ভদ্র_ছেলের_আজব_বউ পর্ব_০১+০২

0
2933

ভদ্র_ছেলের_আজব_বউ পর্ব_০১+০২
#জান্নাতুল_মাওয়া

.
বাসর ঘরে ইরা বসে আছে…. তার হবু বরের অপেক্ষায়। আর হাত পা ছড়াছড়ি করছে বিরক্ত হয়ে। ইরা খুবই চঞ্চল একটা মেয়ে। সে এতটাই চঞ্চল যে বাচ্চামি ভাবটা তার মধ্যে এখনো আছে। এইরকম চঞ্চল একটা মেয়ের পক্ষে বাসর ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার ফল কেমন হয় তা হয়তো কেউ আন্দাজ করতে পারছেন।
-সেই কখন থেকে বিছানায় বসে আছি এখনো মি. এর আসার খবর নাই। ওপপ আর শয়তান মহিলা গুলো বলে গেলো কি তার জামাই আসার আগে যেনো সে বিছানায় চুপ করে বসে থাকে। আহহা চারদিকে কত্ত সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো একটা সেলপি তো নেওয়াই যায়। আর পারবোনা বসে থাকতে আমি হুহ। এই রে ফোনটা তো আনিনাই। এখন কি হবে? .
.
ইরা বিছানা থেকে নেমে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও আছে কি না? বিছানায় চোখ যেতেই দেখে বিছানায় একটা ফোন। ফোনটা হাতে নিয়ে….
-কার ফোন রে এটা? ধুর এত ভাবার কি? ইরা তোর সেলপি তোলতে মন চাইচে সেলপি তোল না। এত কথা কেন বলতে আছোত? আমার লাগেজটা কোথায়? ইরার নজর ড্রেসিন টেবিলের ওপর যেতেই দেখে বিভিন্ন কালারের চশমা।
.
-ওয়াও কত্ত সুন্দর কিউট কিউট চশমা। একদম আমার মতো।
ইরা সব গুলো চশমা নিয়ে বিছানায় বসে যায়। একটা একটা করে চশমা চোখে দেয় আর বিভিন্ন পোজে সেলপি তোলে পাশে রেখে দেয়। এই ভাবে সব গুলো দিয়ে সেলপি তোলে।
.
এরপর গেলারিতে ডুকতেই….
-কত দিন গান শুনিনা। আম্মু অনেক পঁচা। এই দুদিনে আমাকে একটু গান শুনতে দেয় না। ফোনটাই তো ধরতে দেয়না। বলে কিনা ইরা এখন ফোন ধরিস না। লোকে খারাপ বলবে হুহ।
.
ইরা হ্যাডফোন কানে দিয়ে গান প্ল্যা করে শুনতে থাকে।
.
রেহান একটা কাজের পর আরেকটা কাজে ব্যাস্ত হয়ে থাকে।
বুশরা সেই কখন থেকে রেহানকে দেখছে এই কাজ সেই কাজের বাহানায় ব্যাস্ত হয়ে আছে। বিয়ের দিন তার বউর যেই গুন কির্তন শুনেছে তারপর আর কার ইচ্ছা হবে বাসর ঘরে ঢুকে লাইভ বউ এর এসব দেখার। তবু যেতেতো হবে। এটলিষ্ট বাসর ঘর স্পেশাল রাত বলে কথা। বলেই বুশরা বাকা হাসি দিয়ে রেহানের কাছে যায়।
.
বুশরা রেহানের কাছে গিয়ে..
-ভাইয়া অনেক কাজ করেছিশ এইবার যা রুমে যা।
-এইতো যাচ্ছি।
-জ্বী না আমার কাছে এই সব বাহানা চলবেনা। যা তারাতারি। ভাবি অপেক্ষা করছে।
.
রেহান বাধ্য হয়ে রুমে যায়।
.
রুমে যেতেই অবাক হয়ে গেলো।
-এটা কি? আমি কি চোখে ভুল দেখছি?
রেহান হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে আবার চোখ খুলে।
.
ইরা সেটা লক্ষ্য করে কান থেকে হ্যাডফোন খুলে চশমা নিয়ে বিছানা থেকে নেমে রেহানের সামনে এসে দাড়ায়। একটার পর একটা চশমা রেহানের চোখে লাগায় আর খুলে।
.
-এইই কি করছো?
-তুই যেভাবে চোখ কচলাইছত আমার মনে হয় তোর চোখে প্রবলেম আছে। তাই চশমা পড়াচ্ছি। বাট একটাও তো তোর ফেইসের সাথে স্যোট করছেনা।
-আমার চোখে প্রবলেম নাই ওকে।
-চুপ চাপ দাড়াতো একটু।
-সরাও এসব।
-ওপপ জামাই বিরক্ত করিস না তো। ভালোভাবে কাজ করতে দে।
-এইটা তোমার কাজ?
-কেন, তুই জানতি না।
-না যাও এগুলা যেখানে ছিলো সেখানে রেখে দাও।
-চুপ।
.
