#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৮(অন্তিমাংশ)
শাওন হাসান পুরো পরিবার নিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এসেছেন। উৎসের অসুস্থতার খবর শুনেই মিসেস তাসলিমা উৎসকে দেখার জন্য বেকুল হয়ে ছিলেন। ইসতিয়াক আহমেদও তাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন যতোই হোক কুটুম বাড়ি বলে কথা। উৎস ড্রয়িং রুমে বসে আছে বলতে গেলে সৌজন্য রক্ষা করার জন্য।রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি ওষুধও খাওয়া হয়নি তাই শরীর খুব ক্লান্ত। মিসেস তাসলিমা এসেই উৎসের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন তারপর মিসেস উপমা জোর করেই বেয়াইনকে দু’তলায় নিয়ে গেছেন।
শাওন হাসান উৎসের পাশেই বসে আছেন তার ঠিক সামনের সোফায় শুভ্র আর ইসতিয়াক আহমেদ কথা বলছে। শতাব্দীর ভাবী, তূর্যও শতাব্দীর ঘরে গেছে। শাওন হাসান ফিসফিস করে উৎসকে বললেন,
– কি ব্যাপার মুখ এতো শুকনো লাগছে কেন? আমার মেয়ে খেতে দেয়নি নাকি?
– আমার শ্বাশুড়ি আন্টি তো খুব ভালো তাহলে আপনার মেয়েটা গুন্ডি হলো কিভাবে বলুন তো?
– যে যেমন আমার মেয়ে তার সঙ্গে ঠিক তেমন ব্যবহারই করে।তবে…তোমার কপাল ভালো তাই আমার মেয়েকে পেয়েছ নইলে তোমার ভাগ্যে তোমার মতোই একজন জুটতো।
উৎস মলিন হাসলো। শাওন হাসান মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– জামাইয়ের লজ্জা বলতে কিছুই নেই।
উৎস হেসেই আস্তে করে শাওন হাসানকে বললেন,
– সত্যিই আমার মতো ছেলের কোনো যোগ্যতা নেই শতাব্দীর স্বামী হওয়ার, কয়েক বছর আগে আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। আমার হাতে শতাব্দীকে তুলে না দিয়ে একদম ভালো করেছিলেন শুধু আমি ঠিক বেঠিক বুঝতে দেরি করে ফেলেছি।
শাওন হাসানের মুখে আঁধার নেমে এলো ব্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
– তুমি কি চাইছো এখন?
– আমার চাওয়ার কিছুই নেই এবার আপনাদের চাওয়াটাই পূর্ণ হবে।
উৎস বসা থেকে উঠে সোজা সিঁড়ির পাশ দিয়ে চলে গেল। শাওন হাসান কোনো দুর্ঘটনার আঁচ করতে পারছেন।
দুপুরের খাবার খেয়ে আবারো সবাই খোশ গল্প করছে।উৎস নিজের ঘরে শুয়ে আছে তার সঙ্গে তূর্যও আছে, তূর্য উৎসের সঙ্গে ক’দিনের পরিচয়ে অনেক মিশুক হয়ে গেছে। বাকিরা ড্রয়িং রুমে শতাব্দীও তাদের সঙ্গে বসে আছে। উৎসের কথাগুলো অনেক ভাবাচ্ছে শাওন হাসানকে, মেয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলা দরকার কিন্তু সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। বাবাকে চিন্তিত দেখে শতাব্দী আস্তে করে প্রশ্ন করলো,
– কিছু নিয়ে চিন্তা করছো বাবা?মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?
– তোর সঙ্গে আলাদা কথা আছে আমার।
শতাব্দী হাসিমুখে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
– বাবার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে তোমরা গল্প করো আমরা আসছি।
মিসেস উপমা হেসে বললেন,
– হুম যাও।
শাওন হাসান এবং শতাব্দী সেখান থেকে উঠে ছাদে চলে গেল।ছাদে এসে শতাব্দী বলল,
– এবার বলো বাবা।
– তুই কি উৎসের সঙ্গে সুখী নয়?
– এ কথা কেন বলছো বাবা?
