শুধু তুমি 💞 পর্বঃ- ১৩ Samira Afrin Samia #নিপা

0
344

শুধু তুমি 💞
পর্বঃ- ১৩
Samira Afrin Samia
#নিপা

তনা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বেডে শুয়ে তনা এখনও কান্না করছে। তনার চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। নিরবে কেঁদে যাচ্ছে তনা। এই কান্নার শব্দ নীল শুনতে পারছে না।
একটু পরেই নীল রুমে আসলো। নীল রুমে এসে দেখে তনা শুয়ে আছে। নীল তনাকে কয়েক বার ডাকলো। কিন্তু তনা কোন সারা দিল না। তনার কি হয়েছে নীল এটা বুঝতে পারছে না। এমন কি হলো যার জন্য তনা নীলের সাথে কথা বলছে না। নীল রুমের লাইট অফ করে তনার পাশে শুয়ে পড়লো।
তনা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল। তনার হঠাৎ কি হয়েছে এই ভেবে ভেবে নীল ও ঘুমিয়ে গেল।

প্রায় অনেক দিন কেটে গেল। এর মাঝে তনা আর নীলের মাঝের দূরত্ব টা ও বেড়ে গেল। তনা এখন নীলের সাথে খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলে না। এর মাঝেই একদিন তনা নীলের অফিসে ফোন করে জানতে পারছে আনিকা যে নীলের অফিসে জব করে। আনিকা নীলের অফিসে জব করে এটা নীল পুরোপুরি তনার থেকে লুকিয়ে গেছে। আর এটা জেনেই তনা আর নীলের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। কেউ ই কারো সাথে সরাসরি কিছু বলছে না।

