শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ২ Samira Afrin Samia #নিপা

0
696

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ২
Samira Afrin Samia
#নিপা

তনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নীল কে দেখে নীলের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নীল ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে দেখে তনা কিচেনে রান্না করছে। নীল কিচেনে গিয়ে তনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে
— কি হয়েছে আমার বউ টার এতো চুপচাপ কেন?
তনা নীল কে ছাড়িয়ে ফ্রিজ থেকে কিছু সবজি নিয়ে এসে কাটতে লাগলো। নীল তনার কাছে গিয়ে পিছন থেকে তনার কোমড়ে ধরে তনাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
— এই পাগলী কথা বলছো না কেন?
তুমি চুপ থাকলে কি আমার ভালো লাগে?
— আনিকা যদি তোমার কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে যাবে?
কথা গুলো বলে তনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নীল তনার কথা শুনে। তনার মুখ উপরে তুলে কপালে একটা চুমু খেয়ে
— তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো?
তবা কান্না মাখা কন্ঠে
— তুমি যদি ভুলে ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাব তাহলে কিন্ত আমি আর এক মুহূর্ত ও বাঁচব না। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতে ও পারি না। তুমি আমাকে রেখে যদি ওই আনিকার কাছে যেতে চাও তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।প্লিজ নীল তুমি কখনও আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।তুমি চলে গেলে আমি মরে যাব।
— এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর একবার ও যদি মারা যাওয়ার কথা বলো তাহলে এখনই আমি নিজ কে শেষ করে দিব।শুধু কি তুমি একাই আমাকে ভালোবাস আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না?
যে দ্বিতীয় বার আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। যার জন্য আমার জীবনটা অন্ধকার থেকে আবার আলোয় ফিরে এসেছে আমি কি করে তাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাব?
তনা এবার নীল কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেধে দিল।
— আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীল।
নীল ও তনাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে
— আমি ও তো আমার পাগলী বউটা কে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।
তনা কান্না করে ছোট বাচ্চাদের মত মুখ বাকিয়ে
— আমি মোটেও পাগলী না।
— আমি তোমাকে পাগলী বলছি?
আমি তো আমার বউ কে পাগলী বলছি।
— তোমার বউ তো আমি ই।
নীল দুই হাত দিয়ে তনার মুখ ধরে
— আমার বউ তুমি?
আমি তো জানতাম না।
তনা হেসে দিয়ে নীলের বুকে কয়েকটা কিল ঘুসি দিয়ে
— তুমি জানতে না আমি যে তোমার বউ?
দাঁড়াও আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
নীল তনাকে কোলে তুলে নিয়ে তনার নাকে নাক ঘসে দিয়ে
— এইতো এখন মনে হচ্ছে এটা যে আমার বউ।
— হুম হয়েছে এখন আমাকে কোল থেকে নামান মি.জামাই। রান্না করতে হবে। রাতে খাবেন না?
— এখন কষ্ট করে আমার বউ টার রান্না করতে হবে না। আমি বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিব।
— তাহলে এখন কি করবেন মি.জামাই?
তনা কথাটা বলে নীলের নাক টেনে দিল।নীল দুষ্টুমি হাসি দিয়ে
—এখন বউকে নিয়ে ছাদে যাব।ছাদে গিয়ে রাতের আকাশের তারা গুনব আর রোমান্স করবো।
— জি না মশাই। আমি আপনার সাথে তারা গুনব না আর রোমান্স ও করবো না। আমি তো চাঁদ দেখবো।
— হুম। আপনি কি করবেন আর কি না করবেন তা পরেই দেখা যাবে।
.
.
.
.
আনিকা ছাদে রাখা দোলনা টায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে। ঐদিন যদি নীলকে ছেড়ে না যেত নীলের হাত ধরে বাকি টা পথ চলত। তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হত না। নীলের ভালোবাসা দিয়ে ওর জীবন পরিপূর্ণ থাকত।এখন তো নীলের বউ আছে সংসার আছে। নীল ওর লাইফে অনেক সুখী। আনিকা আনমনে অতীতের কিছু স্মৃতি আওড়াচ্ছে। পিছন থেকে আনিকার মা ডেকে উঠলো
— আনিকা,,,,,, এখানে এভাবে বসে আছিস যে। কি হয়েছে রে মা?
আনিকা ওর মা’র কথায় পিছনে ফিরে
— আমার জীবনে নতুন করে আর কি হওয়ার বাকি আছে মা। যা হবার সব তো হয়েই গেছে।
— এভাবে বলছিস কেন?
