প্রেম_এসেছে_গোপনে #পর্ব_০৫ #অনন্যা_অসমি

0
299

#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_০৫
#অনন্যা_অসমি

একা একা রুমে বসে সাথে নিয়ে আসা বই পড়ছিল আরশিয়া। হুট করেই কোথা থেকে যেন বাচ্চাকাচ্চা সবগুলো রুমে এসে জড়ো হয়ে গেল। রুমে ঢুকেই সবাই নিজেদের বসার জায়গা করে নিলো। তাদের দিকে একবার তাকিয়ে আরশিয়া আরেকটু আঁটসাঁট হয়ে চেপে বসল।

” আরে দেখো এক পড়াকু এসেছে আমাদের মাঝে।” কথাটা বলেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া জায়রার মেজো মামার ছেলে।

বিপরীত আরশিয়া হালকা হেসে বলল,

” কেন? বই পড়া খারাপ নাকি? চাইলে তুমিও পড়তে পারো, আমি সাথে করে আরো এনেছি।”

” ছিঃ এসব ওকাজের বই আমি পড়িনা। কিভাবে যে তোমরা এসব পড়।” একপ্রকার নাক সিটকে বলল সে।

” বই পড়ার জন্য মন লাগে, পড়ার আগ্রহ লাগে। তা না হলে শত চেষ্টা করেও লাভ নেই। তোমাদের মধ্যে সেই আগ্রহটা নেই বলেই তোমরা বোঝনা। থাক বাদ দাও, যে বুঝতে চায় না তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।”

আরশিয়ার শান্ত ভাষায় বলা কথাগুলো শুনে বাচ্চাটা মুখ বেঁকিয়ে চলে গেল। যা কারোই চোখ এড়িয়ে যায়নি।

” আপু তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না। আসলে রুদ্র একটু চঞ্চল, দুষ্ট টাইপ। ও না বুঝে তোমাকে বলে ফেলেছে।”

” সমস্যা নেই জুবা, ও ছোট মানুষ। এখন কার সাথে কি ধরণের ব্যবহার করতে হয় তা বুঝতে শিখেনি। তবে আমি আশা করছি দ্রুত সে বুঝতে পারবে।”
.
.

বিকেলের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলো আরশিয়া। জেগে দেখলো আটটা বেজে গিয়েছে, আশেপাশেও কেউ নেই। মুখ হাত ধুয়ে বিছানা ঠিক করছিলো সে তখনই ওয়াসিম এসে উপস্থিত হল।

” আব…. সরি আমি মনে করেছিলাম জায়রা, জুবা এখানে আছে।”

” হয়তো বাইরে আছে, আমি মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছি। তাই বলতে পারছিনা তারা কোথায়।” বালিশটা ঠিক করে বলল আরশিয়া। ওয়াসিম চলে যেতে নিলেও আবার পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করল,

” তুমি কি কিছু খাবে? চা এনে দেবো?”

” থাক আপনার কষ্ট করতে হবেনা। এই অসময়ে চা খেতে চেয়ে কাউকে বিরক্ত করতে চাইনা।”

বিপরীতে ওয়াসিম কিছু না বলেই চলে গেল। সব গুছিয়ে আরশিয়া বাইরে যাবে সেসময় তার ফোন বেজে উঠলো।

” কেমন আছো বাবা?”

” আমি ঠিক আছি মা। তোমরা কেমন আছো? আজ তো একবারো ফোন দাওনি, তাই আমিই দিলাম।”

” আমরা ভালো আছি। আমি মাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম, তোমাকে ফোন দেওয়ার কথা একদমই মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। তুমি খেয়েছো?”

” হুম সন্ধ্যাবেলায় দোকানে গিয়ে খেয়েছি। তুমি কি খেয়েছো?”

” কিছুক্ষণ পর রাতের খাবার খাবো। তোমার খুব অসুুবিধে হচ্ছে তাই না? রেখে আসা রান্নাগুলোও তো মনে হয় শেষ।” কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল আরশিয়া।”

” তোমরা কবে ফিরবে? বেশ অনেকদিন তো হলো। তোমার ভার্সিটি, ছেলেটার স্কুল সব কামাই হচ্ছে না? আরহামের স্কুল থেকে অলরেডি ২ বার মেসেজ এসেছে।”

আরশিয়া কিছুটা সময় নিরব থেকে ধীর কন্ঠে বলল, ” চলে আসবো কিছুদিনের মধ্যে। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে যেও। বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে থেকোনা। সাবধানে থেকো, রাখছি।”

ফোন কেটে দিয়ে আরশিয়া একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো।

” আপু এই নাও তোমার চা।”

জায়রার কন্ঠে তার ধ্যান ভাঙতো। চায়ের কাপটা নিয়ে প্রশ্নবোধক চাহনিতে আরশিয়া জায়রার দিকে তাকালো।

” ধন্যবাদ কিন্তু তুমি হঠাৎ চা নিয়ে এলে যে? আমি তো বাইরেও যাইনি।”

” ওয়াসিম ভাই গিয়ে বলল তুমি উঠে গিয়েছো। তোমার নাকি খিদে পেয়েছে, যেন তোমাকে চা সাথে বিস্কিট দিয়ে আসা হয়। তাই মা আমাকে পাঠালো। নাও নাও খেয়ে নাও, না হলে ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবেনা।”

আরশিয়া বিস্কিট নিলোনা, শুধু চায়ের কাপটাই নিলো। এক চুমুক খেয়ে সে কিছু বলবে তখনই ইনান গুণগুণ করতে করতে রুমে প্রবেশ করল।

