অব্যক্ত_প্রিয়তমা #ফাতেমা_তুজ #part_15

0
651

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_15

কেঁটে যায় কয়েক মাস। নির্ভীকের সাথে দেখা হয় না অনিন্দিতার। কারন নির্ভীক তৃতীয় বর্ষের ক বিভাগের কোনো ক্লাস নেয় নি। যথাসম্ভব দূরে দূরেই থাকে। তিক্ত অনিন্দিতা ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ভালোবাসার লড়াই টা নিজের মাঝেই রেখেছে। প্রেমের অনুভূতি যখন একান্ত তখন কষ্ট গুলো ও একান্ত। এই কয়েক মাসে কয়েক টা ডায়েরী পূর্ন করেছে সে। যাঁর প্রতি টা অক্ষর নির্ভীকের নামে। প্রিয় মানুষ টির রক্তে লাল হওয়া ডায়েরী বুকে জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। যে মরন যন্ত্রনা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় সেই মরন যন্ত্রণা কেই আঁকড়ে ধরেছে। রিতি মতো বুক ফাঁটা আর্তনাদ গুলোই হয়েছে আপন। সারাদিন নিজের ঘরেই বসে থাকে। কখনো বা হাসে কখনো বা কাঁদে। প্রেমে ব্যর্থ রাজকন্যার মতোই সকলের চোখে সুখী সে। সব সুখ তাঁর হাতের মুঠোয় । কিন্তু শুধু সে ই জানে ব্যর্থ জীবন কে রাঙানোর চেষ্টায় আছে। এক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। আজ তিন দিন ধরে নির্ভীকের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু তেই হয়ে উঠছে না। অনিন্দিতার রাগ উঠে। কাগজ গুলো কয়েক টুকরো করে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে গেলেই চোখ পরে নির্ভীকের দিকে। আজ কয়েক মাস পর নির্ভীক কে দেখতে পেলো সে। অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। শাহানার ডাক পরতেই হতচকিয়ে উঠে অনিন্দিতা। গলা উঁচিয়ে বলে
” আসছি আম্মু । ”

শাহানা তত্ত্ব সাজাচ্ছেন। মেয়ের শশুর বাড়িতে যাবেন সকলে। কয়েক দিন পর ই হীরের ডেলিভারি । অনিন্দিতার দিকে করুন চোখে তাকায় শাহানা। মায়ের দৃষ্টি বুঝতে পারে অনিন্দিতা । হাসি মুখেই বলে
” আমি যাবো আম্মু ”

” সত্যি বলছিস অনি ? ”

” হ্যাঁ আম্মু ”

পর পর কয়েক বার মেয়ের মুখে চুমু খায় শাহানা। অনিন্দিতার অধর কোনে হাসি ফুটে। পরিবারের সুখেই না হয় নিজের দুঃখ বিসর্জন দিবে।

পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে আসেন আরশাদ। অনিন্দিতা কে দেখে হাসেন। বলেন
” তাহলে আমার মেয়ের মাথায় সুবুদ্ধি হয়েছে ? ”

” আগে থেকেই ছিলো আব্বু ”

” আহা সেটা বলি নি মা। শুধু বললাম নিজেকে ঘর বন্দী রাখার চিন্তা টা বদলে নিয়েছিস। ”

অনিন্দিতা উত্তর করে না। কিচেন থেকে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে আসে আসিম। প্রচন্ড অবাক হয়ে অনিন্দিতা বলে
” তুমি কখন এলে ? ”

” ভোর পাঁচ টায়। ”

” হোয়াট ”

” তুমি ইনভাইট নাই করতে পারো আন্টি আর আঙ্কেল আমার কথা ভুলে নি। এখন তো মনে হচ্ছে ওনারাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ”

অনিন্দিতা কিছু বলবে তাঁর আগেই ইনতেহার কন্ঠ আসে। শাড়ির প্যাকেট হাতে এসে বলে
” আমি ও কিন্তু আছি। তুই ভুলে গেলে ও আন্টি ভুলে নি। ”

ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় অনিন্দিতা। সবাই অট্টহাসি তে ফেঁটে পরে। নিজ রুমের দিকে এগিয়ে যায় অনিন্দিতা।ডোর লাগানোর আগে বলে
” সবাই চিটিং করেছো। ”
.

