শুধু তুমি💞
পর্বঃ- ৫
Samira Afrin Samia
#নিপা
নীল ওর ক্যাবিনে বসে কিছু ফাইল দেখছিল।এমন সময় দরজার সামনে থেকে কেউ বলে উঠলো
— ম্যা আই কাম ইন স্যার?
নীল নিচের দিকে তাকিয়ে ফাইল দেখতে দেখতে ই বললো
— ইয়েস কাম।
নীল ওর পুরো মনযোগ দিয়ে ফাইল দেখছিল যার ফলে ভেতরে কে আসলো তা খেয়াল ই করে নি।আনিকা প্রথমে জানত না এটা যে নীলের কোম্পানি। জানলে হয়ত এই জব টা করতো না। আনিকা ভেতরে এসে নীল কে দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। নীল এখনও আনিকা কে দেখে নি।
— সিট ডাউন প্লিজ।
আনিকা কিছু বলছে না। বলছে না বললে ভুল হবে কিছু বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। যে নীলের কোন জব ছিল না বলে আনিকা ওকে ছেড়ে চলে গেছিল। আজ আনিকা সেই নীলের কোম্পানিতে জব করতে আসছে।
সামনের জন কিছু বলছে না দেখে নীল ফাইল টা পাশে রেখে
— কি কাজে আসছেন তা বলেন। সময় নষ্ট করা আমি একদম পছন্দ করি না।
এটা বলে নীল সামনে তাকিয়ে আনিকা কে দেখে। নীল অবশ্য আনিকা কে এখানে দেখে একদমই অবাক হয়নি। কারণ কালকের ইন্টারভিউ তে কি কি হয়েছে তা নীল আগেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখে নিয়েছে।এমনকি নীল ই ওর পিএ কে ফোন দিয়ে আনিকা কে জব টা দিতে বলেছিল। নীল চায় আনিকা দেখুক যাকে ও বেকার বলে অবহেলা করে ছেড়ে গেছিল। আজ সে কত বড় পজিশনে আছে। নীল অনেক স্বাভাবিক ভাবে
— সো মিস আনিকা দাড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
আনিকা নীলের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে
— নীল তুমি?
নীল একটু হেসে
— আমার কোম্পানি,আমার ক্যাবিন আমি থাকবো না?
— এটা তোমার কোম্পানি?
— কেন আগে জানতেন না? যাই হোক এসব বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই। আপনার কাজ কি, কি তা বুঝে নিছেন তো?
আনিকা যতই নীল কে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। কত পাল্টে গেছে নীল।
— তুমি আমাকে আপনি করে বলছো?
— আমি আপনার বস আর আপনি আমার অফিসের একজন কর্মচারি। এর বেশি তো আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে আমি আপনাকে তুমি করে বলার তো কোন প্রশ্ন ই আসে না। আর আমি যেহেতু আপনার বস। তাই আপনি ও আমাকে তুমি করে বলতে পারেন না। বস কে তুমি করে বলাটা মানায়?
— একজন বস আর কর্মচারি! এর থেকে বেশি আমাদের মাঝে আর কোন সম্পর্ক ই নেই কি?
— আছে কি নেই তা আমার থেকে ভালো আপনি বলতে পারেন মিস আনিকা।
— তুমি কি সত্যি ই আগের সব কিছু ভুলে গেছ? আমাকে কি পুরো পুরি তোমার মন থেকে মুছে দিতে পারছ?
— উফ ডোন্ট টক টু রাবিশ। চুপচাপ জব করতে হলে করো নয়ত যেতে পারো। কি মনে হয় তোমার আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি? ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, এটা জেনে রাখ। তুমি যদি ভাবো আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি তাহলে ওটা শুধু মাত্র তোমার ভুল ধারণা। আমার বউ আছে সংসার আছে। আর আমি তনা কে খুব ভালোবাসি।এখন আমার সবটা জুড়ে শুধু তনার অস্তিত্ব আর কারো না।
নীলের কথা শুনে আনিকার চোখ ছলছল করছে। আনিকা চুপ করে নীলের সব গুলো কথা শুনছে
— আমি জানি নীল তুমি তোমার ওয়াইফ কে নিয়ে অনেক সুখে আছো। সত্যি বলছি আমি যদি আগে জানতাম এটা তোমার কোম্পানি তাহলে আমি এখানে জবের জন্য আসতাম না। আমি চাই না আমার জন্য তোমার প্রব্লেম হোক। আমার উপস্থিতি তোমাকে বিরক্ত করুক। আমি এই জব ছেড়ে দিব।তুমি চিন্তা কারো না।
— তোমার জন্য আমার প্রব্লেম হবে,তোমার উপস্থিতি আমাকে বিরক্ত করবে এসব বলতে তুমি কি বুঝাতে চাইছ??