ইরা একটা নীল চশমা নিয়ে রেহানের চোখে পড়িয়ে দিয়ে…
-জামাই তোকে না একদম সেই লাগছে। ক্রাস ওম্মাহ। এইটা খুলে ফেল তা না হলে বাইরের শয়তান মাইয়া গুলা তোকে নিয়ে টানা টানি শুরু তখন।
-তখন কি হবে?
-আমি গিয়ে ঢিসুম ঢাসুম মেরে তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
-এএএ….
-জামাই তোর কি হলো আবার? হা করে আছিস কেনো?
-লিসেন, আমার আবার কি হবে?
-হলে ভালো হতো তাইনা?
-কি?
-তোর অসুখ হলে তোকে আমি হাসপাতাল নিয়ে যেতাম। তোর পাশে বসে তোকে এত্ত এত্ত সেবা করতাম। তখন ডাক্তাররা কি বলতো জানিস?
-কি বলতো?
-আরে হাদারাম এটাও জানিসনা ডাক্তার এসে বলতো তুই অনেক লাকি আমার মতো একটা বউ পেয়ে।
-আসলেই আমি অনেক লাকি তোমার মতো বউ পেয়ে।
মনে হয় আর কারো কপালে জুটেনি। আর দোয়াও করি যেন না জুটে।
-তুই সত্যি লাকি?
-ইরার দিকে কিছুটা ঝুকে… এই আমি তোমার কি যেনো লাগি?
-কেনো জামাই।
-তাহলে তুই করে বলাটা বন্ধ করো। জামাইকে কেউ তুই করে বলে না।
– আমি বলবো তোর কোন সমস্যা।
– অবশ্যই অনেক সমস্যা।
-এ্যএ্যা তুই একটু ভালোনা।
-ওপপ।
.
-জামাই তোর মা বাবা কোথায়?
-নাই।
-থাক জামাই চিন্তা করিচ না। আজ থাইকা আমি তোর মা বাবা।
-কিহ?
চলবে……..

#ভদ্র_ছেলের_আজব_বউ
#জান্নাতুল_মাওয়া
#পর্ব_০২
.
-থাক জামাই চিন্তা করিসনা আজ থাইকা আমি তোর মা বাবা।
-কিহ?
-এই ভাবে চিৎকার দেস কেন জামাই?
-ও আল্লাহ এ কেমন বউ? রক্ষা করো গো খোদা আমায়।
-জামাই গো তোর আবার কি হলো?
-তারাতারি শুতে যাও। আর পাঁচ মিনিট যদি আমি তোমার সাথে কথা বলি তাহলে পাগল হয়ে যাবো। তখন আমাকে এত সুন্দর বাড়ি রেখে পাগলা গারদে থাকতে হবে।
-জামাই তোর সাথে আমাকে নিবি?
-কোথায়?
-পাগলা গারদে।
-ওপপপ আমি আর ধৈর্য ধরে থাকতে পাড়ছিনা। ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে,,,
দাঁতে দাঁত চেপে রেহান নিজেকে কনট্রোল করার চেষ্টা করে।
কিছুক্ষণ পর শান্ত স্বরে ইরাকে বলে,,
– যাও ঘুমাতে যাও।
ইরা কিছু একটা বলতে গেলেই ইরাকে হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,,
– আর একটা কথাও শোনতে চাচ্ছি না আমি তোমার থেকে। এখনি আমার সামনে থেকে সড়ে যাও। আর শোনো তুই তুকারি করে আমাকে বলবেনা।
– বলবো একশ বার বলবো হাজার বার বলবো।
রেহান ভ্রু কুঁচকে ইরার দিকে তাকায়। ইরা মুখ ভেঙছি কেটে চলে যেতে নিলেই আবার কি মনে করে রেহানের দিকে আসে। রেহানের চোখে হাতের সানগ্লাসটা পড়িয়ে দিয়ে,,
– ওয়াও ড্যাশিং লাগছে। এটা পড়ে বাহিরে যাবি না বুঝছিস।
রেহান চোখ থেকে সানগ্লাসটা খোলে মেঝেতে ফেলে দেয়।
– ডিসগাস্টিং। রেহান বারান্দায় চলে যায় মুভ অন করতে। পান্জাবীর পকেট থেকে একটা বক্স খুলে দেখে। আংটি। রেহানের সাথে ইরার যেদিন বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেদিনই কিনেছিল এটা বাসর রাতে ইরাকে গিফ্ট করার জন্য। কিন্তু এখন তার সেই মুডটা আর নেই। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিলো বক্সটা। তারপর বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখে ইরা ঘুমিয়ে গেছে। রেহান চেইন্জ করে সেও ইরার পাশে শুয়ে পড়ে।
.
.
সকালে ইরার ঘুম ভাঙ্গতে দরজা খুলে বের হয়ে যায়। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছে। সারা বাড়ি মানুষ গিজগিজ করছে। কিছু কিছু মানুষ ঘুম থেকে ওঠে গেছে আর কেউ এখনো ঘুমে। তবু মেঝে খাট এখানে সেখানে যে যেভাবে পারছে ঘুমাচ্ছে। কারো পা কারো মাথার কাছে কিংবা শরীরের ওপর। ইরা এসব দেখছে আর হেসেই যাচ্ছে।
.