রেডি হয়ে বসে আছে অনিন্দিতা। মুখ গম্ভীর তাঁর। নির্ভীক বার বার যাবে না বলেছে। চারুলতা অবশ্য লেগে আছেন ছেলের পেছনে কেন যাবে না সে। নির্ভীকের একটাই উত্তর এতো মানুষজন ভালো লাগে না তাঁর। এই কথা শুনেই চারুলতা রেগে গিয়েছেন। নিহালের ওহ একি কথা। সাথে ব্যবসার কাজ ও নাকি রয়েছে। এখন যদি নির্ভীক ওহ একি কথা বলে তাহলে কি করে হয় ? চারুলতার রাগে দমে যায় নির্ভীক। মায়ের নাছোড়বান্দা দৃষ্টি থেকে রেহাই নেই।

প্রায় দুই বছর পর মামা বাড়িতে এসেছে অনিন্দিতা । হীরের বিয়ের মাস দুয়েক পর এসেছিলো আর আসা হয় নি। মামা , মামি আর ভাই বোন দের যত্নে একেবারে যা তা অবস্থা। তাই তো বলে মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি। অনিন্দিতার প্লেটে খাবার দিতে দিতে উঁচু করে ফেলেছে। না পেরে অনিন্দিতা চিৎকার করে বলল
” আমি কি রাক্ষস নাকি ? ”

” সেকি কথা অনি। রাক্ষস হতে যাবি কেন? আরেকটু খাবার দিবো? ”

” মামুনি প্লিজ এবার তোমরা থামো এতো খাবার আমি সপ্তাহে ও খাই না। ”

আপেলে কাঁমড় বসিয়ে হীর বলে
” সমস্ত খাবার শশুর বাড়িতে গিয়েই খাবে। এটা অবশ্য ভালো। বাবার সম্পদ রক্ষা করে চলেছে। ”

” মার খাবি হীর। ”

ফিচেল হাসে হীর। অনিন্দিতা দম ফেলে খাবার খেতে বসে। এক মনে খাচ্ছে নির্ভীক। যেন কোনো যন্ত্র মানব। চোখের নিচে কালি জমেছে। শুকিয়ে গেছে অনেক টা। অনিন্দিতার বুক ধুক করে উঠলো। এ কি হাল হয়েছে ছেলেটার ?
অনিন্দিতার মনে প্রশ্ন জাগে। বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছে সে তারপর ও এই অবস্থা কেন !গলা দিয়ে খাবার নামে না। একটু খেয়েই উঠে যায় অনিন্দিতা। বিকেলে সবাই বাগানে ঘুরতে যায়। অনিন্দিতা মাথা ব্যথার অজুহাতে যায় না। সে জানে নির্ভীক বের হবে না আজ। তাই ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কিচেন থেকে দু কাপ কফি বানিয়ে গেস্ট রুমের দিকে রওনা হয়। গেস্ট রুমে নির্ভীক কে না পেয়ে ট্রেরেস এ চলে আসে। ট্রেরেস এ নির্ভীক কে সিগারেট খেতে দেখেই হৃদয়ে আঘাত লাগে। টেবিলে কফি রেখে ছুটে যায় নির্ভীকের কাছে। নির্ভীকের হাত থেকে ছো মেরে ফেলে দেয় সিগারেট। গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখ দুটো মেলে তাকায় নির্ভীক। স্তব্ধ হয়ে যায় দুটি আত্মা। নির্ভীকের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে আর অনিন্দিতার চোখে ভাসে অশ্রু। আবছা হাতে নির্ভীকের বুকে স্পর্শ করে সে। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া করে না নির্ভীক। অনিন্দিতা তাঁর কাঁপা কন্ঠে বলে
” একি হাল হয়েছে আপনার ? আমি তো বিরক্ত করি না আপনাকে। তাহলে এমন কেন করছেন ! ”

” কেন বিরক্ত করেন না অনিন্দিতা? ”

