খড়কুটোর_বাসা #পর্বঃ১৩

0
747

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৩
#,Jhorna_Islam

তাছলিমা বানু ঘরে ঢুকেই ইমনের বউ লিমা কে ডাকতে থাকে।লিমা তখন খাটের উপর বসে বসে মোবাইলে তার বান্ধবীদের সাথে আলাপচারিতা করতে ব্যস্ত।

তাছলিমা বানুর ডাক শুনে খুবই বিরক্ত হয়।এই মহিলার জন্য একটু বসেও শান্তি পাওয়া যায় না।

একটু আরাম করে বসলেই ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আরে বাড়িতে কি শুধু লিমাই একমাত্র বউ নাকি? আরো তো আছে দিনা কে ডাক গিয়ে যত্তসব।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়ায় লিমা।এখন না গেলে আবার গোষ্ঠী উদ্ধার করা শুরু করবে।কবে যে এই মহিলার থেকে মুক্তি পাবে।

রুম থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করে,, কি হয়েছে আম্মা?

তাছলিমা বানু তখন বসার রুমে বসেছে।
এই দিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে আমার।

লিমা গিয়ে তাছলিমা বানুর পাশে দাঁড়ায়।

তোমাদের বিয়ের কতো বছর হলো?

লিমা চোখ মুখ কোঁচকায় শ্বাশুড়ির এমন কথা শুনে। হঠাৎ করে বিয়ের কতো বছর হলো তা কেনো জানতে চাইছে?

বিয়ের বয়স দিয়ে কি করবেন আম্মা?

যেটা জিজ্ঞেস করতেছি সেটার উত্তর দাও।পাল্টা প্রশ্ন করতে বলিনি।

জ্বি মানে সাড়ে চার বছর মনে হয়।

তো এতো বছর হয়ে গেছে। এখনো একটা সুখবর দিতে পারলানা।তোমাদের জন্য বাড়িতে এসে আমায় আছমা কথা শুনিয়ে গেলো। আজ আছমা শুনিয়ে গেছে কাল অন্য জন এসে শোনাবে।পরে পুরো গ্রামের লোক এসে শুনাবে।

পরের মেয়ের জন্য আমি কেনো কথা শুনবো?

লিমা কথা গুলো শুনে হাতগুলো শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাখে। এই কথা গুলো যেনো কানে বি’ষ ঢালার মতো লেগেছে।

লিমা আর ইমনের বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে হলেও ওদের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো।লিমার কিছু সমস্যার কারণে ও কখনো মা হতে পারবেনা জানতে পারে।ইমন কে সরাসরি না বললে ও অনেক ভাবে কথাটা বুঝাতে চেয়েছে কিন্তু সে বুঝেনি।তাই লিমা ও আর ঘাটায় নি। তাছলিমা বানু যে লিমার বাবার টাকা দেখে লিমা কে নিজের বউ করতে রাজি হয়েছে সেটা লিমা ভালো করেই জানে।

এই মহিলা বাচ্চা নিয়ে পরেছে এখন সে বাচ্চা কোথা থেকে এনে দিবে? এখন যদি জানতে পারে লিমা কখনো মা হতে পারবেনা তখন তো মনে হয় সব কিছু ধ্বংস করে দিবে।

লিমার ভাবনার মাঝেই তাছলিমা বানু বলে উঠে,, আজই ইমনের সাথে কথা বলবে।কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব আমাকে খুশির খবর দিবে।আমি খুব তারাতাড়ি সেই সংবাদ টা পেতে চাই।

মাথায় ঢুকেছে আমার কথা?

লিমা মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রুমের দিকে হাঁটা দেয়। ইমনের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। ইমন তো লিমা বলতে পা’গল।শুধু টাকা,পয়সার জন্য মায়ের কথায় সায় জানায়।

মা ছেলে সব গুলো টাকার লোভী। টাকা পেলে এদের আর কিছু লাগে না। দরকার পরলে ইমনকে নিজের বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিবে।পরে আলাদা হয়ে যাবে। এমনিতেই এই মহিলা এই বাড়িতে পা রাখার পর থেকে হুকুম চালিয়ে যাচ্ছে।

————————————–
।পরের দিন সকালে যুথি আর ইরহান নাস্তা করে যুথির দাদির থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে। যুথি অবশ্য তার দাদি কে সব খুলে বলেছে ঐ বাড়ির বিষয়ে।

সব শুনে সে কি কান্না তার।ইরহানের জন্য ইরহানের কথা ভেবে আহাজারি করে কান্না করেছে।ইরহান কে অবশ্য শুনায়নি।ছেলেটা তাহলে কষ্ট পাবে নিজেকে ছোট মনে হবে।

যুথির দাদি বলেছিলো এখানেই থেকে যেতে একেবারের জন্য। ঐ বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। যুথি তখন দাদি কে বুঝিয়েছে।

ইরহান একটা রিকশা ভাড়া করে নিয়ে আসে। যুথি কে নিয়ে একেবারে প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র, বাজার,সদাই করে নিয়ে বাড়িতে যাবে।

যুথি এই বাড়ি থেকে অনেক কিছু নিয়ে নেয়,,যেমন রান্না করার জন্য মাটির চুলা,থালা,বাসন দুইজনের জন্য। আরো নানান কিছু নেয়।যুথি জানে ইরহানের হাতে বেশি টাকা নেই।তাই শুধু শুধু যখন এই বাড়িতে এসব আছে তাহলে কিনবে কেন? আর এমনিতেও দাদি এসব যুথির জন্যই কিনেছে।

যুথি কে এতো কিছু রিকসায় তুলতে দেখে ইরহান বেশ অবাক হয়। যুথি এসব তুমি কি করছো? এসব কেন নিচ্ছো?

