শেষ বিকেলের রোদ -১৩ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— সোহান মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। বেশ উপভোগ করছি আমি ব্যাপারটা সোহানকে তা বুঝতে দিচ্ছি না। আমি আমার মত বসে আছি। হয়তো সোহানেরও ভালোই লাগছে না হলে এতো সময়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠতো এই ফুলটুসি ঠিক মত চুল গুলোও বেধে রাখতে পারিস না। অথবা ফুলটুসি তোর চুল গুলো কেটে দেয়া দরকার। আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম সোহান গালে হাত দিয়ে চুল গুলো আরও একবার সরিয়ে দিচ্ছে, তা তা খুব আস্তে আস্তে যেন আমি না বুঝতে পারি। আচ্ছা আমি বুঝলে কি এমন হতো? ভাবতে ভাবতে এক সময় রিক্সা শহরের ভিতরে প্রবেশ করলো।
সোহান:- আফরিন অমুক রেস্টুরেন্টটা কোথায়রে?
আফরিন:- এইতো ভাইয়া আর তিন চার মিনিট লাগবে।
সোহান:- আচ্ছা আসলে রিক্সা থামাতে বলিস।
আফরিন:- ঠিক আছে ভাইয়া।
— কয়েক মিনিটের ভিতর সেই রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসলাম যেখানে আগে থেকেই আকাশ ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাদের দেখেই এগিয়ে আসলো।
আকাশ:- সালাম দিয়ে কেমন আছেন ভাইয়া, আর তোমরাও সকলে কেমন আছো?
সোহান:- এইতো ভালো তুমি কেমন আছো?
আকাশ:- জ্বি ভাইয়া ভালো, চলুন ভিতরে যেয়ে কথা বলি।
সোহান:- হ্যাঁ চলো, সবাই মিলে ভিতরে যেয়ে বসলাম।
আকাশ:- কে কি খাবেন বলেন?
— সকলে মিলে খাবারের অর্ডার করলাম, আকাশ ভাইয়া বার বার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।
আফরিন:- বার বার বাহিরে তাকিয়ে কি দেখেন?
আকাশ:- আমার একটা ফ্রেন্ড আসার কথা, এখনো আসছে না তাই দেখছি তাকিয়ে।
— কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই আকাশী রঙের শার্ট পরা সুদর্শন ছেলে এগিয়ে আসতে আসতে বললো সরি সরি সবাইকে অপেক্ষা করালাম।
সোহান:- না না কোন সমস্যা নেই,
আকাশ:- ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দেই, ও হচ্ছে আরমান আমার বন্ধু, জার্মানিতে থাকে ওখানেই ওর নিজের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, আমার বিয়ে উপলক্ষে বাংলাদেশে আসা হয়েছে। আর আরমান উনি সোহান ভাইয়া, ও আফরিন তোর হবু ভাবি, আর ও হচ্ছে ইকরা তোর ভাবির ছোট বোন। এখন বল কি খাবি?
আরমান:- তোরা যা অর্ডার করেছিস তাই অর্ডার করলে হবে বলেই ইকরার দিকে তাকালো।
— খাবার রেখে বার বার চোখ এদিকেই চলে আসছে আরমানের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একবার নিজেই নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম শরীরের জামা ঠিক আছে কিনা। না সব কিছু ঠিকই আছে, তাহলে উনি কি আমাকে দেখছে? ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর লাগলেও মুখে হাসি ফুটিয়েই তার দিকে তাকাচ্ছি। এটা একটা সুযোগ সোহানকে রাগানোর জন্য। খাবার খেতে খেতেই আরমানকে বললাম আকাশী রঙের জামায় আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।
আরমান:- ওহ আপনার পছন্দের রঙ মনে হচ্ছে, ধন্যবাদ।
— হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের রঙ এটা বলেই সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান খাবার প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করছে কিছু খাচ্ছে না।
আরমান:- আমার ও খুব পছন্দ আকাশী রঙ।
— আচ্ছা জার্মানির কোথায় থাকেন?
