প্রেমবিভ্রাট ৩৫ – শেষপর্ব তানভীর তুহিন

0
1108

প্রেমবিভ্রাট
৩৫ – শেষপর্ব
তানভীর তুহিন

স্ট্রেচারে করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দীপ্তিকে। লেবার পেইনের যন্ত্রনায় চিৎকার করছে দীপ্তি। তুহিনের কলিজাটা বের হয়ে যাচ্ছে দীপ্তির চিৎকারের শব্দে। দীপ্তি তুহিনের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। স্ট্রেচারটা ক্রমশ অপারেশন থিয়েটারের দিকে এগিয়ে চলছে। তুহিন বারবার বলছে, ” বেশিক্ষন লাগবে না লক্ষিটা। একটু সহ্য করো। ”

দীপ্তি চিৎকার দিয়ে বলছে, ” খুব কষ্ট হচ্ছে, আহহ! ”

স্ট্রেচারটা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবে। দীপ্তি তুহিনের হাত ছাড়ছে না। দীপ্তি তুহিনকে ইশারায় কাছে ডেকে চিৎকারটা খানিক কমিয়ে বলে, ” যদি আমার কিছু হয়ে যায়। বাচ্চাটাকে কোনোদিন আমার অভাব বুঝতে দিও না প্লিজ। আমার কিছু হয়ে গেলে; ওকে বোলো, আমি ওকে অনেক, অনেক, অনেক, বেশি ভালোবাসি। ঠিক যতটা তোমায় ভালোবাসি। ওকেও ঠিক ততটা ভালোবাসি। ”
তুহিনের বুকটা দুভাগ হয়ে যায়। তুহিন কেঁদে ফেলে বলে, ” কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছুনা। এভাবে প্লিজ বলো না। ”

অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে মৌ আর লেডি ডক্টর বেড়িয়ে তাড়া দেয় তুহিনকে, ” স্যার ওটি রেডি। দেড়িয়ে হয়ে যাচ্ছে, ম্যাডামকে ছাড়তে হবে। আপনি চাইলে ওটিতে থাকতে পারেন। ”

তুহিন মৌ কে বলে, ” না, আমি যাবো না। ”

তুহিন দীপ্তির কপালে একটা গভীর চুমু খায়। চুমু খেয়ে বলে, ” খারাপ কিচ্ছু হবে না। যা হবে ভালোই হবে। আল্লাহ ভরসা। ” তুহিন দীপ্তির হাত ছেড়ে দেয়। দীপ্তিকে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

গত কয়েকমাসে তুহিন আর দীপ্তির সম্পর্কটা একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। দীপ্তি’র সেই চাপা কষ্টটা একদমই ভুলে গেছে দীপ্তি। তুহিন আপ্রান চেষ্টা করেছে দীপ্তিকে স্বাভাবিক করার এবং সফলও হয়েছে। ওদের ভালোবাসার উন্মাদনা কয়েকশগুন বেড়ে গেছে গত কয়েক মাসে। গত দুমাস আগে তুহিনের লাইসেন্স বাতিলের ৬ মাস শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তুহিন তাও ক্লিনিক জয়েন করেনি। শুধু দীপ্তির প্রেগনেন্সির জন্য। দীপ্তিকে মেন্টালি সাপোর্ট করার জন্য। কারন দীপ্তির ডেলিভারিতে বেশ কিছু কম্পিলিকেশন’স ক্রিয়েট হতে পারে সে ব্যাপারে আগেই জেনে গিয়েছিলো তুহিন। দীপ্তিও জানে ব্যাপারটা। সেজন্যই ওটিতে ঢোকার আগে ওসব কথা বলছিলো। আর কম্পিলিকেশন’স গুলো এতটাই মারাত্মক যে দীপ্তির প্রানও যেতে পারে ডেলিভারির সময়। তুহিন চাইলেই দীপ্তির ডেলিভারির সময় দীপ্তির সাথে ওটিতে থাকতে পারতো। কিন্তু দীপ্তির ওই চিৎকার আর যন্ত্রনা দেখার সাহস তুহিনের নেই। তাই সে বুক চেপে বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রবলভাবে স্পন্দিত হচ্ছে তার হৃদযন্ত্রটা। চারপাশে বাড়ির সবাই পায়চারি করছে। শায়লা বেগম, দীপ্তির মা, আয়েশা সবাই দোয়া-দরুদ পড়ছে। তুহিন দেয়ালে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে হাটুতে মুখ গুজে আছে। শরীরটা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে তুহিনের। ভয় হচ্ছে খুব। দীপ্তি বেইমানি না করে ফেলে, আসলেই কী দীপ্তি বেইমানি করতে পারবে? দীপ্তি বেইমানি করলে কীভাবে বাঁচবে সে? চারপাশটা কেমন যেনো ভনভন করে ঘুরছে তুহিনের। মারাত্মক অস্থির লাগছে। কী করবে বুঝতেই পারছে না। বুকটা যেনো দেহেই নেই, অন্য কোথাও চলে গেছে। মারাত্মক ভয় কাজ করছে তুহিনের। যে ভয় গিলে খাচ্ছে তুহিনের মনোবলকে।

