#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১৯
শব্দসংখ্যা: ১২৩০
শুয়ে শুয়ে আকিব ভাবছে এসব সে কী দেখলো? সে কি ঘুমে ছিল? কিছু ভাবতে পারছে না। তার কাছে সবকিছুই বাস্তব মনে হচ্ছে। এখন নিশিকে জিজ্ঞেস করে তাকে নিশ্চিত হতে হবে। তার বাবা কে? তার চাচা-চাচি কে? তাদের কোনো সন্তান আছে কি-না? তার মা-কে কোথায় ব’ন্ধি করে রাখা হয়েছে? তার বাড়ি কোথায়? অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর নিশির কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে গেল। শেষ রাতে ঘুমিয়েছে বলে সকালে ঘুম ভাঙলো না। সায়রা ডাকতে এলে সে বলল যে সে আজ কলেজে যাবে না। সায়রাও আর বিরক্ত করলো না।
অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সে সকালের নাশতা করে নিলো। তারপর অনেকক্ষণ সে ভাবলো কীভাবে কী করতে হবে। তার মা-কে উ’দ্ধার করার কোনো উপায় এ মুহূর্তে সে জানে না। কিন্তু নিশি নিশ্চয়ই জানে। তাই সে নিশির জন্য দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে গেল। কিন্তু রাত যেন হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সময় যেন আটকে গেছে।
অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রাত হয়ে হলো। আকিব রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে গেল নিশির কাছে। গিয়ে দেখলো নিশি ইতোমধ্যেই চলে এসেছে। আকিব নিশিকে দেখেই বলল, “জানো, আমি রাতে অনেককিছু স্বপ্নে দেখেছি। এখন আমার কী করতে হবে বলো?”
নিশি বলল, “তোমার এখন অনেক কাজ আছে। তুমি তোমার মা-কে উদ্ধার করতে হবে। তোমার চাচা এখন অনেকটা বৃদ্ধ। তবে তোমার চাচাতো ভাই আর ভাবি আছে। ওরাও ঠিক তোমার চাচার মতো হয়েছে। তুমি তাদের থেকে তোমার মা-কে উ’দ্ধার করতে হবে।”
আকিব বলল, “তাহলে আমাকে ওখানে নিয়ে চলো।”
নিশি বলল, “হুম, নিয়ে যাবো। তবে আমি তোমার জন্য একটি জিনিস নিয়ে এসেছি।”
আকিব বলল, “কী?”
নিশি তার হাতে থাকা ব্যাগটি থেকে একটি তর’বারি বের করে বলল, “এই নাও৷ এটি দিয়েই তুমি তাদের হ’ত্যা করবে আর তোমার মা যে বোতলে ব’ন্ধি সেই বোতলকে ধ্বং’স করবে। তাহলেই তোমার মা আবার ফিরে আসবেন। আর তোমার বাবাকে হ*ত্যার প্রতিশোধ তো তোমাকে নিতেই হবে।”
আকিব হাতের মুঠি শক্ত করে বলল, “অবশ্যই। আমাকে বদলা নিতে হবে। যারা আমার আব্বু-আম্মুকে এমন ক’ষ্ট দিয়েছে আমি তাদের ছাড়বো না।”
নিশি বলল, “আজ-ই যাবে? না কি কয়েকদিন পরে?”
আকিব বলল, “না, আমি আজকেই যেতে চাই। আমার যে আর দেরি সহ্য হচ্ছে না।”
নিশি বলল, “তুমি কি পারবে?”
আকিব বলল, “হুম, আমাকে পারতেই হবে। আমাকে আমার বাবা হ’ত্যার প্রতিশো’ধ নিতে হবে।”
নিশি বলল, “তাহলে আমার কাছে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি যেহেতু মানুষ তোমাকে তারা অন্য কোনোভাবে ব’ন্ধি করতে পারবে না। করলে শুধু শক্তির জো’রেই করবে।”
আকিব বলল, “হুম, কিন্তু আমি তাদেরকে কোনো সুযোগ-ই দেবো না আমাকে ব’ন্ধি করার।”
তারপর আকিব নিশির কাছে গিয়ে নিশির গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর নিশি ধীরে ধীরে নিশিও উপরে উঠতে লাগলো। উপরে উঠার পর নিশি খুব দ্রুত সামনের দিকে যেতে লাগলো। যেতে যেতে আকিব বলল, “আচ্ছা, আমরা যে জায়গায় যাচ্ছি সে জায়গার নাম কী?”
