স্নিগ্ধ_অনুভব #পার্ট:১৬

0
396

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১৬
#পিচ্চি_লেখিকা

আন্টি হাত আলগা করে দিতেই বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। এখন যদি আন্টিরা আমাকে সাহায্য না করে আমি যে শেষ হয়ে যাবো। আন্টি আঙ্কেল ছাড়া কেউ তো আমাকে হেল্প করতে পারবে না। এখন কি করবো আমি? অনুভবকেও তো বাঁচাতে পারবো না। হঠাৎ আন্টি আমার হাত ছেড়ে তার হাতের মুঠোয় ২ হাত নিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,,
“এটাও তোর বলতে হবে যে তোকে সাহায্য করবো কি না? তুই তো আমার আরেক মেয়ে তোকে সাহায্য করার কি আছে? শুধু বল কি করতে হবে?”
আন্টির কথা শুনে চোখ ছলছল করছে। এই কয়দিনেই মানুষগুলো কত আপন করে নিয়েছে আমাকে! এরকমও কি মানুষ হয় পৃথিবীতে? আন্টি আমাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,
“কি রে কান্না করছিস কেন? তুই একদম চিন্তা করিস না। অনুভবের কিছু হবে না। বল না কি করতে হবে?”
“আন্টি আঙ্কেলের হেল্প লাগবে।”
“তা আঙ্কেল কি করতে পারে বলুন আপনারা?”
কারো কথা শুনে দেখি পিছনো আঙ্কেল দাঁড়িয়ে। এক গাল হেঁসে বললেন কথা টা। আমি আন্টিকে ছেড়ে আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে থাকতে দেখে আঙ্কেল আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
“সব শুনেছি আমি। আজ ভালো লাগছিলো না বলে চলে এসেছিলাম এসেই সব শুনেছি। তোর কি হেল্প লাগবে বল?”
“আঙ্কেল তোমরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছো এই ঋন আমি শোধ করতে তো পারবো না। কিন্তু সারাজিবন কৃতজ্ঞ থাকবো।”
“এবার মার খাইতে না চাইলে বল কি করতে হবে?”
“আসলে আঙ্কেল কোনো ভাবে অনুভবকে ওই হসপিটাল থেকে বের করতে হবে। নয়তো ওরা অনুভবকে মেরে ফেলবে। কি করবো বুঝতে পারছি না।”
“বুঝলাম। কিন্তু আমরা তোকে কিভাবে সাহায্য করবো বল?”
কি কি করতে হবে আঙ্কেল আর আন্টিকে সব টা বললাম। বুঝানো শেষে আঙ্কেল বললো,,
“সব বুঝলাম কিন্তু এত কিছু আমি একা পারবো না তাই সাগরকে( আইদার ভাই) বলতে হবে। আমি জানি সেও তোকে হেল্প করবে৷ এখন এত চিন্তা না করে রুমে যা। যা করার আজই করতে হবে। আমি সাগরের সাথে কথা বলছি।”
আমিও কিছু না বলেই মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম। যেটা করছি তাতে কতটুকু কি হবে জানি না। তবুও এছাড়া যে কোনো উপায় নেই তাও উনারা বুঝেছে। কারণ ওরা বাবা মায়ের পরিচয়ে গেলেও কেউ বিশ্বাস করবে বলে আমার মনে হয় না আর এতে আঙ্কেল আন্টির বিপদও বাড়বে। তাই এই সিদ্ধান্ত। আঙ্কেলও বিনাবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন। এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ এত ভালো ভাবতেই অবাক লাগে। আমাকে না চিনে না জেনেও কতটা ভালোবেসে আগলে রাখছে। আমি চুপ করে এসে বেডে বসে রইলাম। একটু পর রুমে আইদা এলো।
“আসতে পারি?”
“হুম আসো।”
“এত চিন্তা করো না আপু। টেনশনে সব ঠিক হবে না। তুমি নিজেকে শক্ত করো। তোমাকে কিন্তু নিজ হাতে সব সামলাতে হবে।”
“হুম। কিন্তু মাথা কাজ করছে না। জানি না কিভাবে কি করবো?”