– কেন জানি মনে হলো,আমি যেই ভুল করেছি তুই অন্তত সেই ভুলটা করিস না উৎসের সঙ্গে মানিয়ে নে সম্পর্ক নষ্ট করিস না এমন স্বামী শ্বশুরবাড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, আমি আমার কলিগের ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছিলাম মূলত এই জন্যই উৎসকে আমার অপছন্দ ছিল তোর ভাইও আমার কথাতেই উৎসকে তোর চোখে খারাপ বানিয়েছিল সত্যি বলতে উৎস ছেলেটা অনেক ভালো। মামলা জেতার জন্য উৎস তোকে বিয়ে করেনি তোকে ভালবাসে বলেই ওইসব বলে বিয়ে করেছে।
শতাব্দী চমকায়িত দৃষ্টিতে শাওন হাসানের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওন হাসান মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
– প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানদের ভালো চায় ভবিষ্যৎ সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে চায় আমিও তাই করতে চেয়েছি কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি আমি চেয়েও উৎসের কাছে মাফ চাইতে পারিনি কখনও পারবোও না তুই পারলে বাবাকে ক্ষমা করে দিস মা।
– বাবা এভাবে বলো না।
– আর হ্যাঁ এই বেয়াদব ছেলেটাকে ছাড়িস না,মন দিয়ে সংসার কর।
শতাব্দী মাথা নাড়ালো।বাপ মেয়ে কথা শেষ করে নিচে চলে এসেছে। বিকেলে শাওন হাসান মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পরিবার নিয়ে চলে গেলেন।উৎস গাড়ি পর্যন্ত তাদের এগিয়ে দিয়ে ভেতরে আসছিল তখনি শতাব্দী উৎসের উদ্দেশ্যে বলল,
– বাচ্চাদের লেখাপড়ার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
উৎস দাঁড়িয়ে গেল ব্রু জোড়া কুঁচকে শতাব্দীর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,
– কার বাচ্চার?
– আমাদের।
উৎস বোকা বনে গেল, শতাব্দী মুচকি হেসে উৎসকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে গেল।
.
.
.
রাতে খাওয়ার পর উৎস ইসতিয়াক আহমেদ এবং মিসেস উপমার সঙ্গে ঊষা আর তৌসিফের ব্যাপারে আলাদা কথা বলে।উৎস সাবলীল ভাবে তাদের সবটা বুঝিয়েছে যার দরুন ঊষা আর তৌসিফের বিয়েতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
উৎস নিশ্চিন্ত মনে ঘরে আসলো শতাব্দী আগে থেকেই শুয়ে ছিল।উৎস লাইট নিভিয়ে বিছানার একপাশে সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। শতাব্দী উৎসের বুকে মাথা রেখে উৎসকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– উৎস।
উৎস অবাক হয়ে বলল,
– হুম।
– উৎস….
– হুম বলো শুনছি তো।
– এমনি ডাকলাম আর কি।
– উকালতি করতে করতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
– আরে না বিয়ে করে হয়েছে।
– কি বলো! তোমার তো বউ নেই তাহলে মাথা খারাপ হবে কি করে? মাথা খারাপ তো আমার হওয়ার কথা ছিল কারণ আমার বউ আছে আর আমার বউ আমাকে অত্যাচার করে।
– নিজের বউয়ের প্রশংসা পাগলেও করে আর আপনি সুস্থ মানুষ হয়ে দুর্নাম করছেন?
– পাগলের বউ আছে?
– আপনার থাকলে পাগলের থাকবে না কেন?
– তাও ঠিক।
শতাব্দী আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা তাই দু’জনের মধ্যে আবারো নিরবতা। কয়েক মিনিট পর উৎসকে আরও শক্ত করে ধরে শতাব্দী বলল,
– ঘুমিয়ে পড়েছেন?
– না।
শতাব্দী আবারো নিশ্চুপ ঘুম আসছে না কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা আবার চুপও থাকতে পারছে না অস্বস্তি লাগছে।উৎস হয়তো শতাব্দীর অস্বস্তি বুঝতে পেরেছে তাই অন্ধকারেই শতাব্দীর দিকে ফিরে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল,
– ঘুমাও।
– স্লিপিং কিস না দিয়েই ঘুমাতে বলছেন?
– কোথায় দেয় কিভাবে দেয়?
– যেখানে খুশি যেভাবে ইচ্ছে।
উৎস মৃদু হেসে শতাব্দীর কপালে চুমু দিল তারপর বলল,
– হয়েছে?
– হুম।
– আর কিছু?
