ভূবন_বিলাসী part 15
#লেখিকাঃসীমা
আদি বিয়ের পর থেকে সাদিয়াকে স্ত্রী অধিকার দেয়নি।প্রতিদিন রাতে আলিয়া ছবি বুকে নিয়ে কাটায়।
আলিয়া বাগানে গিয়ে একা নিরবে চোখের পানি ফেলে।আদি আলিয়ার পিছনে গিয়ে দাড়ায়।
আদিঃএকা একা এখানে কি করছো?
আদির কন্ঠস্বর শুনে আলিয়া পিছনে তাকায়।আলিয়ার চোখের পানি আদি দুহাতে মুছে দেয়।
আলিয়াঃতুমি কেনো এখানে কেউ দেখলে সন্দেহ করবে যাও এখান থেকে।
আদিঃআর কত কাঁদবে তুমি? আয়ান তোমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে আর তুমি নিরবে সহ্য করে যাচ্ছো কেনো?(আলিয়ার হাত ধরে)
আলিয়াঃকি করবো বলতে পারো আদি যে পরিবারের সুখের জন্য আমি তোমাকে পর্যন্ত আপুর হাতে তুলে দিয়েছি তারা আয়ানের সত্যিটা জানতে পেরেও কি কোনোকিছু আয়ানকে বলেছে?আমি একটা মেয়ে আদি পরিবারকে ছেড়ে একা বাইরে বের হওয়া আমার পক্ষে নিরাপদ না।
আদিঃপরিবার পরিবার পরিবার এ পরিবারের জন্য কত কিছু করেছো তারা তার বদলে তোমাকে কি দিয়েছে এক বুক কষ্ট?
আলিয়াঃতবু তো আমার পরিবার আদি আমার মা বাবার জন্য আমি জীবনও দিতে পারব। এখন তুমি আমার জিজু প্লিজ আমাদের সত্যিটা যেন কেউ না জানে।চলে যাও এখন।
আদি চলে গেলে আলিয়া বাগানের দোলনায় গিয়ে বসে।
আলিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
আলিয়াঃদাদু বলতে পারো ভালো মানুষদের এত কষ্ট কেনো? জানো দাদু আদিও আমাকে বকে গেলো আমি কি অপরাধ করেছি বলো বাবা মা পরিবারকে আমি ছাড়তে পারবো না দাদু।দাদু জানো তুমি চলে যাওয়ার পর আমাকে কেউ ভালবাসে না।সবাই মুখে বলে ভালবাসি সায়ান ভাইয়ার স্কুলের ফাংশনে মা নয়তো দাদি যেতো আমি একদিন যেতে বলেছিলাম বলে দাদি বলেছিলো আমার স্কুলে মাম্মার যেতে হবে না।আবির ভাইয়া, সায়ান ভাইয়া আর সাদিয়া আপু পাপা নিজে দেশের বাইরে থেকে পড়ালেখা করিয়েছে আর আমাকে(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)জানো দাদু আয়ান আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল ভাগ্যের জোরে তখন বাচলে এখন আর বাচব না।আমাকে হাসপাতাল থেকে আনার পরই কিছুদিন পরে বিয়ে দেয়।বিয়ের দিন থেকে আয়ান অত্যাচার করছে ডক্টর নিয়মিত ঔষধ খেতে বলেছিলো।কিন্তু বিয়ের পর আয়ান এ ব্যাপারে কোনোদিন গুরুত্ব দেইনি।ডক্টর বলেছে আমার পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে অনেক টাকা লাগবে।আমি কার জন্য আর বাচব বলো দাদু?মাম্মা আর পাপাকে বলেছিলাম দূর দিয়ে যে আমার এক ফ্রেন্ডের অপারেশনের জন্য টাকা তুলবো ব্যাংক থেকে কিন্তু ওরা বলল সায়ান ভাইয়ার ভবিষ্যৎ আছে এরকম টাকা আর খরচ করতে দিবে না আমাকে।আমার নামে যত টাকা আছে সব ওদের অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিয়েছি।দাদু তুমি জানো সাদিয়া আপুর বিয়েতে আমি কি দিয়েছি তোমার দেওয়া সেই গহনার বাক্সটা অবশ্য চাচ্চু চেয়েছিল ওটা।আমার কাছে শুধু তোমার দেওয়া কিছু সম্পত্তি আছে।ওগুলো বিক্রি করলে মাম্মা আর পাপার অগোচরে আমি যে এতিমখানা আর বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি তাদের না খেয়ে থাকতে হবে।তাই দাদু আমি অপারেশন করবো না তুমি আমাকে কিন্তু বকবে না বলে দিচ্ছি।
,
,
আলিয়ার মনে হচ্ছে ওর দাদু বলছে ধৈর্য ধরতে।আলিয়ার পরিবারের সবাই চলে যায়।অনেকরাত পর্যন্ত আলিয়া বাইরে কাটিয়ে দেয়।আলিয়া রুমে এলে আয়ান আলিয়াকে কোলে তোলে।
আয়ানঃকোথায় ছিলে এতরাত পর্যন্ত?
আলিয়াঃবাগানে ভালো লাগছিল না তাই নামিয়ে দাও আমাকে।
আয়ান বুজলো আলিয়ার মন ভালো নেই তাই সে বাধ্য ছেলের মত আলিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
আলিয়াঃআয়ান তুমি আমার কাছে কি চাও?