নিশি বলল, “জায়গার নাম স্বপ্ন পুরী। কেন?”
আকিব বলল, “এরকম নাম তো আগে কখনো শুনিনি।”
নিশি বলল, “শুনবে কীভাবে? তুমি কি সব জায়গার নাম জানো না-কি?”
আকিব বলল, “না, তা ঠিক না। কিন্তু নামটা কেমন জানি।”
নিশি বলল, “নাম দিয়ে কী কাজ বলো? চলো তো।”
আকিব বলল, “আর কত দূর?”
নিশি বলল, “এই তো, চলে এলাম বলে।”
আরো কিছুক্ষণ চলার পর নিশি ধীরে ধীরে নিচে নামতে লাগলো। আকিব বলল, “এসে গেছি না-কি?”
নিশি বলল, “হুম, চলে এসেছি।”
তারপর দুজন-ই মাটিতে পা রাখলো। আকিব চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগলো। চারপাশে অনেক গাছগাছালি। অনেকটা বন-জঙ্গলের মতো। দেখে অজপাড়া গাঁ বলে মনে হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে আদৌও কেউ বসবাস করে কি-না। আকিব নিশিকে বলল, “এটা তো বন-জঙ্গলের মতো। এখানে কি কেউ থাকে?”
নিশি ডান দিকে ইশারা করে বলল, “হ্যাঁ, থাকে তো। ওই দেখো একটি বাড়ি দেখা যাচ্ছে। ওই বাড়িটা-ই তোমাদের। এখন তোমার চাচা দখল করেছেন।”
আকিব ডান দিকে লক্ষ করে দেখলো আসলেই একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। এই জায়গায়ও কেউ থাকে না-কি আকিবের বোধগম্য হলো না। ওরা এখানে থাকে কেন? এটা কি আদৌও কোনো গ্রাম? না কি শুধু এক পরিবার-ই থাকে?
নিশি আকিবকে বলল, “কী ভাবছ এমন করে? চলো?”
আকিব তার হাতে থাকা তর’বারিটা শক্ত করে ধরে বলল, “হুম চলো।”
তারা দুজন হাঁটছে। চারদিকে শুনশান নীরবতা। হাঁটার সাথে পাতার মড়মড় শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এ রাস্তায় অনেক দিন কেউ আসে না। কিন্তু কেন? এটা যদি বাড়ি হয় তাহলে তো মানুষের আনাগোনা থাকার কথা। কিন্তু এমন কেন জায়গাটি? আকিব সন্দেহের চোখে নিশির দিকে তাকালো। আদৌও কি নিশি তাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছে? না কি সবকিছুই নিশির পরিকল্পনা? নিশি কি তার ক্ষ’তি করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে? আকিবের মনে একটু ভয় কাজ করছে। সে সামনে অগ্রসর হ্নে কি হবে না ভাবতে লাগলো। কিন্তু এখানে থেমে গেলেও তো লাভ নেই। সে তো এখান থেকে বাড়িতে যেতে পারবে না। তাই এখন নিশির কথামতো চলা-ই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই আকিবও নিশির সাথে সামনে এগুতে লাগলো।
ধীরে ধীরে তারা পৌঁছে গেল তাদের কাঙ্ক্ষিত বাড়িতে। বাড়িটা ইটের তৈরি। এই জঙ্গলের মধ্যে ইটের বাড়ি কেমন যেন লাগছে। আকিব দেখলো ঘরের দরজা বন্ধ। ভেতর থেকে কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। হয়তো সবাই ঘুমে। নিশি বলল, “দরজা বন্ধ। ধাক্কা দাও।”
আকিব বলল, “ভয় করছে।”
নিশি বলল, “এতেও ভয় পেলে হবে?”
