#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-২৯||
৪৭.
মেঝেতে একটা ডায়েরী আর অনেকগুলো ছবি পড়ে আছে। পাশে একটা গ্লু আর কিছু রঙিন কলম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কানে হেডফোন গুঁজে এক হাতে একটা ছবি আকাশের দিকে তাক করে, অন্য হাতে একটা ফোন নিয়ে ছবি তুলছে উপমা। ছবি তোলার পর ছবিটি ভালোভাবে দেখে বিড়বিড় করে বলল,
“উফ! আমার স্টারকে তো এই ছবিতে ঝাপসা দেখাচ্ছে। এই ফোনটাও দিনদিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ভালোভাবে ফোকাসই হয় না। বাবাকে বলবো, নতুন ফোন কিনে দিতে।”
পরক্ষণই সে ইন্সটাগ্রামে ঢুকে আবার ইনবক্সে ঢুঁ মেরে এলো। দেখলো মেসেজটা এখনো দেখা হয় নি। ফোনটা একপাশে ফেলে উপমা চেঁচিয়ে বলল,
“একমাস ধরে মেসেজ দিচ্ছি, কিন্তু তার তো আমার জন্য সময়ই নেই।”
এসব ভাবতে ভাবতেই উপমা চিড়বিড় করে উঠলো। পাশ থেকে উপমার মা, মিসেস জুলেখা চেঁচিয়ে বললেন,
“সারাদিনেও কি তোর নাকি কান্না যায় না?”
তারপর জুলেখা মিনমিনিয়ে বলতে লাগলেন,
“পড়াশুনা বাদ দিয়ে মাথা ছাড়া ছেলে একটার ছবি কেটে কেটে ডায়রিতে লাগানো ছাড়া মেয়েটার আর কাজ নেই।”
উপমা রুম থেকে বেরিয়ে বলল,
“মা, আমি তোমার কথা শুনে ফেলেছি।”
জুলেখা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন,
“শুনে আমাকে উদ্ধার করেছিস। পরীক্ষা খারাপ হলে দেখিস, ডায়েরীটা আমি পুড়িয়ে ফেলবো।”
“মা, তুমি আমার স্টারের ছবি পুড়িয়ে ফেলতে পারো। কিন্তু আমার মন থেকে তার ছবি কখনো পোড়াতে পারবে না। কারণ ও আমার মনেই নিজের ছবি এঁকে ফেলেছে।”
মিসেস জুলেখা চুপ করে রইলেন৷ কোনো কথা বললেন না। তখনই উপমার বড় ভাই আদিল রুম থেকে বেরিয়ে বলল,
“মা, আমার মানিব্যাগ থেকে ২০০ টাকা উধাও হয়ে গেছে।”
মিসেস জুলেখা ছেলের দিকে তাকিয়ে, আরেকবার উপমার দিকে তাকালেন। তারপর নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। মায়ের চোখ অনুসরণ করে আদিল বোনের দিকে তাকালো। উপমা ভাইয়ের কথা শুনে পা টিপে টিপে সরে আসতেই আদিল তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
উপমা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
“ভাইয়া, তুমি না আমার লক্ষী ভাইয়া।”
তারপর ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমাকে বকা দিলে আমি কিন্তু মাকে তোমার হৃদি বাবুর কথা বলে দেবো।”
আদিল কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। উপমা বুকে হাত গুঁজে জোরে জোরে বলল,
“ভাইয়া আমিই নিয়েছিলাম। আমার স্টারের ছবিগুলো ফোন থেকে প্রিন্ট করে বের করিয়েছি। রঙিন ছবি বের করতে অনেক টাকা লাগে, জানো না?”
আদিল রাগী কন্ঠে বললো,
“আমার টাকা খরচ করে তুই কোথাকার গায়কের ছবি প্রিন্ট করছিস? তাও যাকে আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নি।”
“সে কোথাকার গায়ক না। ও আমার স্টার। আর শুনো, ও অনেক ভদ্র, তাই নিজের ছবি দেয় নি। ওকে ভালোবাসার জন্য আমার ওকে দেখার প্রয়োজন নেই। ওর গিটার, ওর পরণের শার্ট, ওর চুলগুলোই আমার জন্য যথেষ্ট। আর ওর কন্ঠ! আমি তো ভাবতে গেলেই পাগল হয়ে যাবো।”
মিসেস জুলেখা মেয়ের কথা শুনে আদিলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সেই বয়সে আমরাও স্টারদের প্রেমে পড়েছি। ক্রিকেটারদের পোস্টার লাগিয়েছিলাম। কিন্তু তোর বোন তো ডায়েরী ভর্তি ছবি লাগিয়েছে একটা মাথা ছাড়া ছেলের।”
উপমা বিরক্ত হয়ে বলল,
“মা ওকে মাথা ছাড়া ছেলে বলবে না। ও শুধু মুখটাই দেখায় না। ওর তো মাথা আছে।”
“মুখখানা হয়তো পেঁচার মতো, তাই দেখাতে লজ্জা পায়।”
উপমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আদিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের সামনে এসে হাত এগিয়ে দিলো। মিসেস জুলেখা ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“হাত এগিয়ে দিচ্ছিস কেন? মার খেতে চাস?”
