ভূবন_বিলাসী part 14
#লেখিকাঃসীমা
বিকালে আলিয়ার পরিবারের সবাই আসে।আয়ানের ফুপিকে আলিয়া আর রিমি সাজিয়ে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়।
আলিয়ার শাড়ির সাথে মেচিং করে আয়ান পান্জাবী পরেছে।কাজী বিয়ে পড়া শুরু করলে আলিয়া থামতে বলে,
আলিয়াঃএক মিনিট দাড়ান এ বিয়ে হবে না।
সবাই অবাক হয়ে আলিয়ার দিকে তাকায়।
আয়ানঃআলিয়া এসব কি বলছো?
আলিয়াঃআমি ঠিকই বলছি এ বিয়ে হবে না।
আলিয়ার বাবাঃআলিয়া তুমি এখন ঝামেলা করবে না।
আলিয়াঃপাপা এ বিয়ে হলে ঝামেলা হবে।
আয়ানঃআলিয়ায়ায়ায়া(আলিয়ার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো আয়ান)তুমি চাও না আমার ফুপির বিয়ে হোক তাইনা?
সায়ানঃআয়ান তুমি আলিয়ার কথা না শুনে ওকে মারতে পারো না।আগে ওর কথা শুনো(সায়ান আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে)আপুনি তুই কিছু কি বলবি?
আলিয়াঃভাইয়া এই বিয়ে হলেও কেউ সুখি হবে না। চাচ্চু বা চাচি কিংবা ফুপি।ফুপিকে ফরহাদ নামে একজন আংকেল ভালবাসতো কলেজ লাইফ থেকে কিন্তু ফুপি চাচ্চুকে ভালবাসায় না করে দেয়।ফুপি প্রেগন্যান্ট হলেও বাচ্চার দায়িত্বসহ নিতে চেয়েছিলো যেখানে চাচ্চু বিয়ে করতে চায়নি।এরপর মাম্মা আর পাপা তোমাকে হাসপাতাল থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসে সেদিনও তোমাকে বাবার পরিচয় ফরহাদ আংকেল দিতে চেয়েছিলো।ফুপি কোমায় যাওয়ার পর থেকে ফরহাদ আংকেল এখন ফুপির পথ চেয়ে বসে আছে এখনও ওনি বিয়ে করেন নি।ওনি একজন ডক্টর এতদিন ফুপির চিকিৎসা আয়ানের বাবা করেও সুস্থ করতে না পারলে আমি ওনাকে দিয়ে ফুপির চিকিৎসা করাই আর ফুপি ঠিক হয়ে যায়।ভাইয়া তুমি বলো ফুপিকে চাচ্চু বিয়ে করলেও কি ভালবাসতে পারবে।
আয়ানঃআলিয়া এটা আমাদের মান সম্মানের ব্যাপার।
সায়ানঃআয়ান তুমি ভুলে যেওনা মায়ের প্রতি আমার বেশি হক আছে।আলিয়া তুই এসব কিভাবে জানতে পারলি?
আলিয়াঃফুপির ডায়েরী পড়ে যেটা রিমি আমাকে দিয়েছিলো। ফুপিও ফরহাদ আংকেলকে বিয়ে করতে চায়।
সায়ানঃআলিয়া আমার গর্ব হয় তুই আমার বোন। আমি বুজতে পেরেছি তুই কি বুঝাতে চেয়েছিস?পাপা চাচ্চুর সাথে মায়ের বিয়ে হলেও মা সুখি হবেনা।তাছাড়া যে মানুষটা বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দেয় তার আর কোনো ভরসা নেই।ফরহাদ আংকেল আমার মায়ের জন্য এখনও বিয়ে না করে অপেক্ষায় বসে আছে এটাই সত্যিকারের ভালবাসা।
,
আয়ানের বাবাঃকিন্তু সায়ান আমরা তোমার ভালোর জন্য…
সায়ানঃআমি মানি না শিহাব চাচ্চুকে বাবা বলে আমি মেহরাব ইসলামকে বাবা বলে জেনেছি আর সারাজীবন মেনেও যাবো।মাম্মা পাপা আমাকে তোমাদের ছেলে হিসেবে মানো না?
