ভূবন_বিলাসী part 7
#লেখিকাঃসীমা
আলিয়া ফোনটা কেটে দেয়।আয়ানের বাবা আড়াল থেকে সব শোনে।
আয়ানের বাবাঃআমি কি করেছি এসব একটা নিষ্পাপ জীবন শেষ করছি যেখানে আলিয়ার বাবার কোনো দোষ নেই।সায়ানের দায়িত্ব না নিলে হয়তো আজ সায়ান জারজ সন্তান হিসেবে পরিচয় পেত।
রাতে মিলি আয়ানকে অনেক ড্রিংক খাইয়ে দেয় যাতে নোংরা পিক তুলে আয়ানকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করতে পারে।
মিলিঃআয়ান রুমে চলো।
আয়ানঃমিলি এটা কি ছিলো আমার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরছে(ঢুলতে ঢুলতে)
মিলিঃরুমে চলো আমি সব ঠিক করে দিবো।
রিমি আয়ানের এই অবস্থা দেখে নিচে আসে।
রিমিঃআপু তুই আয়ান ভাইয়ার সাথে কি করতে চাইছো?
মিলিঃআমি যা খুশি করবো তোর কি? যা এখান থেকে।
রিমিঃভাইয়ার বিয়ে হয়েছে এখনো তুই?
মিলিঃআয়ান শুধু আমার।
রিমিঃসরি আপু আজ তোমার বিরুদ্ধে আমাকে যেতে হবে।
মিলিঃমানে?(অবাক হয়ে)
রিমিঃরহিমা খালা দড়ি নিয়ে আসুন।
রহিমা দড়ি নিয়ে আসলে রিমি আর রহিমা মিলে মিলিকে বেধে ফেলে।
মিলিঃকি করলি এটা?(রেগে)
রিমিঃআলিয়া আমার জীবন বাচিয়েছিলো তাই আমাকে ওর বিপদে পাশে দাড়াতে হবে।সরি আপু রহিমা খালা আপুর শরীরে ঘুমের ইনজেকশনটা নার্সকে দিয়ে পুশ করে নিন।আমি ভাইয়াকে আলিয়ার রুমে দিয়ে আসছি।
,
আয়ানঃতুমি খুব সুন্দর(মাতলামো কন্ঠে)
রিমিঃআমার থেকে তোমার বউ সুন্দর।
আয়ানঃসত্যিইইই।
রিমিঃহুম।
আয়ানকে নিয়ে রুমে দিয়ে আসে রিমি।আলিয়া ঘুম গিয়েছিলো তাকে ডেকে তোলে।
আলিয়াঃআপু কি হয়েছে?(চোখ কচলাতে কচলাতে)
রিমিঃউঠে তোমার বরকে সামলাও আমি গেলাম।
রিমি চলে গেলে আয়ান আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আয়ানঃবউ তুমি খুব সুন্দর।আজ তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে দিবো।
আলিয়াঃতুমি ড্রিংক করেছো?
আয়ানঃহুম এসো না আরো কাছে?(আয়ান আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
আলিয়ার শরীরে আগে থেকে ব্যাথা এখন মনে হচ্ছে মরে যাবে।
আয়ানঃআমি তোমাকে মেরেছি না বউ খুব আদর করে দিচ্ছি সব ব্যাথা পালিয়ে যাবে।
আলিয়াঃকোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম?আয়ানের এখন হুশ নেই তাই এমন বলছে কাল সকালে আবার বকবে মারবে।
আয়ানঃমারব না বকবোও না শুধু ভালোবাসবো।
আলিয়াঃএকটু ছাড়বে আমায় ওয়াশরুমে যাবো।
আয়ানঃদশ সেকেন্ড সময় দিলাম যাও।
আলিয়া ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়।আয়ান দরজায় এসে ধাক্কা দেয়।
আলিয়াঃআজ রাতটা ওয়াশরুমে থাকবো আয়ানের বিশ্বাস নেই।
আলিয়ার চোখ হঠাৎ দেয়ালের দিকে যায়।তেলাপোকা দেয়ালে দেখে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।আয়ানও মুচকি হেসে আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আয়ানঃচলো তোমাকে আদর করবো।
আলিয়া আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছিয়ে যায়।আয়ান আলিয়াকে ধরার জন্য এগিয়ে যায়।আলিয়া পিছাতে পিছাতে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খায়।
টেবিলের উপর একটা স্প্রে আলিয়ার হাতে লাগে।সেটা তুলে আলিয়া আয়ানের দিকে স্প্রে করে।আয়ান অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
আলিয়াঃএটা আবার কি রকম স্প্রে(তাকিয়ে দেখে)এটা তো ক্লোরোফরম এই রুমে এলো কি করে?ভালো হয়েছে এটা যে এখানে রেখেছে তাকে পরে ধন্যবাদ দিবো।
,
আলিয়া খুশিমনে ঘুমাতে যায়।
পরদিন রায়হান চৌধুরীকে জরুরী একটা কাজে যশোর যেতে হয় তাই আয়ানকে সত্যিটা জানাতে পারেনি।আয়ান ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করে।পাশে আলিয়া নামাজ পড়ছে আয়ান এক ধ্যানে আলিয়াকে দেখে।
আয়ানঃআলিয়া এত মায়াবী কেনো?ওর সাথে কোনো অন্যায় করছি নাতো?না আমি কি ভাবছি ও আমাদের শত্রুর মেয়ে ওকে কষ্ট দিবো।(মনে মনে)
আলিয়া নামাজ পড়ে উঠলে আয়ান পানি দিয়ে আলিয়াকে ভিজিয়ে দেয়।
আলিয়াঃএটা কি করলে?