প্রায় দেড় ঘন্টা হয়েছে। এখনো অপারেশন শেষ হচ্ছে না কেনো? তুহিনের হৃদস্পন্দনের গতি দেখে, তুহিনের নিজেরই মনে হচ্ছে সে হার্টফেল করবে এখন। বারবার ওটির দরজাটার দিকে তাকাচ্ছে তুহিন। সে শুধু চায় ওই দরজাটা খুলে কেউ বাইরে আসুক। বাইরে এসে শুধু বলুক, ” দীপ্তি ভালো আছে। ” ব্যাস আর কিচ্ছু চাই না তার। তুহিনের সারাটা শরীর কাপছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আসাদ সাহেব, দীপ্তির বাবা, আকাশ, অনন্ত সবাই এসে বারবার সাহস যোগানোর চেষ্টা করছে তুহিনের। মোটেও বিন্দুমাত্র সাহস খুজে পাচ্ছে না তুহিন। প্রচুর ভয় করছে তার। দীপ্তিকে হারানোর ভয়। দীপ্তি বলেছিলো না, ” যেদিন আপনার ভেতরে আমায় হারানোর ভয় জন্মাবে সেদিন মনে করবেন আপনি আমায় ভালোবাসেন। ” আজ ঠিক তেমন ভয়ই হচ্ছে তুহিনের। মারাত্মক ভয় করছে তুহিনের। ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে একদম। সে যে মারাত্মকভাবে ভালোবাসে দীপ্তিকে। দীপ্তি যদি বেইমানি করে চলে যায় তাহলে সে বাঁচবে টা কীভাবে? কথাটা মনে পড়তেই ফুঁপিয়ে কেদে ওঠে তুহিন। পৌনে দুইঘন্টা হতে চললো এখনও দীপ্তির অপারেশন শেষ হয় নী। ভয়ে মরে যাচ্ছে তুহিন। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে। বারবার আল্লাহর কাছে তার দীপ্তিকে চাচ্ছে সে। সে বাঁচবে না দীপ্তিকে ছাড়া, তার যে চলবেই না দীপ্তিকে ছাড়া, আল্লাহ যাতে তার থেকে তার দীপ্তিকে কেড়ে না নেয় সেসব কথাই কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে বলছে সে।

দুই ঘন্টার কাছাকাছি হচ্ছে দীপ্তিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার ছেড়ে কেউই বেড়িয়ে আসছে না। তাহলে কী দীপ্তি বেইমানি করলো? থরথর করে কাপছে তুহিন। ওটির দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়েছে ডাক্তার। তুহিন কাঁপতে কাঁপতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এতক্ষন বসেই ছিলো সে। বসে-বসে আল্লাহ! আল্লাহ! করেছে সে। টলমল পায়ে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তুহিন। চোখদুটোতে পানি জমে আছে। কথা বের হচ্ছে না তুহিনের মুখ থেকে। ডাক্তার মহিলার অবস্থাও করুন। তার মুখ দেখে ডাক্তার হিসেবে তুহিন বুঝতেই পারছে অপারেশনটা এক্সট্রিমড চ্যালেঞ্জিং ছিলো। ডাক্তার মহিলা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন। তুহিনের ভয় হচ্ছে খুব। ভয়ের চোটে সে ডাক্তারকে জিজ্ঞেসই করতে পারছে না কিছু। ডাক্তার মহিলাও কেমন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না। চারপাশে কোনোপ্রকার কোলাহলের নামচিহ্ন নেই। সবটা তীব্র নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ, নির্বাক। তুহিন বাধ্যহয়ে কাঁপা স্বরে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, ” দীপ্তি কেমন আছে? ” প্রশ্নটা করেই চোখ বন্ধ করে মনে মনে দ্রুতগতিতে আল্লাহকে স্মরন করতে থাকে তুহিন।

