প্রেমবিভ্রাট
১৬
তানভীর তুহিন
আয়েশা এসেছে। তুহিন দরজা খুলতেই আয়েশা তুহিনকে পাশ কাটিয়ে দীপ্তির কাছে চলে যায়। দীপ্তি ঠায় চেয়ারে বসে আছে। শরীরটা যেনো কেমন অসার হয়ে গেছে, উঠে দাড়ানোর শক্তিটুকু পর্যন্ত পাচ্ছে না দীপ্তি। আয়েশা গিয়ে দীপ্তির কাধে চাপড় মেরে বলে, ” জানু তোমার নোটসগুলা দাও। ”
দীপ্তি চুপচাপ টেবিল থেকে নোটসগুলো আয়েশাকে দেয়। দীপ্তি একদম নিশ্চুপ। দেহের কাপনভাবটা এখনও পুরোপুরি ছাড়েনি তাকে। এখনও আলতো আলতো কাপছে দীপ্তি। অন্যসময় হলে দীপ্তি আয়েশাকে নোট দেবার পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাপারে সচেতন করে দিতো। কিন্তু আজ তা বলার জন্য যে শক্তিটুকু দীপ্তির প্রয়োজন। তা দীপ্তি খুইয়ে ফেলেছে। দীপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে আয়েশা দীপ্তির কপাল, গলা আর ঘাড় স্পর্ষ করে। তারপর বলে, ” কীরে চুপচাপ কেনো? মাইগ্রেন বাড়লো নাকি? জ্বর এসেছে তোর? ”
দীপ্তি চুপচাপ মাথা নেড়ে না বলে।
আয়েশা বলে, ” তাহলে এভাবে চুপচাপ ক্যান? ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে? ”
দীপ্তি আবারও চুপচাপ মাথা নেড়ে না বলে।
আয়েশা পুনরায় প্রশ্ন ছোড়ে, ” তাহলে কী হয়েছে? ”
দীপ্তি এবার খানিক শক্তি সামলে বলে, ” কিছু হয়নি। ”
– ” ধুর চুন্নি আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। কী না কী হলো ভেবে। ”
আয়েশা নোটস নিয়ে চলে যায়। আর যাবার সময় তুহিনকে সাথে করে নিয়ে যায় ওর ল্যাপটপের কী নাকি সমস্যা হয়েছে সেটা দেখার জন্য।
দীপ্তি বিছানা ঠিক করে মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়েছে। চোখ বন্ধ করে ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে দীপ্তি। বুকটা এখনও ঢিপঢিপ করছে। তুহিন রুমে ঢুকে দেখতে পেলো দীপ্তি শুয়ে পড়েছে। খানিক অবাক হয় তুহিন। প্রতিদিন তো মশারি আমায় দিয়ে টাঙায়। আজ নিজে টাঙিয়ে, সোজা শুয়েও পড়লো? প্রোপোজ করার ফলে শরীর খারাপ হয়ে গেলো নাকি?
তুহিন খুক খুক করে কাশির শব্দ শূন্যে ছোড়ে। দীপ্তিকে বলে, ” কী হলো আজ নিজে নিজে মশারি টাঙিয়ে ফেললে? ”
দীপ্তি চুপচাপ। এক চরম আর অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে দীপ্তির। কিন্তু তা প্রকাশ করার উপায় জানা নেই দীপ্তির। কীভাবে প্রকাশ করবে এই ভালোলাগা? এই উচ্ছাস? আদৌ কী এসব প্রকাশের কোনো উপায় আছে?
দীপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে তুহিন আবার জিজ্ঞেস করে, ” দীপ্তি ঘুমিয়ে গেছো? ”
দীপ্তি সজাগ। চোখও খোলা। কিন্তু তুহিনের প্রশ্নের উত্তর দেবার শক্তি খুজে পাচ্ছে না। তুহিন দীপ্তির নীরবতা দেখে ভেবে নেয় দীপ্তি ঘুমিয়ে গেছে। দড়জা লাগিয়ে তুহিনও খাটে উঠে পড়ে। শুয়ে পড়বে তার আগে তুহিন দীপ্তির ওপাশে ঝুকে যায় একবার দীপ্তির মুখটা দেখবে বলে। তুহিন এদিকে ঝুকছে সেটা বুঝে দীপ্তি তাড়াতাড়ি করে চোখ বন্ধ করে নেয়। দীপ্তি মনে করেছিলো তুহিন হয়তো চুমু খাবে। কিন্তু না, তুহিন সেসব কিছুই করলো না।
তুহিন শুয়ে কপালের উপর হাত রেখে ভাবছে, ” অবশেষে তাহলে বলেই ফেললি তুহিন। আহ শান্তি! কাল থেকে তোর দাম্পত্য জীবন শুরু। এখন সারাদিন অস্থিরতা কাজ করবে না। উফ! যা প্রেশার প্রেশার লাগছিলো এই কয়েকটা মাস। ”
দীপ্তির খুব ইচ্ছে করছে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে। ভেবেছিলো আজ হয়তো তুহিন চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে তারপর ঘুমাবে। কিন্তু না তুহিন আর দিনের মতোই শুয়ে পড়লো। উহু! দীপ্তির তুহিনকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমাতে হবে। এতোদিন নাহয় তুহিন কিছু বলে নী সেজন্য জড়তা কাজ করতো। তাই চাইলেও জড়িয়ে ধরতে পারতো না। আজ তো তুহিন বলেছে সবটা তাহলে আর জড়িয়ে ধরতে বাধা কোথায়?
দীপ্তি চোখ খুলে ওপাশ ফিরে। ওপাশ ফিরতেই দেখে তুহিন কাত হয়ে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আকস্মিকভাবে দীপ্তি এক মহালজ্বার কবলে পড়ে। দীপ্তির ইচ্ছে করছিলো এখনই গড়িয়ে গড়িয়ে খাট থেকে নিচে পড়ে যেতে। তুহিন ভ্রু নাচিয়ে দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করে, ” ঘুমের ভং ধরে পড়ে ছিলে কেনো? ”
দীপ্তির কথা বলতে কেমন যেনো লাগছে। বুকের ভেতরটা কেপে কেপে ভুমিকম্পের গিনেস রেকর্ড করছে। দীপ্তি যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে, ” আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। ”
তুহিন হেসে ফেলে। দীপ্তিও হেসে দেয়। দুজনেই কিছুক্ষন দুজনার দিকে তাকিয়ে থাকে। একদম নিশ্চুপ ভাবে অপলক দৃষ্টিতে। চোখের পলক ফেলতে নারাজ দুজনে। দীপ্তি আর লোভ সামলাতে পারছিলো না। তুহিনকে জড়িয়ে ধরার লোভটা বারবার খোচাচ্ছে দীপ্তিকে। দীপ্তি চোখদুটো নিচের দিকে নামিয়ে তুহিনকে বলে, ” জড়িয়ে ধরুন। ”
তুহিন স্পষ্ট শুনতে পায় কথাটা কিন্তু মূদ্রাপ্রবাহে বলে ফেলে, ” হ্যাহ? ”
দীপ্তির আবার ‘জড়িয়ে ধরুন’ কথাটা বলার শক্তি নেই। চুপ করে আছে দীপ্তি। তুহিনও জড়িয়ে না ধরে চুপ করে আছে। কারন তুহিন জড়িয়ে ধরার চেয়ে কয়েকশত গুন বেশি ভালোবাসা অনুভব করছে দীপ্তির এই লাজুক মুখটা দেখে। অন্যরকম এক তীব্র মায়া মাখানো আছে দীপ্তির এই মুখে। এই আলতো লজ্বাটুকু যেনো দীপ্তির সৌন্দর্য আরো সহস্র কোটিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। দুজনে এখনও চুপচাপ। তুহিন চাচ্ছে দীপ্তি আবার জড়িয়ে ধরার কথাটা বলুক। দীপ্তি চুপচাপ শুয়ে চাদরের দিকে তাকিয়ে আছে। খানিক বাদে দীপ্তি নিজেই তুহিনকে জড়িয়ে