শেষ বিকেলের রোদ -১৮ তম পর্ব

0
1548

শেষ বিকেলের রোদ -১৮ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— সোহানের নিঃশ্বাসের শব্দ জোড়ে জোড়ে এসে কানে বিঁধছিলো। নিজের হার্টবিটের শব্দ সে শব্দের কাছে হেরে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান কপালে হাত দিতেই চোখ মেলে তাকালাম।সোহানের হাতে টিপের পাতা সেখান থেকে হয়তো কোন একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়েছে, এতো সময় কি ভেবেছি আর হলো এটা ভাবতেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠেছে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। সোহাত হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো ডাইনিং এর আয়নার সামনে, কপালের মাঝ বরাবর একটা কালো রঙের টিপ পরিয়ে দিয়েছে। বেশ লাগছে সুন্দর্য্য যেন বহু গুন বেড়ে গিয়েছে।

সোহান:- এখন তোকে খুব সুন্দর লাগছে।

— আমি সব সময় সুন্দর তোমার দেখার চোখটাই আসলে ঠিক নেই। তুমি থাকো আমি যাচ্ছি বলে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বসার রুমে এসে আরমানের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম।

আরমান:- ধন্যবাদ,

— মুখে হাসি টেনে ইটস ওকে। এমন সময় সোহান রুমে এসে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমিও যেয়ে বসে সকলের সাথে টুকটাক কথা বলছি, আর এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে শুরু করলাম। হঠাৎ নজর পরলো নীল জামা পরা আরমানের বোনের দিকে, সে এক নজরে সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো ইচ্ছে করছিলো যেয়ে ঠাস করে একটা চর মেরে দিতে। কিন্তু তা করা সম্ভব নয়। তা নিরবে সব সহ্য করে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আপু এসে ইশারায় বললো বের হয়ে আসতে। আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম।

ফুপু:- নে তাড়াতাড়ি খাবার গুলো দু’বোন মিলে ডাইনিং এ নিয়ে যা।

— আমি আর আপু মিলে সব খাবার নিয়ে এসে ডাইনিং এ গুছিয়ে রাখলাম। ডাইনিং থেকে বের হয়ে বসার রুমে যেয়ে ফুপাকে বললাম সবাই কে নিয়ে তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ যেয়ে খাবার খেয়ে নিতে। বলেই আবার বের হয়ে ডাইনিং এ আসলাম। অল্প সময়ের ভিতর একে একে সকলে ডাইনিং এ উপস্থিত হলো। এর ভিতর ফুপুও চলে আসলো ডাইনিং।

ফুপু:- আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন সকলে বসুন। ইকরা আর আফরিন সকলকে খাবার বেড়ে দে।

— সকলে চেয়ার টেনে বসতে শুরু করলো, আরমানের বোন যেয়ে বসলো সোহানের পাশে। খুব ক্লোজ হয়ে বসতে শুরু করলো। সোহান কিছুটা আন ইজি ফিল করলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। মনে মনে ভাবছি কেমন নির্লজ্জ মেয়ে ছেলে মানুষ দেখেছে কিনা ওমনি তার পাশে বসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে শুরু করলাম দু’জন মিলে। খাবার বেড়ে দেওয়া শেষ হতেই আকাশ ভাইয়া বলতে শুরু করলো তোমরা দু’জন ও বসে পরো।

আফরিন:- আপনারা খেয়ে নিন আমরা পরে বসবো।

আরমান:- ভাবি বসুন না আমাদের সাথে ভালো লাগবে।

আফরিন:- আজ না ভাইয়া অন্য আরেক দিন বসবো। আপনারা খেয়ে নিন আমরা এগিয়ে দিচ্ছি।

— সকলের খাওয়া শেষ হতেই তারা বাড়িতে যাবার জন্য বিদায় নিতে আসলো। সোহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আরমানের বোন সেখানে যেয়ে আরমানের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখতে শুরু করলাম।

