#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-২৪||
৪১.
সালেহ আলী বাঁধনকে পুরো মহল্লার সামনে পিটিয়েছেন। আহনাফ আর তূর্য এক কোণায় দাঁড়িয়ে এসব দেখতে লাগলো। তখনই মুরাদের বাবা কয়েকজন লোক নিয়ে তাদের মহল্লায় ঢুকলো। মুরাদের বাবা আহনাফকে দেখেই তার কলার ধরে বললেন,
“তোর এতো বড় সাহস আমার ছেলেকে মেরেছিস?”
আহনাফের কলার ধরতেই আরাফ আর ইভান তেড়ে এলো। তারা একপ্রকার টানাহেঁচড়া করে মুরাদের বাবাকে আহনাফের কাছ থেকে দূরে সরালো। মহল্লায় মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে গেলো। শতাব্দীর বাবা তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে সমস্যা মীমাংসা করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু মুরাদের বাবা কোনোভাবেই তা মানতে চাচ্ছেন না। তিনি আহনাফ আর তূর্যকে হুমকি দিতে লাগলেন। তখনই চেঁচামেচি শুনে অরুণিকা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আরাফ অরুণিকাকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
“অরু, তুমি বাসায় থাকো। বাইরে এসো না।”
অরুণিকা বারান্দায় এসে ভীড়ের মধ্যে শতাব্দীকে খুঁজতে লাগলো। শতাব্দী তার মা আর বোনের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সে অরুণিকাকে খেয়াল করে নি৷ অরুণিকা মনে মনে ভাবলো,
“আমার জন্য কাল রকস্টার আর আহনাফ ওই ছেলেগুলোকে মেরেছিল। এখন ওদের যদি সত্যিই পুলিশ এসে নিয়ে যায়?”
এসব ভাবতে ভাবতেই অরুণিকার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে বারান্দার বাইরে আসলে তাহমিদ তাকে আবার টেনে ঢুকিয়ে দিতেই সে হাত ফসকে মুরাদের বাবার সামনে চলে এলো। তারপর চেঁচিয়ে বললো,
“ওরা ভালোই করেছে ওকে মেরেছে। মুরাদ সবসময় আমাকে বিরক্ত করে। আমার ব্যাগ টেনে নিয়ে ফেলে, আমি স্কুল থেকে আসার সময় আমার হাত ধরে রাখে। আমাকে ছাড়েই না। আমার চুলও ধরে রাখে, বেণি খুলে ফেলে। আমার এসব ভালো লাগে না। আমি কতোবার বলেছি, ওদের আমাকে ছেড়ে দাও। কেন বিরক্ত করছ? ওরা বলে আমাকে বিরক্ত করতে ভালো লাগে।”
অরুণিকার কথায় আশেপাশের সবাই চুপ হয়ে গেলো। এবার অরুণিকা বাঁধনকে দেখিয়ে বলল,
“বাঁধনও রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে আমার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। আমি স্কুল থেকে ফেরার আগে বাইরে থেকে টনি ভাইয়ার ভয়ংকর কুকুরটা গেইটের সামনে বসিয়ে রাখে। ও জানে আমি কুকুর ভীষণ ভয় পাই, তাই।”
শতাব্দী অরুণিকার কথা শুনে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামতেই তার মা তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আমারও কিছু বলার আছে। এইটা অরুণিকার একার সমস্যা না। ও ছোট হয়ে যদি আজ সব কথা বলতে পারে, আমি বা আমাদের এলাকার বাকি মেয়েরা কেন চুপ থাকবে? আহনাফ আর তূর্য কি বিনা অপরাধে শাস্তি পাবে? আর যারা মেয়েদের উত্যক্ত করে, তারা মার খেয়ে বাসায় মায়ের আঁচলের নিচে বিশ্রাম নিবে, এটা আমি মানবো না।”
শতাব্দী ভীড় ঠেলে অরুণিকার পাশে আসতেই মাস্টারমশাই মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
“শতাব্দী, তুই এখানে কেন এসেছিস?”
“বাবা, মুরাদ আমাকেও বিরক্ত করে। শুধু মুরাদ না, তার সাথে আরো কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আমার মতো শিলা, রিনি, দূর্গা ওদেরকেও বিরক্ত করে। গত মাসেই কোয়েলের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। অল্প বয়সেই ওর বাবা ওকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু কেন? কারণ মহল্লায় দাঁড়িয়ে থাকা এমন বদমাশ ছেলের জন্য যাতে তার মেয়ের সম্মান নষ্ট না হয়। দোষ করবে এরা, আর শাস্তি পাবো আমরা?”
