অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৫৫||

0
1024

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৫৫||

৯১.
উপমা অরুণিকাকে নিয়ে শপিং থেকে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই তার চোখ আটকে গেলো সামনের টেবিলে। উপমা এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে। উপমার হেলদোল না দেখে অরুণিকা তার চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখলো তূর্য একটা মেয়ের সাথে বসে কথা বলছে। উপমা সামনে পা বাড়াতে যাবে তখনই মেয়েটা হুট করে তূর্যের বুকে হাত রাখলো। অরুণিকা সেটা দেখেই তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ালো। তূর্য অরুণিকা আর তার পেছনে উপমাকে দেখে সেকেন্ড খানিকের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো, আর মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“টুইংকেল, তুমি এখানে?”

পাশের মেয়েটি উপমাকে দেখে ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার চোখেমুখে আতংক ভীড় করেছে। মেয়েটি ব্যস্ত কন্ঠে তূর্যকে বলল,
“রিকি, আমি আসি। তোমার সাথে পরে কথা হবে।”

তূর্যও আর মেয়েটিকে আটকালো না। মেয়েটির বের হওয়ার সময় আরেকবার উপমার চোখাচোখি হলো। উপমা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এদিকে তূর্য প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে উঠলো,
“ও আমার ফ্রেন্ড। আমরা একসাথে কাজ করি। স্টুডিও থেকে এখানে এসেছি লাঞ্চ করার জন্য।”

অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তোমার কেমন ফ্রেন্ড, যে তোমার এতো কাছে চলে এসেছে?”

“কোথায় কাছে এসেছে? আমরা কতো দূরত্ব রেখে বসেছি, দেখো নি?”

“রকস্টার, মিথ্যে বলছো কেন? আমি কি কিছু বুঝতে পারছি না ভাবছো?”

তূর্য ঠান্ডা গলায় বলল, “বাসায় চলো।”

উপমা হঠাৎ বলে উঠলো,
“না, বাসায় যাবো না। আমি মুনলিটের সাথে খেতে এসেছি। এখন তো খেয়েই বাড়ি ফিরবো। আপনার ফ্রেন্ড যেহেতু চলে গেছে, আপনিও চলে যান।”

উপমার থমথমে কন্ঠ শুনে তূর্য কিছুটা দমে গেলো। সে কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে পড়লো। বাসায় এসে তূর্য ছটফট করতে লাগলো। ইমন তূর্যকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিস! সমস্যা কি?”

“একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। টুইংকেল আর উপমা আমাকে হৃদির সাথে দেখে ফেলেছে।”

ইমন ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“এ আর নতুন কি! তোর মেয়ে বন্ধুর তো অভাব নেই।”

“ভাই, মেয়েটা হুট করে আমার কাছে চলে এসেছিল, আর ওইটাই ওরা দেখে ফেলেছে।”

ইমন ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“তুই না বললি মেয়েটা তোর জাস্ট ফ্রেন্ড। এখন এটা বলিস না যে তুই পরকীয়া করছিস। বাসার কেউ জানলে তোকে জুতা পেটা করে ঘর থেকে বের করবে।”

“আরেহ না। ও তো শুধুই আমার ভক্ত। মাঝে মাঝে দেখা করি৷ একটু ঘুরাঘুরি করি। ভাই, এক বছর আগে মেয়েটা আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর থেকে আমি ওকে অনেক ইগনোর করেছিলাম। আর আজকে দেখা করে হঠাৎ কাছে চলে এসেছে। আর সেটাই ওরা দু’জন দেখে ফেলেছে। এখন ওরা কি ভাববে আমাকে নিয়ে?”

ইমন তূর্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কি ভাববে মানে? উপমার কেমন লেগেছে, সেটা আগে তুই ভেবে দেখ। ও তোর বউ। আর তুই ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে কিভাবে গেলি, যে তোকে প্রেমের প্রস্তাব দিলো?”