” আমারো পরাণ যাহা চাই, তুমি তাই। তুমি চাই গো…….। কি গো সুন্দরী আপু তোমার দেখা তো সহজে পাওয়া যাইনা। সারাদিন এইখানে বসে না থেকে একটু বাইরেও তো আসতে পারো। তোমাকে দেখার জন্য যে কেউ ছটফট ছটফট করে সেটা কি তুমি বোঝ না? না পারে কইতে না পারে সইতে। এখানে আসার জন্য তো একটা কারণ দরকার, সবসময় কি আর এতো কারণ পাওয়া যায়? কিন্তু তুমি যদি বাইরে থাকো তাহলে তো কোন ঝামেলায় হলো না।”

” এসব তুমি কি বলছো ইনান ভাই? তোমার কথাতো আমার সু্বিধার লাগছেনা।”

” তো আর কি? উনাকে দেখার জন্য সেই কখন থেকে আমার চোখজোড়া ছটফট ছটফট করছে। এদিকে উনি ঘুমন্ত রাজকন্যার মতো ঘুমিয়ে ছিলেন। আপনি বড্ড নিষ্টুর দামী নূর কহিনূর। আমার মতো নিষ্পাপ শিশুকে অপেক্ষা করিয়ে আপনি মোটেও ঠিক করেননি। কাট্টি আপনার সাথে।” ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বলল ইনান। তার এরকম বাচ্চামো দেখে আরশিয়া হালকা শব্দে হেসে উঠলো। তার হাসি দেখে ইনানের ঠোঁটেও হাসি ফুটলো।

” এই না হলে দামী নূর কহিনূর আপু। এভাবেই হাসবে, আমরাই তো। যখন যা মনে আসবে নির্দ্বিধায় বলে ফেলবে। তোমাকে চুপচাপ দেখতে আমার একটুও ভালো লাগেনা।”

” ও বাবা তাহলে এই কথা। আরেকটু হলে তো আমার হার্ট এট্যাক হয়ে যেতো তোমার কথায়।”

” ইনান তুমি আমাকে একবার আপনি একবার তুমি বলো কেন? যেকোন একটা বলো।”

” না আমার এটাই ভালো লাগে। একইসাথে তুমি, আপনি বলার ব্যপারটা আমার কাছে দারুণ লাগে।”

” তুমি এমনিতেই বয়সে বড়ো হয়েছো কিন্তু স্বভাব এখনো স্কুল পড়ুয়াদের মতো।”

” শুধু আপনার জন্য দামী নূর কহিনুরটা আপু।” বলেই লাজুক ভাবে হাসলো ইনান।

” ইনান ভাই তুমি সত্যি করে বলো তো তুমি আসলেই কি মজা করছিলে নাকি ঘটনা অন্য কিছু?” ইনানকে একা পেয়েই চেপে ধরলো জায়রা। তার কথা শুনে ইনান ঘাবড়ে তো গেলোনা উল্টো জায়রার কাঁধে হাত রেখে বলল,

” নারে তুই ঠিকই চিন্তা করেছিস। আমার না অনেকদিনের শখ। বয়সে বড় আপুর সাথে প্রেম করার। কহিনূর আপুকে দেখে মনে হল এটার জন্য উনি একদম পার্ফেক্ট। ওনাকে দেখে বোঝাও যায়না যে উনি আমার থেকে বয়সে বড়। ভাবছি এবার ওনাকে বলেই দেবো। কি বলিস?”

” এসব তুমি কি বলছো ইনান ভাই! মামী জানলে তোমাকে জ্যা’ন্ত গরম তেলে ভাজবে।”

” আমি ভয় পাই নাকি? এই ইনান কাউকে ভয় পাইনা। এখন যা তো আর এভাবে ডিমের মতো গোল গোল চোখে তাকিয়ে তাকিস না।”

জায়রাকে সেখানে রেখেই শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো ইনান। জায়রা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে ছুট লাগালো কারো খোঁজে।
.
.

রাতের খাবারের পর আরশিয়া তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আরহাম ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।

” কিরে এখনো জেগে আছিস যে? ঘুমিয়ে পড়।”

” মা, বাবা ফোন করেছিলো।”

” ও…. তো কি বলেছে? রান্নাগুলো কি শেষ?”

” আমরা কখন ফিরবো তা জানতে চেয়েছে। আরহামের স্কুল থেকে নাকি দু’বার মেসেজ চলে এসেছে।”

কথাটা শুনে সুমনা আহমেদের মুখ থমথমে হয়ে গেলো।

” এতোবছর পর আমি একটু আমার আত্নীয়ের বাড়িতে এসেছি, আমার মৃ’ত্যুপথযাত্রী মামাকে দেখতে হয়েছি তাও তোমার বাবার সহ্য হচ্ছেনা। কিন্তু এখন নিজের কেউ হতো, নাচতে নাচতে গোটা মাস থেকে যেতে পারতো। তখন মুখে টু শব্দ করতো না, আমার বাপের বাড়ির মানুষ বলেই যতরকম কথা বের হচ্ছে। যাবোনা আমি এখন, তোমাদের যদি থাকতে ইচ্ছে না হয় তবে তোমাদের বাবাকে বলো এসে নিয়ে যেতে। জীবনে তোমাদের জন্য সব সুখ বির্সজন দিয়েছি, এবার যখন একটু সুযোগ পেয়েছি সেটা হারাতে চাইনা। তোমরা সবাই নিজের বেলায় ঠিক, আমার বেলায় তোমাদের সকল ব্যস্থতা।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here