এবার দূর্গার মা তাদের সামনে এলেন। তিনি বললেন,
“শুধু মহল্লার সামনে কেন? এই ছেলেগুলো আমার মেয়ের পিছু পিছু ওর স্কুল পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। এদের জন্য এখন মেয়েকে ওর দাদা আনা নেওয়া করে। আহনাফ আর তূর্য ওদের মেরে একদম ঠিকই করেছে।”
এরপর তিনি আহনাফ আর তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“যাওয়ার আগে আমাকেও বলতে, আমিও কয়েক বেত লাগিয়ে দিয়ে আসতাম।”
মুরাদের বাবা চুপ করে রইলেন। তার সাথে আসা লোকগুলো ধীরে ধীরে বেরিয়ে যেতে লাগলো। মাস্টারমশাই তাকে বললেন,
“দেখুন মশাই, আমরা পাশাপাশি এলাকায় থাকি। আপনার ঘরেও মেয়ে আছে। ঠান্ডা মাথায় বসে ছেলেকে বোঝান। আহনাফ আর তূর্য যা করেছে তা মোটেও ঠিক হয় নি। কিন্তু এভাবে মারামারি করে কোনো সমাধান হবে না। আমাদেরই ওদের বোঝাতে হবে। এখন সমস্যাটা এখানেই শেষ করলে ভালো হয়।”
মুরাদের বাবা অরুণিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। আহনাফ অরুণিকার সামনে এসে তাকে আড়াল করে দিয়ে বলল,
“আংকেল, নিজের ছেলের দিকে এভাবে তাকালে হয়তো ছেলে মানুষ হবে। অন্যের বাচ্চাদের চোখ না দেখিয়ে নিজের সন্তানকে এই চোখ দেখান।”
মুরাদের বাবা রাগী কন্ঠে বললেন, “বেয়াদব ছেলে।”
“ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম। এবার যান।”
ভীড় কমতেই তাহমিদ শতাব্দীর সামনে এসে বলল,
“ধন্যবাদ, সামনে এসে সব কিছু বলার জন্য।”
শতাব্দী অরুণিকার হাত ধরে বলল,
“ছোট সখীর সাহস দেখেই আমি সাহস পেয়েছি।”
অরুণিকা বলল,
“আমাদের ক্লাসে টিচার বলেছে, কোথাও ভুল দেখলে চুপ না থেকে ভুল শুধরে দিতে হবে, আর সত্য কথা কখনোই লুকিয়ে রাখা উচিত নয়।”
এবার আরাফ অরুণিকার হাত ধরে বলল,
“আমাদের অরু তো দেখছি এখন অনেক কিছুই বুঝে।”
“হ্যাঁ, আমি তো এখন বড় হয়ে যাচ্ছি, তাই না?”
আহনাফকে অনেক বার কল দেওয়ার পরও যখন সে কল ধরলো না, তখন যতি সরাসরি বাসায় চলে এলো। বাসায় এসেই দেখলো আহনাফের পুরো মুখে দাগ। তার মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। যতি আহনাফের হাত ধরে বলল,
“তোমাকে এভাবে কে মেরেছে?”
অরুণিকা বলল,
“জানো, আপু। আহনাফ গতকাল ছেলেগুলোকে অনেক মেরেছে। এখন ছেলেগুলো আমাকে আর বিরক্ত করবে না।”
যতি রাগী দৃষ্টিতে অরুণিকার দিকে তাকালো। আর বলল,
“সব সমস্যার মূল তো তুমিই।”
আহনাফ যতির দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। যতি আহনাফের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওর জন্যই তুমি এতো মার খেয়েছো। আমার জন্য তো কখনোই তুমি এতোকিছু করো নি।”
আহনাফ যতির কাছ থেকে সরে বসলো। যতি আহনাফের বাহু চেপে তার কাঁধে মাথা রাখতেই আহনাফ তাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো। যতি বিষ্মিত হয়ে আহনাফকে বলল,
“তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন? আমি তোমার জন্য বেশি চিন্তা করি, এটা কি আমার অপরাধ?”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি তো চিন্তা করতে বলি নি। আর বার-বার আমার বাসায় আসা বন্ধ করো। আমার এটা ভালো লাগে না। যখন থেকেই আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছে, তুমি তো আমাকে ঠিকমতো শ্বাসই নিতে দিচ্ছো না।”
যতি কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,
“আমি তোমার দম আটকে রাখি? আমার সাথে থাকলে তোমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়?”