আরমান:- জার্মানির রাজধানী বার্লিন এ থাকি আমি, খুব সুন্দর সিটি।
— ওহ আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে করেননি? ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন না কেন?
আরমান:- হাসতে হাসতে এখনো তেমন কাউকে পাইনি যাকে সাথে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।
— দোয়া করি খুব দ্রুত কাউকে পেয়ে যান, যাকে নিয়ে সারা জীবন একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দিতে পারেন। বলেই সোহানের দিকে তাকালাম সোহানের চেহারা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। জ্বলুক ওর জ্বলা দরকার। যে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারে না, তার শাস্তি পাওয়াই দরকার।
আরমান:- অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
— না না ঠিক আছে ধন্যবাদ লাগবে না শুধু বিয়ের দাওয়াত দিলেই হবে।
আরমান:- হ্যাঁ কেন নয়, আপনার মত স্মার্ট সুন্দরি একটা মেয়ে খুঁজে দিন, সাথে সাথেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিবো, রাজি হলেই পেয়ে যাবেন বিয়ের দাওয়াত।
— একটু ঢং এর সুরে আমার মত কি করে পাবো আমিতো এতজনই, চিন্তা করবেন না আমার চেয়েও আরও স্মার্ট সুন্দরি পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম, যে মেয়েকে প্রোপোজ করবেন সেই রাজি হয়ে যাবে। আচ্ছা প্রেমটেম করেন না?
সোহান:- এই তোর কি দরকার উনি প্রেম করে নাকি না করে তা দিয়ে?
— বারে আমার আবার কি দরকার থাকবে? দুলা ভাইয়ের বন্ধু মানে আমার বেয়াই আমিতো একটু দুষ্টমি করতেই পারি। জানতে চাইতেই পারি তার সম্পর্কে তাই নয় কি?
আরমান:- না না সমস্যা নেই ভাইয়া, আর ইকরা আমার কোন মেয়ে বন্ধুই নেই, আরতো গার্লফ্রেন্ড দূরের কথা।
— ওহ রিয়েলি, তাহলে আজ থেকে আমরা কি ভালো বন্ধ হতে পারি? বলেই হাতে থাকা চামচটা প্লেটের উপর রেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম আরমানের দিকে।
আরমান:- সাথে সাথে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যাঁ অবশ্যই কেন নয়।
— থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ,
আরমান:- বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাংক্স ওকে।
— হ্যাঁ ঠিক আছে, সোহানের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে কোন কথা না বলে উঠে বেসিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো, এদিকে আফরিন বার বার আমাকে চিমটি কেটে যাচ্ছে এমনটা না করার জন্য। আরমান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও রোমান্টিক লুক নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। সকলে খাওয়া শেষ করে কিছুটা সময় টেবিলে বসে গল্প করলাম। হঠাৎ আরমান বলে উঠলো চলুন না সকলে মিলে ঘুরে আসি কোথাও থেকে।
সোহান:- না ভাই আজ না, আজ প্রচণ্ড গরম পরেছে অন্য আরেকদিন ঘুরবো।
আরমান:- ভাইয়া বেশী দূর যাবো না, আর আমরা যেখানে যাবো সেখানে তেমন গরম ও লাগবে না বরং ভালো লাগবে। সামনেই একটা বিশাল উদ্যান আছে, চারিদিকে বড় বড় সবুজ গাছে ভরা। ওখানে গেলে ঠাণ্ডায় এমনিতেই মন শীতল হয়ে যাবে।
আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া জায়টা অনেক সুন্দর চলুন না ঘুরে দেখে আসবেন।
সোহান:- কিন্তু এ গরমে।
— কিছু হবে আর উনারা যেহেতু বলছে অল্প সময় লাগবে আর জায়গাটাও খুব সুন্দর তাহলে যেয়ে একবার দেখলেতো আর ক্ষতি নেই।
আরমান:- হ্যাঁ ভাইয়া যদি আপনার ভালো না লাগে তাহলে চলে আসবেন কোন সমস্যা নেই।
