শেষ বিকেলের রোদ- ৯ম পর্ব

0
1786

শেষ বিকেলের রোদ- ৯ম পর্ব
©শাহরিয়ার

— কিছু হবে না তুমি চিন্তা করো না। বলেই ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। কয়েক পা নামতেই পিছলে পরে যেতে লাগলাম। ওমনি সোহান আমার হাতটা টেনে ধরলো। আমি ঘুরে তাকাতেই

সোহান:- বলেছিলাম পরে যাবি এখন ফেলে দিবো?

— আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপলো, সাহস থাকলে ফেলে দেখো। সোহান রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে হাতটা ছেড়ে দিতেই আমি পানিতে পরে গেলাম। পানিতে পরেই আমি বাঁচাও বাঁচাো বলে চিল্লাতে শুরু করলাম যদিও কোমড় পানি সোহানকে বুঝতে দিলাম না। সোহান পানিতে লাফ দিয়ে বোকা বনে গেলো। আর আমি হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- রাগে গজগজ করতে করতে তুই কোন দিনও ভালো হবি না।

— পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে খারাপ ছিলাম কবে?

— সোহান:- ফুলটুসি ভালো হবে না আর একবার পানি দিলে।

— একশো বার দিবো হাজার বার দিবো কি খারাপ করবে তুমি।

— সোহান:- তবেরে বলেই হাত ধরে টান দিলো, সাথে সাথে সোহানের বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম।

— উফ ছাড়ো ব্যথা লাগছে।

— সোহান:- না ছাড়বো না কি করবি না ছাড়লে।

— চিৎকার করবো।

— সোহান:- তাতে আমার কি বলেই আরো জোড়ে বুকের সাথে চেঁপে ধরলো।

— ছাড়ো না কেউ চলে আসলে কি মনে করবো?

— সোহান:- কেউ চলে আসলে কি মনে করবে মানে?

— মানে সহজ ভাববে তুমি..

— সোহান:- হাত ছেড়ে দিয়ে এই থাম থাম আর আগে যেতে হবে না তোকে। আজকের মতো তোকে মাফ করে দিলাম।

— আহা ঢং আমি তোমাকে আজকের মত মাফ করে দিলাম বলেই বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উপড়ে উঠে মুখ বেংচি কেটে দ্রুত দৌড় দিলাম। সোহান বোকার মত হা করে তাকিয়ে রইলো।

— দৌড়ে তাড়াতাড়ি রুমে এসে সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আফরিন আপুকে ডাক দিলাম। আফরিন আপু ঘুম থেকে উঠে আমাকে এই অবস্থায় দেখে হা করে রইলো।

— কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?

আফরিন:- তুই এতো সকালে গোসল করছিস কেন?

— আর বইলো না সকাল সকাল সোহান ভাইয়া ফোন দিলো, দু’জনে পুকুর ঘাটে গিয়েছিলাম, ভাবলাম পানিতে মুখটা ধুয়ে নিবো ওমনি পিছলে পরে গেলাম। সাথে সাথে সোহান ভাইয়াও আমাকে তোলার জন্য লাফ দিয়ে পড়লো পুকুরে। ভাবলো আমি মনে হয় ডুবে যাচ্ছি যা বোকা বানিয়েছি আজকে। বলেি হাসতে শুরু করলাম।

আফরিন:- তোরা দু’জন পারিস ও বটে সারাদিন একজন আরেক জনের সাথে লেগে থাকতে। আচ্ছা তোর হবু দুলা ভাইয়ের খবর কি ঘুম থেকে উঠেছে?

— কি জানি আমরা যখন উঠেছিলাম তখনতো কেউ উঠেনি। তবে এখন মনে হয় উঠে গিয়েছে, এখন তুমি উঠে ফ্রেস হয়ে নেও।

আফরিন:- হুম তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আছি তারপর এক সাথে বের হবো।

— আচ্ছা যাও।

— আফরিন ফ্রেস হয়ে আসতেই দু’জন একসাথে রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে গেলাম ততক্ষণে ফুপুও ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে এসে নাস্তা বানাতে বসে গেছে। আমাদের দু’জনকে এক সাথে এতো সকালে দেখে ফুপু কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

ফুপু:- কিরে তোরা আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠলি ঘটনা কি?

