#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ০৩
#আয়েশা_আক্তার
🍁
কম্পিউটারের সামনে বসে কিছু একটা আনমনে ভাবছে আবির। আনিয়া সেই কখন থেকে চা হাতে নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে তার খেয়াল ই নেই। এরকমটা এর আগে কখনো হয়নি। আবির ভীষণ পড়াকু ধরনের ছেলে। সে কখনো বই,খাতা বা কম্পিউটার সামনে নিয়ে অন্যমনস্ক হয় না। তাকে দেখে মনে হয় পৃথিবীতে সে একমাত্র পড়াশোনা করার জন্য ই এসেছে। পড়া বাদে আর কোন কাজ নাই। তার ডিকশনারি তে শুধু একটাই শব্দ। সেটা হলো পড়া, পড়া আর শুধু পড়াই। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দেখে আনিয়া জোরে চিতকার করে ভাইয়া বলে ডেকে উঠে। এতে আবির হকচকিয়ে যায়।
“কখন এসেছো? আর এভাবে চিতকার করতে হবে? আমি তো কানে শুনি তাই না?”
” হুম, কানো তো শুনো ঠিকই তবে তুমি কি ভাবছিলে বলো তো?”
আবির হেসে উঠে বলে,
“কিছু একটা ভাবছিলাম। ”
“কি সেটা?”
“গেইজ করো।”
” উহু, ভাইয়া তুমি বলো।
” আমি জানি, আমার বোন ভীষণ বুদ্ধিমতী। তাই তুমি ই গেইজ করো।”
আনিয়া মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা ভেবে চট করে বলে উঠে,
” তুমি প্রেমে পড়েছো ভাইয়া?”
আবির চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুচকি হাসে। আনিয়া ভাইয়ের জবাবের অপেক্ষায় চেয়ে আছে। আবির হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠে বলে,
” সেরকম ই কিছু একটা।”
“কিহহ!! সত্যি? ভাবি দেখতে কেমন? কিসে পড়ে? তোমার সাথে পরিচয় কিভাবে? ”
” এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কিভাবে হবে?সময় হোক সব জানতে পারবে। ”
” আচ্ছা আমি গিয়ে মাকে জানিয়ে আসছি এখনই। ”
” না, এমনটা করো না ‘আনু’। সময় হলে আমিই জানাবো।”
_____________________________
আবির স্কলারশিপ পেয়েছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য চলে যাবে দেশের বাইরে। তার মন খুবই খারাপ স্কলারশিপের জন্য আবেদন সে নিজেই করেছে। তার সপ্ন সে বাইরের দেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে।কিন্তু এখন খারাপ লাগছে। আর মাত্র এক সপ্তাহ তার পরেই চলে যাবে আবির ২ বছরের জন্য। এর মধ্যে যদি পিচ্চি টার বিয়ে হয়ে যায়।আর এক সপ্তাহের মধ্যেই যদি আবারও দেখা হতো পিচ্চি টার সাথে। কলেজের সামনে চায়ের দোকানে বসে এসব ভাবছে আবির।হঠাৎ করেই তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো একটা বাইক। বাইকের ব্যাক্তির দিকে চোখ যেতেই মুখে হাসি ফুটিয়ে জড়িয়ে ধরে,
তুই এখানে??
কেন রাস্তা টা কি তোর কেনা? নাকি এই চায়ের টং দোকান টা তোর কেনা??
তানভীর হেসে বললো,
এভাবে কথা বলছিস কেন এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।
আবির কাঁধে হাত রেখে,
হুম, তুই কোথায় গিয়েছিলি এই সময়?
তানভীর পেছনে তিথি কে দেখিয়ে বলে,
ওকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছিলাম। কিরে এদিকে আয়, ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন??
তিথি একবার তানভীরের দিকে দেখছে তো একবার আবির কে। আবির বেচারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে। তানভীরের ডাকে তিথি ভাইয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েই বলে উঠলো,
আপনি এ…খা….নে???
আবির তানভীর কে ছেড়ে হাসি মুখে বলে উঠলো,
কেন আমি কি এখানে থাকতে পারি না পুরো নরসিংদী টাই কি তোমার আর তোমার ভাইয়ার নাকি???
তানভীর ওদের দিকে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে,
তোরা একে অপরকে চিনিস??
