অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৩৮||

0
1178

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৩৮||

৬৫.
তূর্য কটেজে ফিরেই ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই মুহূর্তে তার উপমাকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু ফেইসবুকে এতো এতো কমেন্টের ভীড়ে সে উপমাকে খুঁজে পাচ্ছে না। এবার সে ইন্সটাগ্রামে ঢুকলো। অনেকগুলো মেসেজের ভীড়ে পেয়ে গেলো উপমা সিদ্দিকার নাম। ছবি দেখেই তূর্য উপমাকে চিনে ফেলল। এবার সে ইনবক্সে ঢুকলো। পুরো ইনবক্স জুড়ে, “হাই, হ্যালো, একটু তো রিপ্লাই দাও,” এমনই মেসেজ এসেছে। আরো উপরে স্ক্রল করতেই দেখলো উপমা তাকে বিভিন্ন উপলক্ষে ছবি এঁকে শুভেচ্ছা দিয়েছে। আরো উপরে একটা ছবি দেখে থমকে গেলো তূর্য। তার গিটার হাতে একটা ছবি প্রিন্ট করে বাঁধিয়ে উপমা রুমের দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছে, আর পাশে উপমা শাড়ি পরে একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য ছবিটি দেখে আনমনেই হাসলো। তখনই আহনাফ তার পাশে বসে বলল,
“একা একা হাসছিস কেন?”

তূর্য ফোনটা আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলো। আহনাফ সব মেসেজ ভালোভাবে পড়ে বলল,
“মনে হচ্ছে, মেয়েটা তোর জন্য পাগল।”

তূর্য হেসে বলল, “হ্যাঁ।”

আহনাফ তূর্যের মিষ্টি হাসি দেখে একটু নড়েচড়ে বসলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তুই আগে তো কখনো ইনবক্সে ঢুকিস নি। আর আজ হঠাৎ!”

“এই মেয়েটাই গতকালকের সেই মেয়েটা। আজ সকালেও ওর সাথে দেখা হয়েছে। কথার ফাঁকে জানলাম ও রিকির ভক্ত।”

আহনাফ অবাক হয়ে বলল,
“বাহ, কাকতালীয় ভাবে তোর ভক্ত তোর দেখাও পেয়ে গেলো, আর চিনলোও না!”

“হ্যাঁ।”

“এখন তোর এই হাসির রহস্য কি! প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি!”

“আরেহ ধুর, প্রেম-টেম আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু এতো বড় সুযোগ হাতছাড়াও করা যায় না।”

“তো কি করবি এখন?”

“মেয়েটার সাথে কথা বলবো। দেখি জল কতোটুকু গড়ায়।”

আহনাফ মনে মনে হাসলো। আর বলল,
“জল গড়িয়ে সমুদ্র হলেই আমি বাঁচি। অন্তত অরুর দিক থেকে তো মনোযোগ সরাবে।”

তূর্য ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তুই হাসছিস কেন?”

আহনাফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“মেয়েটা অনেক সুন্দরী। মাওশিয়াত, শতাব্দী এদের চেয়েও সুন্দর। তোদের ভালোই মানাবে।”

তূর্য বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
“মনে হচ্ছে আমার চেয়ে তুই বেশি খুশি। পছন্দ হলে বল। তোর সাথেই সেটিং করিয়ে দেবো।”

আহনাফ চোখ ছোট করে বলল,
“তোর পাগলা ভক্ত আমার প্রেমিকা হলে দু’দিনও আমার সংসার ঠিকবে না। তোর ভক্ত নিয়ে তুই থাক, আমি গেলাম।”

আহনাফ আনমনে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরুতেই অরুণিকার দেখা পেলো। অরুণিকা তাকে দেখেই বলল,
“আরাফ বলেছে তোমার কান টেনে দিতে। দেবো?”

