সেদিন_বর্ষায় #পর্বঃ৭ #আয়েশা_আক্তার

0
609

#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ৭
#আয়েশা_আক্তার

🍁

যতই দিন যাচ্ছে ততই আবিরের দেশে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। আর মাত্র একদিন বাদেই আবির চলে যাবে দেশের বাইরে। দুরের আমেরিকাতে। মানুষ হাজার চেষ্টা করে ও যে সুযোগ পায় না আবির তা পেয়ে ও চায় না।তার মন ভীষণ খারাপ। বাবা-মা কে যেকোনো বাহানা দেখিয়ে সে ম্যানেজ করতে পারতো ঠিকই। কিন্তু তানভীর যে ওকে শর্ত দিয়ে দিয়েছে। কিভাবে এই শর্ত ভঙ্গ করবে আবির।এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।কোনো মিষ্টি কন্ঠ শুনে আবিরের ধ্যান ভাঙলো,

তিথি হাসতে হাসতে আবিরের রুমে ঢুকে,

আবির ভাইয়া তুমি নাকি কাল আমেরিকা চলে যাচ্ছো?? সেখানে গিয়ে তো আমাদের ভুলেই যাবে। আজকে শেষ বারের মতো আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে প্লিজ??

সারাজীবন শুধু ঘুরতে নয় তোমার সব ইচ্ছে পূরণ আমিই করবো তিথি। তোমার সব রকম বিপদে তোমাকে আগলে রাখবো। (আবির মনে মনে বললো) তিথির সামনে মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে,

এভাবে কেন বলছো তিথি?? আমি তোমাকে, তানভীর কে, বাবা-মা সবাইকে অনেক মিস করবো। ইভেন আমার যেতেই ইচ্ছে করছে না।বলেই আবির গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।

তিথি আবিরের সামনে গিয়ে মন খারাপ করে,

আবির ভাইয়া আমি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি প্লিজ?? না মানে আমার খুব কান্না পাচ্ছে। ভাইয়া তো নেই যে জড়িয়ে ধরে কাঁদব তাই আপনাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাদি প্লিজ??

আবির কিছু না বলে হাত দুটো প্রসস্থ করে দিল।

তিথি আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে দিল। আবির ও হালকা জড়িয়ে ধরলো।(আবির মনেমনে) তুমি কবে বড় হবে পিচ্চি?? এই বুকটা অলওয়েজ তোমার ই। তুমি ক্লান্ত হয়ে এ বুকে ঘুমাবে,অভিমানে এ বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদবে আবার লজ্জা পেয়ে ও এখানে মুখ লুকাবে।আমি পরম যত্নে তোমায় এখানে আগলে রাখবো। কখনো কোন কষ্ট পেতে দিব না।পরম আদরে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব?এদিকে তিথি কেঁদেই যাচ্ছে। আবিরের ভেতর টাও পুড়ছে। আর সহ্য করতে পারছে না আবির।

ঐ পিচ্চি!! আর কাঁদে না প্লিজ। কষ্ট হচ্ছে আমার।

………তিথি কিছু না বলে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

তিথি আর কেঁদো না। আইসক্রিম খাওয়াবো না কিন্তু কাদলে।

খাবো না আইসক্রিম (ফুপিয়ে বললো তিথি)।

আবির তিথির মুখের সামনে মুখ নিয়ে, কেন??

আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন তাই।(ঠোঁট ফুলিয়ে বললো তিথি)

আবির তিথি কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে, কখনো না তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব কি করে? তুমি যে আমার উড়ো প্রেম। (মনে মনে) মুখে বললো, তিথি তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভুলে যাবো??

না তবে এখন থেকে আমাকে কে আইসক্রিম খেতে নিয়ে যাবে? কে ঘুরতে নিয়ে যাবে? ভাইয়া আর আপনি ছাড়া আমি যে মরে যাবো।

কথা টা বলতে দেরি তো আবিরের তিথির মুখে আঙুল ধরতে দেরি হলো না।এমন কথা বলে না তিথি। চোখের পানি মুছে চলো আইসক্রিম খেতে নিয়ে যাবো।আর আজকে তোমাকে অনেক গুলো শপিং ও করে দিব আর ঘুরতে ও নিয়ে যাবো।

তিথি চোখের পানি মুছে খুশি হয়ে আবির কে বললো, আমাকে একটু উপরে তুলে ধরবেন প্লিজ??

আবির কপাল কুঁচকে, কেন??

ধরুন আগে।

আবির কিছু না বলে কৌতুহল বসত তিথি কে একটু উচু করে তুলে ধরলো।

তিথি আকস্মিক আবিরের গালে চুমু দিয়ে নেমে গেল।

আবির হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

তিথি লজ্জা পেয়ে আবিরের বুকে মুখ লুকিয়ে, আমাকে আবার খারাপ মনে করবেন না আমি মোটেই খারাপ মেয়ে নই।আপনাকে কেন জানি একটু আদর করে দিতে ইচ্ছে করলো।তাই…….

হুম বুঝতে পেরেছি পিচ্চি। এবার চলো।

আবির তিথি পাশাপাশি হাঁটছে। তিথি অনেক দুষ্টুমি করছে। আবির সব হজম করছে। মাঝে মধ্যে তিথির পায়ে ইট ভাঙা বা কিছু পরলে আবির তিথি কে সাবধান করছে। আবির মনেমনে ভাবছে। তুমি ও হয়তো ধীরে ধীরে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো।শুধু বুঝতে পারছো না। বয়সে ছোট তো তাই, বড় হলেই বুঝতে পারবে তুমি ও আমাকে ভালোবাসো।আইসক্রিম পার্লার থেকে দুজন আইসক্রিম খেয়ে রিকশা করে শপিং মলে গেল। আবির নিজের জন্য, বাবা-মায়ের জন্য, তিথি আর তানভীরের জন্য অনেক শপিং করলো।আবির তিথির অগোচরে তিথির জন্য একটা ব্ল্যাক কালার শাড়ি কিনলো। সবশেষে দুজন মিলে ফুচকা খেলো।রিকশা করে তিথির বাসার সামনে আসলো।তিথি রিকশা থেকে নেমে আবিরকে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসতে নিলে আবির পেছন থেকে ডেকে উঠে,

তিথি শুনো।

তিথি মুখে হাসি ফুটিয়ে, জি বলুন।

দুটো শপিং ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে, নাও এতে একটা শাড়ি ম্যাচিং চুড়ি, জুতো আর কিছু কসমেটিকস আছে। কাল সকালে ১০ টায় আমার ফ্লাইট। ঠিক ৬ টা ৩০ এর মধ্যে এগুলো পড়ে তুমি আর তানভীর আমাদের বাসায় থাকবে।

ওকে।আর শাড়ি, চুরি কিন্তু আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। থ্যাংক ইউ সো মাচ।কিন্তু আপনি এগুলো কখন কিনলেন?? আমি তো আপনার সাথেই ছিলাম তবু কিছু জানি না।

ওয়েলকাম, আর এগুলো কিনেছি তোমাকে না জানিয়ে সারপ্রাইজ বলতে পারো।বাই, এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হও।

ওকে বাই।

🍁

চলবে

আসসালামু আলাইকুম। সবাই একটু বেশি বেশি কমেন্ট তো করতেই পারেন🥹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here