প্রেমবিভ্রাট
০৫
তানভীর তুহিন
গতকালকের ন্যায় আজও দরজা ধাক্কানোর সেই তীক্ষ্ণ বিরক্তিকর শব্দে ঘুম ভাঙল দীপ্তির। পিটপিট চোখে তাকাল তুহিনের দিকে। তুহিন দীপ্তির দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমে কাদা। দীপ্তি তুহিনকে দুবার নাড়ল। তুহিনের কোন হেলদোল নেই। তীব্র বিরক্তি নিয়ে উঠে বসল দীপ্তি। দরজা খুলে গতকালের একই দৃশ্য দেখতে পেল সে। আয়েশা নিভু চোখে দাঁড়িয়ে মাতাল হাই তুলছে। দীপ্তির অবস্থাটাও অনেকটা একই। দীপ্তি চোখ কচলাতে কচলাতে আয়েশাকে বলল, ” কিরে ভাই? আমার ঘুমের সাথে তোর এত কীসের শত্রুতা? ” কথা বলতে বলতে দীপ্তি গিয়ে আয়েশাকে পাশ জড়িয়ে ধরে আয়েশার কাঁধে মাথা রাখল।
আয়েশা নাঁকে কেঁদে বলল, ” আমার না। সবার ঘুমের সাথে আম্মুর শত্রুতা। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। বালিশ দিয়ে মেরে মেরে ঘুম থেকে তুলেছে মহিলা। তোকে আর ভাইয়াকে ড্রয়িংয়ে ডেকেছে। ”
– ” আজ আবার কী? ” দীপ্তি বিরক্ত।
– ” জানি না। ”
– ” আব্বু বাসায়? ”
– ” হু, নিচে ড্রয়িংয়ে পেপার পড়ছে। ”
– ” আমি আজ থেকে ১০ টা বাজে ঘুমোবো। আর রাতে দেরি করে ঘুমোবো না। ঘুমে পাগল হয়ে যাচ্ছি রে.. ”
– ” রাতে ক’টা বাজে ঘুমিয়েছিস? ”
– ” প্রায় আড়াইটার দিকে। ”
আয়েশার দৃষ্টি তীর্যক। দীপ্তিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আড়াইটা? এতক্ষণ কী কী করলে বাছা? ” দীপ্তি ভালো করেই বুঝল আয়েশা ঠিক কী বোঝাতে চাচ্ছে। দীপ্তি মৃদু দাঁত চাপা গলায় শাসিয়ে উঠল, ” একদম অসভ্য মানে বের করবি না। আমরা মুভি দেখছিলাম। তাছাড়া কিছুই না। ”
আয়েশা ঠোঁট চেপে হাসল। ” তোমার মনে অসভ্যতামি ঘুরপাক করলে আমার কথা তো অসভ্য অসভ্য মনে হবেই। ”
দীপ্তি নাটকীয় কায়দায় বলল, ” নিজের ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো আয়েশা। ”
আয়েশা দীপ্তির চুল ধরে হেঁচকা টান মারল। ” তুই আমার ভাইয়ের বউ পরে। আগে আমার চুন্নি বিএফএফ। এখন যা জামাইকে নিয়ে নিচে আয়! ”
– ” আচ্ছা আসছি। ” দীপ্তি চুলের ব্যাথায় কাতর।
ঘরে ঢুকে তুহিনের দিকে তাকাল দীপ্তি। একদম ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে তুহিন। ঘুমের মধ্যেও চুলগুলো এলোমেলো হয়নি কেন? মুহূর্তেই দীপ্তি তুহিনের চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলো। চুলগুলো এলোমেলো করে একটু তাকাল তুহিনের মুখের দিকে। খুটিয়ে দেখতেই থাকল কিছুক্ষণ। অজান্তেই তুহিনের নাকে হাত চলে গেল দীপ্তির। ঘুমোনোর পরে তেলতেলে হয়ে যাওয়া নাকও এতো সুন্দর হতে পারে? তুহিনের নাক স্পর্ষ না করলে অজানাই থেকে যেতো তার।
দীপ্তি তুহিনকে নিয়ে কল্পনা করছে, কোন এক ভোরে দীপ্তির ঘুম ভাঙবে তুহিনের বুকে। সেদিন তুহিন দীপ্তিকে ভালোবাসতে শিখে যাবে। সে সকালের আগের রাতটায় কোনো বাধা থাকবে না তুহিন আর দীপ্তির মাঝে। থাকবে না কোনো জড়তা, থাকবে না কোনো আড়ষ্টতার বেড়াজাল। শুধুই থাকবে প্রেম, প্রেম আর প্রেম। মাতাল করা প্রেম। একে অপরের প্রেমে মরিয়া হয়ে যাবে দুজনে। কাজ করবে তীব্র উন্মাদনা। আহ! কবে আসবে সে সৌভাগ্যময় রজনী? কথাগুলো ভেবেই শরীরে চরম শিহরন অনুভব করল দীপ্তি। অযাচিত লজ্বা সামলে ফের কল্পনায় হারাল সে। সকালে ঘুম ভাঙার পর দীপ্তি উঠে যেতে চাইবে। তুহিন উঠতে দেবে না। কিছুতেই দেবে না। দীপ্তি মিথ্যে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলবে, উফ! ছাড়ো না। তুহিন কিছুতেই শুনবে