হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১২} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
854

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১২}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

একা একাই কুঞ্জের ঘরে প্রবেশ করলো রূপ।যেহেতু লেউসি দেওয়ান এই বিয়েটা মেনে নেয়নি।তাই সে রূপ আসার আগেই হোটেলে চলে গিয়েছে।কয়েক ঘন্টা আগেই রূপ আর কুঞ্জর বিয়ে হয়।সাদা গাউনে রূপকে একদম সিনড্রেলার মতো লাগছিল।স্টেজে ওঠার জন্য কুঞ্জ হাত বাড়িয়ে দিলেও সেই হাতে হাত রাখেনি রূপ।কবুল বলার সময় কুঞ্জ কোনো কিছু না ভেবেই ঝটপট কবুল বলে দেয়।এদিকে রূপকে কয়েকবার বলার পর সে কবুল বলে।অনিলের সাথে বিয়ের দিন রূপের খুশির বাধ ছিল না।অনিলকে ছেড়ে অন্যকারো সাথে বিয়ে হবে তার সে তা কল্পনাতেও ভাবেনি।এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।বিশাল ঘরটা বেলিফুল আর রজনীগন্ধা ফুলে সাজানো হয়েছে।রূপ দরজা খুলে রুমে ডুকতেই তার মাথায় গোলাপের পাপড়ি পড়ে।সারা ঘরে বেলিফুলের গন্ধ মো মো করছে।সাদা ঘরে সাদা ফুলগুলো তেমন দেখা না গেলেও ফুলের গন্ধে রূপ বুঝতে পারছে এটা কোন ফুল।সবকিছু যেন বিষাক্ত লাগছে রূপের কাছে।এগিয়ে খাটের কাছে যেতেই বিছানায় একটা ফাইল দেখলো রূপ।সারা ঘর অন্যকার তবে বাইরে থেকে আসা মরিচ বাতির আলোই হলুদ ফাইলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রূপ নিজের হাতে থাকা ছোট ব্যাগটা থেকে ফোন বের করলো।ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রুমের সুইস বোর্ড খুঁজলো।সুইস বোর্ডের সবগুলো সুইচ অন করে বোঝার চেষ্টা করলো কোনটা লাইটের সুইস।পেয়েও গেল।ঘরে সোনালী আর সাদা লাইট রয়েছে।রূপ এগিয়ে গিয়ে ফাইলটা হাতে নিল।দেখলো তার মেডিকেল রিপোর্টস।রূপ রিপোর্টসগুলো পড়ে কাভার্ডে রেখে দেয়।বিছানার কাছে গিয়ে সেই বিশাল পেইন্টিংটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রূপ।যেটাতে রয়েছে অধিক সৌন্দর্য দিয়ে আঁকা তার চোখ জোড়া।রূপের শ্বাস ঘন হচ্ছে। পেইন্টিংটাই হাত বুলিয়ে দিলো সে।খট করে দরজায় শব্দ হলো।কিন্তু রূপের কোনো ভাবাবেগের পরিবর্তন হলো না।সে সেভাবে দাঁড়িয়ে পেইন্টিং-এ হাত বুলাতে বুলাতেই মলিন কন্ঠে বললো,
—আমার চোখ এতো সুন্দর না।

কুঞ্জ হাসলো।রূপ কখনো তার সাথে এমন কোমলভাবে কথা বলেনি।কুঞ্জ নিজের প্যান্টের পকেট থেকে ছোট একটা বক্স বের করলো।রূপ এখনো পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কুঞ্জ শান্ত স্বরে বললো,
—আমার কাছে তুমি এর থেকেও সুন্দর।

রূপ এবার পিছন ঘুরে কুঞ্জের দিকে ফিরলো।তার চোখ দিয়ে জল পড়ছে।কুঞ্জ মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কুঞ্জ রূপের দিকে এগিয়ে গেল।রূপ ভয় পেল। হৃৎপিন্ড প্রচন্ড গতিতে লাফাতে শুরু করেছে।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চোখ বন্ধ করে নিলো রূপ।তা দেখে কুঞ্জের হাসি চওড়া হলো।সে এগিয়ে গিয়ে রূপের হাত ধরে নিয়ে বিছানার ওপর বসালো।হাতে ছোট্ট বক্সটা খুলে সেখান থেকে তিনটা স্টোনের একটা নাক ফুল বের করলো।রূপের নাকে দেওয়া বড় নাক ছাবিটা খুলে ফেললো কুঞ্জ।নাকে কুঞ্জের স্পর্শ পেতেই রূপের চোখ জোরা আরো শক্ত হয়ে বন্ধ হয়ে গেল।কুঞ্জ রূপের মুখে ফুঁ দিলো।রূপ চোখ বন্ধ অবস্থায়ই চোখের পাপড়ি পিটপিট করলো।কুঞ্জ নাক ফুলটা রূপের নাকে পরিয়ে দিলো।নিচু হয়ে রূপের নাক ফুলের উপর অস্পষ্টভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কেঁপে উঠলো রূপ।কুঞ্জের বুকের কাছের সেরোয়ানিটা মুঠ করে নিলো। কুঞ্জ রূপের হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।রূপ একের পর এক শুঁকনো ঢোক গিলে যাচ্ছে। কুঞ্জ নিচু হয়ে রূপের কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
—তুমি যখন চোখে কাজল দাও তখন মনে হয় তোমার চোখে মেঘ জমেছে।

রূপের এখন পৃথিবীর আর কিছু মনে নেয়।সে এই মুহুর্তেটাতেই আটকে গিয়েছে।কুঞ্জ সরে গেল।রূপকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—ফ্রেশ হয়ে এসো আমার সিনড্রলা।

বলে কুঞ্জ চলে যাচ্ছিল নিজের কাজে।কিন্তু রূপ পিছন থেকে বলে উঠলো,
—আপনি অনেক আগে থেকে আমাকে চেনন না?