ধরে। একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দীপ্তি নিজে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে নিজেই তীব্রভাবে কেপে ওঠে। এখনও বেশ কাপছে দীপ্তি। তুহিন খানিক মৃদু হাসে। যা মোটেই দেখতে পায় না দীপ্তি। কারন দীপ্তির মাথাটা তুহিনের বুকের মধ্যে গোজা। এই মরন লজ্বা নিয়ে দীপ্তির সাহস নেই তুহিনের দিকে তাকানোর। তুহিন একটা হাত দীপ্তির পিঠে দেয় আরেকটা হাত দিয়ে দীপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। দীপ্তি মাথাটা একদম তুহিনের বুকের মধ্যে ঠেসে দিয়েছে। তুহিনের খুব ইচ্ছে করছে দীপ্তির ওই কপালে একটা গভীর চুমু খেতে। কিন্তু কপাল খুজে না পাওয়ায় কপালের একটু উপরে চুলের মধ্যেই একটা গভীর চুমে আঁকে তুহিন। দীপ্তির চোখ এমনিতেই বন্ধ ছিলো। তুহিন চুমু খেতেই চোখ দুটো যেনো আরো বেশি জোর করে বন্ধ করে ফেলে দীপ্তি। শরীরটা জোরেশোরে কাপন দিয়ে ওঠে। তুহিন দীপ্তির মাথায় হাত বোলাতে থাকে।
অনেকক্ষন হয়ে গেছে দীপ্তি এভাবেই তুহিনের বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে। আর তুহিন দীপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। দীপ্তি মাথা তুলে তুহিনের দিকে তাকায়। দুজন চোখাচোখি হয়। তুহিন হালকা মুচকি হেসে ভ্রু নাচায়। দীপ্তি মুচকি হেসে মাথা নামিয়ে ফেলে। এবার স্পষ্টভাবে দীপ্তির কপাল খুজে পায় তুহিন। সেই সুযোগে দীপ্তির কপালে গভীর একটা চুমু বসিয়ে দেয়। দীপ্তি চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুভব করতে থাকে তুহিনের স্পর্ষকে। তুহিন কপাল থেকে ঠোট সড়িয়ে নিলেই দীপ্তি যথারীতি তুহিনের বুকে মুখ গুজে দেয়। তুহিন টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়া। কয়েকমুহূর্ত বাদে দীপ্তি তুহিনের টি-শার্ট এর বোতাম দুটো খুলে তুহিনের বুকে একটা আলতো চুমু খায়। বহুদিন যাবৎ তুহিনের এই ফর্সা চওড়া বুকটার প্রতি লোভ দীপ্তির। লোভ তুহিনের বুকের ওই কালো ছোট লোমগুলোর প্রতি। দীপ্তি চুমু খেয়ে নিজের মাথাটা আবার আবার তুহিনের বুকে গুজে দেয়। তুহিনের খুব ইচ্ছে করছিলো দীপ্তির মুখটা দেখার। কিন্তু দীপ্তি সে সুযোগ দেয় না তুহিনকে। কীভাবে দেবে? দীপ্তি লজ্বায় একদম মাটিতে মিশে যায় যায় অবস্থা।
তুহিন এখন দীপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। দীপ্তির বেশ ভালো লাগছে। মজাও লাগছে বেশ। আজ জীবনের সবচেয়ে শান্তির আর সুখের ঘুম হবে দীপ্তির। একদম তুহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুজে… ভাবতেই ভেতরে ভেতরে মুচকি হাসে দীপ্তি। কিন্তু শুয়ে ঠিক আরাম পাচ্ছে না দীপ্তি। আরাম লাগবে। দীপ্তি তুহিনকে বলে, ” আমি আমার পা টা কোলবালিশের মতো আপনার উপরে দেই? ”
তুহিন সঙ্গে সঙ্গে বলে, ” দাও। আর শুনো কাল থেকে আপনে আজ্ঞে বাদ দিয়ে তুমি করে বলার প্র্যাকটিস শুরু করবে। ”
দীপ্তি ” হু ” বলে সাথে সাথেই তুহিনের গায়ের ওপর পা তুলে দেয়। তারপর পেছন দিক থেকে হাত দিয়ে তুহিনের টি-শার্ট খামচে ধরে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। তুহিনও দীপ্তির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “