শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ৭ Samira Afrin Samia #নিপা

0
361

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ৭
Samira Afrin Samia
#নিপা

বিকেলে তনা আর লিনা ছাঁদে বসে আছে। লিনা গ্রামের মেয়ে শহরে এই প্রথম বার আসছে। এর আগে কখনও শহরে আসেনি। লিনা তনাকে বলছে
— আচ্ছা আপু এই এতো বড় বাড়ি কি তোমাদের?
— হুম। কেন বল তো?
— না এমনি।
— শুধু এটা না। এই শহরে আমাদের এমন বড় বড় আরো তিনটি বাসা আছে।
লিনা তনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে
— এতগুলো বাড়ি দিয়ে কি করো?
তনা লিনার কথা শুনে হেসে দিয়ে
— এত গুলো কই।এই যে এ বাসায় আমরা থাকি। দুইটা ভাড়া দেওয়া আর একটা এমনি ই পড়ে আছে। মাঝে মাঝে আমি আর তোর ভাইয়া ঘুরতে যাই।
— ভাইয়া যখন অফিসে থাকত। তখন তুমি এত বড় বাড়িতে একা কি করে থাকতে। তোমার ভয় লাগতো না?
— শুন মেয়ের কথা ভয় লাগবে কেন?
ভয় লাগতো না কিন্তু একা একা বোর ফিল করতাম। তাই তো তোর ভাইয়া তোকে এনে দিল।
— আমি এসে গেছি এখন আর তোমাকে বোর হতে দিব না।
লিনা প্রথম দিক দিয়ে তনাকে ম্যাডাম করে বলতো।তনার তা একদম ভালো লাগতো না। লিনা তনার বাসায় কাজ করে ঠিকই কিন্তু তনা লিনাকে একদম নিজের ছোট বোনের মত দেখে। লিনা ও তনাকে বড় বোনের মতই আপন করে নিয়েছে। তনার খুব খেয়াল রাখে। তনাকে কোন কাজই করতে দেয় না লিনা।
লিনা তনার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
— আচ্ছা আপু তোমার আর ভাইয়ার কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জড ম্যারেজ।
লিনার এই কথা শুনে তনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
— সে অনেক কাহিনী। এখন এত কিছু বলতে গেলে রাত হয়ে যাবে।
— এত কিছু বলতে কে বলেছে? তুমি আমাকে র্শট খাট করে বুঝিয়ে দেও। আমি বুঝে যাবো।
— তুই দেখি আচ্চা নাছোড়বান্দা।
–😁😁😁😁
— তবে শুন। তোর ভাইয়া অন্য একজন কে ভালোবাসতো।আমার আগে ওর লাইফে অন্য কেউ ছিল। আমার ভালোবাসা তো প্রথম দিক দিয়ে একতরফা ছিল। আমি মনে মনেই তোর ভাইয়া কে ভালোবাসছি কোন দিনও প্রকাশ করি নি।

