#সেদিন_বর্ষায়
#পর্বঃ১২
#আয়েশা_আক্তার
🍁
ধীরে ধীরে তিথির রেজাল্টের সময় ঘনিয়ে এসেছে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে তিথি বসে আছে। তানভীর এসে জোর করলেও সে খায় না। তার এক কথা, রেজাল্ট প্রকাশিত হলে পরে খাবে। টেনশনে ঘরময় পায়চারি করছে তিথি। তানভীর আজকে অফিস যায় নি। তারও ভেতরে ভেতরে চিন্তা হচ্ছে কিন্তু সে তিথির সামনে সেটা প্রকাশ করছে না। তানভীর বোনের ঘরে বসে বোনের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো আরেকবার বলছে,
“লক্ষী বোন আমার খেয়ে নে প্লিজ। ”
তিথি হাত এবং মাথা নাড়িয়ে বলে, সে খাবে না। ঠিক তখনই তানভীরের ফোনে কল বেজে ওঠে। ফোনে আবিরের নাম দেখে বলতে শুরু করে,
“কি একটা অবস্থা দেখ তো। রেজাল্ট দিবে বলে সারাদিন খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বসে থাকতে হবে? তুই ই বল আমার কথা তো শুনছে না।”
আবিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিথির হাতে ফোন ধড়িয়ে দেয় তানভীর। তিথি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আবির ভিডিও কলে। মাথা নিচু করে সালাম দেয় তিথি। আবির সালামের জবাব নিয়ে বলতে শুরু করে,
“কি মিষ্টি খাওয়াবা কখন? ”
“কিসের মিষ্টি? ”
“আগে বলো, কখন খাওয়াবা?”
“উফফ, এমনিতেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি। আপনি আরো বেশি টেনশন দিচ্ছেন। বলেন না কিসের মিষ্টি?”
আবির আর দুষ্টুমি না করে বলে দেয়, “তুমি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছো তিথি।”
তিথি খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে মোবাইল টেবিলের উপর রেখে দৌড়ে গিয়ে তানভীর হাত ধরে ঘুরতে শুরু করে। ঘুরতে ঘুরতে বলে,
“ভাইয়া, আমি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। ইয়াহু ভাইয়া, আমি অনেক খুশি। ”
তানভীর সাথে সাথে মিষ্টি আনতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তানভীর চলে গেলে তিথি এসে আবারো আবিরের সাথে কথা বলে,
“থ্যাংক ইউ।”
আবির হেসে বলে, “শুধু থ্যাংকস? ”
তিথি জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আবির হেসে উঠে।
____________________________
ভাগ্যক্রমে আবারো তিথি এবং নীরা একত্রিত হলো। তারা দুজনেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। কিন্তু তারপর ও তিথির ভীষণ মন খারাপ। কারণ সে কখনো ভাইকে ছেড়ে থাকেনি। এখন কিভাবে তানভীরকে ছাড়া সে একা ঢাকায় থাকবে। বাবা-মা হীন তিথির দুনিয়া যে ভাইকে ঘিরেই। তানভীরের ও ভীষণ মন খারাপ। তবে সেটা নিজ মনে পুষে রেখে বোনকে যথেষ্ট সাহস দিয়ে যাচ্ছে। তিথিকে হোস্টেলে দিয়ে ফিরে আসার সময় তিথি অনেক কান্না করে। তানভীর বোনের মাথায় হাত রেখে বলে,
” কাঁদিস না পাগলি বোন। তুই এভাবে কাঁদলে তো আমার কষ্ট হয়। ”
এই কথা শুনে তিথি কিছুটা শান্ত হয়। তানভীর বোনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে যায়। তিথি নীরাকে নিয়ে হোস্টেলের ভেতরে চলে যায়। প্রথম প্রথম ভীষণ৷ কাঁদতো তিথি। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নেয় সে। দেখতে দেখতে পাচটা মাস কেটে গেছে। যদিও মাঝে মধ্যে এখনো মন কেমন করে উঠে। তবে সেটা আর প্রকাশ করে না তিথি। প্রতিদিন নিয়ম করে তানভীর এবং আবির কল দেয় তিথি কে।আজকে তিথি ভীষণ খুশি। কারণ আজকে ওর সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তারপর অনেক দিন ভার্সিটি অফ থাকবে। তখন গিয়ে বাড়িতে থেকে আসতে পারবে। এটা ভাবতে ভাবতেই নীরাকে নিয়ে ভার্সিটির দিকে পা বাড়ায় তিথি।
🍁
চলবে…..