অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৬৫||

0
1109

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৬৫||

১০৮.
লাল রঙের বেনারসি শাড়ি পরে বসে আছে অরুণিকা। আজ প্রথম সে শাড়ি পরেছে। মাওশিয়াত তাকে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে দিয়েছে। শতাব্দী হুইলচেয়ারে বসে অরুণিকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ অরুণিকার নতুন জীবন শুরু হতে যাচ্ছে। তাই উপমাও সব অভিমান ভুলে অরুণিকার জন্যই আজ বাসায় ফিরেছে। সানায়া আর রাহিও অরুণিকার বিশেষ অনুরোধে অরুণিকাকে সঙ্গ দিতে এসেছে। এই পাঁচ জন মেয়ে অতিথি ছাড়া অরুণিকাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আর কেউই নেই। অরুণিকা বসা থেকে উঠে শতাব্দীর পাশে বসে তার হাতটি ধরল। আর বলল,
“শতু আপু, আমার ভীষণ ভয় করছে।”

উপমা অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“কেন ভয় পাচ্ছো, অরুণিকা? তোমাকে কোথায় আমরা বাইরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি, বলো! শুধু তিনতলা থেকে দু’তলায় শিফট হবে।”

অরুণিকা উপমার কথায় মলিন হাসলো। কয়েকদিন ধরে আহনাফ তার উপর খুবই ক্ষিপ্ত। সেদিনের ঘটনার পর থেকেই আহনাফ খুব দূরত্ব রাখছে। অরুণিকাকে দেখলেই সে সরে যায়। এখন আহনাফ যে তাকে ক্ষমা করে নি, এটা সে নিশ্চিত। কিন্তু ক্ষমা না করেও যে আহনাফ তাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছে, এটা নিয়েই তার ভীতি। সে মনে মনে ভাবছে, বিয়ের পর আহনাফের সাথে সে কিভাবে ওঠাবসা করবে? আহনাফ কি এরপর তাকে ক্ষমা করে দেবে? আহনাফ যদি তার কাছে আসতে চায়, তাহলে সে কি করবে? কি বলবে? কিভাবে সম্বোধন করবে? আগে তো আহনাফের সাথে ছোটখাটো বিষয় নিয়েই খুঁনসুটিতে ব্যস্ত থাকতো। এখন আহনাফ যদি তার বর হয়ে যায়, তাহলে কি আগের মতোই আহনাফের সাথে ঝগড়া কর‍তে পারবে, নাকি উপমার মতো সব রাগ-অভিমান মনের মধ্যে পুষে রাখতে হবে?
অরুণিকার মনে অনেক প্রশ্ন। এতোদিন সে ছ’জন পুরুষের কাছে আমানত ছিল। আর এখন সে শুধুই আহনাফের আমানত হবে। তাদের সম্পর্কের এতো বড় পরিবর্তনে অরুণিকার ঠিক কি করা উচিত, সে বুঝে উঠতে পারছে না। এমনকি সে কারো কাছে জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছে না। সানায়া আর রাহির সাথে তার সম্পর্ক এতো ঘনিষ্ঠ না। মাওশিয়াতের সাথেও চার বছরের দূরত্ব থাকায়, সেই ঘনিষ্ঠতা অনেক কমে গেছে। এদিকে শতাব্দী কথা বলতে পারে না। আর উপমা আজই এসেছে, তাই অরুণিকা এতো কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও পায় নি৷

কিছুক্ষণ পর একজন হুজুর অরুণিকার কবুল নেওয়ার জন্য ঘরে এলো। অরুণিকা উপমার হাত শক্ত করে ধরে কেঁদে দিলো। অরুণিকাকে কাঁদতে দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলো। রুমের বাইরে তূর্য আর ইমন দাঁড়িয়ে আছে। তারা অরুণিকার কান্নার শব্দ পেয়ে ভেতরে এলো। ইমন বলল,
“অরুণিকা, কবুল বলার পরই না হয় কান্নাকাটি করো। এখন কাঁদছো কেন?”

মাওশিয়াত ইমনকে উদ্দেশ্য করে ধমকের সুরে বলল,
“তুমি মেয়েদের কান্নার কারণ বুঝবে না। ও কাঁদলে কাঁদুক না। তুমি আটকাচ্ছো কেন?”

ইমন মাওশিয়াতের বকুনি খেয়ে মুখ ভার করে বলল,
“শুধু ধমকাবে!”

