শেষ বিকেলের রোদ- ১১তম পর্ব
©শাহরিয়ার
হঠাৎ করে ফুপুর ডাকে সব ভাবনায় ছেদ পরলো।
ফুপু:- সবাই খাবে আসো। খেয়ে এসে না হয় গল্প কইরো।
— ফোনের স্কিনে চাপ দিতে দেখতে পাই রাত নয়টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট, গ্রামের জন্য এটাই অনেক রাত। যদিও বাড়ির গেট থেকে শুরু করে অনেকটা রাস্তা আর বাড়ির ভিতরের অনেকটা জুড়েই লাইটিং করা। উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে তবুও অভ্যাস বলে একটা কথা রাতের খাবার খেয়েই সকলে শুয়ে পরবে। ভাবতে ভাবতে সকলে মিলে খাবার টেবিলে চলে আসলাম। আমরা আসার আগেই ফুপা প্লেটে খাবার রেডি করে রেখেছেন।
ফুপা:- আয় আয় বস তোরা, যখন মনে চায় ঘুমাবে কিন্তু খাবার আগে খেয়ে হজম করতে হয় বুঝলে, তাহলে ভালো ঘুম হয়।
— সকলে মিলে এক সাথে উত্তর দিলাম হ্যাঁ। এরপর খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ হতেই আমি আর আফরিন আপু আমাদের রুমে আর সোহান সোহানের রুমে চলে আসলো। আসার পথে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভালোই আলোকিত হয়েছে চারিদিক। বেশ আনন্দ লাগলো দেখে। ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে দু’জন বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবছি কখন আপু ঘুমাবে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বুঝতে পারলাম আপু ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি উঠে আস্তে করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বের হয়ে সোজা পুকুর ঘাটে চলে আসলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে কল করলাম।
সোহান:- হ্যালো কি হয়েছে তোর কোন সমস্যা?
— হুম অনেক সমস্যা ঘুম আসছে না। তুমি একটু আসো না, পুকুর ঘাটে বসে আছি।
সোহান:- এই সব ন্যাকামি বাদ দিয়ে ঘরে যাইয়া ঘুমা।
— তুমি আসবা নাকি আমি তোমার ঘরে চলে আসবো?
সোহান:- এই না না আসবি না, আমি আসতেছি।
— ফোন কেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন সোহান আসবে, এক দিকে অপেক্ষা অন্যদিকে ভয় ভয় ও লাগছে এতো কিছুর পরেও যদি সোহান আমাকে ভালো না বাসে? ভাবতে ভাবতেই সোহান পিছনে এসে দাঁড়ালো।
সোহান:- কি হইছে বল?
— অনেক কিছু হয়েছে, আপাতত আমার পাশে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখো। তাহলেই হবে,
সোহান:- তুই কি আমাকে জ্বালিয়ে মারবি?
— উহু ঘাড় মটকে মারবো।
সোহান:- আমার ঘুম পাচ্ছে যা যেয়ে ঘুমিয়ে পর।
— তুমি এতো পঁচা কেন?
সোহান:- আমি কিসের পঁচা, ভালোর জন্যই বলছি কয়দিন পর আফরিনের বিয়ে রাত জেগে বসে থাকলে চেহারা আর চেহারা থাকবে না।
— তুমি আস্তো একটা আনরোমান্টিক ছেলে।
সোহান:- এটা ঠিক বলেছিস। আচ্ছা রোমান্টিক হবার কোন টিপস জানা আছে তোর?
