অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৩৪||

0
1262

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৩৪||

৫৬.
অরুণিকার জন্য রুমের দেয়ালে বড় একটা আয়না লাগিয়েছে আহনাফ। অরুণিকা তা দেখেই খুশিতে আহনাফের হাত ধরে লাফাতে লাগলো। বাসায় যেই আয়নাগুলো আছে, ওগুলোতে নিজেকে দেখার জন্য অরুণিকার টুল-টেবিল টেনে আনতে হয়। এখন সে নিচে দাঁড়িয়েও নিজেকে দেখতে পারবে। সকালে অরুণিকা ঘুম থেকে উঠেই আয়নার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। গোসল করার আগে কি জামা পড়বে তাও গায়ের সাথে লাগিয়ে দেখছে। বিকেলে আয়নার সামনে বসে বসে সাজগোজ করে নিজের গাল নিজেই টানছে। আহনাফ দরজায় হেলান দিয়ে বলল,
“কি করছো তুমি?”

অরুণিকা তার মেকাপের জিনিসপত্রগুলো একপাশে রেখে আহনাফের পকেট ঘাঁটতে লাগলো। আহনাফ কয়েক পা পিছিয়ে বলল,
“কি করছো হ্যাঁ?”

অরুণিকা হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ফোন দাও তো।”

“তুমি ফোন দিয়ে কি করবে?”

অরুণিকা কোমরে হাত দিয়ে বলল,
“ফোন দিয়ে কি করে বলো দেখি?”

আহনাফ কপাল ভাঁজ করে অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকা বলল,
“আরেহ ছবি উঠায় আর কি! আমিও ছবি উঠাবো।”

আহনাফ অবাক কন্ঠে বলল,
“ছবি! তুমি ছবি উঠাতে পারো?”

“জানো, আমার বান্ধবীরা ছবি উঠিয়ে ফেইসবুকে দেয়।”

তূর্য রুমে ঢুকে শেষ কথাটি শুনেই বলে উঠলো,
“ওরে বাবা! তারপর, তারা আর কি কি করে?”

“ওদের ছবিতে অনেক লাইক, অনেক কমেন্ট আসে।”

আহনাফ বলল, “ওদের ফেইসবুকও আছে?”

“না, এটা ওদের মায়েদের ফেইসবুক। কিন্তু ওরাই বেশি চালায়। কেউ কেউ নানুর ফেইসবুকে নিজের ছবি দেয়৷ জানো, ওদের ফোনও আছে। আমার তো ফোনও নেই।”

তূর্য অরুণিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“ছোট বাবুরা ফোন ব্যবহার করে না।”

“কিন্তু আমি তো বড় হয়ে গেছি।”

“কে বলেছে তুমি বড় হয়েছ?”

“শতু আপুই তো বললো।”

এবার আহনাফ বলল,
“আমাদের কাঁধ বরাবর এলেই তুমি ফোন পাবে৷”

অরুণিকা পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে আহনাফের সামনে রাখতেই সে আরো কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। অরুণিকা কোমরে হাত দিয়ে তাকে টেনে চেয়ারের পাশে দাঁড় করালো৷ তারপর নিজে চেয়ারে উঠে আহনাফের কাঁধ দেখিয়ে বলল,
“দেখো, আমি তোমার সমান হয়ে গেছি।”

আহনাফ বলল,
“আচ্ছা, বারান্দায় চলো। আমি তোমাকে ছবি উঠিয়ে দিচ্ছি।”

অরুণিকা আহনাফের হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে হেঁটে বারান্দায় চলে গেল। আহনাফ তার ছবি তুলে দেওয়ার পর অরুণিকা ফোনটা নিয়ে মনোযোগ দিয়ে ছবিগুলো দেখে বলল,
“আমার ছবিগুলো তোমার ফেইসবুকে দেই?”

আহনাফ ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বলল,
“কোনো দরকার নেই।”

অরুণিকা মলিন মুখে বললো, “কেন?”

