ভুবন_বিলাসী part 2
লেখিকাঃসীমা
সাদিয়াঃভালো এই দেখ তোর জিজু।
আলিয়া সাদিয়ার হবু বরকে দেখে অবাক হয়ে যায়।কাজল আর পিয়াও অবাক হয়ে যায়।
আলিয়ার সামনে দাড়ানো মানুষটিকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছে না।
,
আলিয়াঃঅাদি?
আদিও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ও ভাবতে পারেনি আলিয়া সাদিয়ার বোন হবে।
সাদিয়াঃআলিয়া ও আদি তোর জিজু আর আদি আমার মেহরাব চাচার মেয়ে আলিয়া।
আলিয়াঃহ্যালো জিজু।(কষ্ট চেপে রেখে)
আদিঃহ্যালো আলিয়া।
আলিয়াঃদাদি আমার কিছু ভালো লাগছে না আমি রুমে গেলাম।
দাদিঃদাদুভাই শোন আলিয়া।
আলিয়া ওর রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।কাজল আর পিয়া আলিয়ার পিছনে পিছনে যায়।
দাদিঃহঠাৎ আলিয়ার কি হল? বউমা মেহরাবকে ফোন করে দেশে আসতে বলো।সায়ান আর আবিরকে ফোন করে আসতে বলো।
আলিয়ার মাঃএখনি করছি মা।
,
আলিয়ার মা আলিয়ার বাবাকে ফোন করে।
আলিয়ার বাবাঃওহ নিতু তোমাকে কত বলব আমি মিটিং থাকলে ফোন দিবে না।
আলিয়ার মাঃমা তোমাকে দেশে আসতে বলেছে তাড়াতাড়ি আর আলিয়ার যে কি হল না খেয়ে রুমে চলে গেলো।
আলিয়ার বাবাঃকিইইই তোমরা আমার মেয়েকে বকেছো নিশ্চয় আমি দেশে আসছি আজ রাতের ফ্লাইটে।
আদিঃআলিয়া খায়নি পরে খাবে এত চিন্তার কি আছে?
সাদিয়াঃকি বলছো?আলিয়াকে একটা পিঁপড়া কামড় দিলে বাড়ির সবাই সব বড় বড় ডাক্তার এনে হাজির করে আর সেখানে ও ক্ষুধার কথা বলে খেলো না বলো কত বড় ব্যাপার?আমি আলিয়ার কাছে যাচ্ছি।
চাচ্চুঃমা আমরা সবাই আলিয়ার কাছে যাই চলো।
,
আলিয়াকে শান্ত করার জন্য কাজল আর পিয়া অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।আলিয়া রেগে রুমে একটার পর একটা জিনিস ভাঙ্গতে লাগে।সবাই এসে আলিয়ার এ ব্যবহারে অবাক হয়।আদিও পিছনে এসে দাড়ায়।
দাদিঃদাদুভাই শান্ত হয় কি হয়েছে?
আদিঃকত জিনিস ভাঙ্গল?
সাদিয়াঃচুপ করো দরকার হলে পুরো বাড়ি ভাঙ্গবে তাতে তোমার কি?
আদি ধমক খেয়ে চুপ করে থাকে।আলিয়ার হাত কেটে যায় কাঁচ দিয়ে এবার চাচ্চু গিয়ে আলিয়াকে চেপে ধরে।
চাচ্চুঃমামনি অনেক হয়েছে তোর হাত কেটে চল ব্যান্ডেজ করে দেই পরে আবার ভাঙ্গিও।
আলিয়া শান্ত হয়ে বসলে আলিয়ার চাচী এনে হাতে ব্যান্ডেজ করে।আলিয়া আদির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।আদি নিচু মাথা করে দাড়িয়ে আছে অপরাধীর মত।সাদিয়া সায়ান আর আবিরকে ফোন করে।আলিয়ার মা আলিয়ার বাবাকে ফোন করে আর আলিয়ার দাদী ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলে।
চাচিঃআলিয়া মা কি হয়েছে তোর? মা বল?