— আহা কি ঢং,
সোহান:- ঢং এর কি হলো? তুইতো সারা দিন রাত রোমান্টিক মুভি আর বই পড়িস আমাকে একটু রোমান্টিকতা শিখিয়ে দে।
— দেখ ভালো হবে না কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।
সোহান:- এই না না খবরদার এমন কাজ করিস নে।
— তাহলে চুপ করে আমার পাশে বসে পরো।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে।
— সোহান বসতেই আমি ওর পাশে বসলাম। নিরব রাত চারিদিক থেকে ঝিঁঝিঁপোকা ডেকে চলেছে, সোহানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সে শব্দ শুনে চলেছি কারো মুখে কোন কথা নেই। কখনো কখনো নিরবতাও অনেক ভালো লাগে যেমনটা এখন আমার ভীষণ ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে এভাবেইতো অনন্তকাল আমি কাটিয়ে দিতে চাই। সোহান তুমি কেন বুঝনা কত ভালোবাসি তোমাকে।
সোহান:- নিরবতা ভেঙে বলতে শুরু করলো, আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে ঘরের ভিতর যা ফুলটুসি।
— চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সত্যিই চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। তবুও সোহানের কাঁধে মাথা রেখে বললাম আসুক না বৃষ্টি থাকি না আরও কিছুটা সময় এই নিরলায়।
সোহান:- এই নিরব রাতে ঝুম বর্ষায় আজ মন হারাতে চায়। হোক না ঝড় তুফান, তবুও থাকবো দু’জন আজ নিরলায়।
— আরে বাহ তুমিতো কবি হয়ে গেলে।
সোহান:- হা হা হা চেষ্টা করছি আর কি, ভবিষৎ এ যদি কাজে লাগে।
— হুম হুম লাগবে লাগবে, আচ্ছা আরও কিছু শোনাও না।
সোহান:- কখনো কখনো কিছু কথা না বলা থাকাই ভালো, কখনো কখনো নিরবতার ভাষা জানতে না চাওয়াই ভালো। কখনো কখনো কিছু ভালোবাসার কথা না বলাই ভালো।
— আরে বাহ! তুমিতো দেখছি খুব রোমান্টিক হয়ে গেছো।
সোহান:- হয়েছে এবার যা ঘরে যা।
— আমি ফিরবো না ঘরে আমি থাকবো আজ বাহিরে, অজানা অনেক গল্প, না বলা অনেক কথা আজ শুনতে চাই। মুখ ফুটে চিৎকার করে বলতে চাই ভালোবাসি ভালোবাসি।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তুই চিৎকার করেই বলতে থাক, যদি তোর ডাক শুনে কেউ ছুটে আসে।
— চুপ একদম চুপ করে বসে থাকো কারো আসার দরকার নেই।
সোহান:- তুই কি আমাকে বৃষ্টিতে ভেজাবি?
— না বৃষ্টি আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। দু’জন আবারো নিরবে বসে রইলাম হঠাৎ করেই বাতাস শুরু হতেই সোহান উঠে দাঁড়িয়ে হাত টান দিয়ে বলতে শুরু করলো আর এক মুহুর্তও এখানে না। তাড়াতাড়ি চল না হলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। সোহানের পাশাপাশি হাঁটছি আর ভাবছি আজও সোহানকে বলতে পারলাম না, কিংবা ওর মুখ থেকে শুনতে পারলাম না ভালোবাসি শব্দটা। নিঃশব্দে হেঁটে চললাম ঘরের দরজার সামনে রেখে সোহান নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি মুগ্ধ হয়ে অন্ধকারে সোহানের চলে যাওয়া দেখছি কয়েক পা হেঁটেই সোহান পেছনে ফিরে তাকিয়ে।
সোহান:- দারুণ মুহুর্ত উপহার দেবার জন্য তোকে ধন্যবাদ যদি কখনো সুযোগ হয় তবে আমিও তোকে ফিরিয়ে দিবো এমন একটি মুহুর্ত।
— বলেই সোহান আবার হাঁটা শুরু করলো, আমিও যে অপেক্ষা করছি তোমার সাথে প্রতিটা সুন্দর মুহুর্ত কাটানোর জন্য। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই, আফরিন আপু বলতে শুরু করলো।
আফরিন:- কিরে কেমন কাটলো রোমান্টিক মুহুর্ত?
— কিসের রোমান্টিক মুহুর্ত?