নীলা:- ভাইয়া আমার নাম নীলা, আপনিতো আমার সাথে কথাই বলছেন না।

সোহান:- ওহ আচ্ছা আমি একটু কম কথা বলি।

নীলা:- একদিন বেড়াতে আসুন না আমাদের বাড়িতে।

সোহান:- হ্যাঁ আসবো বিয়ের আরতো দু’দিন বাকি বিয়েটা হোক তারপর আসবো।

নীলা:- আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

সোহান:- হ্যাঁ বলুন কোন সমস্যা নেই।

নীলা:- না মানে আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া যাবে? যদি না আপনার কোন সমস্যা থাকে।

সোহান:- না কোন সমস্যা নেই, নাম্বাটা হলো, ০১৭…

নীলা:- অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সোহান:- ইটস ওকে।

নীলা:- আচ্ছা তাহলে আজ আসি, ফোনে কথা হবে ভালো থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।

সোহান:- হ্যাঁ আপনিও।

নীলা:- আরেকটা কথা বলি, আপনি খুব সুন্দর আর স্মার্ট।

সোহান:- জ্বি ধন্যবাদ।

— নীলা ওর পরিবারের সবার সাথে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে একটু যাচ্ছে আর পিছু ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। মনে চাচ্ছে যেয়ে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলি। মনে মনে নিজেই নিজেকে বলছি এতো রাগ করা ভালো রা কন্ট্রোল কন্ট্রোল, হঠাৎ করে মনে পরলো সেদিনের কথা আমিতো এর চেয়ে অনেক বেশী গভীর ভাবে সেদিন আরমানের সাথে মিশে ছিলাম। আর তাও ইচ্ছে করে সোহান কে জ্বালানোর জন্য, তখন ওর মনেও এমনই আঘাত লেগেছে নিশ্চই, আর ঐ মেয়ে সামান্য কথা বলছে তা আমি সহ্য করতে পারছি না। ওরা বাড়ির ভিতর থেকে বের হতেই পুরো বাড়ি নিরবতায় ভরে। যে যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সকল নিরবতা ভেঙে ফুপু বলে উঠলো তোরা দু’জন আয় খেয়ে নিবি। আমি সোহানের দিকে তাকালাম সে উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিষ্কার আকাশে সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ ঝকঝক করছে। আমরা তিনজন চলে আসলাম ডাইনিং এ। ফুপু আমাদের দু’জনকে খাবার বেড়ে দিলো।

আফরিন:- মা তুমি খাবে না?

ফুপু:- নারে আজ আর খাবো না তোরা খেয়ে নে।

আফরিন:- অল্প একটু খেয়ে নিতে।

ফুপু:- না ভালো লাগছে না, তোরা খা পরে যদি খেতে ইচ্ছে করে তবে খেয়ে নিবো। তোরা খেয়ে প্লেট গুলো গুছিয়ে রেখে রুমে চলে যাস। আমি চলে গেলাম।

— আর কোন কথা না বলে ফুপু উঠে চলে গেলো। এদিকে আফরিন আপু আমাকে খোঁচাচ্ছে। আমি প্রশ্ন করলাম এমন করছো কেন?

আফরিন:- আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে মালাটা কোথায় পেলি?

— কেন তোমার লাগবে নাকি মালা?

আফরিন:- আরে ধ্যাত কোথায় পাইলি তাই জানতে চাইলাম।

— কোথায় আর পাবো তোমার ভাই এনে দিয়েছে, আচ্ছা আপু একটা কথা বলতো,

আফরিন:- কি কথা?

— না মানে তোমার ননদ গুলো এমন গায়ে পরা কেন?

আফরিন:- মানে বুঝলাম না বুঝিয়ে বল।

— মানে ঐ যে আরমানের বোনটা কেমন গায়ে পরে সোহানের সাথে কথা বলছিলো দেখোনি? কেমন করে যেয়ে পাশে বসে পরলো। আবার সবাই যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনো এসে একা একা কথা বলছিলো।

আফরিন:- আহা বলতেই পারে কথা বেয়াইন, বেয়াই কথা বলবে এটাইতো স্বাভাবিক তাই না? আর তোর এতোদিকে নজর দিতে হবে কেন?