“আমি ওকে ইগনোর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। ও বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছিল, রিকুয়েষ্ট করছিল দেখা করার জন্য।”

ইমন তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“তুই আদৌ ওই মেয়েটাকে ইগনোর করেছিলি? উপমাকে যেভাবে ইগনোর করিস মেয়েটাকেও ওভাবে ইগনোর করে দেখতি, হয়তো কাজ হতো।”

কথাটি বলেই ইমন চলে গেলো। এদিকে বিকেলে উপমা আর অরুণিকা বাসায় ফেরার পর তূর্য উপমার কাছে এসে বলল,
“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। আমরা একটু গাড়িতে গিয়ে বসি।”

উপমা গম্ভীরমুখে বলল,
“গাড়িতে কেন? অন্য কেউ আমাদের কথা না শোনার জন্য? আর আপনি এতো ছটফট করছেন কেন? আপনি কি কোনো অপরাধ করেছেন?”

“না, এমনিতেই। আমি তো একদমই ছটফট করছি না।”

“ছটফট না করলে আমি এই বাসায় ঢুকলাম, আর আপনি এই আমাকে বাইরে যেতে বলছেন?”

বাকিরা সবাই বসার ঘরেই ছিল। উপমার উঁচু গলার শব্দ শুনে সবাই বেরিয়ে এলো। তূর্য পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল,
“রুমে চলো।”

অরুণিকা উপমার হাত ধরে তূর্যকে বলল,
“যেহেতু তোমার কোনো কিছুই রুমের ভেতরে নেই, রেস্টুরেন্টে উন্মুক্ত হয়ে গেছে, তাহলে এখন ভাবীকে রুমে কেন ডেকে নিয়ে যাচ্ছো?”

তূর্য রাগী কন্ঠে বলল,
“তুমি এসব ব্যাপারে কথা বলতে আসবে না। তুমি এখনো এতো বড় হও নি।”

“ঠিক আছে, আমি বড় হই নি। কিন্তু এতোটাও ছোট না যে বুঝবো না কোনটা ফ্রেন্ডশিপ, আর কোনটা রিলেশনশিপ।”

“ও জাস্ট আমার ফ্রেন্ড। আমি তো বলেছি, আমরা একসাথে স্টুডিওতে কাজ করি।”

উপমা চেঁচিয়ে বলল,
“মিথ্যা কথা। মেয়েটা স্টুডিওতেই কাজ করে না। আপনি যার সাথে লুকিয়ে প্রেম করছেন, মেয়েটার পরিচয় কি জানেন?”

“আমি মোটেও ওর সাথে প্রেম করছি না, উপমা। তুমি আমাকে ভুল ভাবছো।”

ইভান তাদের কথার মধ্যে দিয়ে বলে উঠলো,
“হয়েছে টা কি? কোন মেয়ের কথা বলছো তোমরা?”

অরুণিকা রেস্টুরেন্টে যা যা দেখেছে সব ঘটনাই খুলে বললো। সব শুনে আরাফ তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এগুলো করতে দেশে এসেছিস? এভাবে মৃত বাবা-মার হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছিস? এসব নোরাংমি করে?”

তূর্য চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
“না, ভাই না। মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি না। মেয়েটা জাস্ট আমার ফ্রে……”

উপমা তূর্যকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“মেয়েটা জাস্ট আপনার ফ্রেন্ড। আপনারা স্টুডিওতে একসাথে কাজ করেন, এটাই তো?”

“হ্যাঁ।”

“যদি আমি বলি মেয়েটা গানের ‘গ’ও জানে না তখন?”

“তোমাকে কে বলেছে ও গান জানে না?”

“কারণ আমি মেয়েটাকে চিনি। ইনফ্যাক্ট খুব ভালোভাবেই চিনি। মেয়েটাই হচ্ছে হৃদি আপু, যেই মেয়েটার জন্য আমার ভাইয়া এখনো বিয়ে করে নি। এই মেয়েটার সাথেই ভাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই মেয়েটাই হুট করে তিন বছর আগে বিয়ের কথাবার্তা উঠতেই ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক ভেঙে ফেলে, আর বলে দেয়, তার বাবা তার জন্য ডাক্তার ছেলে ঠিক করে ফেলেছে,যেই ছেলে সব দিক থেকে আমার ভাইয়ার চেয়ে উপযুক্ত।”