বিকেলে তনা আর লিনা বসে টিভি দেখছি। তনা সোফায় বসে আছে। আর লিনা ফ্লোরে বসে সবজি কাটছে রাতে রান্নার জন্য।
— আপু একটা কথা বলবো?
— একটা কথা বলবি। তাও আবার পারমিশন নেওয়া লাগে নাকি? কি বলবি সোজা বলে ফেল।
— আপু তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কয় বছর হয়েছে?
— এই তো দুই বছর ছয় মাস। কেন?
— না মানে। আপু।
তনা বিরক্তি নিয়ে
— কি না মানে আপু? কি বলবি বল।
— আপু মেঘা আপুর বেবী আছে। তোমার একটা বেবী থাকলে কত ভালো হতো। তুমি একটা বেবী নেও নাই কেন আপু? তোমার বেবী থাকলে আমি ওর সাথে কত মজা করতাম।
লিনার মুখে বেবীর কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে তনার মুখে ঘন কালো মেঘের ছাপ পড়ে গেল। মনের মধ্যে চেপে রাখা কষ্ট টা আবার উঁকি দিলে উঠলো। না চাইতে ও তনার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। তনা লিনা কে কিছু না বলে রুমে চলে গেল। লিনা একটু অবাক হলো।লিনা কি এমন বলেছে যার জন্য তনা এভাবে কিছু না বলে চলে গেল। লিনা ভাবছে ও কি ভুল কিছু বলে ফেলেছে?
তনা বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে অঝোরে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।
রাত হয়ে গেল। নীল বাসায় আসছে। রুমে এসে দেখে তনা বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নীল ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে র্শাটের বোতাম খুলতে খুলতে
— তনা এভাবে শুয়ে আছো কেন। কি হয়েছে?
তনা কিছু বলছে না। নীল আরো কয়েক বার তনা কে ডাকলো। তার পর ও তনা কোন কথা বলছে না। নীল এবার তনার পাশে বসে। তনার কাঁধে হাত রেখে তনাকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে
— এই তনা কি হলো। কখন থেকে ডাকছি কিছু বলছো না কেন?
নীল তনা কে এপাশ ফিরিয়ে বুঝতে পারলো। তনার জ্ঞান নেই। নীল ব্যস্ত হয়ে লিনা কে ডাকতে লাগলো। নীল তনার মাথা নীলের কোলে তুলে নিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে তনার মুখে পানির ছিটে ফোঁটা দিতে লাগলো। নীলের ডাক শুনে এতক্ষণে লিনা ও এসে গেল।
— ভাইয়া আপুর কি হয়েছে?
— জানি না কি হয়েছে। রুমে এসে দেখি ও উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমি ডাকলাম সাড়া দিল না। এখন দেখি ওর জ্ঞান নেই।
তনা অনেকক্ষণ কান্না করায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শব্দ করে কান্না না করে ভেতরে ভেতরে কান্না করলে জ্ঞান তো হারাবার ই কথা। এমনিতেই তনা বেশি কান্না করলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নীল ভয়ে বার বার তনা কে ডাকছে। আর মুখ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে।
— তনা এই তনা।কি হলো প্লিজ তনা উঠো। তনা কথা বলছো না কেন? আমার সাথে কথা বলোনা প্লিজ।
তনার মুখে কয়েক বার পানির ছিটা দিলে। একটু একটু করে তনা চোখ খুলার চেষ্টা করছে। তনার জ্ঞান ফিরেছে। তনা চোখ খুলে নীল কে দেখতে পেল। এই কয়েক মুহূর্তে নীলের চোখ, মুখের কি অবস্থা হয়েছে। নীল পাগলের মতো তনার মুখে চুমু দিতে লাগলো। নীলের চোখে তনা কে হারানোর ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তনা উঠতে চাইলে নীল তনার হাত ধরে তনাকে উঠিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।
— লিনা তোমার আপুর জন্য খাবার নিয়ে এসো।
— আচ্ছা ভাইয়া।
লিনা খাবার আনতে যাচ্ছিল। তনা লিনা কে খাবার আনতে না করে দিয়ে। লিনা কে নিচে যেতে বললো।লিনা চলে গেলে তনা বেড থেকে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
— কি হয়েছে তোমার?
— নীল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
নীল খুব স্বাভাবিক গলায় তনাকে জিঙ্গেস করলো
— কি বললে তুমি আবার বলো তো।
— তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আনিকা কে বিয়ে করে নতুন করে আবার তোমার জীবন শুরু করো।
তনার মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে নীলের মাথায় রক্ত উঠে গেল। নীল নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। তনা কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নীল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তনার গালে একটা থাপ্পড় মারলো। তনা তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেল। নীল তনার হাত ধরে তনাকে টেনে তুলে আবার দাঁড় করালো। তনা কাঁদছে।
— তোর সাহস কি করে হয়। তোকে ডিভোর্স দেওয়া কথা বলার। তুই আমাকে কি পেয়েছিস। মুক্তি চাস তুই আমার থেকে? তুই আমার থেকে মুক্তি চাইলে কি হবে আমি তো এতো সহজে তোকে আমার থেকে মুক্তি দিব না। আরে, এই তুই যখন যা করতে বলবি আমি তখন তাই করবো নাকি? আমি কি তোর হাতের পুতুল। তুই কি আমাকে পুতুল মনে করিস নাকি জীবন টা কে পুতুল খেলা মনে করিস। তুই বললেই আমি তোকে ভুলে গিয়ে অন্য কারো সাথে সুখে সংসার করবো?
আমি তো তোকে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করিনি। তুই আমাকে বাধ্য করছিস তোকে ভালোবাসতে। যখন আমি আনিকা কে ভালোবাসতাম তখন আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে ছিলি তোকে ভালোবাসার জন্য। আর এখন যখন আমি তোকে ভালোবাসি তুই এখন বলছিস আমি তোকে ভুলে যেতে, আনিকা কে বিয়ে করতে?
তুই নিজেকে কি ভাবিস? আমি তোকে খুন করে নিজে মরে যাবো পরেও তোকে অন্য কারো হতে দিব না। পৃথিবীর কোন শক্তি তোকে আমার থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। মৃত্যু ও তোকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। তুই আমার আছিস আর আমার ই থাকবি।
নীল তনার হাত ধরে তনা কে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলো বলছে। নীলের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নীলের চোখ থেকেও সমানে পানি পড়তেছে। তনা কান্না করতে করতে নীল কে জড়িয়ে ধরলো।নীল এক ঝটকায় তনা কে দূরে সরিয়ে দিল। নীলকে এখন এতো সহজে শান্ত করা যাবে না এটা তনা খুব ভালো করেই জানে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here