আফরিন:- কোন ঘটনা নেই, ঘুম ভাঙলো তাই উঠে গেলাম। এখন তোমার অসুবিদা হলে আবার যেয়ে শুয়ে পরি।

ফুপু:- আমি কি তাই বলছি নাকি। উঠেছিস ভালোই হয়েছে, যা এখন দু’জন মিলে হেঁটে আয়। সকালের হাঁটা শরীরের জন্য ভালো।

আফরিন:- হ্যাঁ যাচ্ছি,

— দু’জন রান্না ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম উঠানে সোহান আর আকাশ ভাই দাঁড়িয়ে আছে। সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম আমরা ঘুরতে বের হচ্ছি তোমরা কি যাবে?

আকাশ:- কোথায় যাচ্ছো তোমরা?

আফরিন:- যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে যাবো। আপনাদের ইচ্ছে হলে আসতে পারেন না হলে থাকেন।

সোহান:- আকাশ তোমরা জীবন তেনাতেনা হয়ে যাবে ভাই এখনি কেমন দমকের সুরে কথা বলছে।

আফরিন:- ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু। তুমি কি বিয়ের আগেই তোমার বোনের সংসার ভাঙতে চাচ্ছো?

সোহান:- ছিঃ কি বলছিস এসব আমিতো যাস্ট দুষ্টমি করে এসব বলছিলাম।

আফরিন:- ওহ ভাইয়া এতো সিরিয়াস কেন তুমি? আমিও মজা করে বলেছি এখন চলোতো।

সোহান:- থাম থাম এই সকাল সকাল যদি আকাশকে সাথে নিয়ে আমরা বের হই, তাহলে মানুষ নানান রকম কথা রটাবে। তার চেয়ে বরং ঘরের ভিতর বসেই গল্প করি।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া ঠিক বলেছেন, গ্রামের মানুষ যা ঘটে তার থেকে অনেক বেশী রটিয়ে ফেলে। চলুন ঘরের ভিতরেই যাই।

— তার মানে বাহিরে ঘুরতে যেতে পারবো না?

সোহান:- না আজতো যেতে পারবি না তবে কাল সকালে যেতে পারবি।

— চারজন মিলে আবার ঘরের ভিতর ঢুকে পরলাম, মনে মনে সোহানের প্রশংসা করলাম এতো বছরে অবশেষে ওর বুদ্ধি হয়েছে, শুধু বুঝে না আমি তাকে ভালোবাসি।

আফরিন:- তোমরা বসো আমি যেয়ে দেখি আম্মুর নাস্তা রেডি হলো কিনা।

— আপু আমিও সাথে আসবো?

আফরিন:- আরে না তোরা বসে গল্প কর না। আমি যাবো আর আসবো, বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।

সোহান:- আকাশ বউয়ের কাছ থেকে যতটা না সাবধানে থাকবে তার চেয়ে শালির থেকে থাকতে হবে বুঝলে।

আকাশ:- কেন কেন ভাইয়া? শালিতো আমার সুন্দরি স্মার্ট আর ভদ্রও অনেক।

সোহান:- শোন শোন মানুষের বাহির দেখে ভিতরটা বুঝতে যেও না বুঝলে। এই মেয়ে যে কি করতে পারে তা শুধু আমি জানি, তাই তোমাকে আগে থেকেই সাবধান করে দিলাম।

— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি কি কি করতে পারি বলো বলো? আর কত বদনাম করবে আমার করো সমস্যা নেইতো। সময় মত যদি এর শোধ না নিছি তবে আমার নাম ইকরা নয়।

সোহান:- তোর নাম ইকরা হবে কেন? তোর নামতো ফুলটুসি।

— কিছু বলতে যাবো ওমনি ফুপু আর আফরিন নাস্তা নিয়ে রুমে ঢুকলো।

— চারজন এক সাথে নাস্তা করতে বসলাম। নাস্তা করতে করতে অনেক গল্প করলাম চারজন মিলে।
নাস্তা শেষ হতেই আকাশ বললো।

আকাশ:- ভাইয়া আমাকে আজকের মত যেতে হবে।

সোহান:- দুপুরের খাবার খেয়ে গেলে ভালো হতো না?

