#চৈত্রের_বিকেল
#পর্ব_৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার পর চৈত্রী ভীষণ ক্ষেপে ছিল। রুহানিয়া কোনোভাবেই ওর রাগ ভাঙাতে পারেনি। হঠাৎ করেই কাব্য যেন তার দু’চোখের বি’ষ হয়ে উঠেছে। বি’ষে’র এই প্রতিক্রিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তেও থাকে। চৈত্রী যত চেষ্টা করছিল কাব্যকে তার থেকে দূরে সরানোর; ততই কাব্য যেন এগিয়ে আসছিল কাছে। জিহাদের মাধ্যমে সে চৈত্রীর ফোন নাম্বারও জোগার করে ফেলেছে। যখন তখন কল, ম্যাসেজ করতেই থাকত। চৈত্রী মাঝে মাঝে এটাই ভেবে পায় না, একটা মানুষ এতটা আজাইরা হয় কীভাবে? অথচ মানুষটা কিন্তু চাকরীও করে। আসল কথা হলো, পছন্দের মানুষটিকে কী করে ট্রিট করতে হয়, কীভাবে সময় দিতে হয় সেটা ব্যস্ততা কিংবা কাজের ওপর নয়; বরঞ্চ নিজের ইচ্ছেশক্তির ওপর নির্ভর করে।
শুধু যে কাব্য-চৈত্রীর হাওয়া বদল হচ্ছিল তাই নয়, জিহাদ-রুহানিয়ার মাঝেও হাওয়ার বদল ঘটেছে ব্যাপক। জিহাদের সঙ্গ পেয়ে রুহানিয়া অনেকটাই মুভ অন করে ফেলেছে। সে বাড়িতে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখানে থেকেই চাকরী করবে। ওর সিদ্ধান্তে কেউ যদি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে থাকে তাহলে সে হচ্ছে জিহাদ।
কাব্য অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে মিনিট পনেরো হবে। ওর কিছুক্ষণ পর জিহাদ আসে। শুভ্র এখন পুতুলকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকে। তিতাস এখনো ফেরেনি। আগে চার
বন্ধু একসাথে ব্যাচেলর থাকত।
কাব্য ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ে। পাশে এসে বসে জিহাদ। পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
‘কী করিস?’
‘আমি কী করি তা দিয়ে তোর কাজ কী? অফিস থেকে এসেছিস, আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’
জিহাদ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,’নিশ্চয়ই চৈত্রীকে বিরক্ত করবি এখন?’
কাব্য উঠে বসে। ক্ষেপে গিয়ে বলে,’এই শালা! বিরক্ত কেন বলছিস? আমি ও-কে বিরক্ত করি নাকি?’
‘তোর কল বা ম্যাসেজে ও তো বিরক্ত হয়।’
‘এটাকে বিরক্ত বলে না। ভালোবাসার প্রথম ধাপ বলে। এখন আমার এসব পাগলামি ওর ভালো লাগছে না। যখন ও নিজেও ভালোবেসে ফেলবে তখন দেখবি এসব পাগলামি দেখার জন্যই মুখিয়ে থাকবে।’
‘তাই? ও তোকে ভালোবাসবে এতটা শিওর কীভাবে হলি তুই?’
‘আলবৎ ভালোবাসবে! এতটা ভালোবাসা ইগনোর করা কোনো মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয় বুঝলি?’
‘হুম বুঝলাম। এখন আমার কথা শোন।’
কাব্য তখন চৈত্রীকে কল দিচ্ছিল। ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি রেখেই বলল,’কী কথা?’
‘আমি তো নিজেই ফেঁসে বসে আছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক তো আর তোদের মতো সাপে-নেউলের মতো না। তাই চাইলেও তোর মতো করে পাগলামির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে পারি না।’
কাব্য মাথা নাড়িয়ে হেসে হেসে বলল,’রুহানিয়া আপুর প্রেমে পড়েছিস তাই না হু?’
জিহাদ মাথা চুলকে বলে,’বুঝিসই তো!’
কাব্য আর তখন চৈত্রীকে কল করল না। ফোন বিছানার ওপর রেখে বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘তাহলে আর চিন্তা কীসের? শুভ কাজটা সেরে ফেল।’
‘শুভ কাজ সেরে ফেলব মানে?’
