপ্ন-ই না সে দেখেছে! তার কাছে মনে হয়েছিল এটি স্বুন নয়, বাস্তব। আকিব বসে বসে ভাবতে লাগলো এই স্বপ্ন সে কেন দেখলো? এটা কি বাস্তব হতে পারে? না কি এটা শুধুই তার ভাবনা এবং কল্পনা?

আকিব কিছুক্ষণ বসে থেকে অদ্ভুতভাবে দেওয়াল থাকা তা’লোয়ারের দিকে তাকালো। তারপর আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখে ঘুম চলে এলো।

সকালে একজন প্রহরীর ডাকে তার ঘুম ভাঙলো। আকিব ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার স্বপ্নে দেখা প্রহরীর সাথে তার অনেক মিল রয়েছে। যদিও স্বপ্নে ঘরটি অন্ধকার থাকায় প্রহরীর মুখ তেমন দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও কিছুটা হলেও শারিরীক গঠন অনুমান করা গেছে।

আকিবকে উদ্দেশ্য করে প্রহরী বলল, “স্যার, ঘুম থেকে ওঠেন।” তারপর ডান দিকে ইশারা করে বলল, “ওই দিকে ওয়াশরুম আছে। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন৷ আর এই ট্রে-তে আপনার জন্য নাশতা নিয়ে এসেছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবেন।”

আকিব কিছুটা অবাক হলো। সে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সবার সাথে একসাথে বসে নাশতা করেছে। কিন্তু এভাবে নির্দিষ্ট একটি ঘরে নাশতা দেওয়া হলো কেন? আর নিশি-ই বা কোথায়? এই নাশতায় কি কোনো কিছু মেশানো আছে? এই প্রহরীটাকে আকিবের বিশ্বাস হয় না। আকিব আরো কিছুক্ষণ প্রহরীর দিকে খুব গভীরভাবে চেয়ে রইলো।

প্রহরী বলল, “স্যার, আপনি আমার দিকে এভাবে চেয়ে আছেন কেন?”
আকিব বলল, “না, কিছু না।”
প্রহরী বলল, “তাহলে আমি যাই?”
আকিব হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। যদিও আকিব জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল যে নিশি কোথায়? কিন্তু সে আর প্রশ্নটি করার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

প্রহরী চলে গেলে আকিব ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর বিছানায় বসে ট্রে-তে রাখা নাশতাগুলো দেখতে লাগলো। এই প্রহরীটাকে আকিবের সন্দেহ হয়। এমনও তো হতে পারে এই নাশতাগুলোতে বি’ষ মিশিয়ে দিয়েছে। এখন আকিবের কী করা উচিত? তার খুব ক্ষিধে পেয়েছে৷ পাশে রাখা নাশতাগুলোর দিকে সে বারবার তাকাচ্ছে৷ এ ধরনের নাশতা পৃথিবীতে নেই। দেখে মনে হচ্ছে খুবই সুস্বাদু। কিন্তু তারপরেও এগুলো খেতে তার মন সায় দিচ্ছে না৷ সে শুধু নিশির জন্য অপেক্ষা করছে। নিশি আসলে নিশিকে আগে নাশতাগুলো খাইয়ে দিতো৷ কিন্তু নিশিরও তো দেখা নেই। আকিবের যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেল। সে ভাবলো নিশ্চয়ই নিশিও এর সাথে জড়িত। এজন্যই নিশির কোনো দেখা নেই। আকিব ভাবলো প্রহরীকে নিশির কথা জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। এটা আমার বাঁচা-ম’রার প্রশ্ন। এখানে লজ্জা পেলে চলবে না।

তাই সে সব সংকোচ ভুলে পাশে রাখা সুইচে চাপ দিলো। কিছুক্ষণ পরেই সেই প্রহরী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। এই প্রহরীকে দেখলেই আকিবের রা’গ লাগে। প্রহরী এসে বললো, “স্যার, ডেকেছিলেন?”
তারপর ট্রে-তে রাখা নাশতার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি এখনো নাশতা করেননি? আমি ভাবলাম খাওয়া শেষ করে আমাকে ডেকেছেন।”