আফরিন:- হয়েছে আর লুকাতে হবে না আমার কাছে, আমি তোর চেয়ে বয়সে বড় অতএব আমি অনেক কিছুই বুঝি।
— হয়েছে হয়েছে তোমার এতো কিছু বুঝতে হবে না, আর রোমান্টিক না ছাঁই, বৃষ্টি শুরু হলো বলে।
আফরিন:- হাসতে হাসতে আহা দু’জন বসে বৃষ্টিতে ভিজলেইতো পারতি।
— তুমিও না আপু কি সব বলো দাঁড়াও আকাশ ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে হবে।
আফরিন: সত্যি বললেও দোষ তাহলে আর কি কিছুই বলা যাবে না।
— বিছানায় শুয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে, কি করবো বলো এখনো ভালোবাসি বলতেই পারিনি, আর ঐ হাবলাটাও আমার মনের কথা বুঝে না।
আফরিন:- আরে বুঝে বুঝে হয়তো কোন কারণে বলতে সাহস পাচ্ছে না।
— ভালোবাসি বলার জন্য কি এমন লাগে? আর আমিতো অপরিচিত কেউ না।
আফরিন:- এটাইতো সমস্যা অপরিচিত হলে সহজেই হয়তো বলে দিতে পারতো। কিন্তু খুব কাছের মানুষকে খুব সহজে কিছু বলা যায় নারে।
— দু’জন গল্প করতে করতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। রাত গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করলো। এক সময় দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো। গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পরলাম।
— খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো, আমি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম, আফরিন আপু তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। দরজা খুলে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা সোহানের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। তখনো ঠিকমত অন্ধকার কাটেনি। যদিও ফযরের আজান অনেক আগেই দিয়েছে কিন্তু মেঘলা আকাশ তাই চারিদিক অন্ধকার। নিঃশব্দে এগিয়ে যাচ্ছি যদি কেউ দেখে ফেলে তবে কি জবাব দিবো। সোহানের ঘরের সামনে এসে দরজায় হাল্কা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। সোহান রাতে দরজা না লাগিয়েই ঘুমিয়েছে, আমি চুপ করে রুমে ঢুকলাম। আরামে ঘুমাচ্ছে সোহান।
আস্তে আস্তে কয়েকবার ডাক দিলাম উঠলো না।
ঘুমন্ত অবস্থায় সোহানকে বেশ বোকা বোকা লাগে।
মাঝে মাঝেই ওকে সকালে ডাক দিতে এসে আমি একা একাই প্রচণ্ড হাসি। আর একটু জোড়ে ডাক দিতেই সোহান লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানার উপর।
— সোহান চোখ ঢলতে ঢলতে কিরে তুই এতো ভোরে আমার রুমে কেন?
— পাশে বসতে বসতে চলো না বাহির থেকে ঘুরে আসি।
সোহান:- তুই যাতো যা আমার ঘুম হয়নি ভালো আমি ঘুমাবো।
— তুমি যাবা নাকি পানি এনে ঢেলে দিবো।
সোহান:- খুব বেড়ে গেছিস কিন্তু যা বলছি।
— না যাবো না, এখুনি তোমাকে উঠাচ্ছি বলেই ওয়াশ রুমের দিকে দৌড়ে যেয়ে মগে করে পানি নিয়ে এসে যাবে নাকি ভিজিয়ে দিবো?
সোহান:- বলছি এখান থেকে যা পানি দিলে ভালো হবে না।
— সব ভালো মন্দ তুমি একাই বুঝ আমরা কিছু বুঝি না নাকি?
সোহান:- তুই সব কিছু এক লাইন বেশী বুঝিস এখন রুম থেকে যা নয়তো..
— নয়তো কি হ্যাঁ?
সোহান:- কিছু নাতো তুই যা বলছি মানে চলে যা।
— আমি না বলছি মানে তোমাকে না নিয়ে যাবো না বলেই পানির মগটা সোহানের দিকে এগিয়ে ধরতেই। সোহান বাধা দিতে চেষ্টা করলো। হাত ধরে টানাটানির এক পর্যায় দু’জনের শরীরের পানি ছিটে লাগলো। টানাটানির এক পর্যায় আমি বিছানায় পরে গেলাম। অমনি সোহান আমার দু’হাত চেঁপে ধরলো।
— উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি,
সোহান:- দু’হাত আরও জোড়ে চেঁপে ধরে না ছাড়ছি না। তোকে আজ
— ছাড়বে না কি করবে।
সোহান:- একটা হাত ছেড়ে দিয়ে চুলের মাঝে হাত রেখে ঠোঁটটা নিচে নামিয়ে ঠোঁটের সাথে চেঁপে ধরলো।
চলবে..