‘মানে বিয়ে করবি। আপত্তি আছে নাকি তোর?’
‘আমার কেন আপত্তি থাকবে? ভয় তো রুহানিয়াকে নিয়ে। ও যদি না মানে? আমায় ভুল বোঝে?’
‘এখানে তো আমি ভুল বুঝাবুঝির কিছু দেখছি না। কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায় নাকি? আর শোন, তুই ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিবি।’
‘বিয়ের প্রস্তাব দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ভয় হচ্ছে, যদি রিজেক্ট করে দেয়? আর কথা না বলে?’
‘তোদের মাঝে এখন সম্পর্কটা কী রকম?’
‘বন্ধুর মতো।’
‘তাহলে আর এত চাপ না নিয়ে বলে ফেল।’
‘সত্যিই?’
‘হ্যাঁ। যত ভাববি তত বেশি কনফিউশনে পড়ে যাবি। মনের কথা জানিয়ে দেওয়াই ভালো। এরপর যদি সে রাজি হয় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্। আর যদি রাজি না হয়, তবুও হাল ছাড়বি না।’
কাব্যর শেষ কথা শুনে জিহাদ হাসল। হেসে বলল,’ঠিক আছে।’
জিহাদ গোসলে যাওয়ার পর কাব্য বারান্দায় গিয়ে চৈত্রীকে কল করে। চৈত্রী তখন পড়ছিল। এই মাস থেকেই তার কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছে। পড়তে তার খুব একটা ভালো না লাগলেও নতুন বই নিয়ে বসে থাকতে ভীষণ ভালো লাগে। ফোনের স্ক্রিনে কাব্যর নাম্বার দেখে মেজাজ চটে যায় চৈত্রীর। এর আগেও সে দুটো নাম্বার ব্লাকলিস্টে ফেলেছে। মনে হচ্ছে এটাও ফেলতে হবে। সে কতক্ষণ ফোনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করল। ওপাশ থেকে কাব্য বলল,
‘চৈত্রর প্রখর রোদে শেষ হয়ে গেলাম।’
ভ্রুঁ কুঁচকে যায় চৈত্রীর। সে গম্ভীর হয়ে বলে,’এখন চৈত্র মাস নয়!’
‘আমি কখন মাসের কথা বললাম? আমি তো বললাম মানুষের কথা।’
‘বুঝিনি।’
‘সহজ বাক্য। তোমার কথা বলেছি।’
‘আমি চৈত্র নই; চৈত্রী! কতবার বলব এক কথা?’
‘তুমি শুধু আমার চৈত্র; এই কথা তোমায় কতবার বলব?’
‘আপনি না চাকরিজীবী মানুষ? ফোন করার জন্য এত ফা’ল’তু সময় কোথায় পান?’
‘কী যে বলো না চৈত্র! এটাকে বলে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তুমি সবসময় এমন বিরক্ত হয়ে কথা বলো কেন?’
‘কারণ আপনাকে আমার বিরক্ত লাগে।’
‘কিন্তু আমি তো তোমাকে বিরক্ত করি না।’
‘অবশ্যই বিরক্ত করেন।’
‘তাই নাকি? তাহলে বাসায় আমার কথা কেন বলো না? একটা ছেলে তোমায় প্রতিনিয়ত বিরক্ত করে যাচ্ছে। আর তুমিও সেটা নিরবে সহ্য করে যাচ্ছ। এর মানে কী? সামথিং সামথিং?’
‘নাথিং নাথিং! আপনি শুভ্র ভাইয়ার বন্ধু তাই সহ্য করতেছি। কারণ আমি চাই না, আপনাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক।’
‘তাহলে আর একটা উপকার করো।’
‘কীসের উপকার?’
‘বন্ধুত্বটা আরেকটু জোড়ালো করে দাও।’
‘আমি? কীভাবে?’
