#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৭}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
—কি ম্যাডাম?যেই শুনছেন কুঞ্জ দেওয়ান আপনার হবু বর ওমনি মিস করতে শুরু করে দিয়েছেন?
রূপ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো।ঢোক গিলে গলায় দলা পাকানো কান্নাগুলো আটকালো।শক্ত কন্ঠে বললো,
—দেখুন আপনার সাথে আমার কথা আছে।
কুঞ্জ বিগলিত হেসে বললো,
—হ্যাঁ ম্যাডাম বলেন।
তনয় বার বার কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে কিন্তু কুঞ্জ বার বার সরিয়ে দিচ্ছে তাকে।কুঞ্জ এবার চোখ গরম করে তাকালো তনয়ের দিকে।তনয় থতমত খেয়ে চলে গেল উবার ডেকে।কুঞ্জ গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসলো।একটু পরই সন্ধ্যা হবে।
রূপ সোজাসাপ্টা বললো,
—দেখুন এই বিয়েটা আমি করতে পারবো না।
কুঞ্জ তেমন একটা গায়ে মাখলো না কথাটা।নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
—আচ্ছা।
রূপের রাগ হলো। সে রেগে বললো,
—দেখুন আমি কিন্তু আপনার সাথে মজা করছি না আমি বিয়ে করবো না ব্যাস।
কুঞ্জ হেসে বললো,
—তুমি তো এমনিতেও বিয়ে করবে না।বিয়ে তো করবো আমি তাও তোমাকে।আর তোমার বিয়ে হবে।
রূপের মস্তিষ্কে প্যাচ লেগে গেল।কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—ঐ যেটাই হোক আপনি বিয়ে করুন আমার সমস্যা নেই কিন্তু আমাকে করেন না প্লিজ।
কুঞ্জ আবার বিগলিত হেসে বললো,
—কেন বলো তো?তোমার মতো এমন মিষ্টি একটা মেয়েকে আমি কেন বিয়ে করবো না?
রূপ বিরক্ত হয়ে বললো,
—না আমি মটেও মিষ্টি না। আমি ভালো মেয়ে না আপনি কেন বুঝতে পারছেন না?আপনি জানেন আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম,সেখান থেকে আবার আমার ডিভোর্সও হয়ে গিয়েছে।আপনিই বলুন তো কোনো ভালো মেয়ের কি ডিভোর্স হয়?
কুঞ্জ স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,
—আমার খারাপ মেয়েই বেশি পছন্দ।
রূপ রেগে বললো,
—আজব তো?তাই বলে আপনি একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবেন?আপনার লজ্জা করে না একটা বিবাহিত ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে?
কুঞ্জ হেসে দিলো রূপের কথায়।রূপের এদিকে গা জ্বলে যাচ্ছে কুঞ্জের হাসিতে তার কথার কোনো মূল্যই দিচ্ছে না কুঞ্জ!কুঞ্জ হাসতে হাসতে বললো,
—না আমার লজ্জা করে না।তবে একটা শর্তে তোমাকে আমি বিয়ে করবো না।শর্তটা মানতে কি তুমি রাজি?
রূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কি শর্ত?
কুঞ্জ বললো,
—রাজি কিনা সেটা বললো?
রূপ অবাক হয়ে বললো,
—অাজব তো শর্তা না শুনে কি করে বলবো?
কুঞ্জ জেদি স্বরে বললো,
—হ্যাঁ আগেই বলতে হবে।বলো রাজি?
রূপ হার মেনে বললো,
—আচ্ছা ঠিক আছে রাজি এবার বলেন কি শর্ত?