তো কি হয়েছে? এগুলো পরে আছে সব ঘরে।আর দাদি সব আমার জন্যই কিনেছে।

কি ভাববে মানুষ?

মানুষের ভাবনা দিয়ে আমার কি কাজ? চুপ থাকেন আপনি। বলেই সব কিছু রিকশায় তুলে রিকশায় উঠে বসে।

ইরহান আর কি বলবে, সেও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে বসে।

তারপর দাদির থেকে বিদায় নিয়ে দুজন ই বেরিয়ে পরে।

গ্রামের রাস্তা এতোটা ও ভালো না অনেক উঁচু নিচু জায়গা রয়েছে সেখানে গিয়ে রিকশা বারবার উপরে উঠছে তো একবার নিচে নামছে। যুথি কয়েকবার সামনের দিকে ঝুঁকে পরে ও নিজেকে সামলে নেয়।

এইবার একটু জোরেই ঝাঁকি মারে যার দরুন যুথি গিয়ে ইরহানের উপর পরে।

ইরহান জোরে হেসে দেয় তারপর যুথির কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে আরেকটু কাছে এনে জড়িয়ে ধরে।

বাহ্ আমার বউয়ের শরীরে কি জোর।সামান্য রিকশার ঝাঁকুনি তে তার নাজেহাল অবস্থা। এতোক্ষন আমাকে জড়িয়ে ধরলেই পারতা।

এতো সব মাথায় আসে এটা আসে না? যে পাশে আমার বর থাকতে আমি কেন ঝাঁকুনিতে হেলে দুলে পরবো।

এখন আমায় বলছেন? আপনিও তো ধরেন নি আমায়।

আমি তো দেখতেছিলাম তুমি কি করো!

হুহ দেখছে ঢং!

ছেলেরা কি ঢং করতে পারে নাকি?

অবশ্যই পারে।

বাদ দাও তোমার সাথে কথায় পারবো না।

বাজারে গিয়ে যুথি কে রিকশাতে বসিয়ে রেখেই ইরহান কেনা কাটা করতে যায়।যুথি যেতে চেয়েছিলো তবে ইরহান এতো মানুষের ভিড়ে নিয়ে যায়নি।

যুথি বলে দিয়েছে কি কি লাগবে সে অনুযায়ী সব কিনে ইরহান ফিরে আসে।

ইরহান এসে রিকশায় বসতেই যুথি প্রশ্ন করে একি জিনিস পত্র কোথায়? আপনি দেখি খালি হাতেই ফিরে আসলেন।

সব কেনা কাটা করে আরেকজনের হাতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এতো জিনিস পত্র এখানে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না তাই।আমাদের বাড়ির পাশেই ঐ রিকশা চালক কাকার বাড়ি।সমস্যা নেই পৌঁছে দিবে সব।

ওহ আচ্ছা।
👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র
তারপর আবার দুইজন বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এসে দেখে ঐ রিকশা চালক আগেই জিনিস পত্র নিয়ে বসে আছে গেইটের সামনে।

যুথি ঐ রিকশাতে অনেকগুলো টিন ও দেখতে পায়। তাই ইরহান কে যুথি জিজ্ঞেস করে,, এইই এতো টিন দিয়ে কি করবেন?

পরে বলছি তুমি যেগুলো পারো নিয়ে যাও।আর ভারি গুলো নিতে হবে না ঐগুলা আমিই নিতে পারবো।

সমস্যা নেই তো আমি একটা একটা করে নিতে পারবো।

চুপচাপ যা বলছি তা৷ করো।আমি থাকতে আমার বউ এসব করে তার শক্তি ক্ষয় করবো এটা আমি হতেই দিবো না। জমায় রাখো অন্য সময় কাজে লাগবে বলেই ইরহান চোখ টিপ মারে।

যুথি রিকশা চালকের দিকে একবার তাইকি তারপর ইরহানের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আস্তে করে অস’ভ্য বলে চলে যায়।

ইরহান সব কিছু নামিয়ে রিকশা চালকদের ভাড়া মিটিয়ে সব এক এক করে ঘরে নেয়। টিন গুলো দরজার সামনে রাখে।

এবার বলুনতো এই টিন দিয়ে কি করবেন?

কলপাড়ের চারপাশে বেড়া দিবো।টয়লেট টা ও বেশ পুরোনো টিন গুলো বদলাবো।

এতোদিকে আপনার ন’জর?

তো থাকবেনা।আমার রানীর সুবিধা অসুবিধা সবই তো দেখতে হবে।

আমি আপনাকে যত দেখি ততো মুগ্ধ হই জানেন?

আমায় এতো দেখো কেন যুথি রানী? যদি ন’জর লেগে কালো হয়ে যাই?

হবেন না তো।কাজল দেওয়া চোখ দিয়ে দেখি।আর নিজের জিনিসের উপর কি কেউ নিজে ন’জর দেয়?

এসব তো পরেও করতে পারতেন।এখন টাকা গুলো নষ্ট করেছেন শুধু শুধু।

বো’কা মেয়ে এটাই সবচেয়ে আগে জরুরি।
আমার বউ আমার ঘরের সম্মান। তার ভালো মন্দ তো আমাকেই দেখতে হবে নাকি?

#চলবে,,,,,,,,

সবাই লাইক কমেন্ট শেয়ার করবেন। পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে একটা রিভিউ দিয়ে আসবেন প্লিজ 👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র

গ্রুপঃ 👉👉গল্পগুচ্ছ সমগ্র (গল্প,গল্পের লিংক,রিভিউ, আলোচনা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here