তুমি কি সত্যি ই বুঝতে পারছো না। এই নীল আর আগের নীল নেই। এই নীল আর আগের নীলের মাঝে কতটা ডিফারেন্স তা কি সত্যিই তুমি দেখতে পারছো না?
আগে যে নীল ছিল সে আনিকা নামের মেয়েটি কে নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসতো।মেয়েটার একটু অবহেলা সহ্য করতে পারতো না। এমন কি ওই মেয়েটা কে ছাড়া বাঁচার কথা কল্পনা ও করতে পারতো না। বোকা ছিল আগের নীল যে ভাবত তার ভালোবাসা কোন দিনও তাকে ছেড়ে যাবে না।
আর এখনকার নীল আনিকা বলে কাউকে চিনে না। এই নীলের কাছে ওর বউ ওর পুরো পৃথিবী। আগের নীলের কাছে কিছুই ছিল না। কিন্তু এই নীলের কাছে বাড়ি গাড়ি সম্পত্তি টাকা পয়সার কোন কিছুর অভাব নেই।
আনিকা নীলের কথা শুনে কান্না করে দিছে। চোখের পানি গুলো কে কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারছে না। আনিকা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে নীল ওর উপর অনেক অভিমান করে আছে। সময়ের সাথে সাথে অভিমান গুলো রাগ ও ঘৃনায় পরিণত হয়েছে। এখন আনিকার প্রতি নীলের কোন ভালোবাসা নেই যা আছে তা হলো রাগ আর ঘৃণা। নীল আবার ও বলতে শুরু করলো।
— তুমি চাইলে ও এই জব ছাড়তে পারবে না। আমাদের কোম্পানির কিছু রুলস আছে। সব রুলস গুলো মধ্যে একটা হলো। কেউ জব নিলে সে এক বছর আগে কোন ভাবেই জব ছাড়তে পারবে না। যদি সে জব ছেড়ে দেয় তাহলে তার কোম্পানি কে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে জব ছাড়তে হবে।
আর আমার কোম্পানিতে তোমার জব করাটা আমার কাছে তেমন ম্যাটার করে না।বাকি পাঁচ জনের মত তুমিও আমার কাছে একরকম ই।
নীল আরো কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তনা কল করেছে। নীল ফোন রিসিভ করে
— হ্যা তনা বলো।
তনা ফোনের ওপাশ থেকে
— নীল তুমি এখুনি বাসায় আসো।
— কেন কি হয়েছে?
— তুমি তারাতারি বাসায় আসো।
তনার হঠাৎ এমন ব্যবহারে নীল অনেক ভয় পেয়ে গেল। নীল ভাবছে তনার কিছু হলো না তো? তনা তো কখনও এমন করে না। আজ কি হলো ওর?
নীল আরো কিছু বলার আগেই তনা ফোন কেটে দিল। নীল আবার তনাকে ফোন করলো কিন্তু তনার ফোন সুইচ অফ বলছে। নীল আর কিছু না ভেবে দৌড়ে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসলো। আনিকা এখনও ঠিক আগের মতই দাড়িয়ে আছে। তনার ফোন আসাতে নীল কতটা ব্যস্ত হয়ে চলে গেল। কতটা কেয়ার করে নীল তনার। আনিকার চোখ দিয়ে এখন ও অনবরত পানি পড়ছে। আনিকার চোখের সামনে নীল আজ অন্য কাউকে পাগলের মত ভালোবাসা তা আনিকা মেনে নিতে পারছে না। নীল খুব দ্রুত কার ড্রাইভ করে বাসায় চলে আসছে। বাসায় আসার পর দেখে মেইন ডোর খুলা।নীল ভিতরে গিয়ে তনা কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু তনার কোন সারা শব্দ নেই। সব গুলো রুমে খুঁজলো পরেও তনাকে পেল না। নীল চিৎকার করে তনাকে ডাকছে
— তনা কোথায় তুমি??
তনা প্লিজ কথা বলো। কোথায় তুমি?
নীল আর কিছু ভাবতে না পেরে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। নীল তনার নাম ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে। এমন সময় নীলের ফোন বেঁজে উঠলে। কে ফোন দিয়েছে তা না দেখেই নীল ফোন রিসিভ করে।
ওপাশ থেকে
— এই নীল কোথায় তুমি। কখন আসতে বলেছি। এখন ও আসছো না কেন?
ফোনের ওপাশ থেকে তনার কথা শুনে নীল জীবন ফিরে পেল।নীল কিছুটা শান্ত হয়ে
— আমি তো বাসায়। তুমি কোথায়?