এবার অরুণিকার পেছনে আরাফ এসে দাঁড়ালো, আর বলল,
“আজকে থেকে বাকি যতো দিন এখানে আছি, তুই আমার রুমে থাকবি। আর আমি ইমনের রুমে।”

আহনাফ বলল, “কেন?”

অরুণিকা বলল,
“এখন থেকে আমরা দু’জন তোমাদের দু’জনকে পাহারা দেবো। যে সিগারেট খাবে, তার কান টেনে দেবো।”

আহনাফ চোখ ছোট করে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আমার কান টানবে?”

আরাফ বলল,
“সম্মান বাঁচাতে হলে বদ অভ্যাস ছাড়তে হবে।”

আহনাফ হনহনিয়ে তাদের সামনে থেকে চলে গেলো। আহনাফ চলে যাওয়ার পর অরুণিকা আর আরাফ হাই-ফাইভ দিয়ে একসাথে বলে উঠল,
“মিশন, সিগারেট ছাড়ানো।”

এদিকে শতাব্দী অনেকক্ষণ ধরে তাহমিদ আর আরাফের ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কল ঢুকছে না। তার মন খুব ছটফট করছে। মনে হচ্ছে খারাপ কিছু একটা হবে। সে ঘরে ঘরে পায়চারি করছিলো, তখনই তার পিসি এসে দরজায় কড়া নাড়লো। শতাব্দী দরজা খুলতেই তিনি ভেতরে ঢুকে বিছানায় পা তুলে বসে পড়লেন। তারপর হাঁক ছেড়ে ডাকলেন,
“শ্রীজা। ও শ্রীজা, কোথায় মরেছিস! এদিকে আয়।”

শ্রীজা দৌঁড়ে ভেতরে এলো।

শ্রীজা হচ্ছে শতাব্দীর ছোট বোন। পিসি মা ছাড়া সবাই তাকে পুচকি বলেই ডাকে। সে পিসিকে জমের মতো ভয় পায়।

শ্রীজা পিসির পাশে দাঁড়িয়ে ভীত কন্ঠে বলল,
“জ্বি পিসি মা! ডেকেছো আমায়?”

“হ্যাঁ, ডেকেছি। তোর দিদিকে দেখা যার সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলাম, তার বিয়ের ছবি।”

শ্রীজা এদিক-ওদিক তাকিয়ে ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়েই দৌঁড়ে চলে গেলো, আবার কোথা থেকে একটা ছবি এনে দৌঁড়ে শতাব্দীর রুমে ঢুকলো। পিসি মা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“শতাব্দী, দেখ ছবিটা।”

শ্রীজা ছবিটি বোনের হাতে দিতেই শতাব্দী তা নিয়ে নিচে ফেলে দিলো। পিসি রাগী কন্ঠে বললেন,
“এতো টুকুন মেয়ের এতো দেমাগ থাকা ভালো না! বিয়ের বয়স হয়ে গেছে তোর। একটা ছোট বোন আছে। তোর বিয়ে না দিলে এরও বিয়ে হবে না। আমি বুঝি না, এতো পড়াশোনা করে কি এমন করবি!”

শতাব্দী ঠান্ডা গলায় বলল,
“পড়াশুনা করবো কি করবো না, এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন যে আমি বিয়ে করছি না, এটা নিশ্চিত করেই বলছি।”

“বিয়ে তো তোকে এই ঋতুতেই দেবো। আমার বাড়ির পাশেই এক নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে। ছেলের মুখ খানা দেখলে চোখ ভরে যায়। ছেলে আবার যেমন তেমন না, আর্মিতে জয়েন করেছে। খুব শীঘ্রই বড় অফিসার হবে। আমি তোর বাবাকে বলেছি, তাদের ছেলে পছন্দ হয়ে গেছে। কারো কোনো আপত্তি নেই। তোর মা তো এখুনি কন্যাদান করতে পারলেই খুশি। এমন সুপাত্র তো আর হাত ছাড়া করা যায় না।”