তূর্য বলল,
“তোর বউ তো তাও ধমকাচ্ছে। আর আমার বউ তো মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বসে আছে। কথাও বলছে না, আমার দিকে তাকাচ্ছেও না।”

আরাফ পেছন থেকে এসে অরুণিকার পাশে বসল। অরুণিকা আরাফের হাত ধরে বলল,
“ও তো আমার সাথে রাগ করে আছে। কবুল বলার পর যদি আমাকে বকা দেয়, আমাকে যদি মারে? তখন কি তুমি আমাকে প্রটেক্ট করতে আসবে না?”

আরাফ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“আহনাফ তোমাকে কেন মারবে, অরু?”

“ছোটবেলা থেকেই তো বকাঝকা করতো। মাঝে মাঝে আমার কান মলে দেয় না, বলো? তখন তো আমি তোমার কাছেই অভিযোগ নিয়ে যেতাম। এখন বকলে কি তুমি আমাকে আগের মতো প্রটেক্ট করবে না? আমার পক্ষ নিবে না?”

তূর্য বলল,
“টুইংকেল, আমরা সবাই তোমার পক্ষে আছি। আহনাফ যদি তোমাকে কিছু বলে, আমরা ওর নাক ফাটিয়ে দেবো।”

“তাহলে তোমরা কেন বারবার বলছো, বিয়ের পর আমার সব দায়িত্ব ওর একার। তোমরা কি আর আমার দায়িত্ব নেবে না?”

উপমা অরুণিকার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“অরুণিকা, শুনো। বিয়ের পর আমি তোমার রকস্টারের সাথে এই বাসায় এসেছি। মাওশিয়াতও ঠিক তেমনি ইমনের সাথে আছে। কিন্তু এরপরও আমার বাবা-মা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায় নি। এখনো তারা আমার সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আমাকে প্রটেক্ট করার জন্য নিজেদের সাথে রেখেছেন। তাহলে বাকিরা কেন তোমার প্রটেক্ট করার জন্য আসবে না? যখনই তোমার কারো প্রয়োজন হবে, তখনই সবাই ছুটে আসবে। তুমি তো তাদের প্রাণ। তুমি তো এখনো তাদের ছোট্ট অরুণিকাই আছো।”

অরুণিকা চোখের পানি মুছে বলল,
“আগে আহনাফকে বলো, আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে। ও তো আমার সাথে কথায় বলে না। ও কথা না বললে আমি কবুল বলবো না।”

তূর্য বলল,
“আচ্ছা, আমি ওকে এখানে টেনে আনছি। দেখবে এখনই তোমার সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে।”

তূর্য আর ইমন দু’জনই নিচে নামলো। নিচে নেমেই আহনাফকে সব জানালো। ইভান সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“শুরু হয়ে গেছে ভংচং করা। যাও দুলা মিয়া আহনাফ, যাও। গিয়ে হবু স্ত্রীকে কবুল বলার জন্য রাজি করাও। নয়তো তোমার মান-সম্মান থাকবে না।”

আহনাফ বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“পৃথিবীতে আমিই মনে হয় প্রথম বর, যার বউ তাকে বিয়ের আগেই এমন উদ্ভট শর্ত দিয়েছে।”

ইমন আহনাফের কাঁধে বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“সবই কপাল!”

আহনাফ উপরে উঠেই অরুণিকাকে দেখে চেঁচিয়ে বলল,
“তুমি কি এখন আমাকে বিয়ে করবা নাকি করবা না।”

অরুণিকা মুখ ভার করে আরাফের হাত ঝাঁকিয়ে বলল,
“দেখেছো, আরাফ, দেখেছো। আমার সাথে কিভাবে কথা বলছে?”

আরাফ আহনাফকে ইশারায় শান্ত হতে বললো। আরাফ বলল,
“আহনাফ, তুই অরুর সাথে সুন্দর করে কথা বল। এখন তো তোরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিস। এখন আর পুরোনো বিষয় মনে না রাখায় ভালো।”

আহনাফ উত্তরে মাথা নেড়ে অরুণিকার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হালকা হেসে বলল,
“অরু, তুমি কি কবুল বলবে না?”