আলিয়ার মা এগিয়ে এসে,
আলিয়ার মাঃতোকে আমি জন্ম দেই না কিন্তু আমার কোলে তুই বড় হয়েছিস আমার দুই সন্তান আলিয়া আর তুই।
আয়ানের ফুপি এগিয়ে এসে বলে,
ফুপিঃভাইয়া আলিয়া যা বলল তা ঠিক আমার ছেলে আজ আমাকে মা বলে মেনে নিয়েছে আমি আজ সবথেকে খুশি।
আয়ানের বাবাঃফরহাদ কই ডাকো ওকে
,
,
ফরহাদ এতক্ষন এক কোনে দাড়িয়ে সব দেখছিলো আয়ানের বাবার ডাকে এগিয়ে আসে।আয়ানের বাবা খুশি হয়ে ফরহাদকে জড়িয়ে ধরে।আলিয়ার চাচ্চু চাচিও কিছু বলেনা।আয়ানের ফুপির সাথে ফরহাদের বিয়ে যায়।
বিয়ে শেষে আলিয়ার কাছে আয়ানের ফুপি আর ফরহাদ আসে।
ফরহাদঃআলিয়া বিয়ের পর সব দম্পতি বড়দের দোয়া নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে কারণ বড়রা তাদের নতুন জীবন দেয়।আমাদের জীবন তুমি দিয়েছো তুমি দোয়া করো।
আলিয়াঃআংকেল কি করছেন এটা আমার কর্তব্য ছিলো।আপনারা দুজনে সুখি হন।
ফরহাদ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আয়ানের ফুপিকে নিয়ে চলে যায়।
আলিয়ার দাদিঃদাদুভাই তুই সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলিস যা কেউ পারে না।এমন কেনো তুই?
আলিয়াঃদাদি মনে আছে দাদু বলতো মানুষ পৃথিবীতে নিজের জন্য আসে না পরের জন্য আসে।যে মানুষ পরের সুখের জন্য কাজ করবে সেই প্রকৃত মানুষ।
আলিয়ার দাদিঃএ কথাটা তুই এখনও মনে রেখেছিস?(অবাক হয়ে)
আলিয়াঃহ্যা দাদি আর সারাজীবন মনে রাখবো।
আলিয়ার মাঃআমার মেয়ের জন্য আমার আজ সত্যি অনেক গর্ব হচ্ছে।
আলিয়াঃদেখতে হবে না আমি….