আমরা কি তোর খারাপ চাই?
— তোমরা আমার ভালো চাও এটাই তো আমার জন্য তোমাদের সবচেয়ে খারাপ চাওয়া।
— আনিকা,,,,,?
— সত্য কথা কখনও শুনতে ভালো লাগে না মা। তোমরা আমার উপর একটা দয়া করো। তুমি আর বাবা আমার আর ভালো চেও না।
— তুই কি পারিস না নতুন করে তোর জীবন টা আবার শুরু করতে?
— আমি যদি বলি হ্যা পারবো। তাহলে কি তোমরা নীলকে আমার লাইফে ফিরিয়ে আনতে পারবে?
পারবে কি আমার জীবন আবার আগের মত করে দিতে?
আনিকার কথা শুনে আনিকার মা চুপ করে আছে। সত্যি ই তো হাজার চেষ্টা করে ও এখন আনিকার জীবন আবার আগের মত করে দিতে পারবে না।
— দেখ মা তুই তো আর সারা জীবন একা থাকতে পারবি না।
— ভেব না মা। সারা জীবন আমি তোমাদের উপর বোঝা হয়ে থাকব না। আমি জীবনে একা চলতে শিখে গেছি।এখন আর আমার কাউকে প্রয়োজন নেই।
— আমরা কি বলছি রে মা তুই আমাদের উপর বোঝা?
— আমি এখানে একটা কোম্পানিতে জবের জন্য এপ্লাই করছি। জব টা হয়ে গেলে আমি নিজের টা নিজেই করে খেতে পারবো।
আনিকা নিচে নেমে গেল। আনিকার মা মুখে আঁচল দিয়ে কেঁদে ই যাচ্ছে। মেয়ের আজ এমন অবস্থার জন্য উনারাই দায়ী। ভালো ফেমিলি ছেলের ভালো জব দেখে এক প্রকার জোর করে তখন আনিকার বিয়ে দিয়েছিল। মেয়ের ভালোর জন্য মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছে। আনিকার বাবা মা ভেবে ছিল মেয়ে সুখী হবে। কিন্তু মানুষ যা ভাবে সব সময় তো আর তা হয়না।

—————————————–
সকালে………
— এই যে মি.জামাই আর কত ঘুমাবেন এবার তো উঠেন।
নীল ঘুমিয়েই যাচ্ছে
— আপনার তো অফিস নেই। কোন কাজ নেই তাই কাল থেকে আরও বেশি করে তারা শুনিয়েন।
নীল মরার মত পড়ে ঘুমাচ্ছে।তনার কোন কথাই ওর কানে যাচ্ছে না।
— এবার কিন্তু পানি দিব।ওই নীল উঠো।
ধুর বাবা এই নীল টা যে কত ঘুমাতে পারে। অফিসে গেলে যাবে না গেলে না যাবে আমার কি।
এই বলে তনা বেড থেকে উঠে যেতে নিচ্ছিল।পিছন থেকে নীল তনার হাত ধরে টান দিয়ে তনাকে নীলের উপরে ফেলে দেয়। তনা উঠতে চেষ্টা করলে নীল শক্ত করে তনাকে জড়িয়ে ধরে রাখে
— নীল করছো টা কি? ছাড়ো…..
— উঁহু,,,, সকাল সকাল এত চেচাঁমেচি না করে আমার পাশে একটু শুয়ে থাকতে প্রব্লেম কি তোমার?
— আমি চেচাঁমেচি করি?
— আমি এই কথা বলছি নাকি?
— নীল মার খাবা কিন্তু।
— ছিঃ ছিঃ মেয়ে এসব কি বলে।নিজের হাজবেন্ড কে মেরে পাপ করবে নাকি। হাজবেন্ড কে মারতে নেই শুধু আদর করতে হয়।
— হুম মি.হাজবেন্ড আপনার এসব ড্রামা রাখেন আর উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যান।
— যাবো কিন্তু তার আগে একটা আদর দেও।
— ধ্যাত সারাক্ষণ শুধু উল্টা পাল্টা কথা ফ্রেশ হতে যাও।
— এই যে ম্যাডাম দিবেন না তো?
— না স্যার।
— মনে থাকে যেন পরে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবেন না।
–তোমার দোষ দিতে পারব না মানে? কি বুঝাতে চাইছ?