সামনে থেকে ডাক্তার মহিলা হাফছেড়ে জবাব দেয়, ” ফার্স্টলি বলতেই হয় আপনার ওয়াইফ ইজ সাচ এ্যা ফাইটার। দেড়ঘন্টামতো সময় জ্ঞান ছিলো ওনার। বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছে না থাকলে কেউ এভাবে লড়াই করতে পারে না। ”

তুহিন একটা চাপাশ্বাস বুকে টেনে নিয়ে। নিজেকে সামলে বলে, ” প্লিজ এসব পরে বলবেন। শুধু বলুন আমার দীপ্তি কেমন আছে? ও বেঁচে আছে তো? ”
” হ্যা, বেঁচে আছে। ওনায় নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। ”

কথাটা শুনতেই তুহিনের সব ভয় দূর হয়। প্রান ফিরে পায় সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে তুহিন। কেঁদে বসে পড়ে ক্লিনিকের মেঝেতে। আল্লাহর কাছে সঙ্গে সঙ্গে শুকরিয়া আদায় করে নেয় তুহিন। তার কান্না যেনো থামতেই চাচ্ছে না। বাচ্চার কথা এখনো জিজ্ঞেস করেনি তুহিন। বাচ্চার কথা মনে পড়তেই তুহিন জিজ্ঞাসাসুচক দৃষ্টিতে তাকায় ডাক্তারের দিকে। তুহিন কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ডাক্তার মহিলা বলে, ” বাচ্চাটা বড়জোর দুইঘন্টা মতো বাঁচবে। আপনার ওয়াইফের সেন্স আসতে আসতে হয়তো মরেই যাবে বাচ্চাটা। বাচ্চার হার্ট ঠিক মতো বিট করতে পারছে না। আর পালসরেটও কোয়াইট লো। ”

মুহুর্তেই তুহিনের হৃদস্পন্দন থেমে যায়। যার জন্য এতোকিছু সে ই বাঁচবে না? যার জন্য দীপ্তি নিজের জীবনের তোয়াক্কা করেনি সে ই চলে যাবে? দীপ্তির হুশ ফিরলে সে কী জবাব দেবে দীপ্তিকে? দীপ্তি তো শেষ হয়ে যাবে। দীপ্তির কত আশা ছিলো ওর এই বাচ্চাটা নিয়ে। সব দোষ আমার। আমি ওভাবে দীপ্তিকে ভুল না বুঝলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। আমি ভুল বোঝাতেই দীপ্তি প্রেগনেন্সির শুরুতে খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করেছে, আমার জন্যই প্রেগনেন্ট মেয়েটার মেন্টাল প্রেশার বেড়েছিলো। সবকিছুর জন্য দ্বায়ী আমি। এগুলো ভেবে তুহিন নিজেকে নিজে দোষারোপ করছিলো। তখনই অপারেশন থিয়েটার থেকে ছুটে বাইরে বেড়িয়ে আসে মৌ। মৌ ছুটে এসে তুহিনকে বলে, ” স্যার, আমরা যদি সাক্সেসফুলি বাচ্চাটার ওপেন হার্ট সার্জারি করতে পারি তাহলে বাঁচ্চাটা বেঁচে যাবে। ”