প্রহরীর কথায় আকিবের যেন আরো সন্দেহ হলো। সে ভাবলো প্রহরী নিশ্চয়ই ভেবেছে যে সে নাশতা খেয়ে মৃ’ত্যু য’ন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে প্রহরীকে ডেকেছে। কিন্তু সে এত বোকা না। এ ভুল সে করবে না। প্রহরী বলল, “কী স্যার? চুপ করে আছেন কেন?”
আকিব বলল, “না, এমনি। আচ্ছা, তোমার নামটা কী?”
প্রহরী বলল, “আমার নাম খলিল। কেন স্যার?”
আকিব বলল, “না, এমনি। জিজ্ঞেস করতে পারি না না-কি?”
প্রহরী বলল, “জি, পারেন স্যার।”
আকিব বলল, “তুমি এখানে কতদিন হয় কাজ করো? তুমি ছাড়া আর কয়জন কাজ করে এখানে?”
খলিল বলল, “স্যার, আমি তো অনেকদিন থেকে কাজ করি। প্রায় বিশ বছর তো হবেই। আরো বেশিও হতে পারে। আর এখানে প্রায় হাজার জন প্রহরী কাজ করে৷ কিন্তু এগুলো জানতে চাচ্ছেন কেন? আপনি নাশতা খেয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

আকিবের মনে আরো বেশি সন্দেহের সৃষ্টি হলো। লোকটা শুধু নাশতা খাওয়ার কথা বলছে কেন? তার উদ্দেশ্য কী?
আকিব বলল, “আরে নাশতা খাবো তো৷ আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।”
খলিল বলল, “জি স্যার, বলুন।”
আকিব বলল, “তুমি কি ত’লোয়ার চালাতে পারদর্শী? তুমি ছাড়া বাকি প্রহরীরাও কি ত’লোয়ার চালাতে পারে?”
খলিল হেসে বলল, “পারি না মানে? এখানে যতজন প্রহরী আছে তাদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে ভালো ত’লোয়ার চালাতে পারি। আমার সাথে কেউ পারে না।”

আকিবের সন্দেহটা আরো দৃঢ় হলো। সে বলল, “আচ্ছা নিশি কোথায়? ওকে ডেকে দাও তো।”
খলিল বলল, “আচ্ছা, আমি নিশি ম্যাডামকে ডেকে দিচ্ছি৷ আপনি নাশতা করে নিন।”
আকিব বলল, “ওকে আসতে বলো। তারপর করবো।”
খলিল বলল, “আচ্ছা।”

খলিল চলে গেল। আকিব বসে বসে নিশির অপেক্ষা করছে। কিন্তু নিশি এখনো আসছে না। এদিকে এখনো কিছু না খাওয়ার জন্য তার পেট যেন চু চু করছে। মাথাও ঘুরছে। চোখের সামনে এত সুন্দর খাবার দেখে ইচ্ছে করছে খেয়ে নিতে। কিন্তু প্রাণ বাঁচানো তো আসল। তাই সে ধৈর্য ধরে বসে রইলো।

কিছুক্ষণ পর নিশি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। সকালবেলা কখনো নিশিকে এভাবে দেখা হয়নি। খুব-ই সুন্দর লাগছে। কিন্তু পেটে ক্ষুধা থাকায় আকিবকে এই রূপ তেমন আকর্ষণ করলো না।

নিশি এসে বলল, “কী ব্যাপার? তুমি নাকি নাশতা করছ না? কেন? তাড়াতাড়ি করে নাও?”
আকিব বলল, “তুমি কোথায় ছিলে? তুমি সেই রাতে চলে গেলে। তারপর আর কোনো দেখা নেই। তোমার উচিত ছিল সকালে এসে আমাকে নাশতা দেওয়া। তুমি তা না করে প্রহরী দিয়ে নাশতা প্রেরণ করলে। এটা কি ঠিক হলো বলো?”
নিশি বলল, “বাহ! আমাকে দেখার জন্য ছটফট করছিলে বুঝি? এত ভালোবাসা!”
আকিব বলল, “হুম, খুব ছটফট করছিলাম।”
তারপর মনে মনে বলল, “তবে ভালোবাসার জন্য নয়। খাবারে কোনো কিছু মিশানো আছে কি-না তা দেখার জন্য।”
নিশি বলল, “আচ্ছা, এখন তো আমি এসেছি। খেয়ে নাও।”
আকিব বলল, “আমি তো ছোটবেলা থেকেই সবার সাথে একসাথে বসে নাশতা করি। একা একা খেতে পারি না। তাই খাচ্ছি না। চলো দুজন একসাথে খাবো।”
নিশি বলল, “কিন্তু আমাদের এখানে নাশতা সবার ঘরে গিয়েই দেওয়া হয়। তারপর ভাত খাওয়ার সময় সবাই একসাথে খায়।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, তোমরা না হয় করো বুঝলাম
কিন্তু আজ আমার সাথে তোমার কিন্তু খেতে হবে।”
নিশি বলল, “সরি, এটা পারবো না।”
আকিবের মনে যেন বড় একটা ধাক্কা লাগল। তারপর বলল, “কেন? কেন পারবে না?”
নিশি বলল, “কারণ আমি নাশতা করে নিয়েছি। এখন তুমিই বলো দুইবার কীভাবে করবো?”
আকিব বলল, “দুইবার করো আর পাঁচবার করো, আমার সাথে কিন্তু তোমার নাশতা করতে হবে। আমি তোমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবো।”

নিশি হাসতে হাসতে বলল, “বাব্বাহ! তুমি এত রোমান্টিক! আগে তো জানতাম না! প্রতিদিন আমাকে খাইয়ে দেবে না-কি?”
আকিব বলল, “হুম।”
নিশি বলল, “আচ্ছা, আগামী দিন থেকে দিয়ো। আজ তো আমি খেয়ে নিয়েছি। তাই খেয়ে নাও।”
আকিব বলল, “না, এভাবে হবে না। আজ যেহেতু তুমি খেয়ে নিয়েছ তাই প্রত্যেকটি জিনিস থেকে তুমি একটু একটু খাবে। আমি খাইয়ে দেবো।”
নিশি বলল, “ইশ রে! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। আমি এইমাত্র নাশতা করেছি। আমার পেটে একটুও ক্ষিধে নেই। তুমি খেয়ে নাও।”
আকিব বলল, “না, তুমি না খেলে কিন্তু আমি খাবো না।”
নিশি হেসে বললো, “তাই বুঝি? আচ্ছা দাও। কিন্তু একটু দিয়ো।”
আকিব বলল, “আচ্ছা, একটু দেবো। কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিস থেকে একটু একটু খেতে হবে।”
নিশি বলল, “উফ! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। আচ্ছা দাও।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”

তারপর আকিব নিশিকে একটু একটু করে সব খাইয়ে দিলো। নিশিও খেলো। আকিব ভাবলো তাহলে কি কিছু মেশানো নয়? না কি একটু পর এর কাজ শুরু হবে?

নিশি বলল, “আমি তো খেলাম। এখন তো খাও।”
আকিব বলল, “হুম খাবো।”
নিশি বলল, “আচ্ছা বুঝেছি। আমি খাইয়ে দিতে হবে বলে খাচ্ছ না?”
আকিব বলল, “না, মানে হ্যাঁ।”
নিশি বলল, “আচ্ছা খাইয়ে দিচ্ছি।”

আকিবের মনে ভয় কাজ করছে। যদি একটু পর বি’ষক্রিয়া শুরু হয় তাহলে?
কিন্তু নিশি যখন তাকে মুখে তুলে দিলো তখন সে না করতে পারলো না। এত সুন্দর রমণী যদি মুখে তুলে দেয় তাহলে বি’ষকেও অমৃত মনে হবে। আকিব মুখ হা করলো। নিশি খাইয়ে দিলো। খুব-ই সুস্বাদু নাশতা। খুব মজা লাগছে। তারপর একে একে সবকিছু খাইয়ে দিলো। আকিবও তৃপ্তি মিটিয়ে খেলো। এত মজাদার নাশতা সে ইতোপূর্বে খায়নি। কিন্তু তার মনে এখনো ভয় কাজ করছে। যদি কিছুক্ষণ পরে বি’ষক্রিয়া শুরু হয়।

চলবে…

[বি.দ্র. পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আরো বড়ো করে দেবো। তাই গল্পটি ভালো লাগলে অন্যদেরও সাজেস্ট করুন। আর এমনিতেও ১০০০ এর কম শব্দে গল্প দেই না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here