সবাই অবাক হয়ে উপমার দিকে তাকিয়ে রইলো। উপমা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অরুণিকা তাকে সামলাতে গেলে তার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। উপমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি চার বছর ধরে এই লোকটার সাথে সংসার করেছি। কিন্তু ও আমাকে একটুও ভালোবাসেনি। আমিও কখনো জোর করি নি। ভাবতাম, স্টারদের ভালোবাসা এমনই হয় হয়তো। যখন থেকেই এই মানুষটাকে আমার স্টার ভাবা শুরু করেছি, তখন থেকেই এর সব অপরাধ, সব ভুল আমি মাফ করেছি। বিয়ের পর তো আমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী ভাবতাম, আমার স্টারের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। যাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম সে আমার বর হয়েছে। কিন্তু এই মানুষটা আমাকে কখনো ভালোবাসে নি। তারপরও আমি চুপ করে সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু আজ সে আমার ভাইয়ার ভালোবাসার মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।”

তূর্য উপমার সামনে হাত জোড় করে বলল,
“বিলিভ মি, আমি ওর সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াই নি। ও আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, আর আমি শুধু দেখা করতে গিয়েছি। এরপর ও নিজেই আমার কাছে এসেছে।”

উপমা কোনো কথা না বলে উপরে উঠে গেলো। অরুণিকা বলল,
“আমি তোমাকে রকস্টার বলতাম। কিন্তু তুমি স্টার না, একটা ব্ল্যাক হোল। যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই মিথ্যে। তুমি একটা…..”

আরাফ উঁচু গলায় বলল,
“অরু, তুমি তোমার রুমে যাও।”

অরুণিকা আরাফের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। ইমন অরুণিকার হাত ধরে তাকে উপরে নিয়ে গেলো। অরুণিকা ইমনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“তোমরা আমাকে কেন বকছো? আর আরাফ আমাকে এভাবে ধমক দিল কেন?”

ইমন রাগী কন্ঠে বলল,
“তূর্যকে কিছু বলার জন্য আমরা সবাই আছি তো নাকি। তুমি ওকে এতোকিছু বলার কে? ও তোমাকে এইটুকু থেকে এতো বড় করেছে। তোমার মুখ থেকে এসব কথা মানায় না।”

অরুণিকা মাথা নিচু করে রইলো। ইমন আবার বলল,
“তুমি দেখো নি তোমার কথায় ও কতো কষ্ট পেয়েছে? ও কাউকে খুন করলেও তুমি চুপ করে থাকবে। ওকে শাসন করার জন্য নিচে আরো অনেকেই আছে। আরাফ আর ইভান থাকতে তোমাকে কে বলেছে মুখ খুলতে? যাও, এখন নিজের রুমে যাও।”

অরুণিকা মুখ ফুলিয়ে রুমের দিকে যাওয়ার সময় আরবান তালুকদারের মুখোমুখি হলো। আরবান অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ওরা তো তোমার ভালো চায়। ওদের কথায় মন খারাপ করো না। চলো।আমার সাথে৷ আমি তোমাকে তোমার বাবা-চাচাদের গল্প শুনাবো।”

অরুণিকা আরবান তালুকদারের সাথে বারান্দায় চলে গেলো।

৯২.

তূর্য উপমার পাশে চুপচাপ বসে আছে। তূর্যের চোখে পানি টলমল করছে। সে কথা বলার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। বার-বার অরুণিকার বলা ব্ল্যাক হোল শব্দটা তার কানে বাজছে। যদিও শব্দটা কোনো খারাপ অর্থ বোঝায় না। কিন্তু অরুণিকার মুখ থেকে খারাপ মানুষদের সংজ্ঞা এভাবেই বেরিয়ে আসে। তূর্যের চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সে চোখ মুছে উপমাকে বলল,
“আমি তোমাকে আজ সব সত্য কথা বলবো।”

তূর্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“উপমা, আমি তোমার সাথে বিয়ের আগে যেভাবে কথাবার্তা বলেছি, বাকি মেয়েদের সাথেও সেভাবেই কথা বলি। অনেক মেয়েই আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি কোনো মেয়ের মধ্যেই কোনো আগ্রহ খুঁজে পাই নি। সবক’টাই টাইম পাস ছিল। যারা আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল, সবাইকে আমি না বলেছি। যারা আমার মেয়ে ফ্রেন্ড, তারা সবাই জানে আমি বিবাহিত। এরপরও অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায়। হ্যাঁ, আমি অনেক খারাপ মানুষ, তাই হয়তো ওদের ইগনোর করি না। কিন্তু তোমার জায়গাটা আমি কাউকে দেই নি। আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে স্পর্শ করি নি। আমি….”