‘তুমি আর রুহানিয়া আপু।’
‘ঢং না করে ক্লিয়ার করে বলেন।’
‘আমার বন্ধু জিহাদ তোমার আপুকে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না। সম্ভবত আজ নয়তো কালকের মধ্যে বলে দেবে। তার আগে তোমার কাছে অনুরোধ, জিহাদের আগেই এই কথাটি তুমি রুহানিয়া আপুকে বোলো না। এখন আসি তোমার টপিকে। তুমি এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ, আমি কী রকম হাবুডুবু খাচ্ছি। নদীর পানিতে সাঁতার জানলেও, প্রেমের পানিতে সাঁতার কাটা আমার কাম্য নয়। তাই আমায় বিয়ে করে পাড়ে তুললে খুব-ই উপকৃত হতাম। এতে আমিও বেঁচে যাই, আর শুভ্রর সাথে বন্ধুত্বও গাঢ় হবে আরও। প্রস্তাবটা কেমন লাগল?’
‘জঘন্য!’
‘আমি এত সুন্দর প্রস্তাব দিলাম। আর তুমি এক কথাতেই উত্তর দিয়ে দিলে? তাও কিনা বললে জঘন্য!’
‘আপনার কি বকবক করা শেষ? আমি ফোন রাখব।’
‘তোমার সাথে কথা বললে আমার বকবকানি আজীবনও শেষ হবে না। এখন বলো, জিহাদের সাথে কি আমিও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেবো?’
‘কচু খেয়ে ম’রে’ন আপনি।’ বলেই ফোন কেটে দেয় চৈত্রী।
কাব্য শব্দ করে হাসে। আর ফোন না দিয়ে ম্যাসেজ পাঠায়,’মুরগি আদর করেছ, কচুও খাইয়েছ। এবার তোমার বাড়িতে জামাই আদরের ব্যবস্থাটা করে দাও।’
চৈত্রী ম্যাসেজটি পড়ে স্বগতোক্তি করে বলল,’ত্যাঁদড়!’
________
সময় বিকেল পাঁচটা। সূর্য প্রায় ডুবো ডুবো ভাব। মুখোমুখি বসে আছে জিহাদ আর রুহানিয়া। জিহাদ অফিস থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টে এসেছে। ঘামে ভেজা শার্ট। কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলোও ঘামে ভিজে চুপসে গেছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিহাদকে পর্যবেক্ষণ করছিল রুহাহিয়া। কেননা জিহাদের মাঝে আজ ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে সে। কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে রয়েছে। কাচুমুচু ভাব। নিজেকে সামলে নেওয়ার সুযোগ দিয়ে রুহানিয়া মেনু কার্ড দেখছিল।
একবার জিহাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেল, জিহাদ ওর দিকেই নিষ্পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে। সে তাকানো মাত্রই আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে জিহাদ। হঠাৎ কেন জানি এমন ব্যবহারে রুহানিয়ার হাসিও পাচ্ছে। সে নড়েচড়ে বসে বলল,
‘কী খাবেন?’
জিহাদ একটু থমকাল। খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন করেছে রুহানিয়া। অথচ তার কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে রয়েছে। কথা বলতে গিয়ে হাঁটু কাঁপছে। কী আশ্চর্য! এতটা অস্থিরতায় কেন সে ভুগছে বুঝতে পারছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে একা আসাটা একদম ঠিক হয়নি তার। সাথে কাব্য কিংবা তিতাস থাকলে মনে একটু জোর পেত। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এখন এই ভুলের মাশুল দেবে কী করে?
জিহাদকে চুপ করে থাকতে দেখে চোখের সামনে তুড়ি বাজাল রুহানিয়া। বলল,
‘কোথায় হারিয়ে গেলেন?’
স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে জিহাদ প্রত্যুত্তর করল,’না, মানে কিছু না। কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া যায়।’
‘ঠিক আছে। আর কিছু?’
‘আমি শুধু কোল্ড ড্রিঙ্কস খাব। আর আপনার যা ইচ্ছে অর্ডার করুন।’
রুহানিয়া ওয়েটারকে ডেকে দুটো কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার করল শুধু। সে নিজে থেকেই বা কী বলবে বুঝতে পারছে না। এভাবে চুপ করে বসে থাকতেও অস্বস্তি লাগছিল। সে টেবিলের ওপর দু’হাত রেখে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করল,
‘সরাসরি অফিস থেকে এখানে চলে এসেছেন?’
জিহাদ বলল,’হ্যাঁ।’
‘বাসার সবাই কেমন আছে? কথা হয়েছিল তাদের সাথে?’