তুহিন আশার আলো দেখতে পায়। একমুহুর্তও দেরি না করে সার্জারির জন্য রেডি হয়ে যায়।

তুহিনের সামনে স্ট্রেচারে একটা ছোট বাচ্চা রাখা। সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা। দেখতে একদম ছোট পরীর মতো। যার শরীরে তুহিনের রক্ত দৌড়াচ্ছে। প্রায় ৮ মাস সার্জারি থেকে দূরে থাকার পরে যে নিজের ছোট্র মেয়েটারই সার্জারি করতে হবে তুহিনের। তা কল্পনাতীত ছিলো তুহিনের নিকট। প্রায় ৮ মাস আগে নেশাগ্রস্থ অবস্থায়ও সে কনফিডেন্টলি একটা মানুষের প্রান বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। সেদিন বিন্দুমাত্র নার্ভাসনেস কাজ করেনি তার মধ্যে। একদম একজন প্রফেশনাল ডাক্তারের মতো সার্জারি করে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো মানুষটাকে। অথচ আজ সম্পুর্ন হুশে থেকেও কনফিডেন্স খুজে পাচ্ছে না তুহিন। হাতে থাকা মাঝারি সাইজের সার্জিক্যাল নাইফটা যেনো হাতের কাপনের জন্য পড়েই যাচ্ছে প্রায়। প্রচন্ড হাত কাঁপছে তার। তুহিন আজ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আর চ্যালেঞ্জিং সার্জারিটা করতে যাচ্ছে। তার পুরোটা শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে। সার্জারির সময় এমন মারাত্মক অবস্থা কখনও হয়নি তার। কত বড় বড় সার্জারি অনায়াসেই চুকিয়ে দিয়েছে সে। ক্যারিয়ারে একটাও ফেইলিওর নেই তুহিনের। সবগুলো সার্জারি সাক্সেসফুল হয়েছে তার। আজ কেনো যেনো ফেইলিওর কে মারাত্মক ভয় পাচ্ছে সে। ভয়ে তার আত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে।

প্রায় ৪০ মিনিট পর সার্জারি শেষ হয়। বাকি সব সার্জারির মতো তুহিন আজ বলে না, ‘ সার্জারি সাক্সেসফুল। ‘ সার্জারি শেষ করে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে আসে তুহিন। সে নিজেও জানে না তার লাইফের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সার্জারিটা আদৌ সাক্সেসফুল হয়েছে কিনা। কয়েক মুহুর্ত বাদেই মৌ তুহিনের কাছে এসে কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে, ” ইউ ডিড ইট স্যার। সার্জারি সাক্সেসফুল। ”

জীবনের কোনো সফলতায় এতো আনন্দ অনুভব করেনি তুহিন। যা আজ এই সার্জারির সফলতায় পাচ্ছে সে।

তুহিনের গায়ে প্রোটেক্টিভ গাউন, কোলে তার ছোট্র পরীটা। তুহিন দীপ্তির মাথার পাশে বসে আছে। দীপ্তির জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে সে। ছোট্র পরীটার ফুটফুটে মুখটায় অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। দীপ্তি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। পাশে তার তুহিন একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে। দীপ্তি চোখ মেলতেই তুহিন দীপ্তির কপালে চুমু এঁকে বলে, ” থ্যাংকস এ লট ফর দিস বিউটিফুল এঞ্জেল। ছোট্র একটা বাচ্চা পরী হয়েছে আমাদের। ”

দীপ্তি মাথা তুলে উঠে বসতে চায়। নার্স দীপ্তির পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে, দীপ্তিকে আধশোয়া করে বসিয়ে দেয়। দীপ্তি হাত বাড়িয়ে দেয় তুহিনের দিকে। সে তার পরীকে কোলে নিতে চায়। তুহিন কোলে দিতেই বুক কেঁপে ওঠে দীপ্তির। দীপ্তি তুহিনকে জিজ্ঞেস করে, ” ওর বুকে এসব কেনো? ”
তুহিন মৃদুহেসে বলে, ” পরীটা পৃথিবীতে এসেই তার বাবার যোগ্যতা যাচাই করে নিয়েছে। ”

প্রায় তিন বছর পর।

তিনজন আইস্ক্রিম নিয়ে ঝগড়া লেগেছে। তুহিন, দীপ্তি আর সেই ছোট্ট পরীটা। যার বর্তমান নাম ‘আদনিন আমাইরা’। আমাইরা আইস্ক্রিম খেতে চাচ্ছে। আইসক্রিম দীপ্তি কিছুতেই খেতে দিবে না আমাইরাকে। কারন আমাইরার ঠান্ডা লেগেছে। তুহিন আমাইরার পক্ষে। তুহিন বলছে, ” আইস্ক্রিমের বাক্সটা দাও না। এতোকরে খেতে চাচ্ছে। একটু খেয়েই রেখে দেবে। আর একটু খেলে ঠান্ডা বাড়বে না। ”
দীপ্তি নাক ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে হুংকার দিয়ে তুহিনকে বলে, ” তুমি জানো ঠান্ডা বাড়বে না যে? একজন ডাক্তার হয়েও তুমি এসব বলছো কোন আক্কেলে? এই বদমাইশটায় সারাদিন আইস্ক্রিম খেয়ে খেয়েই এমন ঠান্ডা বাধিয়েছে। কোনো আইস্ক্রিম খাওয়া হবে না। যতদিন না ঠান্ডা পুরোপুরিভাবে ভালো হচ্ছে। ”