কুঞ্জ বললো,
—বিয়ে তো সামনে শুক্রবার। তাহলে হাতে এখনো সাতদিন বাকি আছে।এই সাত দিন তুমি আমার সাথে কথা বলবে আমাকে সময় দিবে।সাতদিন পরও যদি তোমার আমাকে ভালো না লাগে তা হলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
রূপ স্তব্ধ হয়ে গেল।এ কেমন শর্ত? রূপ ঝটপট বললো,
—না না আমি এই শর্তে রাজি না।
কুঞ্জ বিরোধ জানিয়ে বললো,
—কেন নিজে উপর ভরসা নেই? নাকি সুদর্শন যুবককে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না?আর তাছাড়া এখন না বললে তো হবে না তুমি তো আগেই শর্তে রাজি হয়ে গিয়েছিলে।
রূপ রেগে গেল।তাকে নিয়ে এমন কথা এর আগে কেউ বলেনি তারপর কিছুক্ষণ ভেবে দেখলো এ আর এমন কি এমনিতেও সাতদিনে পছন্দ হওয়া কখনোই সম্ভব না।তাই সাতদিন পর না করে দিলে বিয়েটা আর হবে না।তই সে বললো,
—আচ্ছা আমি রাজি।
বলে ফোনটা কেটে দিলো রূপ।তারপর ভাবতে লাগলো সত্যি সত্যি যদি পছন্দ হয়ে যায় তখন কি করবে? তারপর আবার নিজেকে নিজেই বকে দিলো।পছন্দ হবে মানে?আমি কি এতোটাই দূর্বল নাকি যে এতো সহজে কেউকে পছন্দ করে ফেলবো?না না আমাকে স্ট্রং থেকে এই সাতদিন পাড় করতে হবে।
কুঞ্জ গাড়িটাকে লক করে বাড়ি ঢুকতেই দেখে তার মা লেউসি দেওয়ান বসার ঘরে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।কুঞ্জ দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে লেউসি দেওয়ান বললেন,
— কুঞ্জ!
কুঞ্জ দাঁড়ালো মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—কিছু বলবে?
লেউসি দেওয়ান এগিয়ে এলেন কুঞ্জের দিকে রাগি গলায় বললেন,
—এসব কি শুরু করছো তুমি?কুঞ্জ তুমি একজন পাবলিক ফিগার।তুমি কিভাবে এতো বড় একটা ডিসিশন নিচ্ছো?
কুঞ্জ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—আমার বিষয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় তোমার আছে?
লেউসি দেওয়ান রেগে বললেন,
—চুপ করো নিজের সীমা ছাড়িয়েও না।মিডিয়া যখন জানতে পারবে তুমি একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করছো তখন কি হবে জানো?তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।
কুঞ্জ উপরে যেতে যেতে বললো,
—আমার ক্যারিয়ার আমি বুঝে নিবো।তুমি তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করো যেমনটা আজীবন চিন্তা করে এসেছো।
কুঞ্জ চলে গেল নিজের ঘরে।লেউসি দেওয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন একটা।সে এসেছেন আজকে সকালে যখন কুঞ্জ রূপের বাড়িতে ছিল।
কুঞ্জ রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ভাবলো রূপকে একটু জ্বালালে কেমন হয়?ভাবার সাথে সাথে রূপকে কল করলো।রূপ প্রথমে ফোনটা ধরলো না যাতে কুঞ্জের বেশ রাগ হলো।
রূপ নিজের মাকে বোঝানোর চেষ্টায় ছিল যাতে এ বিয়েটা ভেঙে দেয়।কিন্তু পুরো দুই ঘন্টা যাবত বোঝানোর পরও তার মা এক কথাতেই আটকে আছে ”কুঞ্জ ছেলেটা খুব ভালো।তুই খুব সুখে থাকবি।”
রূপ না পেরে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দিলো।ঐ বিড়াল চোখটা ওর বাবা-মাকে একদম কালো জাদু করে ফেলেছে।বাবা-মা কিছুতেই তার কথা শুনতে রাজি না।ঠিক তখনই কুঞ্জ ফোন দেয়।মেজাজ এমনিতেই মাথায় ছিল কুঞ্জের কল পেয়ে আরও মেজাজ খারাপ হলো রূপের তাই সে ফোনটা ধরলো না।এদিকে কুঞ্জও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না সে তো রূপের সাথে কথা বলেই ছাড়বে।তাই সে অনাবরত কল করেই যাচ্ছে।প্রায় একুশবারের মতো কল করা হয়ে গিয়েছে রূপ এবার না ধরে পারলো না।ধরতেই ওপাশ থেকে কুঞ্জের ধমক শোনা গেল,
—এই এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?ইচ্ছে করে ধরোনি না কল?শোনো যদি তুমি তোমার শর্ত না মানো না তাহলে এখনই কাজী নিয়ে এসে বিয়ে করে নিয়ে আসবো বুঝেছো?