‘হ্যাঁ।’
একটুখানি থেমে জিহাদ ভয়ে ভয়ে বলল,’রুহানিয়া, একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য আপনাকে জরুরীভাবে দেখা করতে বলেছি।’
রুহানিয়া স্মিত সহাস্যে বলল,’সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আর আপনি যে খুব ঘাবড়ে আছেন সেটাও বুঝতে পারছি।’
জিহাদ কিছুটা লজ্জিত বোধ করল। মেয়েদের সামনে এত নার্ভাস হলে চলে নাকি। সে মাথা নত করে অস্বস্তিতে পড়েও হাসল। বন্ধুরা এখন সাথে থাকলে নির্ঘাত এটা নিয়ে হাসাহাসি করত।
রুহানিয়া অভয় দিয়ে বলল,’আপনি প্লিজ একটু স্বাভাবিক হোন। এত নার্ভাস হওয়ার তো কিছু নেই। আপনি নির্ভয়ে আমায় বলতে পারেন।’
‘সত্যিই?’
‘হ্যাঁ, সত্যি।’
‘কথা দিচ্ছেন, আমার ওপর রাগ করবেন না?’
‘এতদিনে আপনাকে আমি এতটুকু চিনেছি যে, আপনি রাগ করার মতো কিছু বলবেন না।’
‘এতটা বিশ্বাস করাও কিন্তু ঠিক নয়।’
‘বিশ্বস্ত মানুষ যদি বিশ্বাস অর্জন করে নিতে সফল হয়, তাহলে তাকে অবিশ্বাস করি কী করে বলুন?’
জিহাদ হাসল। হাসিটা তৃপ্তির ছিল। অন্তত সে রুহানিয়ার বিশ্বাস তো অর্জন করতে পেরেছে। যেকোনো সম্পর্কের ভীত-ই হচ্ছে বিশ্বাস। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কোনো সম্পর্কের সূচনা হতে পারে না কখনো। আর না কখনো কোনো সম্পর্ক বেশিদিন টেকে। বিশ্বাস যে ভীষণ দামী!
জিহাদ মনে কিছুটা সাহস পেল। সে দৃঢ়তার সাথে বলল,’আমি আপনাকে ভালোবাসি রুহানিয়া। বিয়ে করতে চাই আপনাকে।’
রুহানিয়া চমকে তাকায় জিহাদের দিকে।
.
.
প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে কাব্যর সাথে দেখা হয়ে যায় চৈত্রীর। কাব্য জানত চৈত্রী এই পথ দিয়েই বাড়িতে ফিরবে, তাই সে অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথে এখানে চলে এসেছে। চৈত্রী দূর থেকে কাব্যকে দেখেই কপাল কুঁচকে ফেলে। দেখেও না দেখার ভান ধরে সোজা বান্ধবীদের সঙ্গে হাঁটতে থাকে। সে ভেবেছিল, এভাবে কাব্যকে এড়িয়ে গেলে এটা তার ইগোতে লাগবে। তবে এমন কিছুই হলো না। কাব্য একদম চৈত্রীর ভাবনাকে তোয়াক্কা করেনি। সে এগিয়ে এসেছে। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলে,
‘কী ব্যাপার পিচ্চি বাচ্চা? এভাবে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছ কেন?’
চৈত্রীর বান্ধবীরা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কাব্য ওদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘তোমরা একটু আগে আগে হাঁটো তো ছোট্ট আপুরা। আমি জানি, আমায় নিয়ে তোমাদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেক প্রশ্নও জেগেছে। সেসব প্রশ্নের উত্তর আমি চলে যাওয়ার পর চৈত্রী দেবে। খুব বেশি সময় নেব না। অল্প একটু কথা বলেই চলে যাব।’
চৈত্রী কিছু বলার পূর্বেই ওর বান্ধবীরা বিনা বাক্যে একটু আগে আগে হাঁটা ধরে। চৈত্রী বিরক্ত হয়ে কাব্যকে বলে,
‘আপনার কি একটু ক্লান্তও লাগে না? সরাসরি অফিস থেকে এখানে আসার এত এনার্জি পান কোথায়?’
‘আসি তো ভালোবাসার টানে।’
দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। চৈত্রী বলল,’আপনি কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন।’
‘কী আশ্চর্য! আমার অনুভূতিকে তোমার ফ্লার্ট মনে হয়?’