— বারে চোখের সামনে পরলে নজর দিবো না? কথা বলতে বলতে হঠাৎ মনে পরলো সোহানের কাছে নতুন দু’টো বই আছে বলছে সবাই যাবার পর দিবে। তাই আর কথা না বলে দ্রুত খাবার খেয়ে আপুকে বললাম তুমি রুমে চলে যাও আমি সোহান ভাইয়ার সাথে দেখা করে পরে আসছি। ডাইনিং থেকে বের হয়ে সোজা সোহানের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ভিতর থেকে দরজা লাগানো বাহির থেকে নক করলাম ভিতর থেকে সোহান জানতে চাইলো কে। উত্তর দিলাম আমি।

সোহান:- দাঁড়া আসছি, দরজা খুলে দিয়ে কিরে কিছু বলবি?

— কিছু বলবি মানে কি? কি বলছিলা তুমি মনে নাই?

সোহান:- কি বলছিলাম আমি? মনে করতে পারছি না। বলতে বলতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলো।

— আমিও ওর পিছু পিছু ঢুকতে ঢুকতে বলতে শুরু করলাম করলাম তা মনে করতে পারবে কেন? নীল পরীর সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলবা তাহলে কি আর অন্যদের কথা মনে থাকবে নাকি?

সোহান:- নীল পরী কোথায়রে চলতো যেয়ে দেখি।

— একদম ফাজলামো করবি না আমার সাথে বলে দিচ্ছি ভালো হবে না।

সোহান:- কোথায় ফাজলামো করলাম? কেনরে তোর জ্বলে নাকি আমি কারো সাথে কথা বললে?

— আমার জ্বলবে কেন?

সোহান:- ওহ তাই বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নীলারা কত দূর গেছে একটা ফোন দেই।

— খবরদার ফোন দিবে না বলে হাতটা এগিয়ে ফোনটা নিতে যাবো।

সোহান:- ওমনি সোহান হাত চেঁপে ধরে কেন তোর নাকি জ্বলে না? বলে হাতটা মোচড় দিয়ে পেছন দিকে নিয়ে ঘাঢ়ের উপর মুখটা নামিয়ে নিয়ে আসলো।

— ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি আমার জ্বললেই তোমার কি আর না জ্বললেই তোমার কি? তুমি কি আমাকে বুঝ? তুমি আমাকে কখনোই বুঝ না।

সোহান:- তুইতো খুব বুঝিস ঐ অমুক তমুক কে আমাকে কি আর বুঝিস?

— তোমাকে কি বুঝবো আমি তুমি কে হে আমার?
কথাটা বলতে দেরী হলেও সোহান সেই অবস্থাতেই টেবিলের উপর চেঁপে ধরে হাতটা পেছনে রেখেই বলতে শুরু করলো আমি কে আজ তোকে বুঝাবো। ব্যথায় মনে হচ্ছিল হাত ভেঙে যাচ্ছি, চিৎকার করবো এমন শক্তিও গায়ে নেই। দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি টেবিলের উপর পরছে। আমি মৃদু স্বরে বললাম ছাড়ো আমাকে। হাতটা ভেঙেই ফেলবে নাকি?

সোহান:- ভেঙে গেলে যাবে, প্রয়োজনে আরেক জনের হাত জোড়া লাগিয়ে এনে দিবো পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে।

— সোহানের কথায় হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না, মুখ থেকে বের হয়ে গেলো ব্যথায় মরে যাচ্ছি।

সোহান:- সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিয়ে কোমর ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে এতো সহজে তোকে মারছি না আমি।

— তো কিভাবে মারবে খুব কষ্ট দিয়ে বুঝি?

সোহান:- আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে মুখটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে কিভাবে যে মারবো নিজেই বুঝতে পারছি না।

— হয়েছে ঢং বাদ দাও আমাকে ছাড়ো, ঐ যে তোমার সুন্দরী নীল পরী বেয়াইন আছে তাদের সাথে ঢং করো গিয়ে। কথাটা বলা শেষ হবার আগেই সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে চেঁপে ধরলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here