আদিল বলল,
“মা, তোমার মেয়ে আমার মানিব্যাগ খালি করেছে। এখন আমাকে টাকা দাও। আমি এখন আগ্রাবাদ যাবো। আমার কাছে গাড়ি ভাড়াও নেই।”
“তোর বাইক কোথায়?”
“তেল শেষ হয়ে গেছে।”
মিসেস জুলেখা বললেন,
“রুমে ব্যাগ আছে। ওখান থেকে নিবি। ২০০ টাকায় নিবি কিন্তু। এর বেশি না। তোর বাবা আমাকে এই মাসের খরচ চালানোর জন্য টাকাটা দিয়েছে।”
করিম সিদ্দিক আর জুলেখা হোসেনের বড় ছেলে আদিল সিদ্দিক আর তাদের ছোট মেয়ে উপমা করিম। এইটাই তাদের চারজনের ছোট্ট সংসার। করিম সিদ্দিক প্রবাসী। তিনি দুবাই থাকেন। মাঝে মাঝে দেশে আসেন। দেশে এলে বউ-বাচ্চা নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা করিম সিদ্দিকের শখ। তার এই শখ আদিলও পেয়েছে। কিন্তু উপমা মায়ের মতোই ঘরকুনো স্বভাবের৷ তাদের দু’জনকে একপ্রকার টেনেই ঘর থেকে বের করতে হয়।
এদিকে ক্লাস শেষে কলেজের বাগানে চুপচাপ বসে রইলো মাওশিয়াত। ইভান দূর থেকেই তাকে দেখে তার পাশে এসে বসলো। মাওশিয়াত ইভানের দিকে এক নজর তাকিয়ে বসা থেকে উঠতে যাবে তখনই ইভান বলল,
“ইমন এসব ইচ্ছে করে করছে।”
মাওশিয়াত কোনো উত্তর দিলো না। ইভান আবার বলল,
“সবার মধ্যে কমবেশি জেদ থাকে। ইমন এখন যা করছে তা জেদের বশে। তোমার মধ্যেও এই জেদ ছিল। এখনো হয়তো আছে। কিন্তু আমাদের সামনে দেখাচ্ছো না। আর আগের চেয়ে তুমি অনেক পরিবর্তন হয়েছ।”
মাওশিয়াত বলল,
“পরিবর্তন হওয়ারই ছিল। এই জেদের বশে আজ পর্যন্ত আমার কোন বন্ধু হলো না। শতাব্দী কত মিশুক একটা মেয়ে! তোমরা ওকে কতো কথা বলো, তবুও কিছু মনে করে না। আর আমি সব কিছুতেই মন খারাপ করে বসে থাকি। আমি কারো সাথেই মিশতে জানি না। সায়ন্তনীও তো চুপচাপ থাকে, তবুও ওর কত বন্ধু! তূর্য, তাহমিদ, আহনাফ ওরা আমাকে পছন্দই করে না। শুধু আরাফই আমাকে কিছুটা বুঝে।”
“আমি বুঝি না তোমাকে?”
“অনেকদিন তো আমাদের কথাই হয়নি। তুমি তো আমার কাছ থেকে দূরত্ব রাখছো।”
“কারণ আমি চাইনা, ইমনের সাথে আমার আর ঝামেলা হোক। ইমন যা ভাবছে সেটা একদমই সত্য না। আমি সবসময় তোমাকে বন্ধুর চোখে দেখেছি। কিন্তু ইমন এই সম্পর্ককে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইমন তোমাকে ভালোবাসে, এটা আমি জানি। ও ভাবছে, এসব জানার পরও আমি তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছি। ও এখনো ভাবছে, আমরা একজন আরেকজনকে পছন্দ করি, আর আপাতত ওর জন্যই আমরা দূরত্ব রাখছি।”
মাওশিয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কেন যেন মনে হচ্ছে ইমনকে বোঝানো সম্ভব হবে না।”
“ওকে বোঝানো সম্ভব, যদি ও আমাদের মুখোমুখি হতো। ও তো আমার সাথে ঠিকভাবে কথাই বলে না। এখন একটাই উপায় আছে।”
“কি উপায়?”
“আগে আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাও!”
“কি প্রশ্ন?”