–তুমি তো আর আদর দিবেনা। এখন যদি অন্য কেউ আমাকে আদর দেয়।
তনা নীলের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিল।নীল তনাকে কান্না করতে দেখে বেড থেকে উঠে এসে তনার দু’হাত নীলের মুঠোর মাঝে নিয়ে
— এই কি হলো কাঁদছ কেন?
তনা কেঁদেই যাচ্ছে কিছু বলছে না
— কি হলো প্লিজ কাঁদে না। আরে আমি তো জাস্ট মজা করছি।
এই বউ,,,,,,,?
— তুমি কি আনিকার কাছে যেতে চাইছ?
–এখানে আনিকা আসলো কোথা থেকে?
— আমি জানি ও তোমার ফাস্ট লাভ। তুমি ওকে আজও ভুলতে পারোনি।
এটা বলে তনা জোরে শব্দ করে কেঁদে দিল।নীল তনার কান্না সহ্য করতে পারে না। নীল খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এভাবে তনার কান্না থামানো যাবে না। মেয়েটা যে বড্ড ভালোবাসে নীলকে। নীল দুই হাত দিয়ে তনার মুখ উপরে তুলে তনার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিল।তনা নীলের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্ত নীল তনাকে ছাড়ছে না। কিছুক্ষণ পর নীল নিজে থেকে তনাকে ছেড়ে দেয়। তনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নীলের দিকে তাকাচ্ছে না। নীল তনার গালে হাত রেখে
— তুমি কেন শুধু শুধু আমার অতীত কে বর্তমানে ডেকে আনছো?
আনিকা আমার অতীত। তুমি আমার বর্তমান তুমিই আমার ভবিষ্যত। আমি আনিকা কে ভালোবাসতাম। কিন্ত এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাকিটা জীবন কাটাতে চাই। তোমাকে ভালোবাসতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তুমি তো বলো ফাস্ট লাভ কখনও ভুলা যায়না। তাহলে শুন হ্যা আনিকা আমার ফাস্ট লাভ। আমি সত্যি ই ওকে ভুলতে পারতাম না। যদি না তুমি আমার জীবনে আসতে। তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছ যার কাছে আমার ভালোবাসা কিছু ই না। তোমার ভালোবাসা পেয়ে কখন যে আমি আনিকা কে ভুলে গেছি তা আমি নিজেও জানি না।

চলবে….

তনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নীল কে দেখে নীলের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নীল ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে দেখে তনা কিচেনে রান্না করছে। নীল কিচেনে গিয়ে তনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে
— কি হয়েছে আমার বউ টার এতো চুপচাপ কেন?
তনা নীল কে ছাড়িয়ে ফ্রিজ থেকে কিছু সবজি নিয়ে এসে কাটতে লাগলো। নীল তনার কাছে গিয়ে পিছন থেকে তনার কোমড়ে ধরে তনাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
— এই পাগলী কথা বলছো না কেন?
তুমি চুপ থাকলে কি আমার ভালো লাগে?
— আনিকা যদি তোমার কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে যাবে?
কথা গুলো বলে তনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নীল তনার কথা শুনে। তনার মুখ উপরে তুলে কপালে একটা চুমু খেয়ে
— তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো?
তবা কান্না মাখা কন্ঠে
— তুমি যদি ভুলে ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাব তাহলে কিন্ত আমি আর এক মুহূর্ত ও বাঁচব না। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতে ও পারি না। তুমি আমাকে রেখে যদি ওই আনিকার কাছে যেতে চাও তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।প্লিজ নীল তুমি কখনও আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।তুমি চলে গেলে আমি মরে যাব।
— এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর একবার ও যদি মারা যাওয়ার কথা বলো তাহলে এখনই আমি নিজ কে শেষ করে দিব।শুধু কি তুমি একাই আমাকে ভালোবাস আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না?
যে দ্বিতীয় বার আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। যার জন্য আমার জীবনটা অন্ধকার থেকে আবার আলোয় ফিরে এসেছে আমি কি করে তাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাব?
তনা এবার নীল কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেধে দিল।
— আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীল।
নীল ও তনাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে
— আমি ও তো আমার পাগলী বউটা কে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।
তনা কান্না করে ছোট বাচ্চাদের মত মুখ বাকিয়ে
— আমি মোটেও পাগলী না।
— আমি তোমাকে পাগলী বলছি?
আমি তো আমার বউ কে পাগলী বলছি।
— তোমার বউ তো আমি ই।
নীল দুই হাত দিয়ে তনার মুখ ধরে
— আমার বউ তুমি?