– আপাতত না।
____________
সকালে ঘুমের ঘোরে উৎস অনুভব করছে কেউ পরম যত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে মধুর কন্ঠে ডাকছে।উৎস চোখজোড়া খুলতেই শক খেয়ে গেল একলাফে উঠে বিছানার এক কোণে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দীর পরনে ফিরোজা রঙের কাতান শাড়ি,চুল থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ছে দেখে মনে হচ্ছে একজন নিষ্পাপ রমনী।
শতাব্দী মুচকি হেসে চায়ের কাপ উৎসের দিকে এগিয়ে দিল।উৎস নতুন এক শতাব্দীকে দেখতে পাচ্ছে।উৎস হা করে তাকিয়ে থাকায় শতাব্দী বলল,
– চায়ের কাপটা ধরুন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
উৎস হাত বাড়িয়ে কাপ নিয়ে প্রশ্ন করলো,
– তোমার শরীর ঠিক আছে?
– হ্যাঁ, কেন?
– তুমি তো এতো ভালো ব্যবহার করতে পারো না সুন্দর করে হাসতেও পারো না, আর বালতি ভরা পানি রেখে ছোট একটা কাপে চা কিভাবে কি আচ্ছা তুমি কি সত্যি সত্যি আমার আগের বউ?
– ভালো ব্যবহার কি ভালো লাগছে না? মুরব্বিরা তো তাহলে ঠিকই বলে কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না।
– সবসময় মাখন খেলে ঘি হজম হবে কি করে।
– চা খেয়ে ব্রাশ করতে যান।
– ব্রাশ না করে চা খায় কিভাবে?
শতাব্দী ফোঁস করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
– আচ্ছা যান ব্রাশ করে আসুন।
শতাব্দী উৎসের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে গেল। উৎস গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই শতাব্দী প্রশ্ন করলো,
– আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো?
– তুমি তো এমনিতেই সুন্দর।
– হুম জানি কিন্তু শাড়িতে কেমন লাগছে?
– ভালো।
– নাস্তা করতে আসুন।
সেই সকালে উঠে একা হাতে সব রান্না করেছে শতাব্দী।উৎস টেবিলে বসতেই শতাব্দী পরিবেশন করলো, উৎস খাচ্ছে না দেখে শতাব্দী বলল,
– খাচ্ছেন না কেন? আমি কি খাইয়ে দিব?
– একসঙ্গে এতো চমক দিলে আমি হার্ট অ্যাটাক করে ম’রে যাব তাই তুমি আগের মতই হয়ে যাও।
– সে কি? আপনি ম’রলে আমার কি হবে? আমি থাকবো কি করে?
উৎস চুপসে গেল মিনমিন করে বলল,’আমি সিউর আমার বউকে পেত্নীতে ধরেছে তাই এমন পাল্টি খেয়েছে।’
কোনমতে খাওয়া শেষ করে উৎস ঘরে চলে গেল। শতাব্দী সবকিছু গুছিয়ে রাখছে মিসেস উপমা একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,
– কি ব্যাপার বউমা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে তোমার।
– জ্বি শ্বাশুড়ি ভাবছি কিছুদিন জমিয়ে সংসার করবো।
– ভালো বুদ্ধি।
– হুম কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার ছেলের মনে কোনো শাকচুন্নী ঢুকেছে।
– না না বউমা এটা কখনো সম্ভব নয় কারণ উৎস ওর বাবার মতো হয়েছে আর ওর বাবার চরিত্র খুবই ভালো।
– ওহ আচ্ছা।
– হুম।
শতাব্দী কাজ শেষ করে ঘরে চলে এলো, উৎস ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। শতাব্দী দরজা আটকে দিয়ে উৎসের সামনে দাঁড়ালো কিন্তু উৎস নিজের কাজ করতেই ব্যস্ত। শতাব্দী বিরক্ত হয়ে টি-টেবিল থেকে পানি ভর্তি জগ নিয়ে আসতেই উৎস বলল,
– কি হয়েছে এটা আনলে কেন?
– আগে বলুন সমস্যা কি আমায় এড়িয়ে চলছেন কেন?
– কখন এড়িয়ে চললাম।
– বুঝতে পারছেন না?
– না তো।
উৎস বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো শতাব্দী উৎসকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– লাভ ইউ উৎস, আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারি না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি আপনার সঙ্গেই থাকতে চাই।
উৎস মৃদু হাসলো ইচ্ছে করেই দু’দিন ধরে শতাব্দীকে এড়িয়ে চলছে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে যাতে শতাব্দী উৎসের ভালোবাসা অনুভব করতে পারে।এতো তাড়াতাড়ি যে বুদ্ধি কাজে দিবে ভাবতে পারেনি।উৎস শতাব্দীর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
– থাকো না নিষেধ করেছে কে?