অরুণিকা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, এখন ঠিক আছে। এখন বলবো। কবুল, কবুল, কবুল।”

এরপর অরুণিকা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে সাক্ষর করলো। আহনাফ এবার বাঁকা হেসে নিচে নামতে নামতে ভাবলো,
“এবার বুঝবে মজা। এতো বছর আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো। এবার সময় আমার হাতে আছে, এখন আমি তোমাকে সবকিছুই সুদেআসলে ফিরিয়ে দেবো, মিসেস আহনাফ।”

আহনাফ কবুল বলার পর বিয়ের কার্যবিধি সমাপ্ত হলো। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই অরুণিকাকে আহনাফের ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে। আপতত সে নিজের ঘরেই থাকবে। এদিকে আহনাফের সাথে ছবি তুলতে তুলতে রাত একটা বেজে গেছে। তবুও অরুণিকার ছবি তোলার শখ মিটে নি। তাই সে নিজেই ঘরে বসে একা এক ছবি তুলছে। এদিকে শতাব্দী চোখ পিট পিট করে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে আছে। অরুণিকা বলল,
“শতু আপু, আমি তো নিজেকে দেখেই প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। আমাকে শাড়িতে অনেক ভালো লাগছে না?”

শতাব্দী চোখের ইশারায় হ্যাঁ বুঝলো। অরুণিকা শতাব্দীর হ্যাঁ শুনে আবার ফোন নিয়ে ছবি উঠাচ্ছে, আর বিড়বিড় করে বলছে,
“কিন্তু ওই আহনাফের বাচ্চাটা একটুও আমার প্রশংসা করে নি।”

হঠাৎ অরুণিকার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে অপরিচিত নম্বর দেখে সে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“এতো রাতে কে ফোন দিয়েছে বলো তো? হয়তো আমার কলেজ ফ্রেন্ড। ফেইসবুকে এনগেজড স্ট্যাটাস বসিয়েছি তাই হয়তো কল দিয়েছে।”

অরুণিকা কল ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল,
“অরু, বিয়েটা কেন করেছো? আমি কতোবার তোমাকে বোঝালাম, তবুও? তুমি কি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারো নি?”

অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো, “ইমান! আপনি?”

“হ্যাঁ, আমি। এক সপ্তাহ সময় ছিল আমাদের হাতে। বাসার কেউ রাজি না হলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম। পরে সবাই এমনিতেই মেনে নিতো।”

“কি উল্টাপাল্টা বলছেন, হ্যাঁ? বললাম তো, আমি আপনাকে ভালোবাসি না। তবুও কেন বারবার আমাকে বিরক্ত করছেন?”

“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি সব জানি, অরু। প্লিজ, এখনো সময় আছে। তুমি আমার কাছে চলে আসো। হ্যাঁ, আমি এতোদিন বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু তুমি যখন আমার কাছে চলে আসবে, আমি সব ঠিক করে নেবো। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম, অরু। শুধু বলার সাহস পাই নি। কিন্তু এখন যখন জেনেছি, তুমিও আমাকে ভালোবাসো, নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছি না।”

অরুণিকা কিছু না বলে ফোন কেঁটে দিয়ে নম্বরটি ব্লক করে দিলো। এই নিয়ে ইমানের সতেরোটি নম্বর সে ব্লক করেছে। সেই এক সপ্তাহ ধরে ইমান অরুণিকাকে পালিয়ে আসার জন্য জোরাজুরি করছে। কিন্তু অরুণিকার একটাই উত্তর সে কোনোভাবেই আরাফদের সাথে প্রতারণা করতে পারবে না। আরাফ যেখানে রাজি নেই, সেখানে ওর কোনো হ্যাঁ নেই।

অরুণিকা ফোন রেখে শতাব্দীর পাশে বসে বলল,
“শতু আপু, আমার না আজকাল সবকিছুই অবাক লাগছে। আমি ইমানকে পছন্দ করি, এই কথাটা ইমান কিভাবে জানলো, বলো তো? ইমান এসব জানার পর থেকে আমাকে একটুও শান্তি দিচ্ছে না। বারবার পালিয়ে আসার জন্য জোর করছে। আমি তো আগে থেকেই বুঝতাম ও আমাকে পছন্দ করতো। হয়তো এখন আমিও ওকে পছন্দ করি এটা জানার পর থেকে জোরাজুরি করছে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে আমি খুব অবাক হচ্ছি। কারণ এই বাড়িতে কেউ একজন তো চাইতো আমার আর আহনাফের বিয়ে না হোক। কারণ ইমান জোর করলে আমি পালিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, তাই না। কিন্তু আমি পালাচ্ছি না, কারণ আমি আরাফদের কষ্ট দিতে চাই না। আর এটা আরাফরা ভালোভাবেই জানে, যে আমি ওদের ধোঁকা দেবো না। কিন্তু কে জানে না এটা? মৌ ভাবীও জানে আমি আরাফের কথার অমান্য হয় না। ভাবী তো আমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনে। আমাকে চেনে না শুধু আরবান মামা। আর আমার উনাকেই সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না, উনি কেনই বা ইমানকে এসব বলবে?”