‘ফ্লার্ট করলে তো ফ্লার্টই মনে হবে তাই না?’
‘তুমি এত নিষ্ঠুর হৃদয়ের কেন বলো তো? তোমার মধ্যে কি ভালোবাসা, ফিলিংস এসব কিছু নেই?’
‘না, নেই।’
‘থাকবেই তো না। ছোট্ট মানুষ ভালোবাসা কী জিনিস তা-ই তো বুঝো না। সমস্যা নেই, আমি শিখিয়ে দেবো।’
‘তাই? বেশ তো! দিন শিখিয়ে। আপনার থেকে ভালোবাসা শিখে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসব।’
‘এত্ত সোজা? আমি অত মহান নই বুঝলে? আমি ভালোবাসা শেখাব, এরপর তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসবে এসব আমি সহ্য করব? কখনো না! আমি দেবদাস হতে পারব না। প্রয়োজনে তোমায় খু’ন করে জেলের আসামী হবো। শাস্তি হিসেবে মাথা পেতে নেব মৃ’ত্যু’দ’ণ্ড। তবুও তুমি অন্য কারও হবে এটা আমি মানতে পারব না।’
কাব্যর সব কথাতেই দুষ্টুমির রেশ থাকে। সিরিয়াস মনেই হয় না। তবে এই কথাগুলোতে যেন আলাদা রকম টান ছিল, জেদ ছিল, আবেগ ছিল। এবং অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে, চৈত্রী এসব অনুভবও করতে পেরেছে। তার বুকের ভেতর কেমন চিনচিন করছে। সে থমকে গিয়েও হাঁটছে। চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার। এই ত্যাঁদড় ছেলের মায়ায় একদম জড়ানো যাবে না।
কাব্য নিজেও নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিশ্চুপ চৈত্রীর মুখপানে তাকিয়ে বলে,
‘তুমি আগের মতো ঝগড়া করো না কেন বলো তো?’
চৈত্রী চোখগুলো গোল গোল করে তাকিয়ে বলে,’আমি কি ঝগড়ুটে?’
‘ঝগড়ুটে নও? আমার সাথে তো খুব ঝগড়া করতে আগে। আজকাল কেমন এড়িয়ে চলো। তাই তোমার জন্য ওষুধ এনেছি। সারপ্রাইজ ওষুধ।’
‘সেটা কী?’
‘দেখাচ্ছি। সাথে করেই এনেছি।’
কাব্য তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে চৈত্রীর হাতে দিয়ে বলে,’খুলে দেখো।’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্যাকেটটি হাতে নিয়ে খুলতে লাগল চৈত্রী। মোড়ানো প্যাকেট খোলা হলে চৈত্রী অবাক হয়ে তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য হেসে বলে,
‘ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
‘এটা কী ধরণের সারপ্রাইজ?’
‘ওমা চেনোনি? এটা এনার্জি বিস্কুট। এই বিস্কুট খেয়ে ঝগড়া করার জন্য আরও এনার্জি পাবে।’
চৈত্রী রেগেমেগে বিস্কুট কাব্যর হাতে তুলে দিলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘আপনি অ’স’ভ্য ধরণের একটা ত্যাঁদড় লোক!’
কাব্য চৈত্রীর চলে যাওয়া দেখছে আর হাসছে। বিস্কুটের প্যাকেট ছিঁড়ে খেতে খেতে চৈত্রীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে,
‘আমিই কিন্তু খেয়ে নিলাম চৈত্র। তোমার পেছনে ঘোরার জন্য আমারও তো এনার্জি প্রয়োজন আছে তাই না? ছেলেদের প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে একটু ছে’চ্রা হওয়া লাগে। অত এটিটিউড দেখাতে গেলে, তোমায় তো আমার পাওয়া হবে না।’
চৈত্রী চোখ গরম করে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। ওর বান্ধবীরা সবাই হাসছে। কাব্য বিস্কুট খেতে খেতে নিজেই নিজেকে বলে,
‘মেয়েদের মানানোর জন্য অনেক এনার্জির দরকার আছে বস! তাই এনার্জি বিস্কুট খাও আর এনার্জি বাড়াও কাব্য।’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]