শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ৮
Samira Afrin Samia
#নিপা
কি আর করার নীলের তো আগে থেকেই গার্লফ্রেন্ড আছে। তাই তনা ওর মনের অনুভূতি গুলো কে আর ডানা মেলতে দিল না। নীলের জন্য যা ফিল করতে শুরু করছিল তা এখানেই অফ করে দিল।নীলকে নিয়ে দেখা হাজারো রঙ্গীন স্বপ্ন কে মাটি চাপা দিয়ে দিল। প্রথমে তনার নীলের কথা ভাবলে একটু একটু কষ্ট হতো। কিন্তু কিছু দিনের ভিতর প্রায় সব ভুলে গেছে তনা। রোজ কলেজে যায়। আবার আগের মত পড়ায় মনযোগ দিয়েছে। তনা কলেজ যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে নীলকে দূরে থেকে দেখত। কিন্তু মাঝে কিছু দিন নীল কে দেখেনি। নীল তনার সামনে না পড়ায় নীলের কথা তনা প্রায় ভুলেই গেছে। তনার বাবার এতো এতো গাড়ি থাকতেও তনা ওর সব ফ্রেন্ডদের সাথে বাসে করে কলেজে যায়। তনা বাসে জানালার পাশের সিটে বসে আছে।আর তনার পাশের সিটে মেঘা বসে আছে। তনা জানালার বাইরে মুখ করে বসে আছে। বাতাসে সাথে পাল্লা দিয়ে তনার চুল গুলো দোল খাচ্ছে।
— তনা……???
— হুম বল।
— কিছু দিন ধরে তোর ওই রোমিও টা কে দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ করে রোমিও টা কই গেল রে।
— আমি কি জানি কই গেছে?
আমি কি ওকে নিয়ে বসে আছি। আর ও তো আমার রোমিও না। ও অন্য একজনকে ভালোবাসে।
— হুম। কই গেল ছেলেটা। আগে তো প্রায় ই বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। এখন কি র্ভাসিটি যায় না?
— কে জানে? ওকে নিয়ে তোর এতো টেনশন হচ্ছে কেন?
— ধুর টেনশন হবে কেন। অনেক দিন ধরে দেখি না। তাই জানতে চাইলাম আর কি।
কয়েক সপ্তাহ পর,,,,,
তনা বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিল।এমন সময় দূর থেকে একটা ছেলেকে দেখতে পেল।প্রথমে তনার কাছে ছেলেটা নীল বলে মনে হলেও। নীল এখনে এতো দিন পর কোথায় থেকে আসবে এটা ভেবে তনা আবার নিজের মত হাঁটতে শুরু করলো। কিছু দূর হেঁটে আসার পর তনা সিউর হলো এটা নীল ই।কিন্ত নীল এখানে এতো দিন পর। মাঝের কিছুটা সময় নীল কোথায় ছিল। এটা কি সেই নীল যাকে দেখে প্রথম দিনই তনার ভালো লেগে গেছিল? এ কি চেহারার হাল হয়েছে। এমন কি করে হলো?
এরকম হাজার প্রশ্ন নিয়ে তনা নীলের দিকে এগিয়ে আসছে। নীলের অনেক টা আছে এসে তনা নীলকে দেখে অবাক হয়ে গেল। নীলের চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। একদম রোগা পাতলা হয়ে গেছে। মুখ ফ্যাকাশে। চেনা ই যায় না এটা যে সেই নীল। তনা এটা দেখে আরো অবাক হচ্ছে যে নীল সিগারেট খাচ্ছে। নীলকে সিগারেট খেতে দেখে তনার অনেক রাগ হচ্ছিল। কিন্তু কেন এতো রাগ হচ্ছে তা তনা নিজেও বলতে পারছে না। তনার খুব ইচ্ছে করছিল নীলের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে। কিন্তু সাহস হয়ে উঠলো না। যার কারনে এ কাজটা করতে ও পারলো না। তনা রোডের এপাশে আর নীল ওপাশে। তনা রোড ক্রস করে নীলের কাছে যাবার আগেই একটা বাস এসে ওদের সামনে দাঁড়াল। আর নীল বাস টা তে উঠে চলে গেল। তনা কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ টা কে ছুড়ে বেডের উপর ফেলে দিল। তনা রাগে কটমট করতে লাগলো। পুরো রুমে পায়চারি করতে করতে তনা ভাবছে এখন কি করবে। কিছু ভেবে না পেয়ে তনা মেঘা কে ফোন দিল।
— হ্যা তনা?
তনা এপাশ থেকে রাগে জোরে চিল্লিয়ে
— তুই আজ প্রাইভেট এ আসলি না কেন?
— আরে ঘুমিয়ে গেছিলাম। আম্মু ডাক দেয়নি। উঠে দেখি অনেক লেট হয়ে গেছে পরে আর যাই নি। কিন্তু তোর কি হলো এভাবে চিল্লাছিস কেন?
— আমার কি হলো?
কিছুই হয়নি আমার। তুই এখুনি আমার বাসায় আস।
— এখন! কিন্তু…..
— হ্যা এখন। কোন কিন্তু না। তুই তারাতারি আয় অনেক কথা আছে তোর সাথে।
মেঘা তনার বাসায় এসে এক দৌড়ে তনার রুমে চলে গেল। তনা বেডে বসে ছিল।মেঘা তনার পাশে বসে হাঁপাতে লাগলো।
— এভাবে আসতে বললি কেন। কি হয়েছে?
— আজ ওই নীল কে দেখছি।
— নীল কে দেখছিস ভালো কথা। আমাকে এভাবে প্যারা দিলি কেন হারামি।দেখ হাঁপাতে হাঁপাতে আমার জীবন শেষ হয়ে গেল।
— নীল কে দেখছি ভালো কথা??