“কেন টেন জানি না। যাও এখন!”

অরুণিকা তূর্যের কাছে গিয়েও একই আবদার করলো। তূর্যও রাজি হলো না। অরুণিকা মন খারাপ করে বসে রইল। তাহমিদ অরুণিকার মন খারাপ দেখে, ‘লিটল স্টার অরুণিকা’ নামে একটা ফেইসবুক একাউন্ট খুলে ছবিগুলো আপলোড করল। অরুণিকা তা দেখে অনেক খুশি হলো। সে সারাদিন তাহমিদের ফোনটা কিছুক্ষণ পর পর নিয়ে দেখতে লাগলো। কিন্তু কোনো লাইক পড়লো না। তাহমিদ এবার সেই আইডি থেকেই নিজেদের আর শতাব্দী ও মাওশিয়াতকে রিকুয়েষ্ট পাঠালো। ইভান ছাড়া সবাই অরুণিকার রিকুয়েষ্টটা এক্সেপ্ট করলো। আর একটা একটা করে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে গেলো। অরুণিকা তা দেখে খুশিতে লাফাতে লাগলো। তারপর তাহমিদের কাছে এসে বলল,
“দেখো, আমি সাতটা হার্ট পেয়েছি। দেখো কে কে দিয়েছে?”

তাহমিদ বই দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,
“না, তুমিই দেখো।”

অরুণিকা এবার বিছানায় পা ভাঁজ করে বসে ফেইসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো। শুরুতেই সে তূর্যের আইডিতে ঢুকলো। দেখলো তূর্য অনেকগুলো ছবি ছেড়েছে। সে ইচ্ছেমতো লাভ, হা হা আর ওয়াও রিয়েক্ট দিয়ে গেল। এদিকে তূর্য রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল। তখন ফোনে বার-বার নোটিফিকেশন আসার শব্দ পেয়ে সে এঁটো হাতে ফোনের সামনে গিয়ে দেখলো, নোটিফিকেশনে লেখা,
“লিটল স্টার অরুণিকা রিয়েক্টটিড টু ইউর পোস্ট।”

তূর্য হাত ধুয়ে রুমে এসে দেখলো আহনাফের বিছানায় বসে বসে অরুণিকা ফোন চালাচ্ছে। তূর্য বলল,
“টুইংকেল, কি করছো তুমি?”

অরুণিকা আনন্দিত কন্ঠে বলল,
“আমি তোমার ছবিতে অনেকগুলো হার্ট পাঠিয়েছি, দেখো।”

তাহমিদ মুখ চেপে হেসে বলল,
“লিটল স্টার ফেইসবুককে ভালোই উদ্ধার করছে।”

তূর্য বলল,
“টুইংকেল, আমাকে আর হার্ট দিতে হবে না, অনেক দিয়েছো।”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল, “আচ্ছা।”

তারপর বাকিদের ছবিগুলোতেও রিয়েক্ট দিয়ে এলো। আহনাফ বিরক্ত হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে দিলো। এবার অরুণিকা মেসেজ দেওয়ার জন্য ইমনের আইডিতে ঢুকলো। তারপর লিখলো,
“তুমি এতোক্ষণ বাথরুমে কি করছো? দেখছো না, আরাফ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে? তাড়াতাড়ি বের হও।”

অরুণিকা এবার আহনাফকে মেসেজ দিলো। লিখলো,
“হাই, কেমন আছো?”

তাহমিদকে লিখলো, “সুন্দর বই।”

তূর্যকে লিখলো, “ছবিগুলো সুন্দর।”

শতাব্দীকে লিখলো,
“শতু আপু, বাসায় আসবে না আজকে?”

মাওশিয়াতকে লিখতে যাবে তার আগেই আহনাফ রুমে এসে বলল,
“এই কি করলে এটা তুমি?”