“তুমি কি এখন ইমনকে পছন্দ কর? তোমার কি আমাকে নিয়ে এখনো দুর্বলতা আছে? দেখো মাওশিয়াত, কিছু মনে করো না, এটা আমার জানা জরুরি। তারপরই এই উপায়টা বাস্তবায়ন হবে।”
“ইভান তুমি আমার জেদ ছিলে। এটা ভালোবাসা ছিল না। তোমাকে আগেই বলেছি, আমি ভাবতাম ভালোবাসা বরাবরিতেই সম্ভব। তুমিও টপার ছিলে, আমিও টপার ছিলাম। ভাবতাম আমাদের ভালই মানাবে। কিন্তু ভালোবাসা এসব দেখে হয় না। ভালোবাসা তো আত্মার সম্পর্ক। এটা মুগ্ধতার সম্পর্ক। আর আমি ইমনের প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। ওর প্রতি ভালো লাগা আমার কোন কারণ ছাড়াই চলে এসেছে। তাই আমার মনে হয় ভালবাসতে কোন কারণ লাগে না, কোন গুণ লাগে না, ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যায়। হুট করেই হয়ে যায়। আমি নিজেও জানিনা কবে থেকে আমি ইমনকে ভালবাসতে শুরু করেছি। কিন্তু যেদিন থেকে আমার ওকে বারবার দেখার ইচ্ছে জাগলো, ওর সাথে কথা বলার জন্য আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম, রাত-দিন শুধু ওকে নিয়েই ভাবতাম, তখন বুঝতে পেরেছি আমি অভিমানী ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
ইভান মনে মনে হাসলো। সে জানে, ইমন মাওশিয়াতকে এখনো ভালোবাসে। ইমনের ভালো থাকা মাওশিয়াতকে ঘিরেই। ইভান এখন তাদের এক করেই ছাড়বে। হয়তো সায়ন্তনী কষ্ট পাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে দু’টো মানুষের ভালো থাকা এক জনের ভালো থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা শুধু মাওশিয়াত আর ইমনের জন্য নয়। সে চায় ইমন আর তার সম্পর্ক যাতে ঠিক হয়ে যায়। শুধু কিছু ভুলের জন্য কি সে নিজের ভাইকে হারিয়ে ফেলবে?
অরুণিকা আজ স্কুলে যায় নি। সকাল থেকেই নিজের ঘরে বসে আছে। তূর্য তার ঘরে বসে গানের ভিডিও শুট করছে। আহনাফ আর তাহমিদ তাকে সাহায্য করছে। হঠাৎ তূর্য বলে উঠলো,
“টুইংকেল কোথায়?”
আহনাফ বলল, “দাঁড়া, আমি দেখে আসি।”
সে ঘরের বাইরে এসে দেখলো অরুণিকার ঘরের দরজা আটকানো। আহনাফ দরজায় দু’তিনবার ঠোঁকা দেওয়ার পরও অরুণিকা দরজা খুলছে না। তাই সে ঘরে ঢুকে পড়লো। দরজা খুলেই অরুণিকাকে দেখে আহনাফ চমকে উঠলো। অবাক হয়ে বলল,
“কি করছো তুমি?”
অরুণিকা আহনাফের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। আহনাফ আবার বলল,
“এগুলো কি? তোমাকে দেখতে কেমন লাগছে!”
আহনাফের কন্ঠ শুনে তূর্য আর তাহমিদ এসে দেখলো পুরো ঘরে জামা-কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অরুণিকা দুই তিনটা জামা একসাথে প্যাঁচিয়ে রেখেছে। ঠোঁটের আশেপাশে লিপস্টিক লাগানো। তাহমিদ কাপড় গুলো মেঝে থেকে তুলে অরুণিকার সামনে বসে বলল,
“এগুলো কি করেছ?”
অরুণিকা মুখ নামিয়ে বলল, “বউ সেজেছি।”
অরুণিকার কথা শুনে আহনাফ আর তূর্য অবাক হলো। পরক্ষণেই তূর্য হেসে বলল,
“কার বউ সেজেছ?”
অরুণিকা কোনো উত্তর দিলো না। সে তূর্যের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। তাহমিদ বলল,
“যাও ওয়াশরুমে যাও। মুখ ধুয়ে আসো।”
অরুণিকা প্যাঁচানো জামা কাপড়গুলো খুলে ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো। তার মুখে এখনো লিপস্টিকের দাগ রয়ে গেছে। কাজল চোখের নিচে লেপ্টে রয়েছে। তাহমিদ তাকে আবার ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। তারপর নিজ হাতে তার মুখ ধুয়ে দিল। যাওয়ার আগে তূর্য আর আহনাফকে রুমটা পরিষ্কার করে ফেলার জন্য বলল।
এদিকে সন্ধ্যায় অরুণিকা মন খারাপ করে বসে আছে। আহনাফ তাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে তার পাশে এসে বসলো। জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?”