আলিয়া শুধু রাগে কাঁপছে।
দাদিঃদাদুভাই চল খাবে তোমায় জন্য আমরাও খাইনি।
আদিঃদাদি আমার ক্ষুধা লেগেছে চলেন।
দাদিঃসখিনা আদিকে খেতে দাও।
আদিঃনা দাদি আপনি চলেন আলিয়া পরে খাবে।
দাদিঃআদিইইই আলিয়াকে না খাইয়ে রাখতে চাও তুমি?
আদিঃনা মানে ঐ
আলিয়াঃচলো দাদি টেবিলে।
,
আলিয়াঃআদি বজ্জাতের কাদি চোখে মুখে তোর চুন কালি পরে তোকে দেখে নিবো।(মনে মনে)???
সবাই টেবিলে আসে খেতে।দাদি আলিয়ার পাতে সব বেশি করে দেয়।
আলিয়াঃদাদি প্লিজ আমাকে খাইয়ে দাও।
আলিয়ার দাদি খাইয়ে দেয়।খেতে খেতে হঠাৎ কেউ ডোরবেল বাজায়।সখিনা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।একটা ছেলে ডক্টরের সাথে আসে। ডক্টর এসে আলিয়ার দাদিকে সালাম করে।
দাদিঃআলিয়া এই তোর রায়হান আঙ্কেল তোর বাবার বন্ধু।রায়হান ও কে?
রায়হানঃআমার ছেলে মা রেদোওয়ান চৌধুরী আয়ান আমি আজ দেশের বাইরে যাচ্ছি কনফারেন্সের জন্য তাই বিয়েতে থাকতে পারব না।আয়ান থাকবে
দাদিঃএটা কিন্তু ভালো কথা না রায়হান?তুই থাকবি না বিয়েতে
আয়ানের বাবাঃমা জানো তো এই কনফারেন্সে যাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আলিয়াঃচাশমিশ আপনার ফোন আমার কাছে আছে।
আলিয়া দৌড়ে রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে এসে আয়ানের হাতে দেয়।
আয়ানঃআপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানেন না এই ফোন আমি কোথায় না কোথায় খুজেছি?
আলিয়াঃএ তো সাধারণ একটা ফোন?
আয়ানঃএটাতে আমার মায়ের পিক আছে(ইমোশনাল হয়ে)
আলিয়াঃওনি আসেন নি?
দাদিঃওর মা বেচে নেই তুই ওকে চিনলি কেমন করে?
আলিয়া সব বলে।
আদি দেখছে আর জ্বলছে।আলিয়া আদিকে দেখানোর জন্য আয়ানের সাথে বেশি করে কথা বলে।
আলিয়াঃসরি আয়ান।
আয়ানঃইটস ওকে।
আয়ানের বাবাঃকার হাত কেটে গেছে?
চাচিঃআলিয়ার
আলিয়াঃতেমন কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।
আয়ানের বাবাঃনা তা তো হবে না আমি তোমাকে মেডিসিন দিচ্ছি আর ইনজেকশন দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আলিয়া ভয়ে কাপতে থাকে ইনজেকশন ছোটবেলা থেকে ভয় পায়।সায়ান বা আবির নেই যে আলিয়াকে ধরে রাখবে।আলিয়া পুরো বাড়িতে দৌড়াতে থাকে।আলিয়ার চাচ্চু ধরে থাকে আলিয়াকে আর আয়ানকেও ধরতে বলে।দুজনে চেপে ধরে রাখে।
আলিয়ার মা আর চাচিঃভাই আস্তে দিবেন যেন না লাগে।
আয়ানঃআলিয়া তুমি যেহেতু আমার ছোট তাই তুমি করে বলছি তুমি এবার কিসে পড়?
আলিয়াঃঅনার্স প্রথম বর্ষে।
আয়ানঃতোমাকে দেখে মনে হয়না পিচ্চি একটা।??
আলিয়াঃআমি মোটেও পিচ্চি না…..??
আয়ানঃইনজেকশন দেওয়া শেষ।??