শতাব্দী অরুণিকাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু পারছে না। অরুণিকা শতাব্দীর হাত ধরে বলল,
“চিন্তা করো না, আপু। আমি পালাবো না। অরুণিকা তার আপন মানুষদের ছেড়ে কোথাও যাবে না৷ হ্যাঁ, আহনাফকে আমি ওমন ভালোবাসি না। হয়তো যেই ভালোবাসা তোমার আর তাহমিদের মধ্যে আছে, সেই ভালোবাসা আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু আহনাফকে আমি অনেক ভালোবাসি। যেই ভালোবাসায় শুধু বিশ্বাস আছে। আমার আর আহনাফের অনুভূতিহীন ভালোবাসা৷ চমৎকার না, শতু আপু?”

এদিকে মুরশিদ জুবাইয়ের আর রিয়াজুর রহমান মুখোমুখি বসে আছেন। মুরশিদ জুবাইয়ের গম্ভীরমুখে বললেন,
“তুই এতোকিছু কিভাবে জানলি, রিয়াজ?”

“শাহবাজ খান জানিয়েছে। উনাকে নাকি অরুণিকা আর আহনাফের বিয়েতেও নিমন্ত্রণ করা হয় নি। অরুণিকার সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। সবাই ভাবছে উনি মির্জা গ্রুপের সাথে মিলিত হয়ে ওই রাতে খুন করিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা পুরাটাই উলটো। খুন করিয়েছে রহমতুল্লাহ। আর রহমতুল্লাহকে সব তথ্য দিয়েছে তার ছেলে রুকন।”

“কিন্তু রহমতুল্লাহর এখানে কি লাভ হলো?”

“এটাই তো, বুঝতে পারছি না। তুই বললি রহমতুল্লাহ সেদিন তোর কথায় আমবাগান গিয়েছিল। তারমানে সে আগে থেকেই জানতো, তোকে মৈত্রী গ্রুপের কেউ একজন ফোন দেবে। এদের ছ’জনের বেঁচে যাওয়া, কোনো ভাগ্যের খেলা ছিল না। এটা ওদেরই পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিন্তু অরুণিকার বেঁচে যাওয়াটা ওদের ভাবনারও বাইরে ছিল। এখন তোর কথামতে, ওদের ছ’জনের ভাষ্যমতে আর উপমা আর তূর্যের বিয়ের দিনের ঘটনা সবকিছু ক্যালকুলেশন করে বুঝলাম, ওদের বিয়ে হোক, এটা কেউ চায় না। যে ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে, সে-ই মূলত চায় না। শতাব্দী নামের ওই মেয়েটির বিয়ের দিন ওদের কিছু লোক পিছু নিয়েছে। তাই তাহমিদ দ্বিতীয়বার শতাব্দীকে নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগ পায় নি। তূর্য আর উপমার বিয়ের দিন ওদের উপর হামলা হয়েছিল। ইমন আর মাওশিয়াতের বিয়ের আগে আদিলের খুন হয়েছিল। আবার এখন অরুণিকা আর আহনাফের বিয়ের আগে নতুন কোনো ঝামেলা করার সম্ভাবনা থাকতেও পারে।”

“এর একটা কারণ থাকতে পারে। বিয়ে হলে ওদের সম্পত্তির ভাগ ওদের স্ত্রীদের নামে চলে যাবে। এরপর উইল অনুসারে, ওদের স্ত্রীদের মৃত্যুর পর তাদের সন্তান না থাকলে এই ভাগ কেউই পাবে না।”

“তাহলে সবকিছু ঘুরেফিরে সম্পত্তির ভাগে এসেই আটকাচ্ছে! কিন্তু ওরা বেঁচে থাকুক, বা মারা যাক, সম্পত্তি এমনিতেও বাইরের কেউ পাবে না। তাহলে…”

মুরশিদ জুবাইয়ের রিয়াজুর রহমানকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“পাবে। অরুণিকা পাবে। অরুণিকার কিছু হলে তার স্বামী পাবে।”