জানিস ও কি করছিল। ও সিগারেট খাচ্ছিল।একদম বাজে ছেলের মত হয়ে গেছে।
— কিইইইই?
মেঘা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
— হতেই পারে না। আমি নিজে নীলের সম্পর্কে সব খবর নিছি।ও এমন ছেলেই না। তোর কোথাও ভুল হয়ছে।
— আমার কোন ভুল হয়নি। এটা নীল ই ছিল। আমি সিউর।
— আচ্ছা তুই কি ওর সাথে কথা বলেছিস? ও এতো দিন কোথায় ছিল। র্ভাসিটি যায় না কেন? এসব কিছু জানতে পেরেছিস?
— আমি ওর সাথে কথা বলিনি। ভাবছিলাম বলবো কিন্তু তার আগেই ও চলে গেছে।
— দোস্ত তুই একদম চিন্তা করিস না। ওর খবর বের করতে আমার দুমিনিট ও লাগবে না। কাল কলেজ তুই সব খবর পেয়ে যাবি।
পরের দিন কলেজে,,,,,,,,
— দোস্ত দু’টা নিউজ আছে। একটা গুড নিউজ আর একটা ব্যাড নিউজ। কোন টা আগে শুনবি বল?
তনা বেঞ্চের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ছিল।মেঘার কথা শুনে পা দোলাতে দোলাতে বললো।
— আগে গুড নিউজ টাই বল।
— তাহলে শুন। নীল আর আনিকার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
— কি????
— হুম। শুধু কি ব্রেকআপ? আনিকা তো নীলকে ছ্যাকা দিয়ে। অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিয়েছে।
তনা বেঞ্চের উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে লাফাতে লাগলো।
— কি বলছিস তুই? সত্যি। সত্যি ই কি আনিকার বিয়ে হয়ে গেছে?
— হুম তাই তো। নীল রোমিও থেকে দেবদাস হয়ে গেছে।
— আর কি যেন বলছিলি। ওহ হ্যা ব্যাড নিউজ নাকি। ওটা কি বল?
মেঘা মুখ কালো করে
— নীলের মা মারা গেছে।
— কি?
–হুম।
— কি ভাবে কি হলো। নীলের মা’র কি হয়েছিল? আর কবে মারা গেছে?
— শুনেছি আগে থেকেই নাকি অসুস্থ ছিল। কি হয়েছিল তা বলতে পারবো না। কিছু দিন হলো উনি মারা গেছেন। আর এর পরই আনিকা ও নীল কে ছেড়ে চলে গেছে।
— তাই তো নীল কে দেখছি না কিছু দিন।ওর সাথে এতকিছু হয়ে গেল। আমরা কিছুই জানতে পারলাম না। কাল ওকে দেখে আমার বুঝা উচিত ছিল ওর কিছু একটা হয়েছে। মনে হয় এ কয়দিন ঠিক মত খাওয়া তো দূর।ঠিক মত গোসল ও করেনি। মুখ কেমন ফ্যাকাশে চুল উসকোখুসকো হয়ে ছিল। কেমন দেখাচ্ছিল ওকে। এ কিছু দিনে কত কিছু হয়ে গেল ওর সাথে। এখন কি করবো আমরা?
— কি করবো মানে? ও একটা মেয়ের জন্য। ওর লাইফ এভাবে নষ্ট করে দিবে তা কি আমরা চেয়ে দেখবো? ওকে বুঝাতে হবে। কারো চলে যাওয়ায় কখনও সময় থেমে থাকে না। ও যদি ওর মায়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে না পারে তাহলে তো হবে না। মানুষ মরণশীল। একদিন না একদিন সবাই কে ই এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে।
তনা মেঘা কে জড়িয়ে ধরে
— এ কয়দিন খুব কষ্ট সহ্য করেছে নীল।ও হয়ত এসব মেনে নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর। তাই না মেঘা?
— হুম। মাকে হারানোর কষ্ট কেউ ই সহ্য করতে পারে না। কিন্ত ও যদি আনিকার জন্য কষ্ট পায় তাহলে এটা ওর বোকামী ছাড়া আর কিছুই না।
— আজ কলেজ শেষে যে করেই হোক নীল কে খুজে বের করে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
— দোস্ত একটা কথা ভেবে দেখছিস?
— কি কথা?
— আনিকা নীল কে ছেড়ে চলে যাওয়ায় আমাদের লাইন একেবারে ক্লিয়ার।
তনা মেঘার কথা শুনে রাগী ভাবে মেঘার দিকে তাকালো
— এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন?
— আমাদের লাইন ক্লিয়ার মানে?
— ইয়ে মানে। আমাদের আর কি?
— হারামি মাইয়া আমার নীলের দিকে একদম নজর দিবি না। নীল শুধু আমার। ভালোই হয়েছে আনিকা ওকে ছ্যাকা দিছে। এখন ওর আর আমার মাঝে কেউ নেই। তোর যদি নীলের দিকে উল্টা পাল্টা নজর দিস তাহলে তোর চোখ তুলে নিব।
— লে খোকা সব করলাম আমি। নীলের ব্যাপারে সব খবর আমি এনে দিলাম। আর এখন বলছে আমার চোখ ই নাকি তুলে নিবে। ফইন্নি মর তুই তোর মত বান্ধবীর দরকার নাই আমার।
তনা মেঘা কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
— তুই তো আমার জান?
— হুম, হয়ছে আর ন্যাকামি করার দরকার নাই।
মেঘা তনাকে ছাড়িয়ে ভাব দেখিয়ে আগে আগে যাচ্ছে আর তনা পিছন থেকে মেঘাকে ডাকছে।
— এই মেঘা দাঁড়া না।আরে শুন।
চলবে….