— বুদ্ধু তুমি বাসায় কি করো? ছাঁদে আসো তারাতারি।
— আচ্ছা আসছি একটু ওয়েট করো।
নীল এক দৌড়ে ছাঁদে চলে যায়। গিয়ে দেখে তনা দাঁড়িয়ে আছে। নীল তনার কাছে গিয়ে তনাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ নীলের এমন কান্ড দেখে তনা একটু অবাক হয়।
— কি হলো মি.নীল আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন। আমি কি কোথাও হারিয়ে যাবো । নাকি আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাচ্ছি?
— চুপ। একদম চুপ।তুমি একদম আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না। আমি তোমাকে কোথাও হারাতে দিব না।
তনা নীলে দিকে তাকিয়ে দেখে নীলের চোখ লাল হয়ে আছে। চোখ দুটো একটু একটু ফুলে ও গেছে।
— এই নীল তুমি কি কান্না করছো?
— না। কান্না করবো কেন? এসব রেখে এখন বলো ফোন দিয়ে এতো তারা দিছ কেন বাসায় আসার জন্য?
— একদম কথা ঘুরাবা না। তুমি কান্না করছো। আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টা ও করবে না। কেন কান্না করছ তা বলো।
— তুমি ফোনে এমন ভাবে বাসায় আসার কথা বলছিলে আমি ভাবছি তোমার হয়ত কিছু হয়েছে। আর বাসায় এসে ও তোমাকে কোথাও পেলাম না।
— আর তাই তুমি আমাকে হারানোর ভয়ে কান্না করে দিছ তাই তো?
— হুম।
–এতটা ভালোবাস আমাকে। আমি যদি কোথাও হারিয়ে যাই তখন?
নীল তনাকে ছেড়ে দিয়ে। তনার দিকে রাগী লুক নিয়ে
— তোমার পা ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখবো।আর একবার এসব উল্টা পাল্টা কথা বললে এক থাপ্পড় দিয়ে সামনের দাঁত দুটো ফেলে দিব।তখন আর এসব কথা মুখে আসবে না।
নীল আজ তনাকে থাপ্পড় দেওয়ার কথা তে ও তনা কিছুই বললো। অন্য দিন হলে তো নীলের চৌদ্দ গোষ্ঠীর খবর নিয়ে ছাড়ত। তনা আজ নীলের প্রতি টা বকায় প্রতিটা শাসনে ওকে হারানোর ভয় দেখতে পারছে। নীলের চোখে তনাকে হারানো ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তনা কিছু না বলে অপলক দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষন নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে নীলকে আবার জড়িয়ে ধরে।
নীল ও তনাকে ওর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।
দু’জনই কিছুক্ষন চুপ থাকে। তার পর নীল বলতে শুরু করে
— আচ্ছা এখন বলো ফোনে এভাবে আমাকে ভয় দেখানো মানে কি ছিল?
— আমি তোমাকে ভয় দেখাইছি? ভয় তো আমি নিজে পাইছি।
— তুমি ভয় পাইছ?
— হুম।
— কিন্তু কেন?
— দেখনা আমাদের ছাঁদে কত গুলো ফুল গাছ। কোথা থেকে আসছে এগুলো। কে এখানে এনে রেখে গেছে?
নীল তনার কথা শুনে। তনাকে ছেড়ে দিয়ে তনার দিকে তাকিয়ে
— এই ফুল গাছ গুলো দেখে তুমি ভয় পাইছ?
— হুম।
আমরা তো কাল বাসায় ছিলাম না। তখন কি কোন চোর আসছিল।আর চোর তো চুরি করতে আসবে। ফুল গাছ দিতে আসবে না। চোরই বা আসবে কি ভাবে বাসা তো বন্ধ ছিল।তাহলে কি এই গাছ গুলো ভুত পেত্নী এখানে রেখে গেছে?
— তনা তুমি কি পাগল??
— আমি পাগল হতে যাবো কেন? আর আমি যদি পাগল হতাম তাহলে পাবনা থাকতাম। তোমার বাসায় না।
— তোমার মধ্যে একটু ও কমনসেন্স নেই। তুমি কি একবার ও আমাকে জিঙ্গেস করে দেখেছ এগুলো আমি আনছি কি না?
— তুমি এগুলো আনবে কখন তুমি তো সারাক্ষণ আমার সাথেই ছিলে।
— জি না ম্যাম। আপনি যখন আপনার বাবার বাসায় গিয়ে আপনার ফুল গাছ গুলোকে দেখতে দৌড়ে আমাকে রেখে রুমে চলে গেছিলেন। তখন আমি বের হয়ছিলাম। আর তখনই এগুলো আনিয়েছি।
— তাহলে আমাকে বলোনি কেন?
— গাড়ি তে বলছিলাম তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব?
— হুম।
— এটাই ছিল তোমার সারপ্রাইজ। কিন্তু আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার আগেই তুমি আমাকে আরো বড় সারপ্রাইজ দিয়ে দিয়েছ।
চলবে….