এতটুকু বলে আলিয়া থেমে গেলো।সবাই উৎসুক হয়ে আছে আলিয়া কি বলবে কার কথা বলবে।
আলিয়াঃআমি কার বোন সায়ানের বোন আমি।
সায়ানঃ???আমার ছোট আপুনি।
সাদিয়াঃআলিয়া তুই কি দিয়ে তৈরী আমার সুখের জন্য নিজের ভালবাসাকেও তুলে দিলি।আমি জানি তুই আর আদি একে অপরকে ভালবাসতি শুধু আমার জন্য তুই সবার সামনে অভিনয় করলি যে আদি তোকে কখনো ভালবাসে না। কি করে পারিস তুই করতে?(মনে মনে)
আলিয়ার কাছে আয়ান সরি বলে।
আলিয়াঃআমি ওসব মনে রাখিনা বড় বড় দেশে এমন ছোট ছোট কথা হয়ে থাকে।
আয়ান মুচকি হেসে আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আদির দূর থেকে দেখে নিরবে চোখের পানি ফেলে।
চলুন তাহলে সেদিনের ফ্লাশব্যাকে যাই যেদিন আলিয়া বাড়িতে এসেছিলো সাদিয়ার বিয়ের জন্য।
,
,
ফ্ল্যাশব্যাক
আলিয়া সাদিয়ার বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু যখন জানলো বর রাজি না বিয়েতে তখন আলিয়া সাদিয়ার কাছে বরের ছবি চেয়েছিলো।সাদিয়া আদির ছবি পাঠিয়ে আলিয়াকে বলেছিলো আদিকে না পেলে আত্মহত্যা করবে।আদির ছবি দেখে আলিয়া চমকে উঠেছিলো।আদি আয়ানের কথামত প্রেমের অভিনয় করতে রাজি হলেও আলিয়াকে এক সময় খুব ভালবাসতে থাকে।আয়ানের সব কথা আলিয়াকে আগে থেকে আদি সব বলেছিল।আলিয়া দোটানায় পরে গিয়েছিলো কিভাবে শিহাবের সত্যিটা সামনে আনবে।সাদিয়া আদির ছবি পাঠালে আলিয়ার মাথায় বুদ্ধি আসে সে কি করবে?এতে তার অনেক কষ্ট হবে কিন্তু সাদিয়ার জীবন বেচে যাবে আর আয়ানের ফুপিও ন্যায় পাবে।আয়ান কখন কি করছে আদি সব আগে থেকে জানাতো আলিয়াকে।আলিয়া আদির সাথে দেখা করতে চাইলে আদি আলিয়ার ভার্সিটির সামনে আসে।আদিকে দেখে আলিয়া মুচকি হেসে দেয়।
আদিঃকি ব্যাপার জান আজ তোমাকে এত চুপচাপ দেখাচ্ছে কেনো?
আলিয়াঃআদি তুমি আমাকে কত ভালবাসো?
আদিঃকিভাবে পরীক্ষা দিতে হবে বলো বিল্ডিং এর উপর থেকে লাফ দিবো না সমুদ্রে ঝাপ দিবো।
আলিয়াঃতুমি আমাকে সত্যি ভালবাসলে আমি যা চাইব তুমি দিবে?
আদিঃএকবার চেয়ে দেখো।
আলিয়াঃ(সাদিয়া পিক দেখিয়ে)এ আমার আপু সাদিয়া।
আদিঃচিনি একে এক নাম্বারের লুচ্চা মেয়ে।ওর সাথে নাকি আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে।
আলিয়াঃআমি চাই তুমি একে বিয়ে করো।
আদিঃ(চমকে যায়)আলিয়া তোমাকে আমি খুব ভালবাসি তা তুমি জানো।
আলিয়াঃআয়ান আমার পিছু এত সহজে ছাড়বে না।তুমি আমাকে ভালবেসে থাকলে সেই ভালবাসার কসম সাদিয়া আপুকে তুমি বিয়ে করো প্লিজ আমি আমারপরিবারকে খুব ভালবাসি আমি তাদের হারাতে পারব না প্লিজ(কাঁদতে কাঁদতে)তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে আয়ান তোমাকে মেরে ফেলবে।আয়ান তোমার ছবি প্রথম আপুকে দিয়েছিলো।
আদিঃআলিয়া প্লিজ তুমি এমন বলো না আমি মানতে পারবো না।
আলিয়াঃতুমি আমার কথা না শুনলে আমার মরা মুখ দেখবে।ভালবাসার সুখ কি শুধু পাওয়া দূর থেকেও ভালবাসা যায়।
আদি সেদিন কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলো।
আয়ান আলিয়া বাড়ি আসার আগে আলিয়ার রুমে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিল যাতে আলিয়ার কি করছে সব জানতে পারে।
আদি বিয়ের পর থেকে সাদিয়াকে স্ত্রী অধিকার দেয়নি।প্রতিদিন রাতে আলিয়া ছবি বুকে নিয়ে কাটায়।
চলবে