“ধ্যাত সারাদিন টেনশন করে মাথা খারাপ করো পরে তুমি আর অনুভব ভাইয়া মিলে গিয়ে এক সাথে পাগল হয়ে নেচো কেমন!”
আমি আইদার কথা শুনে ফিক করে হেঁসে দিলাম।
“তুমিও না! ভার্সিটি যাবে না কাল?”
“না গো আপু। পড়াশোনায় তো আমি পাক্কা ফাকিবাজ।”
“হুম বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দাঁড়াও আন্টিকে বলছি।”
“হুম হুম বলে ফেলো😁😁
” 😒😒
“আরে ওরকম করে কেনো? আচ্ছা বাদ দেও এসব। একটা জিনিস দেখবা?”
“কি জিনিস?”
“এই দেখো।”
সামনে একটা ফটো অ্যালবাম ধরে বলে। আমি ওর হাতে ফটো অ্যালবাম দেখে ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করলাম,,
“অ্যালবাম? কিসের?”
“আরে কিসের আবার! আমাদের ফ্যামিলি ফটো। দেখবা??
” হুম দেখাও।”
ফটোর অ্যালবাম দেখতে দেখতে আইদা ওদের ছোটবেলা নিয়ে গল্প শুনাচ্ছে আমার তো হাসিতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছা করছে। কত হ্যাপী ফ্যামিলি ওদের। অ্যালবাম দেখতে দেখতে চোখ আটকে যায় একটা ছবির দিকে। এই বাড়িতে আন্টি, আঙ্কেল, ভাইয়া, ভাবি, আইদা আর৷ সিফাত ছাড়া এই প্রথম অন্য কাউকে দেখলাম তাও ফটো তে। ভ্রু যুগল কিঞ্চিত কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,,
“এরা কারা আইদা?”
“এরা! উনারা আমার চাচ্চু,চাচিমা আর তাদের ছেলে মেয়েরা।”
“উনারা তোমাদের সাথে থাকে না কেন?”
“সে তো অনেক বড় ঘটনা।”
“তুমি শর্টকাট করে শুনাও।”
“আচ্ছা বলছি। আমি যদিও নিজে দেখিনি কারণ তখন আমার জন্মই হয়নি। ভাইয়া আর আম্মু গল্প শুনিয়েছিলো। ভাইয়ার তখন ৭ বছর বয়স। তখন চাচ্চু আর চাচিমা রা এখানেই থাকতো। কিন্তু আমার চাচ্চুরা ছিল ভিষন লোভী। চাচ্চু রা নাকি আগে থেকে বাজে পথে ছিলো। এই যেমন ধরো নেশা করা, পড়াশোনা না করা, মারপিট করা, পড়াশোনা তো করতোই না। চাচ্চুদের এমন হাল দেখে দাদাভাই অনেক চিন্তায় পড়ে যান। আর এত চিন্তার ফলে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তার আগে সব সম্পত্তি আব্বুর নামে করে দিয়ে যান। চাচ্চুদের স্বভাব ভালো ছিলো না বলেই দাদাভাই এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। পরে চাচ্চুরা এসে সম্পত্তি দাবী করলে আব্বু সাফ সাফ বলে দেয় তোদের কিছু দেবো না যা দেবো তোর ছেলে মেয়েদের। কিন্তু চাচ্চুরা রেগে চলে যায়। তারপর থেকে তারা কেমন আরো বেশি বাজে হয়ে যায়। লোক ঠকানো শুরু করে। ভাইয়াকেও একবার মারার চেষ্টা করেছিলো। জানো আমার নাকি বড় আপুও ছিলো।”
“তাই! সে কোথায়?”