চলুন তনা আর নীলের পাস্ট থেকে ঘুরে আসি,,,,,,

নীল তখন হনার্স ফাইনাল ইয়ারে আর তনা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। তনারা যে সোসাইটিতে থাকে সেখানে কিছু দিন হলো নীল আর তার মা নতুন উঠেছে।মুলত নীলের র্ভাসিটিতে যাতায়াতের সুবিধার জন্যই এখানে আসা। আগের বাসা থেকে নীলের র্ভাসিটি অনেক দূরে ছিল যার কারনে যাতায়াতে কষ্ট হতো। সোসাইটির সবাই তনার বাবা কে অনেক সম্মান করে। তনা ও সবার চোখের মনি।
তনা কলেজে যাবার সময় কিছু দিন ধরেই নীল কে খেয়াল করছে। তনা ওর ফ্রেন্ডের সাথে কলেজ যাচ্ছে
— হ্যা রে মেঘা এই ছেলেটা কে বলতে পারবি?
— লে খোকা। তোদের মহল্লায় থাকে। তুই জানিস না ছেলেটা কে। আমি কি করে জানবো?
— জানলেও তো জানতে পারিস এটা ভেবেই জিঙ্গেস করলাম।
— হ মামু তুমি তো কতো কিছুই ভাববা।
— ছেলেটা কিন্তু সেই। তাই না?
— আমার কাছে তো সব ছেলে কে ই সেই লাগে।
— তুই যে একটা লুচ্চি মাইয়া। তাই তো কাছে সব ছেলে কে ভালো লাগে।
— আমি লুচ্চি? আর তুই তো দুধে ধুঁয়া তুলসীপাতা তাই না??
— হুম তা আর বলতে।
— চুপ হারামি এতো ভালো দেখেই তো। সেই তিন ঘন্টা ধরে হা করে ওই ছেলেটা কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ।
— চোখ দিয়ে গিলে খাবো না রে। ভাবতেছি ছেলেটার সাথে কথা বলবো।
— তুই কথা বলবি তাও একটা অচেনা ছেলের সাথে??
এটা বলে মেঘা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। তনা মেঘার বেনুনি ধরে জোরে টান দিয়ে
— খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?
— এই তনা ছাড় আমার বিনুনি ছিড়ে যাবে। হিংসুটি কোথা কার।তোর লম্বা চুল নেই বলে আমার বেনুনি ছিড়তে চাস।
— তাহলে আগে বল হাসলি কেন? আমি কি কোন জোক্স বলেছি?
— মনা তুমি জোক্স বললে ও এতটা হাসি পেত না। যতটা না তোমার এ কথা শুনে পেয়েছে।
— বজ্জাত মাইয়া। 😏
— বড় লোক বাপের এক মাত্র মেয়ে।যে কোন ছেলেকে পাত্তা দেয় না। ছেলেরা যার উপর মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খায়। কিন্তু সে কারো দিকে চেয়ে ও দেখে না।
আজ সেই মেয়ে নিজে থেকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে যাবে।
— কথা বলতে গেলে প্রব্লেম কি?
— কোন প্রব্লেম নাই। আমি কি বলছি কোন প্রব্লেম আছে?
— দোস্ত তুই ও আমার সাথে চল না।
— কোথায়??
— কোথায় মানে ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে।
— দোস্ত তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? চেনা নেই জানা নেই আমরা চলি ছেলেটার সাথে কথা বলতে। আর ছেলেটা আমাদের কে ভাব দেখিয়ে চলে যাক। আগে ওর বায়োডাটা জেনে নেই দেখি ও কোন নবাবজাদা। পরে তো কথা বলবো।
— বিকেলে মধ্যে সব জানতে পারবি তো ওর সম্পর্কে?
— তোর কি হলো বল তো?
অন্য কোন ছেলের সাথে তো কথা ও বলিস না। এর জন্য এতো পাগল হলি কেন?
— জানি না দোস্ত। তুই বিকেলে আমার বাসায় আসবি। মনে থাকে যেন।
— ওকে পেত্নী ঠিক আছে।