রিয়াজুর রহমান টেবিলের উপর জোরে চাপড় মেরে বললেন,
“দেটস এ গ্রেট ইনফরমেশন। আমি এটাই জানতে চাচ্ছিলাম। অরুণিকা আহনাফকে বিয়ে না করলেই তো তাদের সব কাজ সমাধান হয়ে গেলো। আর হয়তো তাই রহমতুল্লাহ আহনাফকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে।”

“হ্যাঁ, এটাই তো। তাই রহমতুল্লাহ অরুণিকাকে আহনাফের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই বুঝিয়েছিল। আর অরুণিকা নিজেই এসব আরাফকে জানিয়েছিল।”

“তাহলে তারা প্রথমে অরুণিকাকে এই বিয়ে থেকে দূরে সরাতে চেয়েছি। কাজ হচ্ছিল না, তাই এখন আহনাফকে মারার পরিকল্পনা করছে। এখন আমাদের এদের দু’জনের সাহায্যে খুনিকে বের করতে হবে। আর শাহবাজ খান এই কেইসে আমাদের সাহায্য করবেন।”

রিয়াজুর রহমান শাহবাজ খানকে ফোন করতেই তিনি আশ্বস্ত করলেন তিনি এই কেইসে সাহায্য করবেন, আর বললেন,
“মিডিয়া এতোদিন মনে করতো আমি মির্জাদের সাথে মিলিত হয়ে খুন করিয়েছি। কিন্তু মির্জাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি শুধু ওদের একটা কেইসে মৈত্রীদের বিরুদ্ধে গিয়ে সাহায্য করেছিলাম। এই নিয়ে মৈত্রীদের সাথে আমার কোনো সমস্যা হয় নি। সমস্যা ছিল মিডিয়ার। আর আমি মিডিয়াকে নিজের নিরপরাধ হওয়ার প্রমাণ দিতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু আমি শুধু আমার ছোট বোনের শেষ চিহ্নটাকেই আগলে রাখতে চেয়েছি। আমি চাই অরুণিকা তার মামার সাথে কথা বলুক। আর তাই আমার ভাগ্নির জন্য আমি আসল খুনিকে সামনে আনার সব চেষ্টা করবো।”

এদিকে অরুণিকা বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে লাইব্রেরিতে ঢুকেই থমকে গেলো। ভ্রূ কুঁচকে বলে উঠলো, “আরবান মামা, আপনি এখানে?”

আরবান তালুকদার মুচকি হেসে বললেন,
“এই তো সময় কাটছিল না, তাই ভাবছি এখানে এসে বই পড়ি।”

“ওহ আচ্ছা।”

অরুণিকা খেয়াল করলো আরবান তালুকদার তাকের উপর কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছেন। আরবান তালুকদার সামনে থাকা একটা বই নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে গেলেন। অরুণিকা এবার ভেতরে ঢুকলো। আর সেই জায়গায় হাত দিতেই দেখলো একটা চাবি। অরুণিকা চাবিটা নিয়ে ভাবতে লাগল,
“এই চাবিটা তো…”

অরুণিকার কিছু মনে পড়তেই সে লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে এলো। সে সারাদিন বসে বসে শুধু একটা কথায় ভাবছে,
“আরবান মামা এই চাবিটা কেন খুঁজছিল? এটাতে আহনাফের রুমের চাবি।”

মূলত লাইব্রেরিতে প্রতিটা রুমের আলাদা চাবি রাখা থাকে। আর আহনাফের রুমের চাবির গায়ে একটা চিহ্ন আছে। সেই চিহ্ন দেখেই অরুণিকা চিনতে পেরেছে, এটা আহনাফের রুমের চাবি।

সন্ধ্যায় আরাফের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তার রুমের কাছাকাছি আসতেই সে শুনলো ভেতর থেকে তাহমিদ বলছে,
“আহনাফকে এখন সাবধানে থাকতে হবে। ওরা চায় নি, অরুণিকার সাথে আহনাফের বিয়েটা হোক। এখন যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে, তাহলে ওরা আহনাফকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে।”

অরুণিকা মনে মনে ভাবলো,
“আহনাফকে কেউ মারতে চাইছে, কিন্তু কেন?”

অরুণিকা আবার সরে আসতেই আরবান তালুকদারের মুখোমুখি হলো। আরবান তালুকদারের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। অরুণিকা তাকে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সরে আসলো।

চলবে—-

(আগামী দুই পর্বে সব রহস্যের উন্মোচন হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here