আয়ানঃভালবাসা চাই।
আলিয়াঃআয়ান তোমাকে ভালবাসা আমি দিতে পারবো কিনা জানি না তবে আমি স্ত্রী হয়ে সব দায়িত্ব পালন করবো।
আয়ান আলিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
আলিয়াঃসবার মুখে হাসি ফুটিয়েছি তোমার মুখেও হাসি ফুটিয়ে আমি চলে যাবো।(মনে মনে)
পরদিন থেকে আলিয়াকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।সকালে উঠে সবাই নাস্তা বানিয়ে দেয়।বাড়ির সব কাজ একা হাতে সামলায়।রিমি আর আয়ানের বাবা হাসপাতালে চলে যায় আর আয়ান অফিসে মিলি ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় সারাদিন।আলিয়া একা একা রুমে বসে থাকে।
,
,
এভাবে পাঁচমাস কেটে যায়।
মিলির মন আলিয়া জয় করে ফেলেছে মিলি আগের মতো বাইরে আড্ডা দেয়না।রিমির সাথে সায়ানের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কাজলকে আবির ভালবাসে কিন্তু আবিরের বাবা চায় মিলিকে আবির বিয়ে করুক।শুধু আবিরের বাবা না সবাই চায়।আবির আলিয়াকে সব জানায় আর এটাও জানায় কাজল আর আবির বিয়ে করছে চুপ করে।তাদের সংসার বাচাতে আলিয়া মিলিকে বলে আয়ানকে বিয়ে করতে।কারণ আলিয়ার হাতে বেশি সময় নেই।মিলিও রাজি হয়ে যায়।ইদানিং মিলি আয়ানের খুব কাছে আসার চেষ্টা করে আর আলিয়া দূরে থাকার চেষ্টা করে।আয়ান আলিয়াকে এখন কথায় কথায় রাগ দেখায়।
এমনি একদিন আলিয়া আয়ানের জন্য কফি আনলে আয়ান কফি মুখে দিয়ে ফেলে দেয়।
আয়ানঃএটা কোনো কফি হলো চিনি কম তোমার থেকে মিলি ভালো কফি বানাতে পারে।ওকে বলো বানিয়ে দিতে।
মাঝে মধ্যে আলিয়ার গায়ে হাত তোলে আয়ান।আলিয়ার ওর মাকে বললে বলে,সংসারে ওমন হয় মেনে নিতে হয়।
আলিয়ার একদিন রাতে প্রচন্ড পেট ব্যাথা উঠে।আলিয়া বেডে ছটফট করলে আয়ান বলে,
আয়ানঃআলিয়া রাতে ঢং করো নাতো ঘুমাতে দাও।
আলিয়া কষ্ট করে রিমির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে।কিন্তু রিমি সায়ানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় দরজা খুলে দেয় না।আলিয়া একে একে সবার দরজায় নক করে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কেউ সেদিন দরজা খুলে দেয়নি।আলিয়া রহিমা রুমে গিয়ে নক করতে রহিমা দরজা খুলে দেয়।
রহিমাঃমা তোমার কি হইছে?
আলিয়াঃখালা আমার সময় শেষ বুজি আজকে শোন এখানে কিছু পেপারস আছে আমার দাদু আমাকে দিয়েছিলো যেটা আমার পরিবারের কেউ জানে না তুমি এ কাজ করিও এখানে এতিমখানার নাম লেখা আছে সেখানে পেপারস গুলো দিয়ো।আর সায়ান ভাইকে এই ব্যাংকের পেপারস দিও।আমার নামে যত টাকা ছিলো সব ওদের এখন থেকে।তোমাকে তো কিছু দিতে পারলাম না আমার হাতের এই দুইজোড়া বালা তোমাকে আমি দিলাম আমার দাদু আমাকে দিয়েছিলো এগুলো তুমি রেখো।
রহিমাঃমা তোমার কিচ্ছু হইব না আমি সবারে ডাকতাছি।
আলিয়াঃসবাইকে ডেকেছি খালা কেউ শুনেনি।তুমি ভালো থেকো….
দুই বছর পর
মিলির আজ বাচ্চা ডেলভারি হবে।ঠিক ধরেছেন আয়ান মিলিকে বিয়ে করেছে।সময়ে স্রোতে ভুলে গেছে আলিয়াকে।সায়ান আর রিমি আলিয়ার বাবা মাকে নিয়ে সুখে আছে।কাজল আর আবিরের বিয়েটা ওদের পরিবার মেনে নিয়েছে।
আলিয়াকে মনে না রাখলেও সেই এতিমখানার বাচ্চারা আর বৃদ্ধাশ্রমে মানুষ তাকে মনে রেখেছে।
আদি আর সাদিয়া ওদের মেয়ে আলিয়াকে নিয়ে আলিয়ার কবরে আসে।
আদিঃআলিয়া দেখো আমাদের মেয়ে তোমাকে দেওয়া কথা আমি রেখেছি সাদিয়াকে মেনে নিয়েছি।আমাদের মেয়ের নামও তোমার নামে রেখেছি।চুপ করে থেকো না ওঠো প্লিজ।
সাদিয়াঃআলিয়া তুই যা করেছিস সবার জন্য তা কেউ পারবে নারে কেউ না।
সাদিয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে আদি ওকে সাত্ত্বনা দেয়।ওদের মনে হচ্ছে আলিয়া ওদের দেখে মিটিমিটি হাসছে।
****সমাপ্ত****
(শেষের পার্টটা লিখতে গিয়ে আমি এত ইমোশন হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার চোখের পানি ঝরে পরতে দেখে আমার ছোট ভাই বলেছে আপু কাঁদছো কেনো?আমি ওর কথা শুনে লক্ষ করি আমার চোখ দিয়ে কখন পানি বয়ে পড়েছে বুঝতে পারিনি।হ্যাপি ইনডিং দিতে পারিনি কারণ ভূবন বিলাসীরা অন্যের সুখে সুখি হয় নিজের সুখ দেখে না।পুরো গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন।)