ভূবন_বিলাসী part 13

0
2346

ভূবন_বিলাসী part 13
#লেখিকাঃসীমা

আয়ানঃকোনোকিছু নিতে হবে না তোমাকে তোমার জন্য সবকিছু আমি কিনে রেখেছি।
আলিয়া কিছু না বলে নিজের রুমে যায়।
আয়ানের বাবাঃআয়ান এসব কি বললে?
আয়ানঃআলিয়াকে ফেরানোর এই পথ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। তোমরা চিন্তা করোনা আমার উপর ভরসা রাখো।
আলিয়া সেদিনে আয়ানের সাথে ওর বাড়িতে চলে যায়।বাড়িতে ঢুকতে সবাই অবাক হয়ে যায়..
মিলি বউ সেজে বসে আছে সোফায় আয়ানকে দেখে এসে জড়িয়ে ধরে।রায়হান চৌধুরী মিলিকে ধমক দিলে মিলি আয়ানকে ছেড়ে দেয়।
মিলিঃআমাকে কেমন লাগছে আয়ান তুমি জানো না আজ আমাদের বাসররাত।
আয়ানঃমাথা ঠিক আছে তো আমি তোমাকে আবার কখন বিয়ে করলাম?
মিলিঃকেনো সব ভুলে গেলে? যাবে না ঐ শাঁকচুন্নিটা এসেছে তো তাই যাবে(মন খারাপ করে)
আয়ানঃএকটা থাপ্পর খেলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।(রেগে)
মিলিঃতুমি আমায় বকলে ???
আলিয়াঃ(মুচকি হেসে)আপু তুমি তোমার বরকে নিয়ে যাও।
মিলিঃসত্যিইইই(খুশি হয়ে)
আলিয়াঃহুম।
আয়ানঃবাবা তুমি তোমার রুমে যাওতো(রায়হান চৌধুরী চলে যায়)মিলি নতুন জীবন শুরু করার আগে বড়দের দোয়া নিতে হয় যাও ফুপির কাছ থেকে দোয়া নিয়ে আসো।
মিলি খুশি হয়ে চলে যায়।আয়ান আলিয়াকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায়।
আলিয়াঃআমাকে ছাড়ো তোমার ঐ মিলির কাছে যাও(বুকে কিল বসিয়ে দিয়ে)
আয়ান আলিয়াকে বেডে শুয়ে দেয়।
আয়ানঃআমি তোমাকে চাই আলিয়া আর কাউকে না।তোমাকে আদর করবো আজ অনেক।
আলিয়াঃএমন কিন্তু কথা ছিলো না আয়ান।
আয়ান আলিয়ার কোনো কথা না শুনে কিস করতে থাকে।আলিয়া নিজেকে ছাড়াতে আয়ানকে ধাক্কা মারে।আয়ান ধাক্কা খেয়ে টেবিলে উপর পরে টেবিলের কোণা দিয়ে কপাল অনেকটা কেটে যায়।আলিয়া হতবাক হয়ে যায়।
আলিয়াঃআয়ান আমি এমনকিছু..

আয়ানঃএটা আমার প্রাপ্য ছিল।
আলিয়াঃকপাল থেকে রক্ত ঝরছে?
আয়ানঃঝরতে দাও তোমার শরীর থেকে এর বেশি রক্ত ঝরিয়েছি।
আয়ান রুম থেকে চলে যায়।আলিয়া বেড থেকে নেমে আয়ানের ফুপির রুমে যায়।
রিমি সেখানে বসে ছিল আলিয়াকে দেখে উঠে বসে।
রিমিঃআরে ভাবি দাড়িয়ে আছো কেনো আসো?
আলিয়া ভিতরে গিয়ে আয়ানের ফুপির পাশে বসে।
ফুপিঃকেমন আছো আলিয়া?
আলিয়াঃভালো ফুপি সায়ান ভাইয়া আসে না?
