#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১০}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
রূপের বাবা আমতা আমতা করে বললেন,
— আসলে বাবা রূপ তো বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছে।
কুঞ্জ চোখ বড় বড় করে ফেললো।বিস্মিত হয়ে বললো,
—কি বলছেন?রূপ নিজে বলেছে এই কথা?
রেজা সাহেব বললেন,
—হ্যাঁ। এই মাত্রই বলেছে।
কুঞ্জ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—ও কি আপনার আশে পাশে আছে?
রেজা বললেন,
—হ্যাঁ আমার সামনেই বসে আছে।কথা বলবে?
কুঞ্জ বললো,
—হ্যাঁ দিন না একটু।
রূপ এতক্ষণ চুপচাপ বসে ওর বাবা আর কুঞ্জের কথপোকথন শুনছিল।ওর বাবা ফোনটা এগিয়ে দিলে।ও ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?রেজা সাহেব ইশারায় বললেন কুঞ্জ কথা বলতে চায়ছে।রূপ ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো।কিন্তু কোনো কথা বললো না।কুঞ্জও প্রথমে কিছু বললো না।নিরবতা ভেঙে কুঞ্জ রূপকে আস্তে ডাক দিলো,
—রূপ!
রূপ কোনো জবাব দিলো না।কুঞ্জ আবারও বললো,
—ওপাশে কি রূপ আছে?
রূপ এবার গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—বলুন?
কুঞ্জ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো।তারপর বললো,
—তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো?
রূপ আবারও গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
—বাবা বলেছে তো।
কুঞ্জ ধমকে বললো,
—তুমি বলো। তোমাকে জিজ্ঞেস করছি না আমি?তোমার কি মুখ নেই?
রূপ দাঁত চেপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
—হ্যাঁ।
কুঞ্জ বললো,
—কি হ্যাঁ?একটা খু’নির সাথে সারা জীবন থাকতে পারবে?তাও আবার তোমার বাচ্চার খু’নি!পারবে থাকতে?
রূপ গভীরতা নিয়েই বললো,
—সেটা পরে দেখা যাবে?
কুঞ্জ এবার কোমল স্বরে ডাক দিল রূপকে,
—রূপ..!
রূপের যেন কি হলো?বুক টার মধ্যে ঢিপঢিপ করতে লাগলো।রূপ ঢোক গিলে বললো,
—হুম..?
কুঞ্জ কোমল আর আহত স্বরে বললো,
—রূপ দেখ তোমার মাথায় কি চলছে আমি জানি না।তোমার থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করেছি।এতো বছর পর তোমার চোখে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা দেখতে পারবো না আমি।আমার খুব কষ্ট হবে।তুমি আমার সাথে থাকবেনা তাতেও আমার চলবে কিন্তু তুমি ঘৃণার চোখে আমার দিকে তাকাবে এটা আমি মেনে নিতে পারবোনা।
রূপ ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
—বাবা একটু বাইরে যাবে?কিছু মনে করো না একটু জরুরি কথা আছে।
রেজা সাহেব কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে গেল।রূপ এবার কুঞ্জকে বললো,
—সমস্যা কি আপনার?আপনি তো আমাকে বিয়ে করার জন্য একদম পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন তাহলে এখন বিয়ে করতে চায়ছিলেন তাহলে এখন আবার বিয়েতে অমত করছেন কেন?
কুঞ্জ কিছু বললো না।চুপ করে সব শুনে যাচ্ছে। আসলে ওর কি বলা উচিত ও ভেবে পাচ্ছে না।রূপের সাথে কথা বলতেই ওর খারাপ লাগছে। কুঞ্জকে কিছু বলতে না দেখে রূপ নিজেই বললো,
—শুক্রবারে বউ সেজে আমি অপেক্ষা করবো।আপনি আসবেন কি আসবেন না সেটা আপনার ব্যাপার।
রূপ কথাটা বলে ফোন কেটে দিলো। কুঞ্জ ভেবে পাচ্ছে না ওর কি করা দরকার?ঘরের দরজায় কড়া নাড়তেই হুঁশ ফেরে কুঞ্জের।দরজা খুলে দিলে তনয় ভিতরে ঢোকে।হাতে কয়েকটা বড় বড় ফাইল।কুঞ্জ সেগুলো দেখে বললো,
—এগুলো কি?
