শুধু তুমি 💕
পর্ব -১
Samira Afrin Samia
#নিপা
তিন বছর পর এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে তা একদমই ভাবতে পারেনি নীল। আনিকা যে দিন ওদের দুই বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে চলে গেছিল ঐ দিনই ছিল ওদের শেষ দেখা। তার পর নীল আর আনিকা কখনও সামনাসামনি হয়নি। আজ তিন বছর পর ছুটির দিনে নিজের ওয়াইফ কে নিয়ে শপিং করতে এসেছে নীল। নীলের ওয়াইফের নাম তনা।তনা নীলের অতীত সম্পর্কে সব কিছুই জানে। এমনকি আনিকার ব্যাপারে ও প্রায় সব কিছু জানে। ছবিতে আনিকা কে অনেক বার দেখেছে কিন্তু বাস্তবে কখনও সামনে থেকে দেখেনি।তনা নীলের ভালোবাসার ভাগ কাউকে দিতে চায় না। আনিকার নাম শুনলেই তনা অনেক আপসেড হয়ে যায়।নীলের ভিতর একটা অজানা ভয় কাজ করছে। তনা যদি আনিকা কে দেখে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে। তনা আর আনিকা যাতে সামনাসামনি না হয় সেজন্য নীল তনা কে নিয়ে অন্য দিকে চলে যেতে চাইল।
— তনা চলো ঐ দিকে যাই।
— একটু দাঁড়াও এই তো এখান থেকে শুধু একটা হিজাব নিব।
— বলছি এখান থেকে চলো।হিজাব তো ঐ দিকে ও পাবে।
— কি হলো তোমার। হঠাৎ করে এমন করছো কেন?
আজব মানুষকে নিয়ে পড়লাম বাবা। কখন যে কি হয় তা আল্লাহ ই জানে।
তনা কথা বলতে বলতে পিছন ফিরে নীলের কাছে আসার সময় আনিকার দিকে চোখ চলে যায়। আনিকা কে দেখে এক মুহূর্তেই চিনে যায় এটা ই যে ঐ আনিকা যার সাথে ওর হাজবেন্ড নীলের রিলেশন ছিল।তনা নীলের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না। আনিকা অনেক বছর পর নীল কে দেখে আর মুখ ফিরিয়ে নেয় নি।আনিকা নীলের সামনে যাওয়ার সাহস টুকু পাচ্ছে না। কি করে নীলের সম্মুখীন হবে সে?
যাকে একা রেখে মাঝ পথে ছেড়ে চলে গেছিল। আজ তিন বছর পর কি করে তার সামনাসামনি হবে।
আনিকা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে নীলের দিকে। নীলের কাছে এসে ওর থেকে দু’পা দূরে দাঁড়িয়ে
— কেমন আছো নীল?
নীল একবার তনার দিকে তাকিয়ে আবার আনিকার দিকে তাকিয়ে আনিকার প্রশ্নের উত্তর দিল।
— ভালো।শুধু ভালো না অনেকটাই ভালো
— ওহ,,,আমি কেমন আছি তা জানতে চাইবে না?
— তুমিও নিশ্চয় ভালো আছো।ভালো থাকার জন্য ই তো ঐ দিন আমাকে ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরে চলে গেছিলে।
— দেখো নীল
নীল আনিকা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।
— যাই হোক এসব কথা আর মনে করতে চায়না। তুমি এখানে কেন আসছো?
— কিছু কাজে এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম।ভাবলাম মা’র জন্য একটা শাড়ি কিনে নিয়ে যাই।
— তুমি একা আসছো?
তোমার হাজবেন্ড কোথায়। তোমার সাথে আসেনি?
আনিকা একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
—আর হাজবেন্ড,,, আমাদের আট মাস আগে ডির্বোস হয়ে গেছে।
— ডির্বোস….?
— হ্যা।।। ও আমাকে ওর বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিল। প্রথমে আমাদের মাঝে সব ঠিকই ছিল। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো ততই আমাদের মাঝে ঝগড়া হতে শুরু হয়ে গেল। ও ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা কাটাকাটি করত।ও তো অনেক সময় আমার গায়ে ও হাত তুলেছে।
যাক এসব তোমাকে বলে কি হবে। তুমি এখানে কার সাথে আসছো?