“জানি না গো। আম্মু বলে চাচ্চুরা নাকি আমার আপুকে জন্মের পর পরই কোথায় নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছিল।”
আইদার কথা শুনে অনেক খারাপ লাগলো। তারপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করে আইদা নিজের রুমে চলে গেলো। আর আমি ভাবতে থাকলাম কি করে কি করবো? কে হেল্প করতে পারবে? সব চিন্তার পোকারা যখন ঘিরে ধরেছে হঠাৎ করেই মাথায় আসে তন্নি, তামিম, মেঘু ওরাই তো আমাকে সাহায্য করতে পারবে। মেঘু এখন শ্বশুরবাড়ি তাও রাহাতের ভাইয়ের বউ। ওকে এখন কিছু জানানো যাবে না। যদি রাহাত কিছু করে তাহলে ও তো অনুভবকে মেরে ফেলবে। তামিম তো কোনো কিছুতেই সিরিয়াস না। আর ওর একটুতেই মাথা গরম হয়ে যায়। ঠিক করলাম প্রথমে তন্নির সাথে যোগাযোগ করবো। ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম। কারণ এটা নতুন ফোন। এই ফোনে কারো নাম্বার নেই। আর তাছাড়া এতদিন পর ওদের নাম্বার মনে পড়ছে না। তাই ফেসবুকে ঢুকলাম৷ কিন্তু ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ও তো ভুলে গেছি। কি করা যায়? এটা ওটা ভাবতেই ছুট লাগালাম আইদার রুমের দিকে। আইদা রুম ফাঁকা দেখে পারমিশন না নিয়েই ঢুকলাম। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। আমি চুপ করে বসে রইলাম বেডের এক কোণায়। একটু পর আইদা আমাকে হঠাৎ দেখে চমকে উঠে বলে,,
“আরে তুমি আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
“সরি আসলে রুম পুরো ফাঁকা ছিলো তাই পারমিশন না নিয়েই ঢুকে পড়েছি।”
“আরে ইটস ওকে। হঠাৎ করে দেখায় ভয় পেয়ে গেছিলাম। বাদ দাও এসব এবার বলো হঠাৎ আমার রুমে? কোনো দরকার?”
আমি মাথা টা নিচু করে ছোট করে উত্তর দিলামম,,
“হুম..
” মাথা নিচু করে আছো কেন? বলোই না কি দরকার?”
“আসলে আইদা আমমি তোমার ফোন থেকে তোমার ফেসবুকটা একটু ইউজ করতে পারি? আসলে আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড আমি গিলে খেয়ে বসে আছি।”
“হাহাহা এই ব্যাপার। নিতেই পারো বাট বলো কি দরকার?”
“আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা খুব দরকার।”
“আচ্ছা নাও।”
আমি আইদার ফোন নিয়ে তন্নির আইডি খুজতে লাগলাম। ওর প্রোফাইলে যে ওর ৩২ টা দাঁত বার করা পিক থাকবে তা ভালো ভাবেই জানি। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম ওর আইডি। হ্যাঁ যা ভেবেছিলাম তাই ৩২ টাা দাঁত বের করে ফোকলা হাসি দিয়ে আছে। ওর আইডি তে রিকুয়েষ্ট দিয়ে মেসেজ সেন্ড করলাম,,
“তন্নি আমি স্নিগ্ধু তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট কর ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
এটুকু সেন্ড করেই মোবাইল পাশে রেখে সমানে পায়চারী করছি নয়তো নখ কামড়াচ্ছি। ৫ মিনিট পর টুং করে শব্দ হতেই দেখি তন্নির মেসেজ। হয়তো আমার ভাগ্যটা খুব ভালো তাই তো তন্নি এই সময় অনলাইন।
“স্নিগ্ধু কোথায় তুই? কেমন আছিস? বাড়ি ছেড়ে কোথায় চলে গেলি?”
তোর মেসেজ দেখে আমি বললাম,,
“এত প্রশ্ন না করে শোন,,কাল আমার সাথে দেখা কর। এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি আর তোর নাম্বারটা দে। আর হ্যাঁ আমার যে তোর সাথে দেখা হয়ছে এই নিয়ে কাউকে কিছু বলিস না।”
“কিন্তু কেন?”
“আন্ডার জন্য। চুপ চাপ যা বলছি তা কর।”
তন্নি ওর নাম্বার টেক্সট করে দিলো আর আমি এড্রেস পাঠিয়ে আইদাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুমে এসে গা এলিয়ে দিলান।

লুকিয়ে আছি হসপিটালের দরজার সামনে। আমার সাথেই সাগর ভাইয়া, আইদা দাঁড়িয়ে আছে। হসপিটালে রেট করা হয়েছে। রেটের কারণ তাদের কাছে ইনফরমেশন আছে এখানে ডেইট এক্সপায়ার্ড মেডিসিন রাখা হয়। আরো অনেক চার্জ আছে। পুলিশ সব ডক্টর, নার্স এমনকি রিসেপশনিস্টকেও একটা কেবিনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা বাদ করছে। এটাই আমাদের মূখ্যম সুযোগ। যদি এই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারি তাহলে অনুভবকেহ হারিয়ে ফেলবো। কিন্তু কেন জানি পা গুলো আর এগোতে চাইছে না। পাশ থেকে সাগর ভাইয়া বললো,,
“এই স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে আছো কেন? যা করার তাড়াতাড়ি করো! নয়তো সবাই ধরা পড়া যাবো আর তখন কি হতে পারে বুঝতেই পারছো!”