শতাব্দী কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে গেলো। মা তাকে দেখেই বুঝলেন সে কেন এসেছে। তিনি বললেন,
“মা রে, ছেলেটা সত্যিই ভালো। সেনাবাহিনীতে আছে। কতো সম্মান পাবি তুই জানিস? না করিস না, মা। এমনিতেই তোর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।”

শতাব্দী ভেজা কণ্ঠে বলল,
“মা, প্লিজ ওমন কথা বলো না। তোমরা আমাকে জোর করো না, মা। আমি বিয়ের জন্য একদমই প্রস্তুত নই।”

হঠাৎ তিনি গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
“আমি এতো কিছু শুনবো না। তোর বাবা রাজি আছে। এমন ছেলে পাগলেই হাত ছাড়া করবে। আগে দেখ ওরা তোকে পছন্দ করে নাকি! ছেলের যা চেহারা, নজর না লাগুক।”

মায়ের কথা শুনে শতাব্দী দমে গেল। মা এর আগে কোনো বিয়ের সম্বন্ধে এতো আগ্রহ দেখায় নি। এই সম্বন্ধ নিয়ে তার এতো আগ্রহ দেখে এবার সত্যিই শতাব্দীর বুক ঢিপঢিপ করছে। শতাব্দী এবার বাবার কাছে গেলো। সেখানেও বাবার একই আগ্রহ। তিনি মেয়েকে বুঝিয়ে বললেন যে এখনই বিয়ে করার উপযুক্ত সময়। শতাব্দীকে মাস্টারমশাই সব ব্যাপারেই সমর্থন করেন। কিন্তু এই ব্যাপারে তার বাবা তার পক্ষেই নেই। আর বাবার উপর সে কথা বলার সাহসও পাচ্ছে না। কারণ আগে কখনো এমন পরিস্থিতি আসেনি।

শতাব্দী এবার ফোন নিয়ে ছাদে চলে গেলো। সে তাহমিদকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু কল ঢুকছে না। এবার শতাব্দী মাওশিয়াতকে কল করল। মাওশিয়াত কল ধরতেই সে তার বিয়ের কথা জানালো। মাওশিয়াত বলল,
“তুমি কি বিয়ে করতে চাইছো না?”

“না।”

“কিন্তু কেন? এখন তো বিয়ে করার সময়। আর ছেলে যদি তোমাকে পড়াশুনা করাতে চায়, তাহলে তো মন্দ হয় না।”

“তুমি তো বিয়ে করছো না!”

“আরেহ, আমি বিয়ে করবোই বা কি করে, ইমন তো এখনো ব্যাচেলর। ওর আগে সেটেল হতে হবে। কিন্তু তোমার বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ কি?”

“আমি ভালোবাসি একজনকে..”

মাওশিয়াত ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কে সে!”

শতাব্দী কাঁপা কন্ঠে বললো, “তাহমিদ।”

মাওশিয়াত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল,
“শতাব্দী, কি বলছো তুমি! এই সম্পর্ক কেউ-ই মানবে না।”

“আমি তো মানছি।”

“শুনো, বোকার মতো কথা বলো না। এটা সম্ভব না। তাহমিদ তো মুসলিম। তোমার পরিবার এটা মানবে না।”

“আমি কি পালিয়ে যাবো?”

মাওশিয়াত ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“না! কি যা তা বলছো! পালিয়ে গেলে তাহমিদ তোমাকে কোথায় রাখবে? কিইবা খাওয়াবে? ওরা নিজেরাই ঠিকভাবে চলতে পারছে না। একজন অন্যজনের টাকায় চলছে।”

“মাওশিয়াত, প্লিজ। কিছু একটা তো বলো। বাবা এই সম্বন্ধ নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে গেছে। এখন যদি কথা পাকাপাকি হয়ে যায়?”

“আগে বলো, তাহমিদ কি তোমাকে পছন্দ করে?”

“এখনো জানি না।”

মাওশিয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এটাও জানো না? আবার বিয়েও করতে চাইছো না!”