ফুপিঃনা শুধু ফোনে কথা হয় প্রতিদিন।
আলিয়াঃভাইয়া তোমার উপর অভিমান করে আছে সময় সব ঠিক করে দিবে।
ফুপিঃসময় কি আয়ান আর তোর সংসার জোড়া লাগাতে পারবে আলিয়া?আলিয়া আমি চাই তুই এখানে থাক আয়ানের পাশে সারাজীবন।
আলিয়াঃএসব নিয়ে ভাবতে হবে না তো তোমাকে কি বলবো চাচি না ফুপি?
ফুপিঃতোর যা ইচ্ছা।
আলিয়াঃআজ মিলি আপুর কি হয়েছিলো?
রিমিঃআর বলো না আপুর মাথা মনে পুরোটা গেছে আয়ান ভাইয়াকে না পেয়ে। মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুত আচরন করছে আমি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছি।
আলিয়াঃওহ ফুপি তুমি রেস্ট নাও আমি ঘুমাতে গেলাম।
,
,
,
আলিয়া রুমে ঢুকে দেখে আয়ান নিজের হাতে বাচ্চাদের মত ফুঁ দিচ্ছে কপালে ঠিকমত ব্যান্ডেজ করতে পারেনি।আলিয়াকে দেখে আয়ান হাতটা পিছনে লুকায়।
আলিয়াঃহাতে কি হয়েছে আর লুকালে কেনো?
আয়ানঃক ক ক কই কিছুনা।
আলিয়া আয়ানের হাতটা সামনে এনে দেখে হাতের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে।
আলিয়াঃআয়ান এসব কি করে হলো? (চিন্তিত হয়ে)
আয়ানঃতোমার হাত পুড়িয়ে দিয়েছিলাম তাই আজ নিজের হাত নিজে পুড়িয়েছি তোমার কতটা ব্যাথা লেগেছিলো সেটা দেখতে।
আলিয়াঃতুমি পাগল হয়ে গেছো।
আলিয়া অয়েন্টমেন্ট এনে আয়ানের হাতে লাগিয়ে দেয় এবং কপালে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
আয়ানঃএতো ভালবাসলে দূরে কেনো থাকো?
আলিয়াঃএটা ভালবাসা নয় মানবিকতা তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমি এটা করতাম।তাছাড়া আগামীকাল আমার পরিবার তোমাকে দেখে তো আমাকে বকবে।
আয়ানঃওরা তোমায় কিছু বলবে না।কিছু খাবে এনে দিবো
আলিয়াঃতোমার ক্ষুধা লাগলে তুমি খাও অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।আমাদের মাঝখানে দুইটা কোলবালিশ থাকবে তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবে না।
,
,
আলিয়া শুয়ে পড়ে আয়ান এক দৃষ্টিতে শুধু আলিয়াকে দেখে আর চোখের পানি ফেলে।
আয়ানঃআমাকে একটু ভালবাসা দিলে কি খুব কম পড়ে যাবে ভালবাসার ভান্ডারে।আমি মাকে পাইনি মায়ের ভালবাসা পাইনি, কেউ শাসন করার মত ছিলো না,ফুপি তাও কোমায় ছিলো কাজের বুয়ার কাছে বড় হয়েছি।আজ আমাকে কেউ শাসন করলে এমন হতাম না আলিয়া।মা তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও(মনে মনে)
আয়ান না ঘুমিয়ে বারান্দায় গিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।
আয়ান বৃষ্টি নামলে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।হাতে পোড়া অংশে বৃষ্টি পরে জ্বলতে শুরু করে।আয়ানের সেদিকে মন নেই।বৃষ্টির সাথে চোখের পানিও ঝরতে থাকে।অনেকক্ষন পর আয়ানের কাধে আলিয়া হাত রাখে।