মেঘা বিকেলে তনাদের বাসায় আসছে। তনা আর মেঘা ওর রুমে বসে কথা বলছে। মেঘা বকবক করেই যাচ্ছে। তনা মেঘার কথায় বিরক্ত হচ্ছে
— মেঘা তোর এসব ফালতু কথা অফ করে আমি যা জানতে চাইছি তা বল।
— আরে বাবা একটু দাঁড়া না। এতো জলদি কিসের?
— একটু ও দাঁড়াতে পারবো না। তুই বল কি কি জানতে পারলি ওর ব্যাপারে?
— এই ও টা কে মামু??
এখনই ও হয়ে গেল। তুই তো দেখছি আমার থেকে ও ফাস্ট চলতে শুরু করছিস।
— নাম জানি না কি বলে ডাকবো?
আচ্ছা যাই হোক বল না দোস্ত প্লিজ।
— হুম। তোর ও তোদের সোসাইটিতে নতুন আসছে। বাবা নেই মা কে নিয়ে একা থাকে। এবার হনার্স ফাইনাল ইয়ারে। সব ছেলেদের থেকে একে বারে আলাদা। ওর কাছে ওর মা ই পৃথিবী। বাজে কোন নেশা নেই। না ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেয়। না বাসা থেকে কোথাও বের হয়।বাসা থেকে র্ভাসিটি এইটুকু ই ওর সীমানা।
— ওয়াও 😍😍😍
সব তো বললি কিন্তু এখনও ওর নাম টা ই বললি না।
— ওয়াও এর বাচ্চা। সব তো বলিনি। সবকিছু শুনলে তোমার ওয়াও বের হয়ে যাবে।
আর হ্যা ছেলেটার নাম নীল।
— নীল😍
আর কি শুনবো। কি করে, কোথায় থাকে ও কেমন ছেলে সব ই তো বললি।আর কি বাকি আছে??
— আরও বাকি আছে দোস্ত। ওসব তুমি শুনতে পারবে না। আসলে তুই নিতে পারবি না। ওসব শুনে র্হাট এর্টাক ও হতে পারে ।
— ধুর ভয় না দেখিয়ে কি বাকি আছে তা বল।
— বলবো তো??
— হুম।
— সিউর তো?
— আরে হারামি বল😡
মেঘা চোখ বন্ধ করে এক দমে
— তোর ওই রোমিওর আগে থেকেই একটা জুলিয়েট আছে।
মেঘা কথাটা বলে এক চোখ খুলে তনার দিকে তাকালো। তনা মেঘার কথা শুনে দাঁড়ানো থেকে ধপ করে বসে পড়লো। তনা হা করে বসে আছে। কিছু বলছে না। তনাকে এভাবে দেখে মেঘা তনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে
— কিরে আছিস নাকি গেছিস?
তনা চুপ করে আছে
— দোস্ত আমি জানি তুই খুব বড় একটা র্শক খাইছিস।
কিন্তু তুই চিন্তা করিস না। আমি তোর জন্য এর থেকেও ভালো ছেলে খুজে দিব।
— কি????
— কি কি?
— আজ পর্যন্ত নিজের জন্য একটা ছেলে খুজে পেলি না। আর তুই কিনা আমার জন্য ভালো ছেলে খুজে দিবি।
— থাক দোস্ত কান্দিস না। আমি আছি তো তোকে জ্বালানো জন্য।
আমার তো প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল। এতো সুন্দর একটা ছেলে সিঙ্গেল থাকবে কি?
— হুম দোস্ত। আচ্ছা রোমিও টার জুলিয়েটের নাম কি?
— ঠিক মনে নেই। তবে আনিকা বা এমন কিছু হবে হয়ত। তুই নাম দিয়ে কি করবি?
— কি আর করবো? কি করে জুলিয়েট টা?
— নীলের সাথেই এক ক্লাসে পড়ে। শুনেছি ওদের নাকি দুই বছরের রিলেশন। আনিকার ফেমিলি নীল কে মেনে নেয় না। নাহলে করেই ওরা বিয়ে করে নিত।
— বিয়ে……????
— হুম। নীলের তো বাবা নেই। আর আর্থিক দিক দিয়ে ও নীলেরা এতটা সচ্ছল না। তাই সমস্ত সমস্যা।
–😭😭😭😭😭
— তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে পেত্নী। তোর লাভ স্টোসি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। তুই প্রেম না করেও এতো বড় একটা ছ্যাকা খেয়ে গেলি।
সত্যি ই তোর জন্য মায়া হচ্ছে। আমার কি মনে হয় জানিস।তুই যে ছেলে গুলো কে পাত্তা দিতি না ওরা তোকে বদদোয়া দিছে। তাই তুই প্রেম না করেও ছ্যাকা খাইলি। ওই ছেলে গুলো সাথে এতো ভাব নেওয়া ঠিক হয়নি। দেখলি তো ছ্যাকা খাওয়ার কষ্ট কতটা।
— তবে রে হারামি।দাড়া আজ তোর ওই লম্বা লম্বা সব গুলো চুল আমি ছিড়ে নিব।
তনা এই বলে মেঘার দিকে এগুতে লাগলো। মেঘা পিছনের দিকে যেতে যেতে
— তনা না। একদম এগুবি না।ওখানেই দাঁড়া। ভালো হবে না কিন্তু।
তনা মেঘার দিকে যেতে নিলে মেঘা রুমের ভিতরে ই দৌড়াতে লাগলো। আর তনা ও মেঘা কে ধরার জন্য মেঘার পিছনে দৌড়াচ্ছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here