আহনাফ দুই হাত জোর করে মেঝেতে বসে চেঁচিয়ে বলল,
“আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একা থাকতে দাও। আমাকে উদ্ধার করো। আমি নয়তো পাগল হয়ে যাবো।”
যতি আহনাফের কাছে আসতে যাবে তখনই আরাফ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি এখন যাও। ওর মাথা ঠান্ডা হোক আগে।”
যতি ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,
“আমি ওর গার্লফ্রেন্ড। আমি বুঝবো কিভাবে ওর মাথা ঠান্ডা করতে হবে।”
তূর্য যতির কথা শুনে ইমনকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“এমন টক্সিক মেয়ে আমি তো জীবনেও দেখি নি। আমার তো আহনাফের অবস্থা দেখেই প্রেম করার শখ পটল তুলতে গেছে।”
ইমন বলল,
“এই কথা ভুলেও মুখে আনিস না। আমাদের পীড়াপীড়িতেই আহনাফ এই মেয়ের সাথে সম্পর্কে গিয়েছিল। ওর তো এমনতেই এসবে আগ্রহ ছিল না।”
এদিকে আহনাফ যতিকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ছাড়ো। শুধু আজকের জন্য নয়, একেবারেই ছাড়ো। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার সাথে সম্পর্কে যাওয়া, তোমার সাথে বন্ধুত্ব করা, আর দুর্ভাগ্য তোমাকে পড়াতে যাওয়া, তোমার সাথে দেখা হওয়া।”
যতি অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“এই মেয়ে, তুমি ওর উপর কি করেছো, হ্যাঁ? জাদু করেছ, তাই না?”
আরাফ ধমকের সুরে বলল,
“এই তোমার মাথা ঠিক আছে? কি বলছো তুমি এসব?”
ইভান দরজা খুলে দিয়ে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুই এই মেয়েকে এখনই আমাদের ঘর থেকে বের করে দিবি।”
আহনাফ কাছে আসতেই যতি বলল,
“একটা উঠতি বয়সী মেয়ে, তাও আবার আপন বোন নয়, ছয় জন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে এক ঘরে থাকছে, এই কথা একবার মহল্লায় ছড়িয়ে গেলে কি হবে, ভাবতে পারছো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি বুঝাতে চাইছো তুমি?”
“আজ যেই ছেলেগুলোর সাথে মারপিট করে তুমি মুখের বারোটা বাজিয়েছো, কাল তারাই তোমাদের প্রশ্ন করবে। কারণ এটা সুস্থ সমাজ। এখানে এমন নোংরা সম্পর্কের কোনো জায়গা নেই। কে বিশ্বাস করবে তোমরা ওর সাথে…”
আহনাফ যতিকে পুরো কথা শেষ করতে দিলো না। সে যতির গালে চড় লাগিয়ে দিলো। ইমন আহনাফের কাছে এসে তাকে আটকালো। তাহমিদ আর আরাফ যতিকে ঘর থেকে বের করে দিলো।
প্রায় দশমিনিট যে যার জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাফের কান গরম হয়ে গেছে। এমন কথা শোনার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিলো না। অরুণিকা এক পাশে বসে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে সে যতিকে বকে যাচ্ছে। সে যতির কথা বুঝতে না পারলেও এতোটুকু বুঝেছে, যতি তাকে পছন্দ করে না। আর আহনাফকে অনেক বিরক্ত করে। তাই অরুণিকাও যতিকে পছন্দ করে না।
এদিকে রাতে কেউই কোনো কথা বললো না। তাহমিদ অরুণিকার দিকে ভাতের প্লেট এগিয়ে দিয়ে মেঝেতে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লো। এরপর তূর্য অরুণিকাকে বিছানা করে দিলো। তারপর অরুণিকা বিছানায় উঠে যাওয়ার পর ঘরের বাতি বন্ধ করে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দিলো, কারণ অরুণিকা অন্ধকারে ঘুমাতে ভয় পায়। অরুণিকা বালিশে শুয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরাফ শুয়ে পড়তেই সে বলল,
“আরাফ, তুমি এখানে বসবে না?”
আরাফ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ঘুমাও। আমার ঘুম আসছে।”
“আমার ভয় লাগছে। তুমি পাশে বসো।”
তূর্য বলল,
“আলো জ্বালানো আছে তো। তুমি ঘুমাও। আমরা এখানেই আছি।”
“না, আরাফ তো প্রতিদিন পাশে বসে থাকে। এখন এখানে বসো। আমার ঘুম আসছে না।”
প্রতিদিন ঘরের বাতি বন্ধ করে দেওয়ার পর যতোক্ষণ অরুণিকা ঘুমাবে না, ততোক্ষণ আরাফ তার পাশেই বসে থাকবে। আর মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে না রাখলে অরুণিকা কান্নাকাটি করে। এই কয়েক বছরেও তার এই অভ্যাস যায় নি। এদিকে আরাফকে আসতে না দেখে অরুণিকা মশারি তুলে নিচে নেমে আরাফের পাশে এসে বসলো। আহনাফ মাথায় বালিশ চেপে ধরে চেঁচিয়ে বললো,
“প্রতিদিন এক একটা ঝামেলা! আমি এসব আর নিতে পারছি না। এখন কি কেউ আমাকে ঘুমাতেও দেবে না?”