উপমা তূর্যকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“সব মেয়েগুলোকে আনফ্রেন্ড করে দিন। আমি চাই, আজকে থেকে আমি ছাড়া আপনার জীবনে আর কোনো মেয়ে না থাকুক।”

তূর্য চুপ করে রইলো। উপমা তূর্যকে নিরব দেখে বলল,
“মেয়ে মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা আপনার নেশা হয়ে গেছে। এই নেশা ছাড়তে অনেক কষ্ট হবে আপনার, তাই না?”

তূর্য এবারও চুপ করে রইলো। উপমা হঠাৎ তূর্যের হাত ধরে কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আপনি কি বুঝতে পারছেন না, আমি আপনার কাছে ভালোবাসা চাচ্ছি! আমি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাচ্ছি।”

তূর্য মাথা নেড়ে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, উপমা। আমি তো তোমাকে সব অধিকার দিয়েছি।”

উপমা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“রাতে কাছে টেনে সকালে দূরে সরিয়ে দেওয়া ভালোবাসা না। আপনি এতোটাও মূর্খ না যে ভালোবাসা কি বুঝতে পারছেন না।”

তূর্য উপমার হাত ধরে বলল,
“হয়তো আমি ভালোবাসতে পারি না, নয়তো আমার ভালোবাসাগুলো এমনই। আর যাই বলো, তোমার জায়গা আমি কাউকে দিচ্ছি না, উপমা। রাত-দিন যেই সময়ই হোক, তুমি আমার চোখের সামনে থাকলেই আমি ভালো থাকি। আমার কাছে এটাই ভালোবাসা।”

“অরুণিকার ক্ষেত্রেও আপনি এটাই অনুভব করেন। ওকে না দেখলে আপনার অস্থিরতা বেড়ে যায়। ও আশেপাশে থাকলেই আপনি ভালো থাকেন। তাহলে ওটাও তো ভালোবাসা। কিন্তু আমি তো আপনার স্ত্রী। যেই ভালোবাসার চোখে আপনি অরুণিকাকে দেখছেন, সেই ভালোবাসা আর আমার জন্য ভালোবাসা কি আলাদা হওয়ার কথা না? অরুণিকা আপনার প্রাণ। আপনি কখনো ওকে নিজের বোন বলেন নি, কিন্তু আমি জানি, আপনার ওর জন্য অনুভূতিগুলো কতোটা ভিন্ন। কিন্তু আমার সাথে তো আপনার সম্পর্ক ওটা না। আমি কি সেই অনুভূতির ঊর্ধ্বে না? আমার কি আরেকটু বেশি ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই? আমাকে কি আপনার কিছু সময় দেওয়া যায় না? অন্য মেয়েদের পরিবর্তে কি আপনি আমার সাথে, আমাকে নিয়ে ঘুর‍তে যেতে পারেন না?”

তূর্য চুপ করে রইল। তূর্যের হেলদোল না দেখে উপমা মলিন হেসে অন্যপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। সেদিন সারারাত উপমা নিঃশব্দে কেঁদেছে। আর অন্যদিকে তূর্য সারারাত ছটফট করেছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে না, উপমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে তার কেন এতো দ্বিধা কাজ করছে।

দুইদিন পর, হঠাৎ সকালে ভাংচুরের শব্দ শুনে সবাই নিচে নেমে এলো। নিচে নেমে দেখলো কোনো একটা বিষয়ে ইভান আর তূর্যের মধ্যে মারাত্মক ঝগড়া বেঁধেছে। আর একপাশে উপমা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তূর্য চেঁচিয়ে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
“তোর আমার বউয়ের প্রতি নজর আছে, সেটাই বল না। নয়তো আমার চেয়ে তোর ওর প্রতি এতো মায়া কেন লাগছে?”

আহনাফ তূর্যকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল,
“পাগলের মতো প্রলাপ বকছিস কেন?”