“হুম ভাইয়া।”
আইদা কাঁধে হাত রেখে বললো,,
“নার্ভাস ফিল করলে চলবে না আপু। তুমি কিন্তু ভুলে যেও না এখন যদি সময়টা কাজে না লাগাও তবে তুমি……
” হুম চলো।”
জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে এগোতে লাগলাম। ভয় কাজ করছে। যদি অনুভব না যেতে চায় তবে? তবে কি করবো আমি? চিৎকার চেঁচামেচি করলে বিপদ বাড়বে। না না স্নিগ্ধু তুই একদম ভয় পাবি না। তুই তো ব্রেভগার্ল। দ্রুত পায়ে কেবিনে ঢুকে দেখি অনুভব এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে। সাগর ভাইয়া দরজার কাছে বার বার উঁকি দিচ্ছে। আমি আর আইদা গিয়ে অনুভবের কাছে বসলাম। অনুভবকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলাম,,
“অনুভব! শুনছেন আপনি?”
অনুভবের কোনো হেলদোল নেই৷ আমি মুখটা কানের কাছে নিয়ে গিয়ে একটু জোড়ে করেই বললাম,,
“উঠুনননননননন।”
কানের কাছে বিকট শব্দ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলো অনুভব। চোখ ২ টা ছোট ছোট করে বললো,,
“আপনি কে? এভাবে চমকালেন কেন?”
“আমি কে সেইটা পরে বলবো। আগে বলেন,,আপনাকে তো এরা অনেক মারে? আপনি আমার সাথে যাবেন? সেখানে কেউ মারবে না!”
অনুভব বাচ্চাদের মতো করে বললো,,
“কেন যাবো? আম্মু বলে একা একা কোথাও যেতে নেই।”
“একা কোথায় যাবেন? আপনি তো আমার সাথে যাবেন!”
“না আমি যাবো না।”
অনুভব যাবে না যখন বলেছে তখন সে যেতে নারাজ। যাবে না মানে যাবে না। এখন কি করবো?
“স্নিগ্ধা তাড়াতাড়ি করো!”
সাগর ভাইয়ার ডাকে মনে হলো স্নিগ্ধবতীর কথা। আমি অনুভবকে বললাম,,
“আপনার মনে আছে আমি সকালে এসেছিলাম? আপনি বলেছিলেন স্নিগ্ধবতীর কাছে যাবেন!”
অনুভব এবার চট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“হুম স্নিগ্ধবতী।”
“আপনার স্নিগ্ধবতী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি যাবেন না তার কাছে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো। কিন্তু কোথায় আমার স্নিগ্ধবতী?”
“আছে। আপনি আমার সাথে চলুন।”
“আপনি মিথ্যা বলছেন না তো?”
“না একটুও মিথ্যা বলছি না।”
“পাক্কা?”
মুচকি হেসে বললাম,,
“হুম পাক্কা।”
তারপর অনুভবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ৩ জন বের হয়ে আসলাম। হসপিটালে সিসিটিভি ছিলো বাট আমরা আগেই সেইটা নষ্ট করে দিয়েছি। অনুভব তার স্নিগ্ধবতী বলতে এতটাই পাগল যে একবার বলতেই সে লাফিয়ে উঠে বললো যাবে।

অনুভবকে রুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে বেডে বসিয়ে দিলাম। অনুভব একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার রুমের দিকে তাকাচ্ছে।
“আমার স্নিগ্ধবতী কোথায়? আপনি তো বলেছিলেন আমাকে স্নিগ্ধবতীর কাছে নিয়ে যাবেন!”