আহনাফের কথায় অরুণিকা আবার বিছানায় উঠে বসলো। সে এবার একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ইভান অরুণিকাকে দেখে বলল,
“তুমি কি এখন ঘুমাবে নাকি বারান্দায় রেখে আসবো?”
অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“না, আমার ভয় লাগছে। এখানে এসে বসো, প্লিজ।”
তাহমিদ উঠে তার পাশে এসে বসলো। আর বলল,
“এখন ঘুমাও।”
অরুণিকা মশারির উপরই তাহমিদের শার্টের কোণা ধরে শুয়ে পড়লো। অরুণিকা ঘুমানোর পরই তাহমিদ বিছানায় শুতে গেলো।
সকালে চেঁচামেচির শব্দ শুনে দরজা খুললো আরাফ। বাইরে যতিকে দেখে সে অবাক হলো। শতাব্দী গেইটের কাছে এসে বলল,
“ও সবাইকে বলে দিয়েছে ছোট সখী তোমাদের বোন না, আর তোমরাও আপন ভাই না।”
আরাফ গেইট খুলে বের হতেই মহল্লার সব মহিলারা তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সুরাইয়া এসে বললেন,
“বোন না তো কি হয়েছে? বোনের মতোই তো। এটা নিয়ে তামাশা করার কি আছে?”
বাকি পাঁচ জন বের হতেই মহিলাগুলো বলতে লাগলো,
“আমরা এদের এই বাড়িতে থাকতে দেবো না। এতোগুলো ছেলে একটা মেয়ের সাথে এক বাড়িতে থাকবে! আগে মেয়েটা ছোট ছিল, এখন তো বড় হচ্ছে। একটা সম্মানেরও ব্যাপার আছে।”
যতি বলল,
“ভালো হয় অরুণিকাকে যদি কেউ নিজের মেয়ে হিসেবে আইনগতভাবে দত্তক নেয়। সে মা-বাবাও ফিরে পাবে, আর ওর ভবিষ্যও উজ্জ্বল হবে।”
আহনাফ যতির হাত চেপে ধরে বলল,
“তুমি আজ যা করলে এটা মোটেও ঠিক করো নি।”
যতি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আর আমি এতোটাও বোকা নই। আমি সব বুঝি। হয়তো অরুণিকা তোমাকে নিয়ে কোনো রকম চিন্তায় করে না। কারণ ওর এখনো এসব বোঝার বয়স হয় নি। কিন্তু আমি জানি, তুমি ওকে নিয়ে কি চিন্তা করো।”
“তুমি পাগল হয়ে গেছো, যতি।”
“পাগল তুমি ওই মেয়ের জন্য হয়ে গেছো। সারাদিন অরুণিকা আর অরুণিকা। আমার সাথে বাইরে ঘুরতে গেলেও তুমি অরুর জন্য এটা নিলে ভালো হবে, ওটা দেখলে খুশি হবে, এসবই বলো। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে, তোমার ওর জন্য আলাদা করে খাবার নিতে হয়, কেন? এতোদিন ভাবতাম ও তোমার আপন বোন। কিন্তু এখন জানলাম ও তোমার কাজিন। কাজিনের জন্য কেউ এতো কিছু কখন করে? কেন করে বলো?”
“ভালোবাসি তাই করি। কিন্তু এই ভালোবাসা তোমার মতো অসভ্য মেয়ে বুঝবে না। অরু, আমার কাজিন। আমার আপন চাচার মেয়ে। যেই চাচা মৃত্যুর আগে আমাদের ওকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। চাচার অবর্তমানে আমি ওকে আদর করবো, যত্ন নেবো, ভালোবাসবো, তাতে তোমার কি সমস্যা?”
যতি চোখের কোণে আসা পানিগুলো মুছে বলল,
“আমি তোমার মনে কখনোই ছিলাম না। আমি জানতাম, আমি তোমাকে কখনোই পাবো না। কিন্তু আমি মেয়ে, তাই অনেক কিছুই বুঝি। তুমি অরুণিকাকে নিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করো। শুধু চিন্তা করা আর অধিকার দেখানো আলাদা ব্যাপার। বাকিদের মধ্যে আমি ওটা দেখি নি, যেটা তোমার মধ্যে দেখেছি।”
আহনাফ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“তুমি কি ভাবো না ভাবো আমার তাতে কোনো আসে যায় না।”
চলবে-