” আপনিই তো বারন করেছেন। ”

” তাহলে এখন কেন এসেছেন ? ”

অনিন্দিতা উত্তর দেয় না। নির্ভীকের মেরুন ঠোঁটে কালচে দাগ পরেছে। যার অর্থ দীর্ঘদিন সিগারেট খেয়েছে। ছলছল নয়নে তাকায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের ঠোঁটে স্মিত হাসি সে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা নন্দিনীর ( মেয়ে ) দিকে। এই সেই নন্দিনী যে তাঁর জন্য দুনিয়া ছাড়তে রাজি। অথচ সে নির্বিকার পুরুষ মানুষ। মিনিট কয়েক এভাবেই চলে যায়। কপালে ভাঁজ সৃষ্টি হয় নির্ভীকের। হাতের আঙুলের সাহায্য অনিন্দিতার বেবি হেয়ার গুলো গুছিয়ে দেয়। এই স্পর্শে যেন মাদকতা আছে। অনিন্দিতার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম । কিছু টা দূরে সরে যায় নির্ভীক। অনিন্দিতা বলে
” আমাকে সত্যি ই ভালোবাসলেন না ? ”

” হ্যাঁ বাসলাম না। ”

” শুধু মাত্র আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য রোজ আপুর সাথে বিয়ের নাটক ও করেছিলেন ! ”

” হ্যাঁ করেছিলাম। আপনাকে দূরে সরানোর কোনো পথ ছিলো না। যদি ও ব্যর্থ ছিলো সেই প্রচেষ্টা তবে আপনি ঠিক ই দূরে সরে গেছেন। ”

” তাহলে এই অবস্থা কেন আপনার? ”

” উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। ”

মুখে হাত চেপে কাঁদে অনিন্দিতা। সে কান্নার শব্দ শুনতে পারে না ছেলেটা। ধমকে উঠে সে। অনিন্দিতার বাহু চেপে বলে
” একদম কাঁদবেন না। এ চোখের পানি অনেক মূল্যবান। এই ব্যর্থ প্রেমের জন্য কেন অশ্রু ফেলেন ? আপনাকে দিয়ে এমন টা আশা করি না আমি। চলে যান অনিন্দিতা, বহু দূরে চলে যান। যেখানে নির্ভীকের কোনো অস্তিত্ব নেই। আপনার জীবন হবে সুখময়। ”

” তাহলে মৃত্যু দিন আমায়। যেখানে আপনি নেই সেখানে থাকতে চাই না আমি। যেখানে আপনি নেই সেই সুখ আমার জন্য বিলাসিতা মাত্র। আপনি শুধু আপনি নির্ভীক মাহতাব শুধুই আপনি। এই আপনি তেই আমি মরন দেখেছি। ”

অনিন্দিতার চিৎকার করা হা হা কার বেদনা নির্ভীকের টনক নাড়িয়ে দেয়। অনিন্দিতার দিকে এক হাত বাড়িয়ে আবার গুটিয়ে নেয়। দেয়ালে লাথি মেরে বলে
” পারছি না আমি। আপনাকে সঙ্গী করা সম্ভব নয়। চলে যান অনিন্দিতা চলে যান।”

কথা টা বলেই নিজের বুকে শুট করে নির্ভীক। গুলি লেগে খলবিলিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। লাল রক্তে রঙিন হয় মেঝে। অনিন্দিতার মুখ থেকে কথা বের হয় না। কেউ যেন মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কয়েক দফা পিছিয়ে যায় নির্ভীক। হাতের বন্দুক টা ছিটকে পরে যায় অনেক দূরে। অশ্রু শিক্ত নয়নে ডুবে থাকা অনিন্দিতা দেখতে পায় মেঝে তে পরে যাচ্ছে তাঁর প্রান প্রিয় প্রিয়তম। এই বুঝি ভালোবাসার সমাপ্তি হলো ।

** পরীক্ষা দিতে যাবো । সবাই দোয়া করো প্লিজ।

এই লিংক এ গিয়ে আমিন কমেন্ট করো প্লিজ।
https://www.facebook.com/110123584545542/posts/228257642732135/?app=fbl

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here