তনয় হাতের ফাইলগুলো কুঞ্জের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—ভাবির রিপোর্টস।এখানে লেখা আছে ভাবির অতিরিক্ত স্ট্রেস আর ভয়ের কারণে মিসকারেজ হয়েছে।জরায়ুতে কোনো চাপ বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কুঞ্জ আতঙ্কে উঠলো।উত্তেজিত হয়ে বললো,
—তার মানে ওর বাচ্চার খু’নি আমি না?
তনয় বললো,
—ভাই কি বলছেন এসব? আমি আগেই জানতাম ভাবির মিসকারেজের জন্য আপনি দায়ী নন।
কুঞ্জ বললো,
—তনয় তুমি বুঝতে পারছো?আমি খু’ন করিনি।
তনয় বিরক্ত হলো কুঞ্জ বারবার সেই একই কথা বলছে।কুঞ্জ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—তারমানে ওর আগেই মিসকারেজ হয়েছিল।কিন্তু ও বুঝতে পারিনি।আমি আসার আগে ও অনিলের সাথে কথা বলছিল।ও কিছু করেনি তো?
তনয় ভাবুন হয়ে বললো,
—কি জানি হতেও পারে। ঐ অনিলকে দেখে ভাবি ভয় পেয়েছে যার জন্য গর্ভ’পাত হয়েছে।
কুঞ্জ বললো,
—তুমি একটু খোঁজ নাও না।আমি একটু বের হবো।তুমি এক কাজ করো রিপোর্টটা কাভার্ডে রেখে দাও।রূপের বাড়িতে তো কেউ জানে না যে ও প্রেগন্যান্ট ছিল।পরে না হয় আমি রূপকে রিপোর্টটা দেখিয়ে দিবো।
তনয় কাভার্ডে রিপোর্টটা রেখে দিয়ে চলে গেল।কুঞ্জ ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেল রূপের বাড়ির উদ্দেশ্যে।রূপকে নিয়ে বিয়ের শাড়ি আর সেরোয়ানি কিনতে যাবে সে।রূপের বাড়ির সামনে গিয়ে রূপকে ফোন কল দিল।রূপ প্রথমবার ফোন কল তুলতে পারলো না।কারণ সে ওয়াশরুমে ছিল।বেরিয়ে আসতেই আবার কল আসে।তখন রূপ কল রিসিভ করে।রিসিভ করতেই কুঞ্জ বলে,
—তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে এসো।বিয়ের কেনাকা’টা করতে যাবো।
রূপ রেগে বললো,
—আপনার যা ইচ্ছা কিনে আনুন আমি যাবো না।
কুঞ্জ তার থেকে দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বললো,
—পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসবে।না হলে কিন্তু বিয়ের আগেই শ্বশুরবাড়ি কব্জা করবো।
রূপ রেগেমেগে বললো,
—এই আপনার লজ্জা…
সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই কুঞ্জ ফোন কেটে দিলো।রূপ কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না।ইমামা বেগম এতোক্ষণ ঘরের বাইরে কান পেতে মেয়ের কথা শুনছিলেন।মেয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলেন কুঞ্জ তার মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় কিন্তু তার মেয়ে রাজি না।তাই সে কোনো কিছু না ভেবেই ঘরের ভিতর ঢুকে পড়লেন।ঢুকে বললেন,
—আরে যা না কি হয়েছে একদিন গেলে?ছেলেটা এতো কষ্ট করে এসেছে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
রূপ অবাক হয়ে ওর মাকে বললো,
—মা তুমি কিভাবে জানলে?