“ওকে বলার সাহস পাই নি।”

“আচ্ছা, দাঁড়াও। ওরা আগে আসুক। আমি ইমনকে বলবো তাহমিদের সাথে কথা বলতে।”

৬৬.

সাহিল চিন্তিত মুখে গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে। তার পাশেই সানায়া বসে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সাহিল গম্ভীরমুখে বলল,
“আমার আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এখন ওই সুলতান মুন্সীর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি!”

সানায়া বিরক্তির সুরে বলল,
“ক্যান ইউ প্লিজ স্টপ, ভাই? সারাদিন তোমাদের এই ওই গ্রুপের মারামারি যেন লেগেই থাকে। তোমরা দিন দিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছ। আমি এসব আর নিতে পারছি না।”

“দেখ, সানায়া। এগুলো মারামারি না। এগুলোই বিজনেস করার টেকনিক। ব্যবসাকে উপরে তুলতে হলে এসব টেকনিক মেনে চলতে হয়।”

“আচ্ছা? তাই তুমি আর মিস্টার মির্জা মিলে আপুর সাথে অন্যায় করছো, যাতে তোমাদের বিজনেসে কোনো ঝামেলা না হয়!”

“দেখ, তুই এসবের জন্য এখনো ছোট। সুলতান মুন্সীর ছেলের সাথে সাবার বিয়ে দেওয়া অসম্ভব। ওদের তো বংশেই দোষ আছে।”

সানায়া চেঁচিয়ে বললো,
“আর আপু তো ওই ছেলেকেই বিয়ে করবে!”

“করলে করুক। ওকে সম্পত্তির ভাগই দেবো না। আর দেখিস এমন হলে সুলতান মুন্সী নিজেই তার ছেলেকে সাবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। কারণ সুলতান মুন্সীর কাছে ভালোবাসার চেয়ে পদ গুরুত্বপূর্ণ। আর এই পদ একমাত্র টপ বিজনেসম্যান সাহিল মির্জায় তাকে দিতে পারবে।”

সানায়া ভাইয়ের কথা শুনে বিড়বিড় করে বলল,
“টপ বিজনেসম্যান না, টপ খচ্চর। এই খচ্চর ভাইটা হয়তো আমার বান্ধবীর জীবনটাই নষ্ট করে দেবে।”

সাহিল ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“মিনমিন করে কি বলছিস?”

সানায়া শান্ত কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া, একটু যদি এসব ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে, আমরা সবাই অনেক ভালো থাকতাম। এভাবে বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতে হতো না।”

সাহিল এই কথার কোনো উত্তর দিলো না। সানায়া এবার রাগী গলায় বলল,
“ক্লাসের সবাই বলে আমার বাবা খুনী মন্ত্রী। সবাই বলে আমি ক্রিমিনাল বংশের মেয়ে। আমার ভাই ভালো না। একই কথা রাহিও শুনছে। ও সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকে। ও চায়, তুমি সাধারণ মানুষের মতো বাঁচো। আর তুমি?”

সাহিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সানায়া, আমি মির্জা গ্রুপের এমডি। কোটি কোটি টাকার মালিক। রাহির ভবিষ্যতে কিসের অভাব হবে?”

“ভালোবাসা আর সময়ের অভাব হবে। প্রাইভেসির অভাব হবে। এখন তো মিডিয়া আর বডিগার্ড ছাড়া কোথাও পা দেওয়া যায় না। আমার এসব অসহ্য লাগছে, ভাইয়া। আমি ট্যুর দিতে পারি না। বডিগার্ড আগে-পিছে ঘুরঘুর করে। আমি রেস্টুরেন্টে গেলেই আমার ছবি তুলে এখানে ওখানে ছেড়ে দেয়। আমি কোনো ছেলে ক্লাসমেটের সাথে বাইরে গেলে ওদেরকে আমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দেয়। কি অদ্ভুত! এখন তো ক্লাসের কেউই আমার সাথে কথা বলে না।”

সানায়া সাহিলকে এসব বলে গাড়ি থামাতে বলল। এরপর সে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। গাড়ি থেকে নামতেই পেছনের গাড়িটাও থেমে গেলো। আর সাথে সাথে দু’জন বডিগার্ড নেমে এলো। সানায়া তাদের দেখে আবার গাড়িতে উঠে বসলো। সাহিল এবার বলল,
“তোকে এসব মেনে নিতে হবে।”

হঠাৎ একটা অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো। সাহিল কল ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
“ওরা আসছে মির্জা সাহেব। বাবার কর্মফল ভোগ করার জন্য তৈরী তো?”