আমি তো জানতাম না।
তনা হেসে দিয়ে নীলের বুকে কয়েকটা কিল ঘুসি দিয়ে
— তুমি জানতে না আমি যে তোমার বউ?
দাঁড়াও আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
নীল তনাকে কোলে তুলে নিয়ে তনার নাকে নাক ঘসে দিয়ে
— এইতো এখন মনে হচ্ছে এটা যে আমার বউ।
— হুম হয়েছে এখন আমাকে কোল থেকে নামান মি.জামাই। রান্না করতে হবে। রাতে খাবেন না?
— এখন কষ্ট করে আমার বউ টার রান্না করতে হবে না। আমি বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিব।
— তাহলে এখন কি করবেন মি.জামাই?
তনা কথাটা বলে নীলের নাক টেনে দিল।নীল দুষ্টুমি হাসি দিয়ে
—এখন বউকে নিয়ে ছাদে যাব।ছাদে গিয়ে রাতের আকাশের তারা গুনব আর রোমান্স করবো।
— জি না মশাই। আমি আপনার সাথে তারা গুনব না আর রোমান্স ও করবো না। আমি তো চাঁদ দেখবো।
— হুম। আপনি কি করবেন আর কি না করবেন তা পরেই দেখা যাবে।
.
.
.
.
আনিকা ছাদে রাখা দোলনা টায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে। ঐদিন যদি নীলকে ছেড়ে না যেত নীলের হাত ধরে বাকি টা পথ চলত। তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হত না। নীলের ভালোবাসা দিয়ে ওর জীবন পরিপূর্ণ থাকত।এখন তো নীলের বউ আছে সংসার আছে। নীল ওর লাইফে অনেক সুখী। আনিকা আনমনে অতীতের কিছু স্মৃতি আওড়াচ্ছে। পিছন থেকে আনিকার মা ডেকে উঠলো
— আনিকা,,,,,, এখানে এভাবে বসে আছিস যে। কি হয়েছে রে মা?
আনিকা ওর মা’র কথায় পিছনে ফিরে
— আমার জীবনে নতুন করে আর কি হওয়ার বাকি আছে মা। যা হবার সব তো হয়েই গেছে।
— এভাবে বলছিস কেন?
আমরা কি তোর খারাপ চাই?
— তোমরা আমার ভালো চাও এটাই তো আমার জন্য তোমাদের সবচেয়ে খারাপ চাওয়া।
— আনিকা,,,,,?
— সত্য কথা কখনও শুনতে ভালো লাগে না মা। তোমরা আমার উপর একটা দয়া করো। তুমি আর বাবা আমার আর ভালো চেও না।
— তুই কি পারিস না নতুন করে তোর জীবন টা আবার শুরু করতে?
— আমি যদি বলি হ্যা পারবো। তাহলে কি তোমরা নীলকে আমার লাইফে ফিরিয়ে আনতে পারবে?
পারবে কি আমার জীবন আবার আগের মত করে দিতে?
আনিকার কথা শুনে আনিকার মা চুপ করে আছে। সত্যি ই তো হাজার চেষ্টা করে ও এখন আনিকার জীবন আবার আগের মত করে দিতে পারবে না।
— দেখ মা তুই তো আর সারা জীবন একা থাকতে পারবি না।
— ভেব না মা। সারা জীবন আমি তোমাদের উপর বোঝা হয়ে থাকব না। আমি জীবনে একা চলতে শিখে গেছি।এখন আর আমার কাউকে প্রয়োজন নেই।
— আমরা কি বলছি রে মা তুই আমাদের উপর বোঝা?