আমাইরা রেগে তাকিয়ে আছে তার আম্মুর দিকে। ঠোট উল্টে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে দীপ্তির দিকে। আমাইরা তুহিনকে বলে, ” আব্বু দিতে বলো না। দুই তামত থাবো থুধু। থুধু দুই তামত। ”

তুহিনও দীপ্তিকে বলে, ” আরে দাও না। দুই চামচ খাবে বলছে তো। তুমিও কী এক আইস্ক্রিম নিয়ে শাসন-শোষন শুরু করেছো। দুই চামচ আইস্ক্রিমই তো। দিয়ে দিলেই তো মিটে যায় সব। ”

দীপ্তি বলে, ” না। এক চামচও না। ”

তুহিন বলে, ” মা বেটি দুটোই ঘাড়ত্যাড়া। তুমি এটাকে আইস্ক্রিম না দেওয়া অবধি এটা এখান থেকে নড়বে না। আর তুমিও এটাকে আইসক্রিম দিয়ে এখান থেকে নাড়াবে না। ”

এবার আমাইরা চেঁচিয়ে বলে, ” আম্মু তুমি এত্তো পতা তেনো? দুই তামত আইত্তিম এ তি তান্দা নাদে নাকি? তুমি তুদু-তুদু আমায় আইত্তিম দিত্তো না। ”

দীপ্তি চোখ রাঙিয়ে বলে, ” এই চুপ। একদম চুপ। মুখে-মুখে তর্ক করলে একদম মুখ ভেঙে দেবো তোমার। ”

আমাইরা আর কিছু বলে না। তার রাগ উঠেছে খুব। কিন্তু সে ঠিকমতো রাগ দেখাতেও পারছে না। কারন তার ছোট মাথাটা জানে যে, সে এখন রাগ দেখালেই তার আম্মু হুমুড়-হামুড় মেরে দেবে তাকে। তার আম্মু তাকে সুযোগ পেলেই হুমুড়-হামুড় দেয়। আবার অকারনে শুধু শুধু চুমু খেতে খেতে তাকে বিরক্তও করে তোলে। তাই আমাইরা মুখ ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাইরার মুখ কাঁদো, কাঁদো।

দীপ্তি আইসক্রিমের বাক্স থেকে এক চামচ আইস্ক্রিম তুলে নিয়ে আমাইরার মুখের সামনে ধরে বলে, ” এই হিটলারনি! ধর নে। ”

সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছু আইস্ক্রিম পোকা আমাইরা চামচের আইস্ক্রিম টুকু খেয়ে নেয়। তারপর খিটখিট করে হেসে বলে, ” আলেক তামত দাও। আলেক তামত দাও। ”

দীপ্তি আমাইরার এই হাসিটা দেখার জন্যই আমাইরাকে আইসক্রিম দিয়েছে। দীপ্তি আরেক চামচ আইস্ক্রিম খাইয়ে দেয় আমাইরাকে। আমাইরা আবার বলে, ” আলেত তামত দাও না আম্মু! ”
দীপ্তি চোখ রাঙিয়ে বলে, ” এবার মাইর দিবো। মাইর। ”
আমাইরা তুহিনের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বলে, ” আব্বু আমাল দলে। আব্বু তোমালে মাইল দিবে। মাইল দিবে, মাইল। ” বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে আমাইরা। দীপ্তি চোক রাঙাতেই আমাইরা তার বাবাকে বলে, ” আব্বু তলো তলো আমলা আম্মুল আদে লুমে দাবো। কাদে নিয়ে দৌল দাও, দৌল। ”

তুহিন আমাইরাকে কাঁধে চাইয়ে, ঘোড়দৌড় দিয়ে রুমে চলে আসে।

আমাইরা ঘুমিয়ে গেছে। তুহিন আর দীপ্তির মাঝখানে শুয়ে আছে আমাইরা। তুহিন দীপ্তিকে বারবার বলছে, আমাইরাকে পাশে দিয়ে দীপ্তিকে মাঝখানে আসতে। দীপ্তি অনেকবার বারন করেছে। তুহিন মহাঠ্যাটা। সে বারন শুনছেই না। দীপ্তি বলে, ” সকালে ক্লিনিকে যেতে হবে তো ঘুমাও। এখন আমি মাঝখানে গেলে তুমি সারারাতেও ঘুমানে না। ”