কুঞ্জ রূপের দিকে তাকালো।ভেবে বললো,
—হ্যাঁ।

রূপের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কেন পড়ছে সে জানে না।কুঞ্জর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো সে।এই প্রথম সে কুঞ্জকে এতো গভীরভাবে দেখছে।বেশ লম্বা, মোটাও না আবার চিকনও না।ফর্সা গায়ের রঙে কালো কোটটাতে মনে হচ্ছে যেন কোনো বিদেশি।চুলগুলো বরাবরের মতো চোখের উপর।ঘোলা চোখগুলো ঘরের সোনালি আলোতে জ্বলজ্বল করছে।পাতলা ঠোঁটে ভিষণ সুন্দর হাসিটা যেন তার সৌন্দর্যের প্রাণ কেন্দ্র।মুখ ভর্তি দাঁড়ি না থাকলেও খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আছে।রূপের এমন গভীর চাহনিতে কুঞ্জ রূপের দিকে আর একটু এগিয়ে এসে মুখটা রূপের চোখের সামনে নিয়ে বললো,
—একটু ভালো করে দেখো তো কোনো ডিফেক্ট আছে কিনা?

রূপ চোখ নামিয়ে নিলো।লজ্জাময় একটি হাসি দিলো নিজে নিজে।কিছু একটা মনে পরতেই বললো,
—বললেন না তো কবে থেকে চেনেন?

কুঞ্জ ভেবে বললো,
—যেহেতু আজ আমাদের প্রথম রাত তাহলে আজকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার ফরজ কি বলো?

রূপও বললো,
—হ্যাঁ। তা তো ঠিক।আর তাই এখন আপনি আমাকে বলবেন আপনি আমাকে প্রথম কোথায় কবে দেখেছেন?

কুঞ্জ রূপকে নিয়ে নিজের পেইন্টিং রুমে গেল।সেখানে কাপড় দিয়ে ঢাকা সকল জিনিসপত্র যাতে ধুলোবালি না পরে।সেখান থেকে একটা পেইন্টিং এর উপর থেকে কাপড় সরালো কুঞ্জ।যেই পেইন্টিং এ দেখা যাচ্ছে রূপকে সাদা শাড়িতে।রূপ পেইন্টিংটা দেখে বললো,
—এটা আমি নানি বাড়ি গিয়ে পরেছিলা।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার নানি বাড়িতে গিয়ে এই শাড়িটা পরেছিলাম।

কুঞ্জ রূপের দিকে তাকিয়ে বললো,
—আর সেখানেই আমি প্রথম দেখেছিলাম একজন সাদামাটা স্নিগ্ধময়ীকে।যার পরণে সাদা শাড়ি,রেশমি কালো চুলগুলো খোলা,চোখে ঘন কাজল।কানে আর চুলে ছিল একমুঠো বেলি ফুলের মালা।সাদা রংটা আমার কখনোই পছন্দ না।এ কোনো রঙের মধ্যে পরে বলে আমার মনে হয়না।কিন্তু তোমাকে যেদিন প্রথম সাদা রঙে দেখেছিলাম সেদিন থেকে বিশ্বাস করতে পেরেছি যে সাদা রং বলে রং হয়।তোমার গোল গোল চোখে বোকা বোকা চাহনি ঠোঁট উল্টিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠা সবকিছু মুগ্ধ করেছিল আমাকে।আমার একটা পেইন্টিং করতে যেখানে পাঁচ থেকে এক সপ্তাহ লেগে যায় সেখানে আমি তোমাকে একবার দেখে একদিনেরও কম সময়ে এঁকে ফেলেছিলাম।

রূপ স্তব্ধ হয়ে সব কথা এতোক্ষণ শুনছিল।তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।রূপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
—ভালোবাসেন আমাকে?

কুঞ্জ রূপের চোখে চোখ রেখে বললো,
—তোমার কাছে গিয়েছিলাম সারা জীবনের জন্য নিজে ভালোবাসাকে নিজের করতে।কিন্তু গিয়ে দেখলাম আমার ভালোবাসা তার ভালোবাসার সাথে মিজে সুখ কুড়াতে বেড়িয়েছে।

রূপ ফুঁপিয়ে বললো,
—আমার আর অনিলের যদি ডিভোর্স না হতো?যদি আমাকে দ্বিতীয়বার পাওয়ার কোনো সুযোগ না পেতেন তখন কি করতেন?

কুঞ্জ রূপের চোখের পানি মুছে দিলো।মলিন হেসে বললো,
—তোমাকে তো আমি সেদিনই পেয়ে গিয়েছি।যেদিন তোমাকে ভালোবেসেছি।

রূপ ফুঁপিয়ে উঠলো কুঞ্জ দুই হাতে জরিয়ে নিলো রূপকে।মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—তোমার অতি প্রিয় দর্পন হতে চাই।যে আজীবন তোমার বর্ণনাই বিভর থাকবে।

চলবে…

(ছোট হয়েছে জানি কেউ প্লিজ বকা দিবেন না।🥺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here