তূর্য রুমে এসে হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পড়লো। তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি হয়েছে?”

তূর্য হাসির জন্য কথাও বলতে পারছে না। আরাফ আর ইভানও রুমে এলো। ইমন বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল,
“তোরা এভাবে হাসছিস কেন?”

তূর্য বলল,
“তুমি এতোক্ষণ বাথরুমে কি করছো? দেখছো না, আরাফ দাঁড়িয়ে আছে? তাড়াতাড়ি বের হও।”

“মানে?”

“মানে তোর মান-সম্মান পানির সাথেই চলে গেছে। সাত মিনিটের মধ্যে বিশজনের হা হা রিয়েক্ট। ভাই তাড়াতাড়ি আইডি অফ কর।”

“মানে কি?”

আহনাফ বলল,
“আরেহ, এই বোকাটা তোকে মেসেজ দিতে গিয়ে তোর টাইমলাইনে লিখে ফেলেছে।”

ইমন তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, অরুণিকার পোস্ট৷ ইমন ছোঁ মেরে অরুণিকার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ডিলিট করে দিলো। অরুণিকা ফ্যালফ্যাল করে ইমনের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আহনাফ বলল,
“বাকিগুলোও ডিলিট কর।”

ইমন রাগী কন্ঠে বললো,
“তোরা দে। আমি পারবো না। সকালটাই খারাপ করে দিয়েছে৷ সবাই কি ভাববে এখন? মাওশিয়াতও দেখে ফেলেছে।”

তাহমিদ এবার ফোন হাতে নিয়ে বাকিগুলোও ডিলিট করে দিলো। তারপর বলল,
“এভাবে মেসেজ দেয় না, অরুণিকা।”

তারপর অরুণিকাকে দেখিয়ে দিলো কিভাবে মেসেজ পাঠাতে হয়। অরুণিকা ইমনকে বলল,
“সরি। আমি তো জানতাম না।”

কয়েক দিন পর সন্ধ্যায়, মাওশিয়াত ফেইসবুকে ঢুকেই চমকে উঠল। সে স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে ইমনকে ফোন করলো। এদিকে ইমন মাওশিয়াতের কল দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে রিসিভ করে বলল,
“কি অবস্থা? কেমন আছো?”

মাওশিয়াত গম্ভীরমুখে বলল,
“আমি নতুন সম্পর্কে চলে গেছি।”

ইমন ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখলো মাওশিয়াতেরই নম্বর। সে আবার কানের কাছে এনে বলল,
“কি বলছো তুমি, মাওশিয়াত?”

“হ্যাঁ, ফেইসবুকে ঢুকেই দেখো।”

কথাটি বলেই মাওশিয়াত কল কেটে দিলো। ইমন চিন্তিত মুখে সোজা হয়ে বসল। তারপর ফোন হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। তখনই তূর্য রুমে এসে হাসতে হাসতে বলল,
“ইমন, তোর প্রেমে তো অন্যজন ভাগ বসিয়ে দিয়েছে!”

ইমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“মাওশিয়াত আমাকে যেভাবে বলেছিল, আমি ভেবেছি অন্যকিছু।”

ইমন তাহমিদের রুমে এসে দেখলো, অরুণিকা তাহমিদের পাশে বসে ফোন চালাচ্ছে। ইমন ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে বলল,
“কি করলে এটা?”

অরুণিকা ফ্যালফ্যাল করে ইমনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাহমিদ জিজ্ঞেস করল,
“আবার নতুন কোনো ঝামেলা বাঁধিয়েছে নাকি?”

তূর্য রুমে ঢুকে আহনাফের পাশে বসে বলল,
“নতুন শিরোনাম, লিটল স্টার অরুণিকা ইন এ রিলেশনশিপ উইথ মাওশিয়াত।”

তাহমিদ আর আহনাফ অরুণিকার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলো। অরুণিকা বলল,
“তোমরা হাসছ কেন?”