_____________
‘পাঁচ বছর পর’ আজ মিসেস উপমা এবং ইসতিয়াক আহমেদের বিবাহ বার্ষিকী সেই উপলক্ষে বড় একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। শতাব্দীর বাবার বাড়ির লোকজন সকালেই চলে এসেছে ইসতিয়াক আহমেদ বেয়াইকে বলে দিয়েছিলেন সবকিছুতেই তাদের আগে থাকতে হবে।
শতাব্দী বাড়ির ভেতরের কাজগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে।উৎস বাগানে আছে বলে বলে লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে, শাওন হাসানও উৎসের পাশেই। তখনি উৎসের চার বছরের মেয়ে শ্রুতি এসে উৎসের সামনে দাঁড়ালো মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রেগে আছে।উৎস হাঁটু গেড়ে বসে শ্রুতির গাল টেনে বলল,
– আমার প্রিন্সেসের গাল দু’টো তার মায়ের মতো লাল হয়ে আছে কেন?
শ্রুতি নাক ফুলিয়ে বলল,
– মাম্মার কাছে মাম্মার বন্দুক চেয়েছি কিন্তু মাম্মা বন্দুক দেয়নি।
– বন্দুক দিয়ে কি করবে?
– তূর্য ভাইয়াকে গু’লি করে দিব।
উৎস শুকনো ঢুক গিলে জিজ্ঞেস করলো,
– কেন? তূর্য আবার কি করেছে?
– তূর্য ভাইয়া সুহা আপুর সাথে খেলা করার সময় আমায় নেয়নি আর এখন এসে আমার চকলেট খেয়ে নিয়েছে।
– একেবারে মায়ের মতো হয়েছে কথায় কথায় গু’লি করতে হবে।
– তুমি দিবে কি দিবে না।
– তূর্য ভাইয়াকে আমি ইচ্ছে মতো বকা দিব গু’লি দিতে হবে না তুমি বরং তোমার ফুপির কাছে যাও।
– না আমার রাগ কমেনি।
– তাহসিনের সঙ্গে গিয়ে খেললে রাগ কমে যাবে আর রাগ কমলে তোমাকে আমি অনেক গুলো চকলেট দিব।
– আচ্ছা পাপা।
বলেই শ্রুতি দৌড় দিল বাড়ির ভেতরে। শাওন হাসান বাপ মেয়ের সবকথাই শুনলেন, উৎসের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললেন,
– জামাই বাবাজি।
– জ্বি শ্বশুর আঙ্কেল।
– অতীতের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হলে কেমন হবে?
– কোন ঘটনা?
– তুমি আমার মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করেছ আমি কিন্তু ভুলিনি আর এখন তুমিও একটা মেয়ের বাপ।
– তো?
– তো আর কি আমার বংশেও ছেলে আছে তাই মেয়েকে সাবধানে রেখো তূর্য কিন্তু তোমার স্বভাবেই বড় হচ্ছে।
উৎস চোখ বড় বড় করে শাওন হাসানের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওন হাসান পৈশাচিক হাসি ঠোঁটে রেখেই বলল,
– যাই দেখে আসি শ্রুতি কোথায় গেল কি বলবো নাতনিটা একেবারে আমার মেয়ের মতোই হয়েছে।
বলেই শাওন হাসান চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন, উৎস শাওন হাসানের মুখোমুখি হয়ে বাঁকা হেসে বলল,
– আমার মেয়ে যাকে পছন্দ করবে আমি বাবা হয়ে তার সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিব আপনার মতো হিটলার ভিলেন নাকি? আমি হবো বাংলা নাটকের আদর্শ শ্বশুর আর তারপর গিনেস বুকে সেরা শ্বশুরের নাম উঠাবো।
উৎস শার্টের কলার উঁচু করে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল। শাওন হাসান রাগে ফুঁসছেন।
পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে, ঊষা এবং তৌসিফের বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো,তাদের এক বছরের একটা ছেলে আছে যার নাম তাহসিন। শতাব্দী-উৎসের চার বছরের মেয়ে শ্রুতি। চেহারায় উৎসের সঙ্গে মিল হলেও শ্রুতির রাগ,স্বভাব,ব্যবহার হুবহু শতাব্দীর মতো যার কারণে উৎসের অবস্থা নাজেহাল।বউ আর মেয়েকে সামলাতে সামলাতেই জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।আয়মান এখনও শতাব্দীর এসিস্ট্যান্ট হিসেবেই আছে কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে তবে তন্নী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন চায়না বাড়ির বউ বাহিরে কাজ করুক।
অনেক ধুমধাম করে বিবাহ বার্ষিকী শেষ হলো। শতাব্দী ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই উৎস হাজির। মিসেস উপমা এবং ইসতিয়াক আহমেদের এখন নাতি নাতনিদের সঙ্গে গল্প আর খেলা করতে করতেই সময় কেটে যায়।বাড়ি সামলায় শতাব্দী আর সব ফ্যাক্টরির দায়িত্ব উৎস এবং তৌসিফের উপর।উৎস শতাব্দীর কোলে মাথা রেখে অসহায় কন্ঠে বলল,
– শেষ পর্যন্ত আমার মেয়েটাও তোমার মতো হয়েছে উকিল সাহেবা,এখন কি হবে আরও একটা ছেলেকে বউয়ের হাতে অত্যাচারিত হতে হবে।
– জামাই যদি আপনার মতো অসভ্য হয় তাহলে অত্যাচার করতেই হবে।
– আমার মতো ভোলা ভালা একজনরে পেয়ে কতকিছুই না বলতে পারছো শুধু আমি বলেই তোমার সঙ্গে সংসার করছি অন্য কেউ হলে কবে চলে যেত।
শতাব্দী জোরে জোরে হেসে দিল তারপর বলল,
– এই ডায়লগ গুলো এতদিন মেয়েদের ছিল এখন আপনিও দিচ্ছেন।
– তুমি বাধ্য করেছ তোমার হিটলার বাবা তো মনে মনে শয়তানী বুদ্ধি এঁটে রেখেছে তার নাতিকে দিয়ে আমাদের মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে যাবে।
– তূর্যের সঙ্গে!
– হুম।
– প্রতিশোধ নিবে আর কি তবে ব্যাপারটা খারাপ হবে না।
– পালাতে হবে কেন আমি নিজেই বিয়ে দিয়ে দিব যদি আমার মেয়ে চায় আমি খুব আদর্শ শ্বশুর হবো তোমার বাপ তো হিটলার মীর জাফর।
– একদম বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।
– তোমার বাবা যখন বলে তখন তো প্রতিবাদ করো না।
– বাবা তো ঠিকই বলে।
– তোমার বাপ একটা পাল্টিবাজ তুমিও একটা পাল্টিবাজ সাথে আমার মেয়েটাকেও বানাচ্ছো হায় আল্লাহ কেউ আমার মতো না সবাই আমাকে অত্যাচার করে বউটাও ভালোবাসে না।
শতাব্দী মুচকি মুচকি হাসছে।উৎস আবারো বলল,
– তুমি তো পাল্টিবাজ না তুমি হচ্ছে ঝগড়ুটে নারী।
– ঝগড়াই দেখলেন ভালোবাসা দেখলেন না?
উৎস হেসে বলল,
– এই জন্যই তো তুমি আমার প্রণয় কোন্দলা।
– আর আপনি আমার প্রণয় কোন্দল।
– আমি তোমার মতো ঝগড়া করি না।
– আপনি বড় ঝগড়ুটে।
– আবার তর্ক করছো।
– আপনি তর্ক করছেন।
– উকিল সাহেবা বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
– মামলা ঠুকে দিব আপনার নামে।
শ্রুতি দৌড়ে ঘরে আসলো বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত গুজে বলল,
– উফ মাম্মা পাপা তোমরা থামবে সবসময় শুধু ঝগড়া করো।
শতাব্দী উৎস থেমে গেল।উৎস মেয়েকে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,
– আমি না তোমার মাম্মা ঝগড়া করে।
– আপনি ঝগড়ুটে যা সবাই জানে।
এভাবেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়ার পালা চলছে শ্রুতি একবার উৎসের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার শতাব্দীর দিকে তাকাচ্ছে।
(~~সমাপ্ত~~)
[আগামীকাল থেকে আমার টেস্ট পরীক্ষা শুরু তাই বাধ্য হয়েই দ্রুত গল্পের ইতি টানতে হয়েছে। সবাই ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]