অরুণিকা মলিন মুখে বলল,
“জানো, আমাদের স্কুলে একটা অনুষ্ঠান হবে। সবাই শাড়ি পরবে, বউ সাজবে, নাচবে, ছড়া বলবে। টিচার বলেছে ওদেরকে প্রাইজ দেবে। কিন্তু আমার কাছে তো শাড়ি নেই৷ আমি শাড়ি পরতেও পারি না, ভালো করে নাচতেও পারি না৷ আমার বান্ধবীরা কত সুন্দর করে নাচতে পারে। একদম শতু আপুর মতো করে। আমি তো ছড়াও বলতে পারব না।”
“ছড়া কেন বলতে পারবে না?”
“আমি যেই ছড়াগুলো জানি, সেগুলো বাকিরা বলবে। একই ছড়া দু’জন বলতে পারবে না।”
“আচ্ছা আমি তোমার জন্য একটা ছড়া খুঁজে আনব। তুমি মন খারাপ করো না।”
“কিন্তু আমি ছড়া বলবো না৷ আমি শাড়ি পরবো। আমার কাছে একটাও শাড়ি নেই।”
“বাচ্চাদের তো শাড়ি থাকে না। তুমি বড় হলে তারপর শাড়ি পরবে, ঠিক আছে?”
“না, আমি শাড়ি পরবোই পরবো।”
ইভান ঘরে ঢুকে অরুণিকার চেঁচামেচি শুনে বলল,
“ও চিৎকার করছে কেন?”
আহনাফ পুরো ব্যাপারটা বলতেই ইভান বলল,
“এসব ঢং করতে হবে না। নাচই তো পারো না, আবার শাড়িও পরবে!”
অরুণিকা ইভানের উপর কথা বলার সাহস পায় না। ইভানের ধমকটাই কান জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ভয়ংকর। তাই সে উঠে চলে গেলো।
পরের দিন আহনাফ শতাব্দীকে ফোন করে বাসায় আসার জন্য বললো। এরপর অরুণিকার জন্য দোকান থেকে একটা শাড়ি কিনে আনলো। বাসায় এসে অরুণিকাকে শাড়ি দিতে যাবে, তখন দেখলো অরুণিকা আগে থেকেই একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। তূর্য আহনাফের কাছে এসে বলল,
“টুইংকেলের জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছি। দেখ কেমন হয়েছে?”
আহনাফের হাতের প্যাকেটটা দেখে ইমন বলল,
“তোর হাতে কি?”
আহনাফ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“আমিও কিনে এনেছিলাম। থাক, ফেরত দিয়ে দেবো।”
ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“ফেরত দিতে হচ্ছে কেন? একজনের দু’টো শাড়ি থাকতেই পারে।”
তূর্য আহনাফের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই বেল বেজে উঠলো। আরাফ দরজা খুলে দেখলো শতাব্দী এসেছে। শতাব্দীকে দেখে অরুণিকা দৌঁড়ে তার কাছে গেলো। আহনাফ বলল,
“আমি ওকে আসতে বলেছিলাম।”
তূর্য জিজ্ঞেস করল,
“তুই হঠাৎ শতাব্দীকে কেন আসতে বললি?”
“অরুকে নাচ শেখানোর জন্য।”
কথাটি শুনে অরুণিকা খুশি হয়ে বলল,
“ওয়াও, আমি নাচ শিখবো!”
অরুণিকা শতাব্দীকে টেনে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। শতাব্দী আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“মিষ্টিমশাইকে দেখছি না!”
ইমন বলল,
“ও তো এখনো বাসায় ফিরে নি। কিন্তু ওর তো আরো আগেই চলে আসার কথা ছিল।”
ইভান তাহমিদের ফোনে কল দিয়ে দেখলো, ফোন বন্ধ। আরাফ বলল,
“রেস্টুরেন্টে কল দিয়ে দেখ।”
ইভান সেখানে কল দিলো। ওপাশ থেকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফোন উঠিয়ে বলল,
“কে বলছেন?”
“আমি ইভান বলছি। তাহমিদ কি এখনো বের হয় নি?”
ওপাশ থেকে কিছু হয়তো বলা হলো, যা শুনে ইভানের মুখটা জমে গেলো। ইভানকে এর আগে কেউ এভাবে দেখে নি। তার বিচলিত চেহারা দেখে সবাই ভীত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী বলল,
“কি হলো ইভান?”
ইভান ফোন কেটে দিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
“আমাদের এখনই হস্পিটালে যেতে হবে। তাহমিদের অবস্থা ভালো না। ওর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
চলবে-