রূপ অবাক হয়ে জোরে বলে উঠলো,
—কিহ্? শর্তে এমন কোনো কথা ছিলো না।
কুঞ্জ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—ছিলো না।এখন আমি যোগ করলাম।
রূপ রেগে গিয়ে বললো,
—আমি আপনার কোনো শর্ত মানতে রাজি না।আপনি যা খুশি করে নেন।
কুঞ্জ বাঁকা হেসে বললো,
—আচ্ছা তাই?
রূপ ভয় পেলেও মুখে বললো,
—হ্যাঁ।
কুঞ্জ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো,
—ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার বাবাকে কল করে বলছি তুমি আমাকে কল করে বলেচো আমি যাতে তোমাকে বিয়ে না করি। ব্লা.. ব্লা…
রূপ রেগে বললো,
—আপনি এতো খারাপ!
কুঞ্জ হেসে বললো,
—আমি তো জানি আমি খারাপ এতোবার বলার দরকার নেই।যায়হোক শোনো কালকে রেডি হয়ে থেকো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো একটু।
রূপ বললো,
—আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
কুঞ্জ বললো,
—তোমার বাবাকে ফোন দিবো নাকি কাজী নিয়ে আসবো?কোনটা বেটার হবে বলো তো?আই থিংক কাজী নিয়ে আসার আইডিয়াটাই বেস্ট।তাই না?
রূপের নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।কোন জায়গায় ফেঁসে গেল সে? রূপ মুখ ফুঁলিয়ে বললো,
—আচ্ছা রেডি হয়ে থাকবো।
কল কেটে দিলো কুঞ্জ।সকাল বেলা উঠে রেডি হতে লাগলো রূপ। আয়নার সামনে দাঁড়ালো সে। বিয়ের পর বেশ বদলে গিয়েছে সে এটা সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারে।কি একটা ভেবে রূপ নিজের নাক ফুলটা খুলে ফেললো।এটার আর এখন কোনো দরকার নেই এটা তো অনিল তাকে দিয়েছিল।অনিলই নেই এখন তাহলে নাক ফুল রেখে কি করবে।আচ্ছা তার কি একটু সাজা উচিৎ? ভাবতে ভাবতেই কাজলটা নিয়ে চোখে হালকা করে দিলো।আয়না দিয়ে দেয়ালে টানানো কুঞ্জের আঁকা পেইন্টিংটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেয়ালে টানানো চোখটা দেখে সে অবাক হলো।আয়নায় নিজের চোখটা দেখলো আবার। দেয়ালে টানানো ঐ চোখ জোড়ার সাথে তার চোখের অফুরন্ত মিল।সে অবাক হলো তাহলে কি চোখ জোড়া তার?
তারমানে কুঞ্জ তাকে আগেও দেখেছে।এসব ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে যাচ্ছিল রূপ হঠাৎ চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে তার।সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।
এদিকে বাড়ির নিচে গাড়িতে কুঞ্জ তার অপেক্ষায়। কিন্তু রূপের আসার নাম নেই।সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেল কিন্তু রূপ এলো না।কুঞ্জের চোখে মুখে মলিনতার ছাপ।অপেক্ষা করতে করতে একসময় হতাশা আর একবুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চলে গেল কুঞ্জ। কেন যেন আজ তার গলার কাছটা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখটা জ্বলে যাচ্ছে তার।ঘোলার চোখটা রক্তিম বর্ণের হয়ে গিয়েছে।গাড়ি চালিয়ে সে কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।কতবার কল করেছে রূপকে কিন্তু রূপ কল তুলেনি।গাড়ি থামিয়ে দিলো কুঞ্জ। গাড়ি থামিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।তার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে অক্সিজেনের বড়ই অভাব।
চলবে…
(নেক্সট আর নাইস ছাড়া আর কোনো শব্দ কি নাই?রাতে আরেকটা পার্ট আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে সিওর না।)