তুহিন ইনিয়েবিনিয়ে বলে, ” আসো না। ঘুমাই আর না ঘুমাই সকালে ক্লিনিকে গেলেই তো হয় তোমার। আসো। আসো। তাড়াতাড়ি আসো। ”

দীপ্তি না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এবার আমাইরাকে পাশে দিয়ে মাঝখানে গেলো সে। মাঝখানে যেতেই দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তুহিন। তুহিন বলে, ” আমুই হবার পর থেকে তোমার আমার প্রতি ভালোবাসার মাত্রা কমে গেছে। ”
দীপ্তি তুহিনের গাল টেনে দিয়ে বলে, ” হু কমুক। তুমি না কমালেই হলো। ”

তুহিন দীপ্তির নাকে নাক ঘষতে ঘষতে বলে, ” আমার দিক থেকে কমবে না। আমার তো এখন বেবি আরেকটা নিতে ইচ্ছে করছে। চলো আরেকটার প্ল্যান করি। ”

দীপ্তি বলে, ” না ভাই। আমি আর পারবো না। একটাই বেড়িয়ে আসতে আমার দশা, বেদশা হয়ে গেছে। আর এখন তো জান জাস্ট ভাজা ভাজা করে ফেলছে। ডেলিভারিতে যে কষ্ট আমি আর বেবি নিবো না। এবার তুমি নাও। ”
– ” আমি কীভাবে বেবি নিবো? ”
– ” কেনো? মেডিকেল সাইন্সের এতো উন্নতি হয়েছে। এখন তো ছেলেরাও প্রেগন্যান্ট হতে পারে। একবার তুমিও ট্রাই করে দেখো। ”

তুহিন হেসে বলে, ” এই একটাতেই হবে। ”
– ” এইবার তাহলে লাইনে আসছো চান্দু। ”
– ” লাইনে তো এখন আসবো। ”
– ” মানে? ”

তুহিন কিছু না বলেই দীপ্তির ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয়। দীপ্তিও তাল মেলাতে থাকে। খানিকবাদেই তুহিন দীপ্তির ঠোটে আর গলায় আলতো করে কামড় দিতে থাকে। আচমকা একটু জোরে কামড় বসায় তুহিন। দীপ্তি ‘আউ’ শব্দ করে। শব্দটা দীপ্তির মুখ ফসকে একটু জোরেই বেড়িয়ে যায়। তুহিন দীপ্তির মুখ চেপে ধরে বলে, ” এই আউ আউ আস্তে করো। মেয়ে উঠে গেলে আমার রোমান্সের সর্বনাশ হবে। ”

দীপ্তি হালকা হেসে বলে, ” এক বাচ্চার বাবা হয়েও এখনও এতো রোমান্সের শখ কেনো তোমার? ”
– ” এক বাচ্চা কেনো? আমার বুড়ো বয়সেও শখ থাকবে। মেয়ের বিয়ের পরে বুড়ো বয়সে আমরা একবার হানিমুনে যাবো। ঠিক আছে? ”

তুহিনের কথায় দীপ্তি হেসে দেয়। তুহিনও হেসে জড়িয়ে ধরে দীপ্তিকে।

প্রেমে বিভ্রাট থাকবেই। নানা ধরনের বিভ্রাট হতে পারে। বিভ্রাটকে ভয় পেয়ে, প্রেম করা ছেড়ে দেবেন না। সম্পর্কে কেবলমাত্র অকৃত্রিম ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই খুঁজবেন না। জীবনের প্রত্যেকটি সম্পর্ক বিচার করুন ভালোবাসা দিয়ে। ভালোবাসা বিচার করুন, শুধুমাত্র, শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে। বিভ্রাট লড়ে, জিতে যাওয়া প্রত্যেকটি যুগলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। এবং পৃথিবীর সকল প্রেমিক এবং প্রেমিকাকে নিবেদন করছি এক মহাকাশ শুভ্র, স্বচ্ছ ভালোবাসা এবং বিভ্রাট লড়ে যাবার দুঃসাহস। বিভ্রাটকে হারিয়ে দিয়ে জিতে যাক পৃথিবীর সকল প্রেম, এই প্রত্যাশাই রইল।

সমাপ্ত!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমীরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings ”

Facebook Page ► @iamtanvirtuhin
https://www.facebook.com/iamtanvirtuhin

Facebook Group ► @tanvirswritings
Tanvir’s Writings

Instagram ► @thetanvirtuhin
https://www.instagram.com/thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here