তূর্য হাসিয়ে থামিয়ে বলল,
“টুইংকেল, তুমি কি দিয়েছ এটা?”

অরুণিকা ফোন হাতে নিয়ে বলল,
“ওহ, এটাতো সামনে এসেছিল।”

“আরেহ, তুমি কি এর অর্থ জানো?”

“হ্যাঁ, জানি।”

“কি, দেখি বলো তো!”

“রিলেশনশিপ অর্থ সম্পর্ক।”

“আচ্ছা! কে বলেছে তোমাকে?”

“আমাদের স্কুলে শব্দের অর্থ শিখতে দিয়েছিল, ওখানে পড়েছি।”

আহনাফ বলল,
“তাহলে কি শুধু মাওশিয়াতের সাথেই তোমার সম্পর্ক? আমরা কি কেউ না?”

“আপুর নাম চলে এসেছিল, তাই ওটাই দিয়েছি।”

এবার ইভান আর আরাফ রুমে এলো। ইভান বলল,
“এগুলো কি অরুণিকা!”

আরাফ বলল,
“বাদ দে। ও কি এগুলো বুঝে?”

“না বুঝলে ফোন ধরবে কেন? তাহমিদ, তুই ওকে ফোন ধরতে দিচ্ছিস কেন? ফেইসবুকে ঢুকে যা তা করছে। গতকাল স্টোরিতে ব্রাশ করার ছবি ছেড়ে দিয়েছে। আর আজকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস। প্রতিদিন এসব কি?”

ইভানের কথা শুনে তূর্য হাসতে হাসতে বলল,
“আর যাই বল, স্টোরিটা কিন্তু চরম ছিল। ভাগ্যিস টুইংকেলের সাথে আমরাই এড ছিলাম। অন্য কেউ দেখলে তোর সম্মানের তেরোটা বেজে যেতো।”

তাহমিদ বলল,
“শতাব্দী তো দেখে ফেলেছিল।”

ইভান বলল, “কি?”

“হ্যাঁ। আমাকে বলেছে, ফোনে উল্টাপাল্টা ছবি না রাখতে।”

“তুই আমার ছবিটা তুলেছিস কেন?”

“আরেহ, তুই ঘরে হেঁটে হেঁটে ব্রাশ করছিলি। আমার রাগ উঠছিল। ব্রাশ করার জায়গা বেসিনের সামনে৷ পরে বললে বলবি, কখন করলাম? তাই ছবি তুলে প্রমাণ রেখেছিলাম। অরুণিকা তো সেটা ভাইরাল করে দিয়েছে।”

সবাই ইভানের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। ইভান অরুণিকার সামনে এসে বলল,
“গতকাল ক্লান্ত ছিলাম, তাই কিছু বলি নি। এখন বলো, আমার ছবি কেন দিয়েছিলে?”

অরুণিকা ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“ভুলে চাপ পড়ে গিয়েছিল।”

“আর ফোন হাতে দেখলে হাত কেটে দেবো।”

আরাফ বলল,
“ইভান, ও ছোট মানুষ। আর আমরা ছাড়া ওর সাথে কেউ এডও নেই৷ তাহলে তোর সমস্যাটা কোথায়?”

“মাওশিয়াত আর শতাব্দী তো আছে। ওরা দেখলে কি ভাববে?”

ইমন অরুণিকার হাত ধরে বলল,
“পরেরবার কিছু করার আগে জিজ্ঞেস করবে, ঠিক আছে?”

ইমন এরপর ফেইসবুকে ঢুকে সব আগের মতো করে দিলো। বাকি সব কিছু অরুণিকাকে শিখিয়ে দিল। অরুণিকা ফেইসবুকে খালি বক্সটা দেখে বলল,
“তাহলে এখানে কি লিখে?”