সোহান:- বেশ তাহলে চলো।
— সবাই এক সাথে রওনা হলাম, তবে আলাদা আলাদা রিক্সায়, আমি আর আপু এক রিক্সায়, আকাশ ভাই আর আরমান এক রিক্সায় আর সোহান একা এক রিক্সায়। রিক্সা চলতে শুরু করতেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো সোহানের ফোন থেকে খুব ঘুরার সখ না? আমি বুঝতে পারলাম সোহানের হৃদয়ে লাগছে, আমি ওকে আরও রাগানোর জন্য মেসেজ পাঠালাম কি যেন পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি। মেসেজ পাঠিয়ে মনে মনে হাসছি, সোহান এখন নিশ্চই আরও রেগে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে রিক্সা এগিয়ে চলছে নিজের গন্তব্যের দিকে। সোহান মেসেজের কোন রিপ্লাই দিচ্ছে না। এদিকে সামনের রিক্সা থেকে বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে আরমান। আমি আমার খোলা চুল গুলো মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে নেড়ে উড়িয়ে দেখাচ্ছি আরমানকে। প্রায় আধঘন্টা রিক্সা এভাবে চলার পর আমরা বিশাল এক উদ্যানের সামনে চলে আসলাম। সবাই যার যার মত রিক্সা থেকে নেমে পরলাম। তারপর উদ্যানের ভিতরে ঢুকতে শুরু করলাম। সত্যিই মুগ্ধ হবার মতই জায়গা।
আরমান:- দেখলেনতো কত সুন্দর জায়গা।
— হুম খুব সুন্দর জায়গা, মুগ্ধ হবার মতই, ছবিতে যেমনটা থাকে ঠিক তেমনি।
আরমান:- হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের জায়গা এটা, বাংলাদেশে থাকতে আমরা সব বন্ধুরা এখানেই ঘুরে বেশীর ভাগ সময় কাটিয়েছি।
— এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি সত্যিই যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। বিশাল বড় বড় সবুজ গাছ তার নিচ দিয়ে ছোট ছোট রাস্তা, অনেকটা দূরে একটা বিশাল বড় মাঠ অনেক ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে খেলে চলেছে। সবচেয়ে বেশী মজা লাগছে পায়ের নিচের শুক্ন পাতার ঝুন ঝুন শব্দ। আর সেই সাথে ঠাণ্ডা হিম শীতল বাতাস। অল্প সময়ে সুখের এক রাজ্যে হারিয়ে যাবার মত অবস্থা হবে যে কারো। হঠাৎ থমকা হাওয়ায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে এলো। হাত দিয়ে চুল গুলো সরাতে সরাতে আড় চোখে সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান মাথা নিচু করে হেঁটে চলছে। আমার কেন জানি ভীষণ রকম হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন মন খারাপ দেখে। প্রায় ঘন্টা খানিক সেখানে থেকে আমরা বিদায় নিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশে। সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম কি হলো তোমার কি মন খারাপ?
সোহান:- না,
— তাহলে কি হয়েছে?
সোহান:- মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করছে।
— ওহ আচ্ছা সহ্য করে থাকো বাসায় যেয়ে ঔষধ খেয়ে নিও।
সোহান:- হুম।
— প্রায় ঘন্টা খানিক রিক্সায় থাকার পর অবশেষে বাসায় এসে পৌছালাম।
সোহান:- আফরিনের দিকে তাকিয়ে তোর রুমে মাথা ব্যথার ঔষধ থাকলে দিয়ে যাসতো।
আফরিন:- আচ্ছা ভাইয়া পাঠিয়ে দিচ্ছি।
— রুমে আসতেই ড্রয়ার খুলে কিছু ঔষধ বের করে দিয়ে আপু বললো আগে এগুলো ভাইয়াকে দিয়ে আয় তারপর ফ্রেশ হবি। আমি ঔষধ গুলো নিয়ে সোহানের রুমে যেয়ে টোকা দিতেই সোহান দরজা খুলে দিলো। ভিতরে ঢুকতেই ধাক্কা মেরে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এলো। কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম কি করছো তুমি?
চলবে..