নীল তনার হাত ধরে তনাকে কাছে এনে
— এ হলো তনা আমার ওয়াইফ।
আনিকা এতক্ষণ তনার দিকে খেয়াল করেনি। নীল তনাকে ওর ওয়াইফ বলার পর আনিকা এক পলক তনার দিকে তাকিয়ে তনাকে দেখে নেয়। আনিকা চুপ করে কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে
— বিয়ে করেছো?
— হুম।
তুমি চলে যাওয়ার পর এটা খুব ভাল করে বুঝতে পারলাম যে কারো জন্য কখনও কারো জীবন থেমে থাকে না।
— হুম।
তনা এতক্ষণ ধরে নিরবে দাড়িয়ে নীল আর আনিকার সব কথা শুনছিল।তনা কাউকে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু চুপচাপ যা হচ্ছে তা দেখে যাচ্ছে। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। কি একটা বাঁধাতে যেন জলের কণা গুলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে না। নীল তনার দিকে লক্ষ্য করে
— আচ্ছা আনিকা তুমি থাকো আমরা যাই।
নীল এটা বলে তনার হাত ধরে আনিকার সামনে দিয়ে চলে আসলো।আনিকা চুপ করে নীল কে দেখছে। কতটা পাল্টে গেছে নীল। আনিকার প্রতি নীলের ভালোবাসা আজ শুধুই ঘৃণা আর একরাশ অভিমানে রুপ নিয়েছে। নীলের এমন পাল্টে যাওয়ার কারণ টা তো আনিকা নিজেই।নীল অবশ্য পাল্টাবে না কেন। আনিকা যদি নীলকে ছেড়ে গিয়ে অন্য কারো সাথে সংসার করতে পারছে। তাহলে নীল কেন পারবে না অন্য কারো সাথে সংসার করতে ওর সাথে সুখী হতে।
নীল ড্রাইভ করছে আর তনা পাশের সিটে চুপ করে বসে আছে। শপিং মলে ও তনা কিছু বলেনি।গাড়িতে ও একদম চুপ আছে। নীল অবশ্য তনার চুপ থাকার কারণ টা বুঝতে পারছে। পাগলী মেয়ে টা যে নীল কে অনেক ভালোবাসে।
নীল যখন হনার্স ফাইনাল ইয়ার এ তখন আনিকার সাথে নীলের রিলেশন ছিল। নীলের তখনও স্টাডি কমপ্লিট হয়নি। হাতে কোন কাজ নেই। বাবা মারা গেছে ক্লাস নাইনে থাকতে। একা মা কে নিয়ে ওর পরিবার।
— নীল বাবা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। ছেলে ভালো। ভালো জব ফেমিলি ও হাই ক্লাস।
— তুমি পারবে না আমার জন্য আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে?
— কিছু দিন কিছু দিন করতে করতে তো দুইটা বছর পার হয়ে গেল। আমি আর পারছি না। আমার ফেমিলি কে মানাতে। শুনছি বাবা মা নাকি আজ ওদের বাসায় যাবে বিয়ের দিন ঠিক করতে।
— তুমি এসব কি বলছো?
আমাদের রিলেশন টা কে এভাবে মাঝ পথে ভেঙ্গে দিবে?
— আমার আর কিছুই করার নেই নীল। তোমাকে আমার বাবা মা মেনে নিবে না। না আছে তোমার ফেমিলি স্ট্যাটাস। না আছে ভালো একটা জব।
— ভালো একটা জব ই কি তোমার কাছে আমাদের ভালোবাসা থেকে বড় হয়ে গেল?
— আমি তা বলছি না। আমার পহ্মে এই রিলেশন টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।
হঠাৎ করে কার ব্রেক করলো নীল। তনা একটু ভয় পেয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে কার থেকে নেমে বাসায় চলে গেল। একটা সময় ছিল যখন নীলের কাছে কিছুই ছিল না। এমনকি ওর ভালোবাসা ও ওর থেকে দূরে চলে গেছিল। কিন্তু আজ তিন বছর পর নীলের কাছে সব আছে। নিজের ব্যবসায়, শহরে কয়েকটা বাসা, গাড়ি।। সবই হয়েছে তনার জন্যে। তনা নীলের লাইফে না আসলে নীল আজ হয়ত কোন ফুটপাতে পড়ে থাকতো। নীল কার থেকে নেমে বাসায় গেল।রুমে গিয়ে দেখে তনা রুমে নেই। বেলকুনিতে গিয়ে ও সেখানে তনা কে পেল না। এবার একটু চিন্তিত হয়ে নীল যেই তনাকে ডাকতে যাবে। তখনই তনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
চলবে…