“তোমার ভালো লাগাগুলো লিখবে। তুমি কি ভাবছো, কি করতে চাও, অন্যকে জানাতে চাইলে এই বক্সে লিখবে। এরপর সবাই তা দেখবে।”

“আচ্ছা, বুঝেছি।”

সন্ধ্যায় ইফতারির পর অরুণিকা পড়াশুনা শেষ করে তাহমিদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে খালি বক্সে লিখতে বসে গেলো। প্রায় বিশ মিনিট পর অরুণিকা পোস্ট করলো। তারপর তাহমিদকে বলল,
“দেখো, আমি লিখেছি।”

বাকিরা পাশেই ছিল। তূর্য উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
“দাঁড়া, আমি পড়ে সবাইকে শুনাচ্ছি।”

অরুণিকার পোস্ট দেখে তূর্য মুখ চেপে হাসতে লাগলো। ইমন ব্যস্ত হয়ে বলল,
“তুই পড়বি এখন? নাকি হাসবি?”

“আচ্ছা, আচ্ছা, পড়ছি।”

তূর্য গলা খাঁকারি দিয়ে পড়া শুরু করলো,
“আমি অরুণিকা। আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার স্কুল অনেক বড়।”

তূর্য হাসতে হাসতে বলল,
“এগুলোও কেউ লিখে?”

অরুণিকা অভিমানী কন্ঠে বলল,
“তুমি পড়তেই জানো না? তুমি হাসছো কেন?”

অরুণিকা মন খারাপ করে বিছানা থেকে নেমে অন্য রুমে চলে যেতেই আরাফ তার হাত ধরে ফেললো। তারপর তাকে পাশে বসিয়ে বলল,
“আমি পড়ছি। আমার অরু কি লিখেছে দেখি?”

আরাফ ফোনটা নিয়ে পড়তে লাগল অরুণিকার লেখা।

“আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করি। তারপর নাস্তা করে স্কুলে চলে যাই। আরাফ আমাকে স্কুলে দিয়ে আসে। ইমন নিয়ে আসে। আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি ওদের সাথে খেলি। তারপর বাসায় এসে ঘুমাই। পড়াশুনা করি। তারপর তাহমিদের ফোনে ফেইসবুক চালাই।”

ইমন তূর্যের দুই ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে, যাতে ও হাসতে না পারে। কিন্তু এদিকে নিজেই হাসছে। আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“অনেক সুন্দর করে লিখেছ। কিন্তু অনেক বানান ভুল হয়েছে। নাস্তা, স্কুল, বন্ধু এরকম অনেক বানান শুদ্ধ হয় নি।”

“আমি কিভাবে লিখতে হয় জানি না। আমি খাতায় লিখতে পারি। কিন্তু ফোনে কিভাবে লেখে জানি না।”

“তো তুমি খাতায় লিখো। খাতায় লিখলে তোমার হাতের লেখাও সুন্দর হবে। আর তোমার চোখেও কোনো সমস্যা হবে না। বেশি ফোন চালানো উচিত না। তুমি তো অনেক ছোট৷ দেখছ না, আমি চশমা ছাড়া সব ঝাপসা দেখি৷ কারণ আমি তোমার বয়সে অনেক ভিডিও গেইম খেলতাম। সারাদিন ট্যাব নিয়ে বসে থাকতাম।”

“কিন্তু আমার ফেইসবুক চালাতে অনেক ভালো লাগে।”

ইভান বলল,
“তুই কাকে বোঝাচ্ছিস, আরাফ?”

আরাফ বলল,
“অরু, আমার কথা শুনে। অরু, এখন থেকে শুধু দশ মিনিট ফেইসবুক চালাবে। এর মধ্যে যা করার করবে। এরপর আবার পড়তে বসবে। ঠিক আছে?”

অরুণিকা ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আরাফের দিকে তাকালো। আর বলল,
“আচ্ছা। কিন্তু যেদিন হোমওয়ার্ক থাকবে না, ওইদিন একটু বেশি দেখবো।”

“আচ্ছা, ওইদিন বিশমিনিট।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here