অনুভবের সামনে একটু ঝুকে কাঁপা কাঁপা হাতে বললাম,,
“অ অনুভব আপনি আপনার স্নিগ্ধবতীকে চিনতে পারছেন না? দেখুন না আপনার স্নিগ্ধবতী আপনার সামনে!”
“কোথায় আমার স্নিগ্ধবতী? আর কে অনুভব?”
অনুভবের মুখে এই কথা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো৷ কি বলে এটা? অনুভব কে মানে কি?
“অনুভব কে মানে কি? আপনি ই তো অনুভব।”
“আমি এত কিছু জানি না। আমাকে স্নিগ্ধবতীর কাছে নিয়ে চলেন। নয়তো আমি কান্না করবো।”
“নিয়ে যাবো তো। সময় হোক। আপনি এখন চুপটি করে বসেন।”
“না আমি এখনি যাবো।”
চোখ গরম করে অনুভবকে ধমক দিয়ে বললাম,,
“অনুভব,,কি বাচ্চাদের মতো জেদ করছেন?”
অনুভব ধমক শুনে কেঁপে উঠে। বাচ্চাদের মতো ঠোট উলটে বলে,,
“আপনি আমাকে বকলেন?”
উনার তো মাথা ঠিক নেই। সব ভুলে গিয়েও তার স্নিগ্ধবতীকে সে মনে রেখেছে। তাই তো এখন জেদ ধরেছে। কি করে বোঝাবো যে আমিই তার স্নিগ্ধবতী!
আমাদের কথার মাঝেই রুমে ভাবি আর সিফাত আসলো। সিফাত আধো আধো গলায় বললো,,
“ফুতিমনি এতা কে?”
আমি সিফাতকে নিয়ে অনুভবের পাশে বসিয়ে গালটা টেনে বললাম,,
“এটা,,এটা তোমার আঙ্কেল হয় বুঝছো বাবা।”
“হুম বুততি। নাম কি তোমার আনতেল?”
অনুভব ড্যাবড্যাব করে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিই বললাম,,
“তোমার আঙ্কেলের নাম অনুভব।”
“অনুতব। কতো বলো নাম!”
সিফাতের কথা শুনে হেঁসে উঠলাম। ভাবি বললো,,
“অনুভবের কি হয়েছে স্নিগ্ধা?”
“তেমন কিছু না ভাবি। জেদ করছে।”
“এখন কি করবে?”
“সেটাই ভাবছি।”
হঠাৎ করেই মাথায় একটা কথা আসাতেই অনুভবকে বললাম,,
“আপনি খেলবেন?”
অনুভবও উৎসাহ নিয়ে বললো,,
“হুম খেলবো। কিন্তু কি দিয়ে খেলবো?”
আমি সিফাতকে বললাম,,
“বাবু তুমি আঙ্কেলের সাথে খেলবা?”
“আনতেল বুজি এত বলো হয়ে আমাল সাথে খেলবে!”
“হুম খেলবে তো!”
“আনতেল তুমি আমাল সাথে খেলবে?”
অনুভব সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে বললো,,
“হুম হুম খেলবো।”
ভাবি অনুভবকে দেখে বললো,,,
“এটা তো পুরাই ছোট বাচ্চা গো স্নিগ্ধা!”
“হুম। ভাবি ২ জনের খেলনা দিয়ে ওদের একটু সামলাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“আচ্ছা যাও।”

আমি চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এ কেমন জিবন আমার? ভালোবেসে এত কাছে পেয়েও মানুষটা হারিয়ে ফেলেছি এখন যখন পেলাম তখন সে মানসিক ভাবে অসুস্থ,,ভাগ্যের কি অদ্ভুদ পরিহাস যে মানুষটা নিজের নামও ভুলে গেছে সে কি না শুধু তার স্নিগ্ধবতীর নাম টাই মনে রেখেছে। আচ্ছা এটাও কি সম্ভব? প্রকৃতির কি খুব দরকার ছিলো এত বড় শাস্তি দেওয়ার? অবশ্য আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন। হয়তো এই সাময়িক কষ্টের জন্য হলেও অনেক সত্যের মুখোমুখি হবো। হয়তো সত্য গুলো খুব কঠিন হবে তবুও তার মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত…….

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)
হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here