আলিয়ার কোনো কথা আয়ানের কানে ঢোকে না সে আলিয়াকে দেখতে ব্যস্ত।ভেজা চুলে যেন সদ্য ফোটা ফুল লাগছে আলিয়াকে।
আলিয়া রেগে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।আয়ান তখন সেখানে নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
আলিয়া শাড়ি পড়ে রুমে আসলে আয়ান আলিয়াকে কোলে তোলে।
আলিয়াঃকি করছো নেমে দাও?
আয়ানঃচুপ করে থাকো??শুধু লাফালাফি করতে জানো।
আলিয়া ধমক খেয়ে চুপ করে থাকে।আলিয়া বেডে শুয়ে দিয়ে আয়ান আলিয়াকে কিস করতে শুরু করে।হঠাৎ আয়ানের কি যেন মনে হতে আলিয়াকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।আলিয়া পুরো মুখটা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলে।
,
,
আলিয়া নিচে আসতে দেখে মিলি মুখটা পেচার মত করে।আলিয়া আর রিমি একসাথে বসে।
আলিয়াঃআয়ান তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
আয়ানঃএখন আমি অফিসে যাবো পরে বলো এমনিতেও বাবা বাড়িতে নেই।
আলিয়াঃআমি ভার্সিটি যাবো প্লিজ।
মিলিঃআয়ানের টাকা এত বেশি হয়নি যে তোমাকে পড়াবে।
আলিয়াঃআমার মাম্মা পাপা আমার নামে ব্যাংকে যে টাকা রেখেছে সেটা আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী বসে খেতে পারবে সারাজীবন।
মিলিঃদেখেছো আয়ান ও কি বলছে????
আয়ানঃআলিয়া আমাকে রেগে দিওনা নাহলে কিন্তু….
আলিয়াঃকি করবে হ্যা তোমার অত্যাচার আমি মুখ বুঝে সহ্য করেছি এজন্য যে ভাবতাম আমার পাপা দোষী কিন্তু আমার পাপা না আমার চাচ্চু শিহাব আর রুবিনা ফুপির সন্তান সায়ান ভাইয়া।আমার জীবনটা তুমি নরক বানিয়ে দিয়েছো কি চাও তুমি আমার মৃত্যু তো ঠিক আছে আমি তাই করবো।
আলিয়া ফল কাটার ছুড়ি নিয়ে হাত কেটে ফেলে।রক্ত প্রচুর ঝড়তে থাকে।সবাই আলিয়ার কাজ দেখে হতবাক হয়ে যায়।রিমি ব্যান্ডেজ করতে চাইলে আলিয়া বারণ করে।
আলিয়াঃমি.রেদোয়ান চৌধুরী আয়ান বলো কতো রক্ত চাই তোমার?
রহিমাঃমা অনেক রক্ত ঝড়তাছে।
আলিয়াঃঝরতে দিন খালা বলো আয়ান ও তোমার আবার এতটুকুতে হবে না তাইনা ওয়েট
,
আলিয়া একটা কাঁচের গ্লাস ফ্লোরে ফেলে দেয়।গ্লাসটা ভেঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।আলিয়া ভাঙ্গা কাঁচের উপর দিয়ে হাটতে গেলে অনেক কাঁচের টুকরো পায়ে গেথে যায়।
আয়ানঃস্টপ আলিয়া।
আলিয়াঃআর কিভাবে কষ্ট দিবো নিজেকে তুমি…
আলিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে ধরলে আয়ান আলিয়াকে ধরে ফেলে।
আয়ানঃরিমি ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলো।
রিমিঃআমি আছি কি জন্য ভুলে গেছো আমি ডক্টর?
আয়ানঃডক্টর না ছাই এভাবে আলিয়ার রক্ত ঝরছে আর ওনি দাড়িয়ে দেখছেন(রেগে)
রিমিঃভাবিকে রুমে নিয়ে যাও আমি আসছি।
মিলিঃআয়ান ও আমাদের শত্রুর মেয়ে।
নার্সঃনা আলিয়া যা বলেছে সব ঠিক (পিছন থেকে)আলিয়া আমার ফোন দিয়ে ওর মায়ের সাথে। আমার ফোনে রেকর্ড চালু করা ছিলো তাই কথা সেইভ হয়ে আছে।
আয়ানঃপরে শুনবো আগে আলিয়াকে ঠিক করি।
আয়ান আলিয়াকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায়।রিমি আলিয়ার পা থেকে কাঁচের টুকরো বের করে আর নার্স লিপি হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।আয়ান আলিয়ার দিকে তাকিয়েশুধু চোখের পানি ফেলে।
আয়ানঃআলিয়া চোখ খুলো তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।???
রিমিঃভাবি ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া তোমাদের কে বলেছিলো আলিয়ার বাবা অপরাধী?
আয়ানঃশিহাব ইসলাম আলিয়ার চাচ্চু।
চলবে