ইরা হাটতে হাটতে কারো সাথ ধাক্কা খায়।
-ও মা গো, কে রে এটা?
-আমি… আমি স্যরি।
-চোখ কি পকেটে ডুকাইয়া হাটস হুম?
-ভাবী রাগ করছো কেনো? আমি তো স্যরি বললাম।
-তুই কে রে? আমার জামাইর বাড়িতে কেন আসছত?
-ভাবী আমি তোমার ননদ বুশরা। এখানে থাকবো না তো কোথায় থাকবো। আমার তো বিয়েও হয় নি।
-আচ্ছা ননদ বুশরা! তোদের কেন ননদ বলা হয়?
-ওমম কিছুক্ষণ ভেবে…. জানিনা তো।
-ছি ছি.. তুই কেমন? তোকে আমি আর ননদ বলবো না।
.
ইরার কথা বুশরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই বিয়ের দিনের কথা মনে পড়ে যায়।
বিয়েটা কি ভাবে যে হলো আল্লাহ জানে?
– আচ্ছা বলা লাগবে না। আমায় বুশরা বলেই ঢেকো কেমন। তো তুমি এখনো এই অবস্থায় কেনো।
-আমি যাই এগুলা চেইন্জ করতে।
.
ইরা চলে গেলে রেহান বুশরার সামনে এসে দাড়ায়।
-কি রে কি ভাবছিস?
-ভাবছি তুই কিভাবে ভাবীকে সামলাবি?
-কেনো বলতো?
আর কাল কি এমন হলো যে কাজী কোন রকম বিয়ে পড়িয়ে ভাগছে।
-শুনবি?
-হুম।
-তাইলে শোন।
.
আমি আর ভাবীর বোন ফারিহা দুজনে মিলে ভাবীকে সাজাচ্ছি। সাজাচ্ছি তো ওই দিক দিয়ে ভাবি সব লন্ডভন্ড করছে। আমরা চুল বেধে চুড়ি পড়াতে পড়াতে চোল গুলো খুলে ফেলে।
-ভাবী কি করছ?
-সর এখান থেকে। আমার এত্ত সুন্দর চুল বাধিস কেনো? আমার চুল বাধতে ভালো লাগে না মাথা ব্যাথা করে।
-আপু না বাধলে কিভাবে হবে আজ যে তোমার বিয়ে।
-না আমি বাধবো না।
-ঠিকাছে বাধতে হবে না। তোমাকে একটু সাজিয়ে দেই।
-না আমি সাজবোনা।
.
-পরে ভাবী মা এসে ধমক দিয়ে চুপ করায়। তারপর আমরা কোন রকম সাজিয়েছি। আমি তো এটাই ভাবছি আন্টি পার্লারের লোকদের বুক না করে অনেক ভালো করেছে।
পরে ভাবী যদি বাহিরে পাগলামী করে তাই কাজী সাহেবকে ভিতরে নিয়ে আসা হয়। একটু পর কাজী এসে ভাবীকে কবুল বলতে বলে।
-না আমি বলবো না।
-ভাবী কি বলছো এটা?..(.একটু ভয় পেয়ে)
-আমি বলবোনা।
-ইরা মা বল।
.
ইরা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদত বলে…
-আম্মু আমি এই বুড়াকে বিয়ে করবো না।
.
ইরার কথা শুনে সবাই জড় বস্তুর মতো দাড়িয়ে আছে। হাসবেনা কাঁদবে এই ভাবনা টাই সবার মাঝে বিরাজ করছে।
.
কাজী সাহেব কিছুক্ষণ ইরার দিকে তাকিয়ে থেকে নিরবতা ভেঙ্গে….
-আমি তো এখানে তোমার আর রেহান বাবাজির বিয়ে পড়াতে আসছি মা।
-মা ওনাকে কেন বিয়ে করবি তুই? ওনি তো তোদের বিয়ে পড়াতে আসছে।
-মিথ্যা বলছো তুমি।
-একটু না যা এইবার লক্ষি মেয়ের মতো বসে পড়। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান এইবার।
.
.
.
-এরপর…?
-এরপর আবার কি? তোদের বিয়ে হয়ে গেলো।
-আমাকে একটু ধরিস আমি স্ট্রোক করি….
-রুমে গিয়া স্ট্রোক করিছ। এখন এসব মাথা থেকে মুছে পেল।
.
-জামাই ও জামাই…
.
-যা ডাক পরে গেছে তোর।
-যাবো না আমি।
-না গেলে কিন্তু আবার রেগে যাবে।
.
রেহান অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বুশরার দিকে তাকায়।
-যা ভাইয়া।
.
রেহান রুমে গিয়ে ইরার ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নেয়। ইরা রেহানের একটা টি শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পড়ে আছে। যা দেখে রেহানের চক্ষু চড়ক গাছ।
-কেমন লাগছে আমাকে জামাই?
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here