আলিয়াঃরুমে চলো ঠান্ডা লাগবে।
আয়ানঃএটাও মানবতার খাতিরে বলছো তাইনা?তুমি চলে যাও তোমার ঠান্ডা লাগবে।
,
,
আলিয়া আয়ানের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।টাওয়াল দিয়ে আয়ানের পুরো মাথা ভালো করে মুছে দেয় আলিয়া।
আলিয়া নিজে ভেজা কাপড় পাল্টে বেডে শুয়ে পড়ে।
আয়ানকে বসে থাকতে দেখে আলিয়া আবার উঠে।
আলিয়াঃবসে রইলে যে কাপড় পাল্টে শুয়ে পড়।
আয়ানঃতুমি শুয়ে পড়
আলিয়াঃপাঁচমিনিট সময় দিলাম এর মধ্যে ভেজা কাপড় চেন্জ না করলে আমি কিন্তু..(আঙ্গুল তুলে)
আলিয়ার বকুনি খেয়ে আয়ান বসে থাকাটা নিরাপদ মনে করলো না তাই উঠে কাপড় চেন্জ করে আসলো।
আয়ানঃতোমার মত কেউ আমাকে শাসন করলে আজ তোমার আমার প্রতিটা রাত কেটে যেতো ভালবাসায়।
আলিয়াঃবকবক না করে এবার ঘুমাও।
,
,
পরদিন সকালবেলা আলিয়া ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নেয়।আয়ানকে নামাজ পরার জন্য ডাকলে আয়ান আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আলিয়াঃউঠে নামাজ পড়।
আয়ানঃআরেকটু ঘুমাই না?
আলিয়াঃনা উঠো।
আয়ানঃআচ্ছা আলিয়া নামাজে আল্লাহর কাছে যা চাইব তাই কি দিবেন?
আলিয়াঃহুম।
আয়ানঃতাহলে আজ থেকে নামাজ পড়ব আর আল্লাহর কাছে চাইব তোমার আর আমার একটা বেবী যেন তাড়াতাড়ি তোমার পেটে আসে।যে তুমি আমার উপর রেগে থাকলে তোমার রাগ ভাঙ্গাবে।
আলিয়াঃহয়েছে এবার উঠো।
আয়ান আর ওর বাবা নামাজ পড়তে মসজিদে যায়।
আলিয়া শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে সব কাজ করতে শুরু করে।রিমি আর রহিমাও আলিয়াকে সাহায্য করে।
আয়ান আর রায়হান চৌধুরী বাড়িতে আসে।
আয়ানের বাবাঃআয়ান বউমা অনেক ভালো ওকে যেতে দিয়োনা কোনোদিন।
আয়ানঃহুম বাবা।
আয়ান কফি চেয়ে রুমে যায়।আলিয়া কফি বানিয়ে রুমে চলে আলিয়াঃতোমার কফি।
আয়ান আলিয়ার হাত থেকে কফি নেয়।মুখে দিয়ে,
আয়ানঃচিনি এত কম কেনো দিয়েছো?
আলিয়াঃআমি তো ঠিকই দিয়েছি।
আয়ানঃখেয়ে দেখো।
আলিয়াঃ(একটু মুখে দিয়ে)ঠিক তো আছে।
আয়ানঃতোমার ঠোটের পরশ পেয়ে ঠিক হয়ে গেছে(আলিয়ার হাত থেকে মগ নিয়ে)
আলিয়াঃঢং করতে পারো শুধু।
রাগে গজগজ করতে করতে আলিয়া চলে যায়।
,
,
বিকালে আলিয়ার পরিবারের সবাই আসে।আয়ানের ফুপিকে আলিয়া আর রিমি সাজিয়ে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়।
আলিয়ার শাড়ির সাথে মেচিং করে আয়ান পান্জাবী পরেছে।কাজী বিয়ে পড়া শুরু করলে আলিয়া থামতে বলে,
আলিয়াঃএক মিনিট দাড়ান এ বিয়ে হবে না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here