না। দীপ্তির মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে কপালে গভীর চুমু এঁকে বলবে, আরেকটু থাকো না। আমার ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। দীপ্তি তুহিনের সে আবদার পুরণে তৃপ্ত মুচকি হাসি হেসে বলবে, আচ্ছা! তবে একটুই কিন্তু। আর কোন অসভ্যতামি করবে না। এমনিতেই রাতে তোমার অসভ্যতামির তাড়নায় ঘুমোতে পারিনি আমি। দীপ্তির কথা শুনে তুহিন দুষ্টুমিভরা হাসি দিয়ে দীপ্তির উপরে উঠে দীপ্তির গলায় মুখ ডুবিয়ে দেবে।
আর ভাবতে পারলনা দীপ্তি। লজ্বায় গুড়িয়ে যাচ্ছে সে। দাঁত দিয়ে আঙুল কামড়ে অন্তর্মনে নিজেকে প্রশ্ন করল সে, আসলেই কী আমার জীবনে এমন মধুবিলাসি সময় আসবে? দীপ্তির শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল এসব ভাবতে গিয়ে। দীপ্তি বোকার মতো তুহিনের মুখের সামনে ঝুঁকে তুহিনের কপালে একটা চুমু খেল। গভীর চুমু। বহুদিনের ইচ্ছে এই কপালে চুমু খাওয়ার। আজ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ইচ্ছে পুরন করে নিলো দীপ্তি। চুমু খাবার পরেই দীপ্তির শিহরনের মাত্রা গাঢ় হলো। শরীর প্রায় বরফ হওয়ার জোগাড়। গা কাঁপছে।
দীপ্তি তুহিনের দিকে খানিক ঝুঁকে বলল, ” এই সার্জনব্যাটা এসব ভেবেই আমার এই হাল কেন? যখন তুই এসব করবি তখন আমি কোথায় যাব? আমার হার্ট তো পাম্প করাই বন্ধ করে দেবে। ওহ ভুলে গেছি আমার সোনাটা তো হার্টসার্জন। ” বাচ্চাদের মতো তুহিনের নাক টিপে দিলো দীপ্তি। তুহিন কিঞ্চিৎ নড়ে উঠল। দীপ্তি যন্ত্রের মতো উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। সোজা ছুটল বাথরুমে। ছি! দীপ্তি তুহিন যদি চুমু খাওয়ার সময় জেগে যেতো? তখন কী ভাবতো তোকে? ভাবতো তুই বেহায়া, বেশরম, অসভ্য। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর। যতই হোক তুই একটা মেয়ে। এসব ভাবতে ভাবতে দাঁত ব্রাশ করছে দীপ্তি। আচ্ছা কখনও কী তুহিন সজাগ থাকা অবস্থায় ওর কপালে চুমু খেতে পারব? পারব হয়ত। না-কি? কেন পারব না? আর কয়েকদিন পর থেকেই তো তুহিন আমায় ভালোবাসতে শুরু করবে। ভালোবাসবে তো? আচ্ছা আমি ওকে নিয়ে এতসব ভাবছি। ও কী আমায় নিয়ে একটুও ভাবে না? আমায় নিয়ে কী ওর কোন ফ্যান্টাসি নেই? দীপ্তি এসব ভেবে ভেবে আনমনে ব্রাশ এপাশ ওপাশ করছিল। বাথরুমের দরজায় টোকা পড়ল। তুহিনের ঘুম জড়ানো গলা, ” দীপ্তি বাথরুমে যাব। আর্জেন্ট! জলদি বেরোও। ”
দীপ্তি কুলি না করে ব্রাশ মুখে নিয়েই বাথরুম ছেড়ে বেরোল। দীপ্তি বের হতেই তুহিন কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে দীপ্তিকে এক পলক দেখে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। দীপ্তি তুহিনের এই অসহায় পরিস্থিতি দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
খানিকবাদে তুহিন বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে বলল, ” থ্যাংকস! হেভি প্রেশার ছিলো। ” তুহিন রীতিমতো হাপাচ্ছিল। দীপ্তি তুহিনের এই হাল দেখে আর হাসি দমিয়ে রাখতে পারলনা। তুহিনের সামনেই সশব্দে হেসে উঠল। ” তা সাডেন এত প্রেশার ক্রিয়েট কেন হলো? ”
– ” স্বপ্ন দেখে। ”
দীপ্তির হাসি ফুশ। স্বপ্ন দেখার ফলে প্রেশার ক্রিয়েট হয়েছে? দীপ্তি কুটিল চোখে তাকাল তুহিনের দিকে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ” কী এমন স্বপ্ন দেখলেন যে আপনাকে সোজা প্রকৃতি ডেকে নিলো? ”
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে! ♥
” Tanvir’s Writings “