প্রেমবিভ্রাট
১৯
তানভীর তুহিন
রাত প্রায় ১১ টা বাজে। দীপ্তি টেবিলে বসে পড়ছে আর তুহিন খাটে আধশোয়া অবস্থায় ল্যাপটপ ঘাটছে। দীপ্তি পড়ছে আর টেবিলের ওপরে থাকা ছোট শপিং ব্যাগটার দিকে দেখছে। শপিং ব্যাগটা তুহিন এনেছে। দীপ্তি ভাবছে কী হতে পারে? এতো ছোট একটা শপিং ব্যাগে কী থাকতে পারে? দীপ্তি চোখ ছোট করে তাকাতেই সাদা শপিং ব্যাগটার নিচের দিকে দেখলো একটা ফার্মেসির নাম লেখা। দীপ্তি অনুমান করে নিলো ব্যাগে কোনো ঔষধ আছে। দীপ্তি আবার পড়ায় মনযোগ দিলো। দীপ্তির আজকের পড়া প্রায় শেষের দিকে। দীপ্তি বই ছেড়ে মাথা তুলে একবার তুহিনের দিকে তাকালো। তুহিন ল্যাপটপে মনোযগী। দীপ্তির আবার ঐ শপিং ব্যাগটার দিকে নজর পড়লো। আবার ভাবলো ফার্মেসির শপিং ব্যাগে নিশ্চয়ই ঔষধ’ই হবে। দীপ্তি পড়ায় মনযোগ দিলো কিন্তু পড়ায় মনযোগ টিকছে না। দীপ্তির মন খচখচ করছে শপিং ব্যাগে ঠিক কী ঔষধ আছে তা দেখার জন্য। দীপ্তি আবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিলো তুহিন কী করছে। তুহিন আগের মতোই ল্যাপটপে মনোযগী। দীপ্তি এবার কৌতুহল নিবারনের জন্য চোরের মতো শপিং ব্যাগটাকে একটানে নিজের কোলের উপর নিয়ে এলো। তারপর আরেকবার তুহিনের দিকে তাকিয়ে নিলো। কেমন যেনো গোয়েন্দা গোয়েন্দা অনুভুতি হচ্ছে দীপ্তির। কপাল কুচকে চোখ ছোট করে শপিং ব্যাগটা খুললো দীপ্তি। ব্যাগ খুলতেই দীপ্তির চক্ষু চড়কগাছ। কী এসব? পুরো এক বাক্স প্রোটেকশন? দীপ্তি ঢোক গিললো। তারপর আবার তুহিনের দিকে তাকালো। দীপ্তির হাতে এখন এক বাক্স প্রোটেকশন। দীপ্তির যেনো হুশই উড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হয় তা জানা নেই দীপ্তির। দীপ্তি প্রোটেকশনের বক্সটা হাতে নিয়েই হা করে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষন কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে; অন্তর্মনে আন্দাজ আসে যে, কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তুহিনেরও ঠিক সেরকম মনে হয়। তুহিন ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সড়িয়ে নিয়ে দীপ্তির দিকে তাকায়। তুহিন প্রথমে দীপ্তির দিকে তাকাতেই দেখে দীপ্তি ভাবলেশহীনভাবে হা করে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তুহিন ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করে দীপ্তি এরকম উদ্ভটভাবে কেনো তাকিয়ে আছে। হঠাৎই তুহিনের নজর পড়ে দীপ্তির হাতে। মুহুর্তেই তুহিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। দীপ্তির হাতে প্রোটেকশন? দীপ্তি প্রোটেকশন কিনে এনেছে? তাও আবার পুরো এক বাক্স?
তুহিন ল্যাপটপটা পাশে রেখে হালকা হেসে খাট ছেড়ে নেমে গিয়ে দীপ্তির সামনে দাঁড়ায়। দীপ্তি এক বিচিত্র সন্দেহের নজরে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। তুহিনের নিজেরই কেমন যেনো লজ্বা লজ্বা পাচ্ছে। তুহিন অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলে, ” দীপ্তি তুমি প্রোটেকশন কিনে এনেছো? তাও আবার এক বাক্স? কেনার সময় এম্বারেসড ফীল করোনি? আমায় বলে দিতে পারয়ে, আমি নিয়ে আসতাম। শুধু শুধু তুমি ধকল সামলাতে গেলে কেনো? ”
দীপ্তি প্যাকেটটা ঠাস করে টেবিলের উপরে রেখে বলে, ” ইয়্যু ছি! ফার্মেসিতে গিয়ে আমি প্রোটেকশন আনবো? লজ্বা-শরমের মাথা খেয়েছি নাকি আমি? ”
তুহিন কপাল কুঁচকে বলে, ” তাহলে কাকে দিয়ে আনিয়েছো? ”
তুহিন ঠোয় দীর্ঘায়িত করে আবার বলে, ” আর আনিয়েছো বেশ কিন্তু তা বলে পুরো এক বাক্স? ”
দীপ্তি বুঝতে পারছে না তুহিন ঠিক কী বলতে চাচ্ছে। খুব লজ্বা পাচ্ছে দীপ্তি। দীপ্তি বলে, ” আপনি কী খুশিতে পাগল-টাগল হয়ে গেলেন নাকি? ”
– ” মানে? কীসের খুশি? ”
– ” প্রোটেকশন ব্যাবহার করে যে কাজ করা হয়। সে কাজ করবেন সেই খুশি। ” কথাটা একপ্রকার মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে দীপ্তির। ইশ! কী অশ্লিল লাগছে না কথাটা? ভেবেই দীপ্তি জিহ্বায় দাঁত চেপে ধরে।
