#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১০
#আয়েশা_আক্তার
🍁
তিথি খুব মনযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। আর শুভ আড়চোখে তিথি কে দেখছে। সে ভেবে পায়না কি করে বলবে তিথি কে তার ভালোবাসার কথা। অবশেষে সে একটা বুদ্ধি আটলো।ক্লাস শেষ হতেই তিথির কাছে নোটস চাইলো। তিথি তার নোটস গুলো বাসায় ফেলে আসছে। তাই নীরার নোটস গুলোই দিয়ে দেয়।আর সেটা শুভকে বলতে ভুলে যায়। এদিকে পরের ক্লাস করাতে স্যার ও এসে গেছে। তাই শুভ নিজের সিটে চলে গেলো। সবাই ক্লাসে মনযোগী হলেও শুভ চিঠি লিখতে ব্যস্ত। চিঠি লেখা শেষ করে নোটসের ভেতরে রেখে দিলো।কলেজ শেষে শুভ তিথি কে নোটসগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো। তিথি ও নীরাকে নোটস দিয়ে বাসায় চলে গেলো।নীরাও নোটস ব্যাগে রেখে বাসায় গেল। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলো নীরা। সন্ধায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজ ব্যাগ থেকে নোটস বের করতেই চিঠি টা পড়ে গেলো। তিথি চিঠি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো,
জানি তুমি আমায় বন্ধু ও মনে করো না। আর ভালোবাসা তো অনেক দুরের কথা। তারপরও আমার মনের কথা গুলো তোমাকে বলছি। খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমার যদি আমাকে পছন্দ না হয় ডিরেক্ট বলে দিও। আর যদি আমায় ভালো লাগে তোমার সেটা ও জানিও।
ইতি
শুভ
নীরা চিঠি পড়ে খুশিতে আত্মহারা। খুশিতে অলরেডি নাচা শুরু করে দিছে। তিথি কে কল করে সবটা জানালো নিরা।তিথি বলছে ওর ভালো লাগলে হ্যাঁ বলে দিতে। নিরাও শুভর মুঠো ফোনে টেক্সট দিলো,
আমিও তোমাকে ভালোবাসি শুভ। ভীষণ ভালোবাসি।
শুভর কাছে তিথি বা নিরা কারো নাম্বার ই নাই। তাই ও মনে করেছে টেক্সটা তিথি ই করেছে। কল দিতে গিয়ে ও কি মনে করে কেটে দিল শুভ। সেও ছোট করে টেক্সট দিলো,
সত্যি?????
নীরা রিপ্লে দিলো, হুম সত্যি ভালোবাসি তোমাকে।
ওকে কালকে কলেজ শেষে দেখা করতে পারবে?
হুম পারবো।কোথায় আসবে বলো?
কলেজের পেছনে পৌর পার্কে চলে এসো।
ওকে।
পরদিন তিথি আর নিরা ক্লাস করছে। নীরা আড়চোখে বারবার শুভর দিকে তাকাচ্ছে। আর শুভ তিথির দিকে। কিন্তু নীরা আর তিথি দুজনেই ভাবছে শুভ নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। এদের দুজনকে দেখে তিথির কেমন একটা অসস্তি লাগছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কলেজ শেষ এ শুভ আগে গেল কলেজের পেছনে পৌর পার্কে। তার কিছুক্ষণ পড়ে নিরা তিথি কে জোর করে নিয়ে আসলো পার্কে।তিথি আসতে চায়নি। নীরা গিয়ে শুভর সামনে দাড়ালো।তার চোখ মুখে হাজারো লজ্জা রা ভর করেছে। মনে হচ্ছে লজ্জায় গাল দুটো টমেটো হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর ও যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে নীরা। তিথি দুরে দাড়িয়ে আছে। শুভ নিরার দিকে তাকিয়ে,
আরে নীরা কিছু বলবে??
নীরা অবাক চোখে শুভর দিকে তাকালো।
শুভঃ আরে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?? কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।আমি এখানে একজনের জন্য ওয়েট করছি সে এসে পড়লে প্রবলেমে পড়তে হবে আমায়।
নীরাঃ মানে কি বলছো এসব? কাল রাতেই না তুমি বললে দেখা করবে?
শুভঃ তোমাকে কখন বললাম দেখা করবো? আমি তো…..
নীরাঃ তাহলে কাকে বলছো? আর চিঠি টাই বা কেন দিলে আমাকে???
শুভ দেখলো তিথি দুরে দাড়িয়ে আছে। তাই ও তিথির সামনে গিয়ে বলতে লাগলো, তিথি কাল তুমি কার নোটস আমায় দিয়েছিলে??
তিথিঃ কেন? নীরার?
শুভঃ কি!!! আমাকে বলো নি কেন তুমি? জানো কত্তো বড় ভুল হয়ে গেছে??
তিথিঃ ভুলে গিয়েছিলাম বলতে। কিন্তু তুমি তো নীরা কে ভালোবাসো।দেখলাম তোমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। আর নীরাও ভীষণ ভালোবাসে তোমাকে।
শুভঃ না আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমার দিকেই তাকাই।
কথা টা নিতে পারলো না নীরা টলে পড়লো মাটিতে। তিথি গিয়ে দৌড়ে ধরলো ওকে।শুভকে বলতেই শুভ আর তিথি নীরাকে নিয়ে হসপিটাল গেলো। স্যালাইন দেওয়া হলো নীরাকে। প্রায় ২ ঘন্টা পর নীরার জ্ঞান ফিরলো। তিথি নীরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল, সরি নীরু। আমার জন্যই তোর সাথে এমনটা হয়েছে। আমি বুঝতে পারি নি, শুভ এমনটা করবে।
নীরাঃ আরে আরে তুই কাদাছিস কেন? আমি একটু ও রাগ করিনি তোর উপর। বরং আমি তোকে এত্তো গুলো ভালোবাসি।
তিথিঃ হুম জানি তো। ভাইয়ার পড়ে আমাকে যদি কেউ ভালোবাসে সেটা একমাত্র তুই নীরু। তোর মতো আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। আমি ও তোকে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।
নীরাঃ জানি পেতনি। ( মুচকি হেসে)
তিথি নীরাকে আরো খানিকটা জড়িয়ে ধরলো। এরমধ্যেই শুভর আগমন ঘটলো। শুভ নীরা কে সরি বললো।নীরা মুচকি হেসে জবাব দিল, আরে তুমি কেন সরি বলছো? এখানে আমাদের কারোই দোষ নেই। তোমরা অযথাই নিজেদের দোষ দিচ্ছো।
শুভ তিথির দিকে তাকালো। তিথি মুখ খুললো, দেখো শুভ আমার ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। সো আমার থেকে দুরে থাকবে আশা করছি। নীরু চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। ভাইয়া আমার জন্য চিন্তা করছে হয়তো। ওরা দুজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে বেরিয়ে পরলো। শুভ ওখানেই দাড়িয়ে আছে।
🍁
চলবে….