ইমামা বেগম থতমত খেয়ে বললেন,
—আমি আসলে ঐ..বাইরে…
রূপ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কাভার্ড থেকে একটা সাদা কালারের গোল জামা বের করতে করতে বললো,
—হ্যাঁ বুঝেছি।আচ্ছা যাচ্ছি। এমনিতেও কুঞ্জের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ইমামা বেগম চলে গেলেন।রান্না ঘরে গিয়ে কুঞ্জের জন্য একটি বক্সে খিচুড়ি ওঠাতে লাগলেন।সে জানে কুঞ্জ বিয়ের আগে ভিতরে আসবে না।তাই মেয়েকে দিয়ে কুঞ্জের জন্য খিচুড়ি পাঠাবেন সে।
রূপ শুধু জামাটা পড়লো।সাজতে ইচ্ছে করছে না তার।কান্নার জন্য চোখগুলো ফুলে গিয়েছে।চুলগুলো আঁচড়ে ক্লিপ দিলো।অনিলের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পর থেকে তার সাজতে ইচ্ছা করে না।সেজে কাকে দেখাবে?যাকে দেখাতো সে তো আর নেই।আর কুঞ্জ তো ওর বাচ্চার খু’নি কুঞ্জের কোনো অধিকার নেই তার সৌন্দর্য দেখার।চুল আঁচড়ানোর সময় আয়না দিয়ে আবারও সেই পেইন্টিংটা চোখে পড়লো।এবার আর নিজেকে থামালো না রূপ দৌড়ে গিয়ে পেইন্টিংটা খুলে বেলকনি থেকে নিচে ফেলে দিল।
গাড়িতে বসে রূপের অপেক্ষা করছিল কুঞ্জ।রিয়ার ভিউ মিরর থেকে কিছু একটা পড়তে দেখে কুঞ্জ গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে এগিয়ে গেল।পেইন্টিংটার উপরের কাচ গুলো ভেঙে গিয়েছে।প্রেমটাও ভেঙে গিয়েছে।কুঞ্জ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।হাত বাড়িয়ে পেইন্টিংটা উঠিয়ে নিলো।গিয়ে আবার গাড়িতে বসলো।
রূপও বেরিয়ে এলো কিছুক্ষণের মধ্যে।ভাঙা কাচ আর ফ্রেমটা দেখে রূপ সেদিকে তাকিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে বসলো।কুঞ্জ হেসে রূপের দিকে তাকিয়ে বললো,
—আচ্ছা রূপবতী তোমার কি রং পছন্দ? মানে কি রঙের শাড়ি কিনবো বলো তো?আমি বুঝতে পারছি না তোমার কি রঙের শাড়ি পছন্দ হবে!
রূপ রক্তিম চোখে তাকালো কুঞ্জের দিকে।তা দেখে কুঞ্জ আরও বড় করে হাসি দিলো।রূপ রুক্ষ কন্ঠে বললো,
—আপনার লজ্জা করে না?একটা নিষ্পাপ বাচ্চা যার কিনা হৃৎপিণ্ডটাও তৈরি হয়েছিল না।তাকে মেরে ফেলে এভাবে হাসতে?
কুঞ্জ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
—আমি খু’ন করিনি।
রূপ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
—সব খু’নিই একই কথা বলে।
কুঞ্জ কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।রূপকে এখন কিছু বললে সে বিশ্বাস করবে না তা সে জানে। আর এই মুহুর্তে কুঞ্জ কোনো তর্কে জড়াতে চাই না।সে তো খুব খুশি এখন রূপ কোনো অমত না করে বিয়েতে রাজি হলো এটা ভেবে।
তনয় আর অনিল সামনাসামনি বসে আছে।তনয় একপ্রকার কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে অনিলকে।অনিল তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে বসে বাদাম ভাজা খাচ্ছিল তখন তনয় গিয়ে বললো তাকে নাকি পপি নামের কেউ ডাকছে পার্কের বাইরে।অনিল চমকে উঠে তার গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে বলেছে তার চাচাতো বোন হয় পপি।এই বলে যেই না বাইরে এসেছে সেই তনয় তার হাত পা মুখ বেঁধে ধরে এনেছে এই রেস্টুরেন্টে। এখনও হাত,পা, মুখ বাঁধা তার।তনয় তার মুখ খুলতেই অনিল বললো,
—এই আপনি কে?আমাকে এভাবে তুলে এনেছেন কেন?
তনয় দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললো,
—বিয়ে করবো তাই।
অনিল থতমত খেয়ে বললো,
—দেখুন আমি ছেলে।আমার মেয়েদের উপর ইন্টারেস্ট আছে।ছেলেদের উপর কোনো ইন্টারেস্ট নেই।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন।
তনয় দাঁত কেলিয়ে বললো,
—আমার তো ছেলেদের উপরই ইন্টারেস্ট। আর তোমার মতো এতো হ’ট একটা ছেলে দেখে তো আমি নিজেকে কন্ট্রোলই করতে পারছি না।
অনিল ভয় পেয়ে গেল।ভয়ে কাঁপছে সে।শেষে কিনা একটা “গে” এর পাল্লাই পরলো সে?
চলবে….
(সবাই একটু বড় করে কমেন্ট করেন প্লিজ🥺)