সাহিল ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কে বলছেন?”

একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো। লোকটি আবার বলল,
“সেই রাত, সেই মুহূর্ত, সেই খুন, আর সেই খুনী সবকটাকেই আমি চিনি।”

সাহিল চেঁচিয়ে বলল,
“কে আপনি, কি সব আজেবাজে বকছেন?”

কল কেটে যাওয়ায় সাহিল হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। সানায়া ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজেবাজে কাজ করলে আজেবাজে বকবেই। স্বাভাবিক!”

সাহিল বোনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সে চুপ হয়ে গেলো।

এদিকে রাতে সম্পূর্ণ বিছানা দখল করে হাত পা মেলে অরুণিকা শুয়ে আছে। আহনাফ তার পা সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি কোথায় ঘুমাবো?”

অরুণিকা উঠে বসে বলল,
“তা আমি কি করে বলবো?”

“দেখো, ফাজলামো করবে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।”

“তো ঘুমাও।”

“কোথায় ঘুমাবো সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি। আরাফ এতোদিন কোথায় ছিলো?”

“বাথরুমে ছিল। তুমিও ওখানে গিয়েই ঘুমাও।”

“অরু, ফাজলামো করলে একটা চটকানি দেবো। বেড কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করছি।”

অরুণিকা বিছানার নিচে দেখিয়ে দিতেই আহনাফ মাথা ঝুঁকিয়ে বেডটা বের করে, তা খুলে নিচে বিছিয়ে নিলো।
দুই বেডের রুম না পাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের আলাদা বেড দিয়েছেন। আর অরুণিকা রাতে একা ঘুমাতে ভয় পায়, তাই তার সাথে এতোদিন আরাফ নিচে বিছানা করে ছিল।

এদিকে আহনাফ বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো। অরুণিকা বিছানা থেকে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ চোখ খুলে অরুণিকাকে তার মুখোমুখি দেখে বলল,
“কি! এভাবে বানরের মতো ঝুলে আছো কেন?”

অরুণিকা উত্তর না দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লো। আহনাফও বিষয়টা না ঘেঁটে চোখ বন্ধ করলো। একটুপর অরুণিকা বালিশের নিচ থেকে আহনাফের ফোনটা বের করলো। আসলে সে ওই মুহূর্তে নিচে ঝুঁকে ফোনটাই নিয়ে নিয়েছিল। অরুণিকা মনে মনে বললো,
“এবার সারারাত আমি গেইমস খেলবো।”

গেইম শুরু করার সেকেন্ড খানিক পরই আহনাফ খপ করে ফোনটা নিয়ে নিলো। অরুণিকা ভয়ে লাফিয়ে উঠলো। আহনাফ বাঁকা হেসে বলল,
“বাচ্চু, তুমি আমাকে বোকা বানাতে পারবে না।”

অরুণিকা আর কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে শুয়ে পড়ল। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে ওয়াশরুম থেকে পেস্ট এনে, অর্ধেক পেস্ট বের করে আহনাফের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ ঘুমের ঘোরে কাশতে কাশতে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। দেখলো তার জিহ্বায় ঝাঁঝালো পেস্টের স্বাদ লেগে আছে। সে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে কুলি করতে গেলেই অরুণিকা দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে আরাফের কাছে চলে গেলো। মনে মনে ভাবলো, আজ সারাদিন সে আরাফের হাত ছাড়বেই না।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here