তিথি ভাইয়ার দিকে ঘুরে,
আরে ভাইয়া তোমাকে তে বলাই হয় নি।জানে দুটো কদম ফুলের জন্য ওনি আমাকে কত্ত বড় ধমক দিয়েছে। তারপর তিথি সেদিনের ঘটনা সবটা খুলে বললো তানভীর কে।
তানভীর সব শুনে আবির কে একটু দুরে নিয়ে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসয়ে,
ঐ শালা তুই ঐদিন যেয়ে মেয়ের কথা বলেছিস ওটা কোনোভাবেই তিথি নয়তো??
আবির মাথা চুলকে,
শালা তো তুই হবি আমার। হুম তিনি ই ঐ মেয়েটা।কিন্তু আমি কি জানতাম নাকি ও তোর বোন।দেখ তুই রাগ করিস না প্লিজ।
তানভীর আবরো জিজ্ঞেস করলো,
তিথির জন্যই তুই বাইরের কোন দেশে যেতে চাইছিস না??
হুম রে, ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।আমি চলে গেলে যদি ওর বিয়ে হয়ে যায়।আর এখন তো ও যানেই না।তুই প্লিজ মেনে নে।তুই চাইলে এখনি আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিতে পারিস কিন্তু আমি পারনো তোকে ছাড়া থাকতে। আর না পারবো তোর বোন কে ছেড়ে দিতে। প্লিজ এমন কিছু করিস না।বলে আবির তানভীরের পায়ের কাছে বসে পরলো।
তানভীর ওর সামনে বসে ওর হাত ধরে,
পাগল হয়ে গিয়েছিস?? কি করছিস এসব??
আবির চুপ।
তানভীর হেসে বললো,
আমি মেনে নিতে পারি কিন্তু শর্ত আছে??
আবির উঠে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে,
কি শর্ত??
তানভীর উঠে,
প্রথমত,তুই বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে তারপর তিথি কে তোর ভালোবাসার কথা জানাবি। দ্বিতীয়ত তিথি কষ্ট পায় এমন কোনো পরিস্থিতি যেনো কখনো তৈরি না হয় সেটার খেয়াল রাখবি। আর কিছুই চাই না।
আবির খুশি হয়ে তানভীর কে জড়িয়ে ধরে,
সব শর্ত মানতে রাজি আছি দোস্ত।
তিথি এতক্ষণ দুরে দাড়িয়ে সবটা দেখছে, কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।এবার ওর বিরক্ত লাগছে। তাই ওদের কাছে এসে ঝাঁঝালো গলায়,
ভাইয়া বন্ধু কে পেয়ে নিজের বোনকেই ভুলে গেলে?? থাকো তোমরা চললাম আমি।
বলেই তিথি সামনের দিকে হাটা শুরু করতেই পায়ে পা বেজে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে দুজন যুবক শক্ত হাতে আগলে নিলো।তিথি দুজনের দিকে তাকিয়েই যাচ্ছে বারবার।তানভীর বুঝতে পারলো আবির আর যাই হোক ওর বোন কে কখনো কষ্ট দিবে না।হঠাৎ করেই তানভীরের ফোন টা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার তানভীর রিসিভ করে হ্যালো বলতেই যা শুনলো তার জন্য মেটেও তানভীর প্রস্তুত ছিলো না।ফোন টা হাত থেকে পড়ে গেলো। তানভীর থ মেরে গেলো চোখ দিয়ে টুপটাপ কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।তিথি ভাইয়ের চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে ভাইয়া কাঁদছো কেন?? আর কে-ই বা কল দিয়েছে??
তানভীর আরো জোরে কেঁদে দিয়ে,
বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে বোন বাবা হসপিটালে।
🍁
চলবে…
আসসালামু আলাইকুম।
আমি একটু অসুস্থ, আসলে ফোনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আমার মাথা ব্যাথা। চোখে ও ব্যথা করে। তাই নিয়মিত গল্প দেওয়া সম্ভব হয় না। আমি প্রতিদিন অল্প অল্প লিখে তারপর ২/৩ দিন পর পর পোস্ট করবো ইংশাআল্লাহ। তাছাড়া আমি এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পড়াশোনা ও করতে হয়। তাই গল্প নিয়মিত না দেওয়ার জন্য আগে থেকেই দুঃখীত। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। হেপি রিডিং 🖤