তুহিন বোকা হেসে বলে, ” এই কাজ যে আজকেই করবো। তা তো এই মাত্রই জানলাম। খুশিতে পাগল হবার আর সুযোগ পেলাম কই? তবে এই কাজ যে আজ করবো তা ভেবে বেশ রিলিফ লাগছে। আহ! ”
দীপ্তি বোকা বোকা হাসছে। লজ্বায় লাল হয়ে গেছে দীপ্তি। কিন্তু দীপ্তি বুঝতেই পারছে না যে তুহিন এসব কী বলছে? নিজে প্রোটেকশন এনে নিজেই বলছে যে ও এই মাত্র জানলো সবটা। তার মানে কী? দীপ্তির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তুহিন বলে, ” তবে যাই বলো একটা বাঙালি মেয়ে হয়ে ফার্মেসিতে গিয়ে প্রোটেকশন কেনা আসলেই বাহাদুরির কাজ। তাও আবার একটা দুটো না পুরো ফুল বাক্স। তা ফার্মেসিতে গিয়ে বলেছিলেটা কী? ”
– ” কী আবোলতাবোল বলছেন? আমি কেনো এসব আনতে যাবো? ”
– ” ও হ্যা তুমি তো আনাওনি। তো কাকে দিয়ে আনিয়েছো? ”
– ” একদম ন্যাকামি মারাবেন না। আপনি এনেছেন এসব। এই যে এই ব্যাগটায় পেয়েছি এসব। ”
এই ব্যাগে প্রোটেকশন পেয়েছে শুনতেই তুহিন চরম চমক পায়। এই ব্যাগে প্রোটেকশন? আরে এ কীভাবে সম্ভব? এ ব্যাগে তো আমার মাইগ্রেনের মেডিসিন থাকার কথা। তুহিন দীপ্তিকে বলে, ” আরে কী মাথা খারাপ নাকি তোমার? আমি প্রোটেকশন আনবো কেনো? আর আনলে পুরো এক বাক্সই বা কেনো আনবো? এই ব্যাগে তো আমার মাইগ্রেনের ঔষধ থাকার কথা। ”
এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারে দীপ্তি। তুহিন ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখে ব্যাগ খালি। তারমানে এই ব্যাগেই প্রোটেকশন ছিলো? কিন্তু আমি তো মাইগ্রেনের মেডিসিন কিনলাম। তাহলে কী ব্যাগ বদল হয়েছে কারো সাথে? তুহিন এসব ভাবছিলো। তখনই দীপ্তি বলে, ” তাহলে আপনার ব্যাগ অদলবদল হয়েছে। অদলবদল হবার আর জিনিস পেলো না শেষে কীনা এসব। ”
তুহিন শপিং ব্যাগটা টেবিলে রেখে। প্রোটেকশনের বক্সটা হাতে নিয়ে প্রোটেকশনের বক্সটার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” আহারে কোন অনাহারীর আহারপাত্র নিয়ে এলাম। বেচারা কত শখ করে পুরো এক প্যাকেট প্লেট কিনেছিলো। অথচ আজ প্লেটের অভাবে খাবারই খেতে পারবে না। অভুক্তই থাকতে হবে বেচারাকে। ” বলেই নাটকীয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহিন।
দীপ্তি তুহিনের কথা শুনে পেট খিল ধরিয়ে হাসতে থাকে। হাসি সামলে দীপ্তি তুহিনের বাহুতে একটা হালকা চাপড় মেরে বলে, ” ছি! কী অশ্লিল কথাবার্তা। ”
তুহিনও হালকা হেসে বলে, ” অশ্লিলতার কী আছে? এই কষ্ট তুমি ফীল করতে পারবা না। আই ক্যান ফীল দিস। ”
– ” অনেক ফীল করা হয়েছে। এবার এটাকে বাইরে ফেলে আসুন। ”
তুহিন হতবাক হয়ে বলে, ” কেনো ফেলে আসবো? ”
দীপ্তি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে তুহিন এখন ঠিক কোন দিকে ইশারা টানতে চাচ্ছে। দীপ্তি ভাবলেশহীন গলায় বলে, ” এটা দিয়ে আপনি কী করবেন? ”
– ” আরে আপনি না বলো আমরা কী করবো? ”
দীপ্তি মিটিমিটি হেসে বলে, ” মানে কী? কী করবো এটা দিয়ে আমরা? ”
– ” এটা দিয়ে ঠিক যা করে। তাই করবো। ”
দীপ্তি ভেতরে মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু তা তুহিনের সামনে অপ্রকাশ্য। দীপ্তি চোখ ছোট করে তুহিনকে জিজ্ঞেস করে, ” এই না আপনার নিজের ওপর যথেষ্ট কন্ট্রোল আছে? এই না আপনার চরিত্র একদম সিমেন্ট দিয়ে বাধানো? তাহলে এখন ওসবের জন্য এতো আনচান করছেন কেনো? ”
দীপ্তির কথায় তুহিন মহা আহাম্মক বনে যায়। তুহিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, ” তুমিও তো বলতে, সুযোগ দাও না, তোমারও নাকি নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রন আছে। অথচ গতকাল বললে আমায় কলেজ জীবন থেকে ভালোবাসো। তারপর রাতে আমায় জড়িয়ে ধরলে, টি-শার্ট এর বোতাম খুলে বুকে চুমু খেয়ে… ” তুহিন আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই দীপ্তি তুহিনকে থামিয়ে দিয়ে বলে ” অনেক হয়েছে আরো ডিটেইল বলতে হবে না। ”
দীপ্তি খাটের পাশে হেলান দিয়ে কথা বলছিলো তুহিনের সাথে। তুহিন আর কথা না বাড়িয়ে দীপ্তির দিকে এগোয়। দীপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে নখ খুটছিলো।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “