আড়াল
পর্ব – ২
লেখকঃ #Ramim_Istiaq
গিফট বক্সটা খুলে তিন্নি অবাক হয়ে যায়।
তার পছন্দের পায়েল যেটা সে টাকার জন্য কিনতে পারেনি সেটা। তিন্নি অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় কারন সেদিন সে একাই গিয়েছিলো তাই এটা আরতো কারোর জানার কথা না। তবে কি দোকানদার গিফটটা পাঠিয়েছে নাকি?
নাহ কি ভাবছি এসব দোকানদারতো বৃদ্ধ সে কেনো পাঠাতে যাবে?
তিন্নির নিজেকে এবার বোকা মনে হয়!
বক্সটা আরো ভালো করে দেখে আরো দুইটা চিরকুট পেলো।
একটাতে আগের বারের মতো লিখা খুশিতো?
আরেকটাতে লিখা,
– আমাকে খুজে লাভ নেই প্রিয় সময় হলে আমি নিজে থেকেই সামনে চলে আসবো।
তিন্নির রাগ হচ্ছে প্রচুর।তবে কিছু করার নেই। আড়াল থেকে যে এই কাজগুলো করছে তাকে সামনে না পেলে কোনো কিছু করার উপায় নেই।
ওদিকে রামিম ছেলেটা জানাতে পারছেনা তিন্নিকে কারন চাকরিটা এখনো হয়নি। রামিম জানে রিলেশনে গেলেই তাদের বিয়েটা আর হবেনা। এরচাইতে চাকরিটা হোক সরাসরি বিয়ের প্রোপোজাল দিবো হয়তো রাজি হয়ে যাবে।
রামিমের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী সে কাজ করছে।
ইদানীং তিন্নি বেশি বেশি ছাদে আসছে সন্দেহ করছে নাকি রামিমকে?
রামিম ছাদে উঠে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো বিকেল বেলা হঠাৎ তিন্নি ছাদে আসে।
– এই আপনি এমন কেনো বলেন তো!
রামিম তিন্নির কথায় কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
– কে কেমন?
– এইযে হাদারাম গাধার সর্দার। এভাবে কেউ পড়ে?
বিকেলবেলা কোথায় প্রকৃতি উপভোগ করবে তা না উনি আছেন বইয়ের ভিতর ডুবে।
– আসলে সামনে পরিক্ষা তো লাস্ট সেমিষ্টার এটাই তাই একটু পড়ার চাপ বেশি।
– ধুরো রাখেন আপনার চাপ। আমাকে ওই পেয়ারাটা পেড়ে দেন।
– কিন্তু ওটাতো অনেক ওপরে।
– আমাকে উচু করে ধরুন আমি পাড়ছি।
– আপনি যেই মোটা আমি আপনাকে উচু করতে পারবোনা পড়ে দুজনেরই কোমড় ভাঙবে।
– ই ই ই কি বল্লি তুই? আমি মোটা? তুই মোটা তোর চৌদ্দ গুষ্টি মোটা।
রাগে গলা টিপে ধরে তিন্নি। দম বন্ধ হয়ে আসে রামিমের।
রামিম মনে মনে ভাবে এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে এভাবেই সারাজিবন চাপ খেতে হবে মানে গলা চেপে ধরবে আরকি।
আসলে তিন্নি একটু নাদুসনুদুস মোটা না।
বাঙালি মেয়েরা যতটুকু হলে পার্ফেক্ট থাকে ঠিক ততটাই। রামিমের সবচেয়ে বেশি পছন্দ তিন্নির চুল।
কোমড় ছাড়িয়ে যাওয়া ঘন চুলগুলা ছেড়ে দিয়ে যখন তিন্নি ছাদে আসে রামিমের ইচ্ছে হয় তার চুলে মুখ লুকিয়ে বসে থাকার।
দুদিনপর তিন্নির ফোনে একটা মেসেজ আসে ছেলেটার সাথে এতো মেলামেশা করবেন না খারাপ লাগে।
তিন্নি কিছুটা অবাক হলেও রামিমের ওপর থেকে সন্দেহ কেটে যায়।
রামিমও সন্দেহের তালিকা থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি।
তিন্নির কাজটা এবার শক্ত হয়ে পড়ে।
রামিম না হলে কে হতে পারে।
কে আড়াল থেকে তার ওপর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করছে?
তিন্নি উত্তেজনায় কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।
ইদানীং কিছু ভালো লাগেনা তার মন শুধু সেই আড়ালে থাকা ছেলেটার কথাই ভাবে।
রামিম ভাবে বলে কি দিবো?
না থাক সময় হোক। সে হারাতে চায়না তিন্নিকে।
আরতো মাত্র কয়টা মাস তারপর চাকরিটা হয়ে গেলেই তিন্নিকে বিয়ে করে নিবে।
মেয়েটাকে কেনো জানি প্রচুর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে রামিমের।
এতো কাছে থেকেও দুরে থাকার কষ্ট সেই বুঝে তিন্নির কষ্টটাও অনুভব করতে পারে রামিম তবে একদিন বিয়ে করে হুট করে তিন্নিকে চমকে দিবে রামিম।
ভাবনাটা এমনই।
তিন্নিরও সামনে পরিক্ষা তবে পড়ায় মন বসছে না তার। যাই করতে যাক না কেনো সেখানেই অাড়ালে থাকা ছেলেটার কথা মাথায় ঘুরে।
যতদিন না ছেলেটাকে সামনে পাবে ততদিন ভাবনা কমবেনা।
দেখা হলে কি হবে কি বলবে কি করবে এসব ভেবেই দিন কাটে তিন্নির। ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলে তিন্নি।
কেটে যায় আরো কিছুদিন কয়েক মাস।
তিন্নির অনেকগুলা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে তবে সবগুলাই মানা করে দিয়েছে তিন্নির বাবা।
তিন্নির অমতে বিয়ে দিবেনা সে।
যা হওয়ার হয়ে গেছে আর বাকিটা খোয়ানোর ইচ্ছে নাই তিন্নির বাবার।
তিন্নির অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হতে চলেছে।
তার ফোনে একটা মেসেজ আসে আজ,
– আপনি চাইলে সামনে আসবো খুব তারাতারি।
উত্তরটা ফোনে নয় ঘুড়িতে লিখে উড়িয়ে দিয়েন আমি বুঝে নিবো।
To be continue….?