আকিব বলল, “আচ্ছা, দাঁড়াও।”
তারপর ধীর পায়ে গিয়ে দরজার ধাক্কা দিলো। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। তারপর একের পর এক ধাক্কা দিতে লাগলো। কিন্তু ভেতরে কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। আকিব নিশিকে বলল, “কী ব্যাপার? কেউ তো নেই।”
নিশি বলল, “থাকার তো কথা। জোরে ধাক্কা দাও।”
আকিব আরো জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো। হঠাৎ ভেতর থেকে কে জানি বলল, “কে? এত রাতে দরজা ধাক্কায় কে?”
আকিব নিশির দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বলল, “কী বলবো?”
নিশি হাতের ইশারায় আকিবকে চুপ থাকতে বলে সে নিজে বলল, “আমরা একটা বি’পদে পড়ে এখানে এসেছি। একটু দরজা খুলুন।”
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, “হুম, খুলছি। দাঁড়ান।”
নিশি ফিসফিস করে বলল, “দরজা খুলছে। সাবধানে থেকো।”
একটু পর একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো। বয়স বেশি না। ৩০ অথবা ৩৫ এরকম হবে। সে দরজা খুলে আকিব এবং নিশিকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। নিশির ডানা দেখে বুঝে গেল যে নিশি একজন পরী। সাথে সাথে জোরে চিৎকার করে বলল, “বাবা গো, পরী এসে গেছে গো বদলা নিতে। তুমি কোথায় বাবা তাড়াতাড়ি আসো।”
কথাটি বলেই দিলো এক দৌড়। চিৎকার শুনে ওর স্ত্রীও ঘুম থেকে উঠে হকচকিয়ে গেল। অন্য একটা ঘর থেকে ওর বাবা দৌড়ে ছুটে এলো। তিনি অনেকটা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন।
আকিব আর দেরি করলো না। দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলল, “আমার মা কোথায় বল?”
ছেলেটা বলল, “আমি জানি না।”
আকিবের যেন রাগে মাথায় র’ক্ত উঠে গেল। সে ত’রবারি ওর মাথায় লাগিয়ে বলল, “জানিস না তো পরী দেখে ভয় পেলি কেন? বল, না হয় মে’রে ফেলবো।”
ছেলেটি ভয়ে বলল, “আমি জানি না। কিচ্ছু জানি না।”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বাবা বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও বাবা। আমি তোমার মায়ের খোঁজ দেবো।”
আকিব বলল, “তাড়াতাড়ি বলেন। সময় কম। না হয় এখন-ই আপনার ছেলেকে…”
আকিব কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তার আগেই ছেলেটির বাবা বললেন, “দিচ্ছি বাবা দিচ্ছি।”
কথাটি বলতেই পাশে থাজা নিশি চিৎকার করে উঠলো। নিশি বলল, “উফ! আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি পারছি না। কে আমার কী করছে? আমার শরীর ছোট হয়ে যাচ্ছে।”
এরকম বলে চিৎকার করতে লাগলো। আকিব তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি নিশি ছোট হয়ে সামনের দিকে চলে যাচ্ছে। ও ঘর থেকে একজন তান্ত্রিক একটা বোতল নিয়ে এসেছে। নিশি ধীরে ধীরে সেই বোতলে ডুকে গেল। তান্ত্রিক বোতলের ছিপি লাগিয়ে দিলো। সেই তান্ত্রিকের হাতে আরো একটি বোতল। হয়তো সেই বোতলে তার মা ব’ন্ধি।
আকিব নিশির এমন অবস্থা দেখে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। আর তখন-ই সে যে ছেলেটিকে ধরে রেখেছিল সেই ছেলেটি তার পকেটে রাখা ছোট্ট একটা ছু’রি দিয়ে আকিবকে আঘাত করলো। আকিব ব্যথায় চিৎকার করে ছেলেটিকে ছেড়ে দিলো। ছেলেটি দৌড়ে তারা বাবার কাছে চলে গেল। আকিব হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার হাত থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
চলবে…