— আমি এখানে একটা কোম্পানিতে জবের জন্য এপ্লাই করছি। জব টা হয়ে গেলে আমি নিজের টা নিজেই করে খেতে পারবো।
আনিকা নিচে নেমে গেল। আনিকার মা মুখে আঁচল দিয়ে কেঁদে ই যাচ্ছে। মেয়ের আজ এমন অবস্থার জন্য উনারাই দায়ী। ভালো ফেমিলি ছেলের ভালো জব দেখে এক প্রকার জোর করে তখন আনিকার বিয়ে দিয়েছিল। মেয়ের ভালোর জন্য মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছে। আনিকার বাবা মা ভেবে ছিল মেয়ে সুখী হবে। কিন্তু মানুষ যা ভাবে সব সময় তো আর তা হয়না।

—————————————–
সকালে………
— এই যে মি.জামাই আর কত ঘুমাবেন এবার তো উঠেন।
নীল ঘুমিয়েই যাচ্ছে
— আপনার তো অফিস নেই। কোন কাজ নেই তাই কাল থেকে আরও বেশি করে তারা শুনিয়েন।
নীল মরার মত পড়ে ঘুমাচ্ছে।তনার কোন কথাই ওর কানে যাচ্ছে না।
— এবার কিন্তু পানি দিব।ওই নীল উঠো।
ধুর বাবা এই নীল টা যে কত ঘুমাতে পারে। অফিসে গেলে যাবে না গেলে না যাবে আমার কি।
এই বলে তনা বেড থেকে উঠে যেতে নিচ্ছিল।পিছন থেকে নীল তনার হাত ধরে টান দিয়ে তনাকে নীলের উপরে ফেলে দেয়। তনা উঠতে চেষ্টা করলে নীল শক্ত করে তনাকে জড়িয়ে ধরে রাখে
— নীল করছো টা কি? ছাড়ো…..
— উঁহু,,,, সকাল সকাল এত চেচাঁমেচি না করে আমার পাশে একটু শুয়ে থাকতে প্রব্লেম কি তোমার?
— আমি চেচাঁমেচি করি?
— আমি এই কথা বলছি নাকি?
— নীল মার খাবা কিন্তু।
— ছিঃ ছিঃ মেয়ে এসব কি বলে।নিজের হাজবেন্ড কে মেরে পাপ করবে নাকি। হাজবেন্ড কে মারতে নেই শুধু আদর করতে হয়।
— হুম মি.হাজবেন্ড আপনার এসব ড্রামা রাখেন আর উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যান।
— যাবো কিন্তু তার আগে একটা আদর দেও।
— ধ্যাত সারাক্ষণ শুধু উল্টা পাল্টা কথা ফ্রেশ হতে যাও।
— এই যে ম্যাডাম দিবেন না তো?
— না স্যার।
— মনে থাকে যেন পরে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবেন না।
–তোমার দোষ দিতে পারব না মানে? কি বুঝাতে চাইছ?
–তুমি তো আর আদর দিবেনা। এখন যদি অন্য কেউ আমাকে আদর দেয়।
তনা নীলের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিল।নীল তনাকে কান্না করতে দেখে বেড থেকে উঠে এসে তনার দু’হাত নীলের মুঠোর মাঝে নিয়ে
— এই কি হলো কাঁদছ কেন?
তনা কেঁদেই যাচ্ছে কিছু বলছে না
— কি হলো প্লিজ কাঁদে না। আরে আমি তো জাস্ট মজা করছি।
এই বউ,,,,,,,?
— তুমি কি আনিকার কাছে যেতে চাইছ?
–এখানে আনিকা আসলো কোথা থেকে?
— আমি জানি ও তোমার ফাস্ট লাভ। তুমি ওকে আজও ভুলতে পারোনি।
এটা বলে তনা জোরে শব্দ করে কেঁদে দিল।নীল তনার কান্না সহ্য করতে পারে না। নীল খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এভাবে তনার কান্না থামানো যাবে না। মেয়েটা যে বড্ড ভালোবাসে নীলকে। নীল দুই হাত দিয়ে তনার মুখ উপরে তুলে তনার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিল।তনা নীলের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্ত নীল তনাকে ছাড়ছে না। কিছুক্ষণ পর নীল নিজে থেকে তনাকে ছেড়ে দেয়। তনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নীলের দিকে তাকাচ্ছে না। নীল তনার গালে হাত রেখে
— তুমি কেন শুধু শুধু আমার অতীত কে বর্তমানে ডেকে আনছো?
আনিকা আমার অতীত। তুমি আমার বর্তমান তুমিই আমার ভবিষ্যত। আমি আনিকা কে ভালোবাসতাম। কিন্ত এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাকিটা জীবন কাটাতে চাই। তোমাকে ভালোবাসতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তুমি তো বলো ফাস্ট লাভ কখনও ভুলা যায়না। তাহলে শুন হ্যা আনিকা আমার ফাস্ট লাভ। আমি সত্যি ই ওকে ভুলতে পারতাম না। যদি না তুমি আমার জীবনে আসতে। তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছ যার কাছে আমার ভালোবাসা কিছু ই না। তোমার ভালোবাসা পেয়ে কখন যে আমি আনিকা কে ভুলে গেছি তা আমি নিজেও জানি না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here