আলিয়াঃকখন দিলো???
আদিঃতুমি যখন গল্প করতে ব্যস্ত।
আলিয়াঃআয়ান ভাইয়া চলুন আমি আপনাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাই।
আয়ানঃনিজের হবু বরকে ভাইয়া বলে???(মনে মনে)
আয়ানের মুখের অবস্থা দেখে সবাই হেসে দেয়।আলিয়া শুধু জানে না তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।সায়ান আর আবির এসে আলিয়াকে জরিয়ে ধরে।
সায়ানঃতুই ঠিক আছিস তো?হাত কিভাবে কাটলো?
আবিরঃআলিয়া তুই এত কেয়ারলেস কেনো???
আলিয়াঃদাদিইইইই???
দাদিঃতোরা কেউ আমার দাদুভাইকে বকবি না।না দাদুভাই কাঁদে না।
আলিয়াঃপঁচা ডিম, বাসি খাবার,গন্ডার,মহিষ,এনাকোন্ডা,টিকটিকি তেলাপোকা,
সায়ানঃবোন তোর কাছে মাফ চাই এসব বকা বন্ধ কর।
আলিয়াঃ??????
আয়ানঃআলিয়া চলো ঘুরতে যাই তবে গ্রামে।
আলিয়া আদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে আয়ানের হাত ধরে।
আলিয়াঃচলুন কাজল পিয়া তোরাও আয়।
কাজল আর পিয়াঃ???
আয়ানঃসাদিয়া আপু তোমরা চলো।
আদি মুখটা পেচার মত করে।সবাই গ্রাম ঘুরতে বের হয়।গ্রামে সুন্দর ক্ষেত দেখে আলিয়া মুগ্ধ হয়।গ্রামের বধুরা কলসিতে করে পানি নিয়ে যাচ্ছে।আলিয়া তা দেখে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপে।ছোটো ছোটো পাথর তুলে ছুড়ে মারে কলসি লক্ষ করে কলসিতে লেগে কলসি ফুটো হয় না।
আয়ানঃআলিয়া ওগুলো মাটির কলস না স্টিলের???
আলিয়া কাঁচুমাচু করে।
সাদিয়াঃনৌকায় চড়ব চলো।
আলিয়াঃনাআআআআআ
কাজলঃকি হলো তোর আবার???
পিয়াঃগরুর মত চিল্লানো বন্ধ কর।
আলিয়াঃতোদেরকে বটগাছের সাথে বেধে রাখব শাঁকচুন্নির দল।??
কাজল আর পিয়াঃ???
আয়ানঃআমি আছি কিছু হবে না তোমার।
,
আলিয়ার হাত ধরে আয়ান নৌকায় তোলে।
আয়ানঃএরপর তোমাকে কাশফুল তুলে দিবো খুব পছন্দ করো না।
আলিয়াঃকিভাবে জানলেন?
আয়ানঃআমরা ছোটবেলায় একসাথে খেলতাম একদিন আমাকে পড়াশুনার জন্য দেশের বাইরে যেতে হল তারপর আর দেখিনি তোমাকে তাই চিনতে পারি নি।
আলিয়াঃআমার মনে নেই
হঠাৎ নৌকা দুলতে থাকলে আলিয়া ভয় পায়।আয়ান আলিয়াকে নিজের বুকে টেনে নেয়।আলিয়া আয়ানের বুকে অনেকটা শান্তি অনুভব করে।আয়ানও চুপ করে থাকে।
আয়ানঃআমি থাকতে তোমার কিছুই হবে না আলিয়া।(মনে মনে)
আদি আয়ান আর আলিয়াকে দেখে রেগে যায়।আদি নৌকা দোলাতে থাকে।আয়ান আর আলিয়া নৌকার এক কোণে থাকায় নদীতে পরে যায়।
কাজলঃআয়ান ভাইয়া আলিয়াকে বাঁচান ও সাঁতার জানে না।
আলিয়া পানিতে হাবুডুবু খায়।
চলবে