“আমাকে কেন পাগল বলছিস? ওদের দুইজনকে বল। রান্নাঘরে কি করছিল দুইটা?”

ইভান চেঁচিয়ে বলল,
“তোর আমাকে সন্দেহ হচ্ছে? চার বছর পর আজই তোর আমাকে সন্দেহ হচ্ছে? কেন, তূর্য? আজ হঠাৎ কি দেখে তুই আমাকে সন্দেহ করছিস? প্রতিদিন সকালে আমি উপমার সাথে সকালের নাস্তা বানাই। দুপুরে তাহমিদ উপমাকে সাহায্য করে, রাতে আরাফ বা ইমন। তুই কখনো রান্নাঘরে গিয়ে তোর বউকে সাহায্য করেছিস? এই বাসায় তোর বউ আছে, তোকে মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য। আর আমাদের রুটি আমরা নিজের হাতে বানিয়ে খাচ্ছি। আজ মেয়েটা হাত পুড়িয়ে ফেলেছিল, আমি শুধু বরফটাই লাগিয়ে দিচ্ছিলাম।উপমা আমার কাছে বোনের মতো।”

ইভান তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“কিন্তু আমি কাকে বোঝাচ্ছি এসব? তোর মতো পাগলকে বোঝাচ্ছি। তোর মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে।”

তূর্য কিছু বলতে যাবে তখনই তাহমিদ আর আহনাফ তাকে শান্ত করিয়ে উপরে নিয়ে গেলো। ইভান রাগে গজগজ করতে করতে উপরে চলে গেল। আর এদিকে উপমা বসে বসে কাঁদছে। অরুণিকা তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। এদিকে ইমন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,
“যতোদূর আমি দেখেছি, তূর্য সকাল সকাল ছাদে গিয়েছিল। সেখান থেকে সে সোজা নিচে নেমেছে। এর আগে কখনো তূর্য এমন রিয়েক্ট করে নি৷ আজ সামান্য এই বিষয়টাকে এতো বড় করে দেখার কি ছিল? এর মধ্যে কিছু একটা তো আছে!”

এদিকে রহমতুল্লাহ একজনকে ফোন দিয়ে বলল,
“বস, আমাদের কাজ হয়ে গেছে।”

ওপাশ থেকে আগন্তুক বলে উঠলো,
“বাসার পরিবেশ কেমন?”

“খুবই অস্থির। তিন-চারদিন ধরেই ঝামেলা চলছে। এদিকে আরাফ তার মামা আরবান তালুকদারকেও বাসায় উঠিয়েছে। এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি একসাথে মারা যাবে মনে হচ্ছে।”

ওপাশ থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ ভেসে এলো। হাসি থামিয়ে আগন্তুকটি বলল,
“আগে এদের ছ’জনকে আলাদা করতে হবে। তারপর আমাদের ছোট্ট সোনামণিকে খাঁচায় ঢুকাবো।”

“বস, শুনলাম। অরুণিকার সাথে আহনাফের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“হুসস। অরুণিকা চৌধুরীর বিয়ে আমার ইচ্ছাতে হবে। এর আগেই ওই মেয়ের মনে আহনাফকে বিষিয়ে দিতে হবে। কারণ ওই মেয়ে আমার প্রথম শিকার। তাকে দিয়েই আমি বাকি ছ’জনকে নাচাবো।”

“তবে বস, এই কাজটাও শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ছোট্ট সোনামণি একদম তার বাবার মতো অস্থির, চটপটে আর সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে। আমাদের বিশ্বাস কর‍তে ওর তো কোনো প্রমাণই লাগবে না। এমনিতেই এই কাজ হয়ে যাবে।”

“আহ! আফসোস জুবাইয়ের করিম চৌধুরী। সেদিন নিজের মেয়েকে বাঁচিয়ে আজ এতো বড় বিপদ তৈরী করে ফেলেছে। এখন চৌদ্দ বছরের হত্যার রহস্য তো কখনো জাগবেই না, শুধু নতুন করে আরো কিছু কবর জাগবে আর জাগবে আমাদের স্বার্থ।”

কথাটি বলেই লোকটি আবার হাসতে লাগলো।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here