আকাশ:- না ভাইয়া, অন্য একদিন দু’জন মিলে এক সাথে লাঞ্চ করবো।

সোহান:- দু’জন কেন আমরা সকলেই করবো।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া বিয়ের আগে আপনারা এক সময় করে আসুন সকলে মিলে ঘুরাও হবে সাথে বাহিরে খাওয়াও হয়ে যাবে।

সোহান:- হ্যাঁ এটা ভালো বলছো, ঠিক আছে আজ তাহলে আর আটকাবো না যাও তবে আমাদের ফোনে কথা হবে কবে আমরা এক সাথে ঘুরছি।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া অবশ্যই।

— আকাশ ভাইয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি ভাবছি কিভাবে সোহানকে শাস্তি দেয়া যায় সব সময় সব জায়গায় আমাকে শুধু ছোট করা এমন মজা দেখাবো যে আর কখনো এমন করতে চাইবে না। কিন্তু কিভাবে করবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় আফরিন আপু ডাক দিয়ে বললো চল আমরা দু’জন ঘুরে আসি। কিছু দূরেই আমার বান্ধবির বাড়ি যেয়ে দেখা করে আসি তোর ভালো লাগবে।

— দু’জন রওনা দিলাম, সোহান বাহিরে যেতে দেখে বললো ফুলটুসি কোথায় যাস?

— তোমাকে বলতে হবে নাকি আমরা কোথায় যাই।

সোহান:- যা যা কেউ নিশ্চই অপেক্ষা করছে।

— করলে করবে তাতে তোমার কি? তুমি বসে থাকো ঘরের ভিতর একা একা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে পরলাম। প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর আপুর বান্ধবির বাড়িতে এসে পৌছালাম। আপুর বান্ধবির সাথে গল্প করছি এমন সময় উনার আম্মু এসে নানান রকম পিঠা দিলো। পিঠা খাচ্ছি আর গল্প করছি। উনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেলো গল্প করতে করতে তারপর দু’জন উনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সোহান দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে রাগানোর জন্য হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- কি মনে রঙ লেগেছে নাকি?

— তোমাকে বলতে হবে নাকি? আফরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম আপু তোমার বান্ধবির ভাইটা কিন্তু দারুণ স্মার্ট বলেই চোখ টিপ মারলাম।

সোহান:- বাহ বাহ তাহলেতো বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়ে আসলি, যদি সে আড্ডার রেশ কেটে থাকে তবে আমাকে এক কাপ চা করে খাওয়ালে ভালো হয় আর কি।

— খুব অবাক হলাম, সোহান না রেগে আমাকে উল্টো চা বানিয়ে আনতে বলে আমার মেজাজই খারাপ করে দিলো। রান্না ঘরে ঢুকে চা বানাতে বানাতে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ ওকে শাস্তি দেবার। চায়ের ভিতর কিছুটা গুড়া মরিচ দিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম সোহানের রুমে। চায়ের মগ সোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কখন সোহান চায়ে চুমুক দিবে। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এলো। সোহান মগে ঠোট লাগিয়ে চুমুক দিলো। আমার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো।

সোহান:- এটা কি দিলি চা না বিষ বলেই মুখ থেকে সব বের করে ফেলে দিয়ে ঝালে হা করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।

— আমি জোড়ে জোড়ে হেসে চলছি,

সোহান:- অনেক কষ্টে পানি নিয়ে আয় হাসি বন্ধ করে।

— পারবো না এটাই তোমার শাস্তি কথাটা বলে রুম থেকে দৌড়ে বের হবো ওমনি পেছন থেকে হাত ধরে টান দিতেই সোহানের উপর পরলাম। সোহান নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারলো খাটের উপর পরে গেলো বুকের সাথে চেঁপে নিয়ে। আমার ঠোটে হঠাৎই সোহান নিজের ঠোট লাগিয়ে কিস করতেই আমি দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here